সমাজমাধ্যমের দৌলতে সাধারণ মানুষ সহজেই জুড়ে যান তাঁদের পছন্দের তারকাদের সঙ্গে। জানতে পারেন প্রিয় তারকাদের জীবনের নানা খুঁটিনাটিও। তাঁরা কী ভাবে থাকেন, কী খান, কী পরেন সবই এখন প্রকাশ্যে। তারকারা যে হেতু পেশার কারণেই সুস্বাস্থ্যে জোর দেন, তাই অনেকে তাঁদের যাপনপদ্ধতি অনুকরণও করেন। সম্প্রতি পরিণীতি চোপড়ার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ভাগ করে নেওয়া তেমনই একটি জীবনযাপন সংক্রান্ত পোস্ট নিয়ে সাড়া পড়েছে। কারণ ওই পোস্টে পরিণীতি জানিয়েছেন কফি খাওয়ার নিয়ম।
ভারতের কফি-কাহিনি
কফি অল্পবিস্তর সকলেই খান। স্বাস্থ্যসচেতনেরা আবার সকালে খান চিনি এবং দুধ ছাড়া কফি। ভারতে চা অধিক জনপ্রিয় হলেও ইদানীং তরুণ প্রজন্মের মধ্যে কফি খাওয়ার চল বেড়েছে। তার একটা বড় কারণও অবশ্য সমাজমাধ্যমই। কারণ সেখানে নানা ভাবে নানা সমাজমাধ্যম প্রভাবী এবং চিকিৎসকদের একাংশ প্রকাশ্যেই বলেছেন, সকালে কালো কফি খাওয়া লিভারের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। অনেকে এ-ও বলেছেন যে, সকালে কালো কফি খেলে তা ওজন ঝরাতেও সাহায্য করে। স্থূলত্বের সমস্যায় ভুগতে থাকা ভারতীয়দের একটা বড় অংশ অন্ধের মতোই সেই পরামর্শ মেনে চলছেন। অনেকে সকালে খালি পেটেও কফি খাচ্ছেন। পরিণীতি যে পোস্টটি ভাগ করেছেন, তাতে অবশ্য বলা হচ্ছে সকালের প্রথম পানীয় হিসাবে কফি খাওয়া মোটেই ঠিক নয়।

কফি খেতে ভালবাসেন পরিণীতি চোপড়া। ছবি: ফেসবুক।
পরিণীতি কী বলছেন?
পরিণীতি নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ভাগ করে নিয়েছেন যাপন প্রশিক্ষক লিউক ক্যুটিনহোর একটি বক্তব্য। লিউককে অনুসরণ করেন বলিউডের বহু তারকা। সেই তারকাদের মধ্যে হৃতিক রোশন, শিল্পা শেট্টি, তমান্না ভাটিয়া, সামান্থা রুথ প্রভু, দিয়া মির্জ়া, আয়ুষ্মান খুরানা, জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজ়, অর্জুন কপূর-সহ আরও বহু তারকা অভিনেতা-অভিনেত্রীরয়েছেন। লিউক তাঁর পোস্টে লিখেছেন, ‘‘কফি কখনওই প্রাতরাশ হতে পারে না। প্রথমে জল খান তার পরে কফি। বা আরও ভাল হয় যদি প্রথমে জল খান, তার পরে খাবার খান এবং তার পরে কফি খান।’’
প্রভাবিত নয় শিক্ষিত হোন, বলছেন লিউক
ইদানীং ফিটনেস উৎসাহীদের মধ্যে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। যে পদ্ধতিতে দিনের একটা দীর্ঘ সময় উপবাসে থেকে অল্প সময় রাখা হয় খাওয়ার জন্য। উপবাসে থাকাকালীন অনেকেই জল বা চিনি ছাড়া পানীয় খেয়ে থাকেন। কিন্তু লিউক বলছেন, ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং চলাকালীন কফি না খেতে।

ছবি: সংগৃহীত।
পরিণীতি সমাজমাধ্যমে লিউকের যে পোস্টটি ভাগ করে নিয়েছেন, তাতে যাপন প্রশিক্ষক লিখেছেন, ‘‘উপবাস করলে তা সঠিক পদ্ধতিতে করুন। হয় শুধু জল খান অথবা পুরোপুরি নির্জলা করুন। কফি খেয়ে উপবাস করলে সেটা উপবাস হচ্ছে না। কফি শরীরে কর্টিসল এবং অ্যাড্রেনালিনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। শরীরে কর্টিসলের মাত্রা বেশি হওয়া খারাপ নয়। কিন্তু অতিরিক্ত বেশি হওয়াটাও ঠিক নয়। আর কর্টিসল আর অ্যাড্রিনালিন বেশি থাকা শরীরে উপবাস করাটাও কোনও কাজের কথা নয়।’’ বিশেষ করে যাঁদের থাইরয়েডের সমস্যা আছে, তাঁদের খালি পেটে কফি খেলে আরও বেশি সমস্যা হতে পারে বলে জানাচ্ছেন লিউক। তিনি বলছেন, ‘‘যে যা বলছে, তা শুনে প্রভাবিত হবেন না। বরং জেনে নিন। শিক্ষিত হোন।’’
ওজন কমানোর শর্টকাট নয় কফি
কফি কখনওই ওজন কমানোর শর্টকাট নয় বলে সাবধান করেছেন লিউক। তিনি লিখেছেন, ‘‘অনেকেই ভাবেন কফি তাঁদের লিভারের স্বাস্থ্য ভাল রেখে ওজন কমিয়ে সুস্বাস্থ্যের মেয়াদ বাড়িয়ে দেবে। কিন্তু আদতে ওই অভ্যাসের প্রভাব পড়বে বিপাকের স্বাস্থ্য এবং হরমোনের ব্যালান্সের উপর।’’ তাঁর পরামর্শ, ‘‘কফি খাওয়া খারাপ নয়। তবে অবশ্যই সঠিক সময়ে খান। সঠিক ভাবে খান। দুধ আর চিনি দেওয়া কফিকে কফি বলা যায় না। ওটা আসলে মিষ্টি!’’