কাঞ্চন মল্লিক। ছবি: সংগৃহীত।
বিগত কয়েক বছরে তাঁর কাজের ব্যস্ততা বেড়েছে। অভিনয় এবং রাজনীতি, সমানতালে দু’দিক ব্যালান্স করছেন। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও চর্চার অন্ত নেই। ‘রক্তবীজ’ মুক্তির আগে আনন্দবাজার অনলাইনের মুখোমুখি অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিক। কখনও অকপট, কখনও আবার সাবধানী— কিন্তু সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন কাঞ্চন।
প্রশ্ন: আপনি তো এখন বেশ ব্যস্ত। কেমন আছেন?
কাঞ্চন: খুব ভাল প্রশ্ন করলেন। (একটু চুপ থেকে) মাধ্যমিক পাশের পর উচ্চ মাধ্যমিক। বিষয় নির্বাচন করতে হবে। প্রথমে ক্লাসে গিয়ে মনে হবে, বাপ রে! এ তো ভীষণ কঠিন। কিন্তু কয়েক দিন ক্লাস করার পর তখন সব ছাত্রই ঠিক অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। তাই সব মিলিয়ে ভালই আছি।
প্রশ্ন: ‘রক্তবীজ’-এর ট্রেলারে আপনার মজাদার হিন্দি সংলাপ বলার ধরন তো অনেকের পছন্দ হয়েছে। আপনি কেমন প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন?
কাঞ্চন: ভালই। আমার মনে হয় শিবপ্রসাদ-নন্দিতা জুটির এই ছবিটা ওদের ঘরানার থেকে একটু আলাদা। বাস্তব ঘটনার অবলম্বনে তৈরি ছবি। এমনিতেই গ্রামের থানা। রাষ্ট্রপতির বাড়ি আবার তারই থানার অধীনে। গ্রামের থানার অফিসারের কাছে ছোটখাটো চুরি ঠিক আছে। সেখানে বিস্ফোরণ, রাস্ট্রপতির জ়েড ক্যাটাগরির নিরাপত্তা— এই সব মিলিয়ে আমার চরিত্রটা (নিত্যানন্দ পতিতুণ্ডি) একদম ঘেঁটে থাকে (হাসি)।
প্রশ্ন: শিবপ্রসাদ-নন্দিতার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক তো দীর্ঘ দিনের। সেই ‘জনতা এক্সপ্রেস’ দিয়ে শুরু।
কাঞ্চন: ওই শো তো ওদেরই তৈরি। আমার জীবনের প্রথম সঞ্চালনা। তবে অনেকেই হয়তো জানেন না, আমি কিন্তু তৃতীয় পর্ব থেকে সঞ্চালনায় আসি। প্রথম দুটো পর্ব যিনি সঞ্চালনা করছিলেন, তিনি চলে যাওয়ায় আমার কাছে প্রস্তাব আসে। আমি তখন শার্ট গুঁজে পরতাম। চোখে মাইনাস আটের চশমা। খুব অবাক হয়েছিলাম, যে আমি কেন? কিন্তু শিবু আর নন্দিতাদি দু’জনেই বললেন যে আমাকেই ওঁরা চান। বাকিটা তো সকলেরই জানা।
প্রশ্ন: প্রায় ২৫ বছর ধরে আপনারা একে অপরকে চেনেন। শিবু-নন্দিতা এখন ইন্ডাস্ট্রির প্রথম সারির পরিচালক। কিন্তু এ বার কাজ করতে এতটা সময় লাগল কেন?
কাঞ্চন: শিবু তখন টিভিতে ঝড় তুলেছে। ‘বরিশালের বর কলকাতার কনে’, ‘রোজগেরে গিন্নি’, ‘জবাব চাই জবাব দাও’। আমি আছি, আছি, আছি... তার পর ‘হ্যালো মেম সাহেব’। কিন্তু ‘অ্যাক্সিডেন্ট’ ছবিটার পর মাঝে সত্যিই একটা দীর্ঘ বিরতি, ১১ বছরের! ওরাও ডাকেনি, আমিও বলিনি। যা হয় আর কী!
প্রশ্ন: কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিতে শোনা যায়, আপনাদের দূরত্বের নেপথ্যে বিশেষ কারণ রয়েছে।
কাঞ্চন: ভালবাসা গভীর হলে তখন ওই বলে না, তুমি আমায় আগে ডাকবে, আমি আগে তোমার কাছে যাব না। মান-অভিমান কিন্তু জন্মায় অধিকারবোধ থেকেই। তা ছাড়া নন্দিতাদি ডাকলে আমি না বলতে পারি না। ওঁর মধ্যে একটা মাতৃসুলভ বিষয় রয়েছে। একটু ভয়ও কাজ করে। এ বার দিদি বললেন যে, এই চরিত্রে নাকি উনিই আমাকে ভেবেছিলেন।
প্রশ্ন: অনেকের অভিযোগ, রাজনীতিতে আসার পর আপনি অভিনয় নিয়ে আগের মতো উৎসাহী নন।
কাঞ্চন: (হাসতে হাসতে) যেই আমি রাজনীতিতে এসে বিধায়ক হয়ে গেলাম, দেখলাম আমি যত না করি, তার থেকে মানুষ আমাকে নিয়ে ভাবেন বেশি। ‘ওরে বাবা! বিধায়ক হয়ে গিয়েছে’, ‘কাঞ্চন তো এখন বিরাট ব্যস্ত’! কথাগুলো আমারও কানে আসে। অনেকে এ রকমও ভাবেন যে, আমি এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। দু’টো শিং গজিয়েছে, একটা ল্যাজ রয়েছে! আমি এখন ভাতের পরিবর্তে খড় খাচ্ছি, সেটাও ভাবতে পারেন তারা! কিন্তু আমার প্রথম ভালবাসা তো অভিনয়। ৩২ বছর থিয়েটার করেছি। মাছকে জল থেকে তুলে নিলে সে তো অক্সিজেনের অভাবে মারা যাবেই। এই প্রসঙ্গেই আমি একটা জিনিস স্পষ্ট করে দিতে চাই।
প্রশ্ন: সেটা কী?
কাঞ্চন: আমার দলের শীর্ষনেতৃত্ব বা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু কোনও দিনও আমাকে অভিনয় ছেড়ে দিতে বলেননি। বরং তিনি কিন্তু আমাদের অনেক বেশি উৎসাহ দেন।
প্রশ্ন: তার মানে অভিনয়ের ব্যস্ততাও রয়েছে বলছেন?
কাঞ্চন: অবশ্যই। নির্বাচনে জেতার পর প্রথম ছ’মাস কাজটা বুঝতে একটু সময় লেগেছে। কিন্তু এখন তো আমি পর পর ছবি আর ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করছি।
প্রশ্ন: রাজনীতি আর অভিনয়, দু’দিক সামলে চলা কি কঠিন?
কাঞ্চন: টাইম ম্যানেজমেন্ট জানলে করা যায়। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু কিন্তু দফতর সামলে লেখালিখি করছেন, অভিনয় করছেন। আবার সাংবাদিক বৈঠকও করছেন। ইচ্ছে থাকলে উপায় বার হবেই।
প্রশ্ন: তার মানে এ ক্ষেত্রে ব্রাত্য বসু আপনার কাছে বড় অনুপ্রেরণা?
কাঞ্চন: অবশ্যই। আরে লোকটা এখনও রাতে বাড়ি ফিরে প্রতি দিন একটা করে ছবি দেখেন! এর পরেও সময় পাওয়া যায়! আমি তো প্রশ্ন করেছিলাম, ঘুম পায় না? উত্তরে ব্রাত্যদা বলেছিলেন, ‘‘না না। ছবি দেখি।’’
প্রশ্ন: সাম্প্রতিক কিছু ছবির প্রচারে আপনি নাকি সময় দিতে পারেননি?
কাঞ্চন: ব্যস্ত থাকলে আমি কিন্তু পরে কাউকে আবার ফোন করে নিই। অনেক সময় প্রযোজনা সংস্থায় ফোন করে কবে কবে ডেট দিতে পারব, তা নিয়েও আগাম কথা বলে নিই। আজকে সময় না দিলে তো আপনি সাক্ষাৎকারটা নিতে পারতেন না। কেউ যদি বলেন আমি সময় দিইনি, তা হলে সেটা মনগড়া কথা।
প্রশ্ন: এই ছবির শুটিংয়ের সময় উত্তরপাড়ার বিধায়ক এবং যাদবপুরের সাংসদের (ছবির অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী) মধ্যে ক্যামেরার বাইরে কী কী কথা হত?
কাঞ্চন: (হেসে) সত্যি বলছি, কোনও রাজনৈতিক কথা হত না। শটের পর প্রচুর আড্ডা হত। মাঝে মধ্যে কোথায় কী হচ্ছে তা নিয়েও কথা হয়েছে। কিন্তু গভীর রাজনৈতিক তত্বকথা আমাদের মধ্যে হয়নি।
প্রশ্ন: দীর্ঘ সময় ধরে টলিপাড়ার পরিচালকরা আপনাকে মজাদার চরিত্রে ভেবেছেন। এখন কি এই ধারাটা একটু বদলেছে বলে মনে হয়?
কাঞ্চন: আগে একটা গড্ডালিকা প্রবাহ ছিল। এখন কিন্তু অনেকটাই বদলেছে। কারণ বাংলা সিনেমার বিষয়বস্তু বদলেছে। আমরা ছবির কথা উঠলে ‘রাজকাহিনী’, ‘মন্টু পাইলট’, ‘শাজাহান রিজেন্সি’— অনেক উদাহরণ রয়েছে।
প্রশ্ন: আপনার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকেই জানতে চাই, কখনও পরিচালনায় আসার ইচ্ছা হয়নি?
কাঞ্চন: এখনও সে রকম চিত্রনাট্য পাইনি। হয়তো যথেষ্ট সময়ও পাইনি। তা ছাড়া পরিচালকদের প্যাক আপ হয় সবার শেষে। আমার ল্যাদ একটু বেশি। জলদি কাজ সেরে বাড়ি ফিরে গেলাম। আমি এতেই খুশি (হাসি)।
প্রশ্ন: আপনি নিজের বিধানসভা কেন্দ্রে নিয়মিত যান না, এ রকম অভিযোগও তো উঠেছিল।
কাঞ্চন: স্বয়ং ঈশ্বরও কিন্তু কোনও মানুষকে ১০০ শতাংশ সন্তুষ্ট করতে পারবেন না। তাই আমি কাজে বিশ্বাসী। ২০ শতাংশ মানুষ আমি কাজ করি বা না করি, তা হলেও আমাকে গালাগাল করবেন। আমি এ সব নিয়ে মাথা ঘামাই না। প্রত্যেক বাড়ি গিয়ে আমি বিধায়ক সেটা তো বলতে পারব না। আমি নিয়মিত সেখানে যাই, অফিসে বসি। কেউ সেটা না দেখতে চাইলে আমার কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু রাস্তার কাজ, আলো, ডায়ালিসিস মেশিন বা অক্সিজেন প্ল্যান্টটা কী ভাবে বসছে? আমি না যেতে পারলেও আমার ওখানকার দুটো পুরসভার চেয়ারম্যান এবং কাউন্সিলররা ভীষণ সাহায্য করেন। আজকে সেটাই বা কত জন করেন বলুন তো?
প্রশ্ন: উত্তরপাড়ায় নাকি আপনার একটা বিরোধী গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে?
কাঞ্চন: আমি যে ভাল কাজ করছি, তার সবথেকে ভাল উত্তর আপনার প্রশ্ন। কারণ আমি বিশ্বাস করি, মানুষ যখন কাজ করে তখন তার বিরোধী গোষ্ঠীও তৈরি হয়। আমি কাজ করলে সেই কাজের সমালোচনা করার জন্যও তো লোকের প্রয়োজন। আমি তো সুপারম্যান হয়ে সবার বাড়ির সামনে উড়তে পারব না। বিধায়ককে না দেখতে পেলেও, তাঁর তহবিল থেকে উন্নয়নের কাজগুলো তো মানুষ দেখতে পাচ্ছেন। সেটা কেউ অস্বীকার করলে আমার কিছু বলার নেই।
প্রশ্ন: পিঙ্কির সঙ্গে বিচ্ছেদ বা শ্রীময়ীর সঙ্গে সম্পর্ক— আপনার ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও তো প্রচুর ট্রোলিং হয়।
কাঞ্চন: আমাকে নিয়ে যা ট্রোলিং হয়েছে, আমার মনে হয় মনিকা লেউইন্সকিকে নিয়েও হয়নি! ট্রোলিং নিয়ে এখন আমি আর ভাবি না। নদীর পাড় থেকে নৌকায় ঢিল ছোড়াটা খুব সহজ। কিন্তু যিনি নৌকাটা বাইছেন, এক মাত্র তিনিই বুঝতে পারবেন যে জলে জোয়ার আছে না কি ভাটা। সংবাদমাধ্যমও আমার দিকে কখনও শোয়েব আখতারের মতো বল করেছে, কখনও আবার সাকলেন মুস্তাক। কিন্তু আমি কিন্তু ঠান্ডা মাথায় খেলেছি, নয় ডাক করে গিয়েছি। আমি কিন্তু কখনও মুখ খুলিনি।
প্রশ্ন: এত মাথা ঠান্ডা রাখেন কী ভাবে?
কাঞ্চন: বিধানসভাতেও যখন গিয়েছি, পিছন ঘুরে মনে হয়েছে লোকে আমাকে নিয়ে কথা বলছে। কিন্তু পরে দেখলাম কেউই কিছু বলছে না। অথচ আমার মাথার মধ্যে সেটা ঘুরপাক খাচ্ছে। তার পর এক দিন বাড়ি ফিরে কিশোরকুমারের গানটা শুনলাম— ‘কুছ তো লোগ কহেঙ্গে, লোগোঁ কা কাম হ্যায় কেহনা’। পুরো বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে গেল।
প্রশ্ন: শ্রীময়ীর (চট্টরাজ) সঙ্গে আপনি সিরিয়াল করছেন। তা নিয়েও সমাজমাধ্যমে কটাক্ষ।
কাঞ্চন: সমাজমাধ্যমে যাঁরা লেখেন, তাঁদের সঙ্গে মাঝেমধ্যে দেখা করতে ইচ্ছে করে। আমি তাদের চিনি না। এ দিকে যে যা পারছে লিখে দিচ্ছে। এই সব লেখায় বিচলিত হলে আমার রক্তচাপ বেড়ে যাবে। আমি পাত্তাই দিই না। আমি কমেন্ট বক্স খুলিই না। সমাজমাধ্যম ম্যানেজ করার জন্য আমার টিম আছে। এর থেকে বই পড়া, সিনেমা দেখা অনেক ভাল। এগুলো এখন আমার কাছে বোরোলিনের বিজ্ঞাপনের মতো হয়ে গিয়েছে— জীবনের ওঠাপড়া যেন গায়ে না লাগে।
প্রশ্ন: শ্রীময়ী তো মাঝেমধ্যেই সমাজমাধ্যমে আপনার সঙ্গে তোলা ছবিও পোস্ট করেন।
কাঞ্চন: আমি তো করি না! সে করলে আমি তো কিছু বলতে পারি না। মুশকিলটা হচ্ছে, কাবেরী, মালতী বা অন্য কোনও মহিলা যদি বলেন, ‘‘দাদা (কাঞ্চন) খুব ভাল’’, সেটা নিয়ে কিন্তু কোনও আলোচনা হয় না! দেখুন, সত্যি বলছি, আমি এ সব নিয়ে এখন কিছু ভাবতেও চাই না। আমি অভিনয় এবং নিজের ভোট কেন্দ্রের কাজ নিয়ে ব্যস্ত।
প্রশ্ন: শ্রীময়ীর সঙ্গে আপনার সম্পর্ক নিয়েও তো অনেকের কৌতূহল রয়েছে।
কাঞ্চন: যার যে রকম ইচ্ছে সে রকম ভাবতে পারেন। কিন্তু আমি এই প্রসঙ্গে কোনও কথা বলতে চাই না।
প্রশ্ন: পুজোর কী পরিকল্পনা?
কাঞ্চন: পুজোয় সাধারণত কলকাতাতেই থাকি। পাশাপাশি এ বার ছবির প্রচারের চাপ থাকবে। উত্তরপাড়াতেও যেতে হবে।
প্রশ্ন: এই বছর আর কী কী কাজ রয়েছে?
কাঞ্চন: বছরের শেষে ‘কাবুলিওয়ালা’ আর ‘প্রধান’ রয়েছে। রাহুল মুখোপাধ্যায়ের ওয়েব সিরিজ়টা করছি। আরও কয়েকটা নতুন কাজের কথা চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy