Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Theatre

চলন্ত ট্রামে নাটক! কলকাতার বুকে এমনই কাণ্ড ঘটাতে চলেছে একটি নাট্যদল

নতুন ধরনের নাটক করার ভাবনায় এক নাট্যদল। চলন্ত ট্রামে নাটক করবে তারা। কী ভাবে হবে সেই নাটক? দর্শক কী ভাবে উঠবেন? নানা ধরনের পরিকল্পনা রয়েছে নির্মাতাদর।

চলন্ত ট্রামের মধ্যে হবে নাটক।

চলন্ত ট্রামের মধ্যে হবে নাটক। —ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৪:০০
Share: Save:

অ্যাকাডেমির সামনে বিশাল একটা ট্রামের টিকিটের মতো দেখতে ফ্লেক্স। ঠিক মাঝখানে লাল রং দিয়ে লেখা ‘চলন্ত ট্রামে নাটক!’ এমনটা সম্ভব? ট্রামের মধ্যে নাটক হবে কী করে? যাত্রীরা উঠবেন, নামবেন, কথা বলবেন, কে দেখবেন নাটক? মনে এমন একাধিক প্রশ্ন উঁকি মারতেই পারে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল কলকাতার একটি নাটকের দল গোটা ট্রাম ভাড়া নিয়ে নিয়েছে নাটক করবে বলে।

এমন নাটকও হয়!

নাটক মানে বেল বাজবে, পর্দা উঠবে, মঞ্চে আলো জ্বলবে, অভিনয় শুরু হবে। অথবা দর্শক এবং মঞ্চের মাঝের অদৃশ্য দেওয়াল ভেঙে অভিনেতারা মিশে যাবেন দর্শকের মধ্যে। তাঁদের নাটকের অঙ্গ করে নেবেন। অথবা মঞ্চ বাদ দিয়ে নাটক হবে একটা ঘরে (অন্তরঙ্গ নাটক)। যেখানে দর্শক এবং অভিনেতারা থাকবেন একই জায়গায়। না হলে হবে পথনাটক। যে ভাবেই নাটক হোক না কেন, অভিনেতারা নড়াচড়া করবেন, স্থান থাকবে স্থির। কিন্তু ২৫ এবং ২৬ সেপ্টেম্বর তেমনটা হবে না। টালিগঞ্জ থেকে ট্রাম চলতে শুরু করবে। সেই চলন্ত ট্রামেই একটি দল নাটক করবে।

দলের নাম ‘সম্পর্ক’। যারা আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে স্বপ্ন বুনেছে এই নাটক করবে বলে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ট্রাম ভাড়া নেওয়ার খরচ জানতে গিয়ে যে দল আঁতকে উঠেছিল। ভেবেছিল কী করে এই খরচ জোগাড় করবে। পরে নিজেরাই ঠিক করে মাসে মাসে টাকা জমাবে। পথনাটক করে টাকা জোগাড় করবে। যেমন ভাবনা, তেমন কাজ। শুরু হয় পথনাটক। বিভিন্ন অনুষ্ঠান, পুজো উপলক্ষে নাটকের পথচলা শুরু। সেই সঙ্গে টাকা জমিয়ে অপেক্ষা করা ‘উড়োচিঠি’র। অবশেষে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ‘সম্পর্ক’-এর নাটক ‘উড়োচিঠি’ মঞ্চস্থ হবে, থুড়ি ট্রাম ধরবে।

সেই নাটকের পোস্টার।

সেই নাটকের পোস্টার।

নাটকটির লেখক এবং পরিচালক জিতাদিত্য চক্রবর্তী বলেন, “এই ধরনের নাটককে বলা হয় ‘সাইট স্পেসিফিক থিয়েটার’ অর্থাৎ যে জায়গায় নাটক করছি, সেটাকে নিয়ে গল্প বলা। এই নাটক শুরু হবে টালিগঞ্জের ট্রাম ডিপো থেকে। দর্শক আসবেন, তাঁদের আমরা ট্রামে বসাব, চা খাওয়াব। ট্রাম চলতে শুরু করবে। টালিগঞ্জ মেট্রোর সামনে থামবে। আমাদের চরিত্ররা উঠবে। অভিনয় শুরু হবে। এ ভাবে নাটক চলতে থাকবে। বিভিন্ন স্টপেজে থামবে। ট্রাম এগোবে। নতুন চরিত্ররাও উঠবে। নাটক এগিয়ে চলবে। ট্রামটাও এই নাটকের একটা চরিত্র।”

ট্রাম যদি কলকাতার রাস্তায় গাড়ির ভিড়ে থমকে যায়? পরিচালক সেটার জন্যেও আগে থেকে পরিকল্পনা করে রেখেছেন। জিতাদিত্য বলেন, “আমাদের দলের দু’জন বাইক নিয়ে ট্রামের পাশে থাকবে। তাঁদের সঙ্গে ট্রামের ভিতর থেকে যোগাযোগ রাখা হবে। ট্রাম চলার সময় অনুযায়ী তাঁরা অভিনেতাদের জায়গায় পৌঁছে দেবেন।”

টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপো থেকে শুরু করে বালিগঞ্জ গিয়ে ফের টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপোতে ফিরবে ট্রাম। নাটকটির আনুমানিক সময় এক ঘণ্টা ১৫ মিনিট। ট্রামের দ্বিতীয় কামরায় ৩০ জন দর্শক থাকবেন। প্রথম কামরা থেকে আবহ এবং আলো প্রক্ষেপণ করা হবে। নাটকটির সঙ্গীত এবং আবহ করেছেন দেবদীপ মুখোপাধ্যায়। মোট ন’জন অভিনেতা রয়েছেন নাটকটিতে। তাঁদের বাদ দিয়ে ২২ জন রয়েছেন নাটকের পিছনে।

এ তো গেল নাটক তৈরির গল্প আর নাটকের গল্প? নাটকটির পরিচালক জিতাদিত্য বলেন, “একটা জীবনের গল্প বলব আমরা। চরিত্রদের বয়স বাড়বে নাটকের মধ্যে দিয়ে। ট্রামের চলার সঙ্গে এগোতে থাকবে সময়।”

এই নাট্যদলের নতুন ভাবনা কতটা মানুষ গ্রহণ করবেন, সেটা বোঝা যাবে নাটক শেষ হওয়ার পর। যে নাটকে বেল বাজবে না, পর্দা উঠবে না, তার বদলে ট্রাম চলবে কলকাতার পথ ধরে। নাটক চলবে কি না সেটা অবশ্য বলবেন দর্শক।

অন্য বিষয়গুলি:

theatre Bengali Theatre Tram
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy