Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

পুরনো থেকেই নতুন, শ্রীকান্তের নবকলেবর

ক্লাসিক সাহিত্যকে এই ভাবে আজকের সময়ে টেনে এনে ছবি তৈরির নজির বহু। সেই ছন্দেই এ বার পা মেলাতে চলেছে শরৎচন্দ্রের আরেক কালজয়ী চরিত্র, শ্রীকান্ত।

সুজিষ্ণু মাহাতো
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৭ ১০:৩০
Share: Save:

শেক্সপিয়রের ওথেলোকে বিশাল ভরদ্বাজ করেছিলেন ‘ওমকারা’। সপ্তদশ শতকের ভেনিসের কাহিনি নেমে এসেছিল একবিংশ শতকের ভারতের গো-বলয়ে।

শরৎচন্দ্রের দেবদাসের ভোল বদলিয়ে আধুনিক ‘দেব ডি’ বানিয়েছিলেন অনুরাগ কাশ্যপ।

শেক্সপিয়রেরই হ্যামলেটের কাহিনিকে কলকাতায় এনে অঞ্জন দত্ত বানিয়েছেন ‘হেমন্ত’।

ক্লাসিক সাহিত্যকে এই ভাবে আজকের সময়ে টেনে এনে ছবি তৈরির নজির বহু। সেই ছন্দেই এ বার পা মেলাতে চলেছে শরৎচন্দ্রের আরেক কালজয়ী চরিত্র, শ্রীকান্ত।

রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্তের গল্প নিয়ে ছবি তৈরি করছেন ‘বাকিটা ব্যক্তিগত’খ্যাত পরিচালক প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য। শ্রীকান্তের ভূমিকায় ঋত্বিক চক্রবর্তী। রাজলক্ষ্মীর ভূমিকায় বাংলাদেশের নায়িকা জ্যোতিকা জ্যোতি। প্রদীপ্ত জানাচ্ছেন, অনুপ্রবেশ ও উদ্বাস্তু সমস্যা, নারীপাচার, চোরাকারবার, ধর্ম ও জাতির ভিত্তিতে সমাজের বিভেদ— সবই থাকবে ছবিতে। এখানে রাজলক্ষ্মী ও-পার বাংলা থেকে চলে আসা ছিন্নমূল পরিবারের কন্যা। পরে নারী পাচার চক্রের জেরে যাকে নামতে হয় দেহব্যবসায়। আর শ্রীকান্ত? ঋত্বিক বলছেন, ‘‘এই শ্রীকান্ত কিছুটা চেনা, কিছুটা অচেনা।’’

শরৎচন্দ্রের অন্য উপন্যাসের মতোই নির্বাক যুগ থেকে শুরু করে শ্রীকান্ত কাহিনিও বারবার পর্দায় এসেছে। উত্তম-সুচিত্রার ‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’ ও ‘কমললতা’, বসন্ত চৌধুরী-মালা সিন্‌হার ‘অভয়া ও শ্রীকান্ত’, কানন দেবী অভিনীত শ্রীকান্ত, ইন্দ্রনাথ ও অন্নদাদি’। তার অনেক পরে ২০০৪ সালে অঞ্জন দাসের ‘ইতি শ্রীকান্ত’তে অভিনয় করেন আদিল হুসেন, সোহা আলি খানের মতো শিল্পীরা। এগুলি সবই ছিল আদ্যন্ত পিরিয়ড ছবি। প্রদীপ্তর ছবি এ সবরে থেকে আলাদা হতে চলেছে। কারণ শরৎ কাহিনির কাঠামোটি রেখে তাকে এখনকার সময়ে এনে ফেলা হচ্ছে।

ঠিক যেমন সবার চেনা দেবদাসকে একেবারে অচেনা লেগেছিল অনুরাগ কাশ্যপের ‘দেব-ডি’তে। ক্লাসিককে কী ভাবে একেবার নাগরিক জীবনে পুনর্জন্ম দেওয়া যায়, তার নিদর্শন হিসেবে রীতিমতো ‘কাল্ট’ হয়ে গিয়েছে ছবিটি। ছবির সংলাপ, গান, নির্মাণ কোনও কিছু দেখেই বোঝার উপায় ছিল না যে তার গল্পটা একশো বছররে পুরনো। ছবির গীতিকার অমিতাভ ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘আসলে মানুষের আবেগ বদলায় না। যে আবেগকে ভিত্তি করে ক্লাসিকটি লেখা হয়েছিল, তা যদি এক থাকে তা হলে আধুনিক সময়েও সেই গল্প সকলে পছন্দ করবেন। আমরা দেব-ডি’র সময়েও সেটাই মাথায় রেখেছিলাম।’’

বাংলাতেও হালে শেক্সপিয়রের রোমিও-জুলিয়েটের অনুসরণে দেব-ঋত্বিকাকে নিয়ে ‘আরশিনগর’ তৈরি করেছেন অপর্ণা সেন। ছবিকে আধুনিক সময়ে আনতে ব্যবহার হয়েছে জমি মাফিয়াদের গল্প। জুলিয়াস সিজার এবং অ্যান্টনি অ্যান্ড ক্লিওপেট্রার কাহিনি অবলম্বনে সৃজিত মুখোপাধ্যায় তৈরি করেছেন ‘জুলফিকার’। দেব-প্রসেনজিতের যুগলবন্দিতে পর্দায় এসেছে সিন্ডিকেটের মাফিয়ারাজ। রবীন্দ্রনাথের ‘তাসের দেশ’কেও নতুন চেহারায় সাজিয়ে ছবি করেছেন কিউ। পরিচালক অমিতাভ ভট্টাচার্যর ‘রক্তকরবী’ মুক্তির অপেক্ষায়।

শ্রীকান্তর সঙ্গে আজকের দর্শক নিজেকে মেলাতে পারবেন? প্রদীপ্তর দাবি, ‘‘পারবেন। শরৎচন্দ্র তাঁর লেখায় যে সব সমস্যার কথা লিখেছেন, তার অনেকগুলোরই সমাধান আজকেও হয়নি। উল্টে কিছু সমস্যা আরও গভীর হয়েছে।’’ ঋত্বিক যোগ করছেন, ‘‘ক্লাসিক কালজয়ী। শরৎচন্দ্রও।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE