Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Celebrity Birthday

বাংলায় প্রযোজনার একচ্ছত্র বাজারে লড়ার সাহস আমার প্রথম আর আমারই শেষ, জন্মদিনে ঘোষণা শিবপ্রসাদের

তাঁর ‘বেলাশুরু’ হয় পড়াশোনা করে। আর ‘বেলাশেষে’ সিনেমা না হলে চলে না। বাকি সময়টায় প্রয়োজন শুধু তিন জনকে। জন্মদিনে আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে দিলখোলা আড্ডায় শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।

Shiboprasad Mukherjee

অন্য পরিচালকদের কাছ থেকে কি ছবির প্রস্তাব পান শিবপ্রসাদ? ছবি: সংগৃহীত।

পৃথা বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২৩ ০৮:০৬
Share: Save:

প্রশ্ন: ছোট থেকেই কি সিনেমা নিয়ে বাঁচতেন?

শিবপ্রসাদ: ছোটবেলায় ছিল নাটক। গান-নাটক-আবৃত্তি-তর্কের মধ্যে কেটেছে সময়টা। আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা আমার মা। মা-ই আমায় উচ্চারণ শেখাতেন, তবলা শেখাতেন, বই পড়াতেন, আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় নিয়ে যেতেন, নাটক করতে উৎসাহ দিতেন। বাড়ি ছিল বরাহনগরে। সেখানকার পরিবেশ, বন্ধুবান্ধব, স্কুল— সব কিছুরই একটা বড় ভূমিকা রয়েছে আমার জীবনে। তবে প্রচুর সিনেমাও দেখতাম।

প্রশ্ন: স্কুলে দস্যি ছিলেন?

শিবপ্রসাদ: আমার পড়াশোনা বরাহনগর রামকৃষ্ণ মিশনে। শেখানে শিক্ষক-ছাত্রের একটা অদ্ভুত সম্পর্ক ছিল। সাহিত্যচর্চা এবং শিল্পচর্চায় আমার মায়ের পর উৎসাহ দিতেন আমার দুই শিক্ষক যোগেশচন্দ্র পাঠক এবং সুভাষ মুখোপাধ্যায়। সে সময়ে স্কুলে আমরা বাদল সরকারের নাটক করেছি। বাখ-বেঠোভেন-মোৎজ়ার্টের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। বছরে প্রায় ৬টা করে নাটক করতাম। শিক্ষকরা জানতেন, রোল কল হয়ে গেলেই রিহার্সালে চলে যাব। পাশাপাশি খুব ক্রিকেট খেলতাম। তখন সবাই বরানগরে আমায় ‘খেপ শিবু’ নামে চিনত। নানা মাঠে খেপ খেলে রোজগারও করতাম। যখন প্রথম আইপিএল দেখলাম, বুঝলাম সেটাও খেপই (হাসি)। সাইকেল চালানো, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে জেটিতে গিয়ে আড্ডা মারা, সাঁতার কাটা, স্কুল পালিয়ে সিনেমা দেখা— খুব আনন্দে কাটিয়েছি। জীবন উপভোগ করার পাশাপাশি জীবন দেখাও শিখেছি।

প্রশ্ন: নাটক-ক্রিকেট ভালবাসতেন। তা হলে অভিনয়টা পেশা হিসাবে বেছে নিলেন কেন?

শিবপ্রসাদ: আসলে খুব সিরিয়াসলি নাটক করতাম। ক্লাস এইট থেকেই স্কুলের সিনিয়রেরা আমায় বিভিন্ন জায়গায় নাটক করতে নিয়ে যেত। প্রথম স্কুলের বাইরে ম্যাক্সিম গোর্কির ‘মাদার’-এ পাভেল এর রোল করি। ছোট থেকে রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, উৎপল দত্ত, শম্ভু মিত্রের নাম শুনে বড় হচ্ছি। মনে হত, তাঁদের কাছে পৌঁছতে না পারলে জীবনে কিছুই করা হবে না। ‘শেষ সাক্ষাৎকার’-এ গৌতম হালদারকে দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। বাদল সরকারের ‘মিছিল’ দেখে চমকে গিয়েছিলাম। পরে স্বপ্নের জায়গা তৈরি হয়ে গিয়েছিল ‘নান্দীকারে’। ‘জগন্নাথ’ দেখে এতই ঘোরের মধ্যে ছিলাম যে, রবীন্দ্রসদন থেকে হেঁটে বাড়ি ফিরেছিলাম। তখন থেকেই ঠিক করে নিয়েছিলাম, নাটকই করব। যে দিন উচ্চ মাধ্যমিকের ফাইনাল পেপার জমা দিলাম, পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে সোজা হেঁটে ‘নান্দীকারে’ গিয়ে বলেছিলাম, ‘‘আমি নাটক করতে চাই।’’ স্যার (রুদ্রপ্রসাদ) হেসে বলেছিলেন, ‘‘বাচ্চা!’’ এখন হয়তো অনেকে ওয়ার্কশপ করে। আমি ‘নান্দীকার’-এ ওই ভাবেই ঢুকে গিয়েছিলাম। সবাই রিহার্সাল করতেন। আমি গিয়ে বসে দেখতাম।

Nandita Roy and Shiboprasad Mukherjee

টলিপাড়ার অন্যতম দুই চর্চিত পরিচালক নন্দিতা রায় এবং শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: মঞ্চ নিয়ে এত ভাল লাগা। সেখান থেকে টেলিভিশনে কেন?

শিবপ্রসাদ: আসলে প্রচুর সিনেমাও দেখতাম। কলকাতার এমন কোনও হল নেই যেখানে সিনেমা দেখিনি। সব ধরনের ছবি দেখতাম। ব্ল্যাকাররা পর্যন্ত আমায় চিনতেন। টম ক্রুজ়ের ‘ককটেল’ দেখার পয়সা নেই। ব্ল্যাকারকে পায়ে ধরে বলেছি, আমায় টিকিট দিয়ে দিয়েছেন। নাটক করতে করতেই রাজা দাশগুপ্তের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। রাজাদা আমায় ‘একুশে পা’ বলে একটা বই পড়তে দেন। ভাল লাগে খুব। রাজাদা আমায় ‘বেঙ্কট’ বলে একটা চরিত্র অফার করে। সে সময়ে টাকাকড়ির প্রয়োজন ছিল। দিনপিছু ২০০ টাকা পারিশ্রমিক পেয়েছিলাম। তখন প্রথম চারটে এপিসোড ‘পাইলট’ হিসাবে শুট হত। সেই চারটে এপিসোড আমার জীবন পরিবর্তন করে দেয়। তার পরেই পর পর কাজ। কুমার সাহনির ‘চার অধ্যায়’ ছবিটা করলাম। ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘দহন’ করলাম। এত কিছুর মাঝে ঠিকঠাক রিহার্সালে পৌঁছতে পারতাম না। দেবুদা (দেবশঙ্কর হালদার) এক দিন আমায় বলল, একটু বিরতি নিয়ে সব কাজ শেষ করে ফিরতে। সে আর হল না।

প্রশ্ন: অভিনেতা থেকে নির্মাতা হয়ে গেলেন কী করে?

শিবপ্রসাদ: সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার প্রথম কাজ ছিল ‘ঘুম নেই’। গুরু দত্তের ছেলের ভূমিকায় অভিনয় করি। সুদীপ্ত আমার খুব বন্ধু হয়ে গেল। সিনেমাকে অন্য ভাবে দেখতে শেখাল। ঋতু’দার সঙ্গে অনেকটা সময় কাটিয়ে আমার বিশ্বসিনেমা নিয়ে চর্চা শুরু হল। ‘ঘুম নেই’-তে প্রথম সংলাপ লেখা শুরু করি। হঠাৎই দেখলাম, লিখতে পারি। এ সবের মাঝে হঠাৎ মুম্বই থেকে শিল্প নির্দেশক নীতীশ রায় কলকাতা এলেন। আমি প্রথম বাণিজ্যিক ছবি ‘জামাই নম্বর ওয়ান’-এ হিরো হওয়ার ব্রেক পেলাম। সেই প্রথম আমার নন্দিতা’দির (রায়) সঙ্গে আলাপ। ১৯৯৭-’৯৮ হবে। সেই থেকে এক অন্য যাত্রা শুরু হল।

প্রশ্ন: তার পর আর বাণিজ্যিক ছবির হিরো হওয়া হল না?

শিবপ্রসাদ: নীতীশ’দা আমায় পরের ছবির হিরো হিসাবে ভেবে ফেলেছিলেন। কিন্তু তখন তো আমার মাথার মধ্যে নানা রকম ছবির করার পোকা নড়ে উঠেছে। সে সময় অভিনেতারা পরিচালককে গিয়ে যদি এ সব ভাবনার কথা বলত, তা হলে পরের ছবি থেকে বাদ পড়া নিশ্চিত ছিল! আমি তা-ও গিয়ে বললাম, জুভেনাইল ক্রাইম নিয়ে একটা ছবি ভাবছি। দেখলাম, নীতীশ’দা রাজি হয়ে গেলেন। নন্দিতা’দি খুব উৎসাহী। দু’জনে খুব উৎসাহের সঙ্গে কাজ করা শুরু করেছিলাম। সেই কাজটা আজ পর্যন্ত হয়নি (হাসি)।

প্রশ্ন: সে ছবিটা তৈরি না করে চ্যানেলে চাকরি নিয়ে নিলেন কেন?

শিবপ্রসাদ: কুড়ি বছর বয়সে ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে বাবা-কাকা দু’জনকে হারাই। হঠাৎ যেন মাথার উপর থেকে ছাদ সরে গেল। কমার্শিয়াল ছবির হিরো হয়ে গিয়েছি। আর অন্য কোনও চরিত্রে অভিনয়ও করতে পারছি না। দাদা (নীতীশ রায়) বলেছিলেন, সিরিয়াল করা যাবে না। কিছুই পাচ্ছি না! খাব কী? বাড়ি বসে রোজ ব্যায়াম আর রেওয়াজ করছি। যাদবপুরের সহপাঠীরা কম্পিটিটিভ পরীক্ষায় বসছে। আর আমি সিনেমা বানানোর স্বপ্ন দেখছি! সে সময়ে ‘ই-টিভি বাংলা’র কাজ শুরু হয়। পাকা রোজগার। নিয়ে নিলাম চাকরিটা। ১৯টা নন ফিকশন আমি আর নন্দিতা’দি করেছিলাম। সেই প্রথম বুঝি, আমার মধ্যে একটা পরিচালক সত্তা লুকিয়ে রয়েছে। তার পর তো ‘ইচ্ছে’ থেকে সম্পূর্ণ একটা নতুন অধ্যায় শুরু হল।

ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: ছবি বানানোর স্বপ্ন অনেকেরই থাকে। কিন্তু প্রথম থেকেই প্রযোজনা সংস্থা খোলার কথা মাথায় এল কী করে? ব্যবসাবুদ্ধিটা কি তখন থেকেই পাকা?

শিবপ্রসাদ: কিছু ভাবা, লেখা আর সিনেমা তৈরি করা মোটে ৫০ শতাংশ কাজ। বাকি ৫০ শতাংশ সেই ছবিটা দর্শকের কাছে পৌঁছে দেওয়া। সেটা যে কতটা কঠিন, আগে জানা ছিল না। কিন্তু সেটা না জানলে কোথাও পৌঁছনো যায় না বলেই আমি বিশ্বাস করি। অভিনেতা হিসাবে আমিই এখানে প্রথম, যে প্রযোজনা সংস্থা খোলে। কারণ ইন্ডাস্ট্রির কিছু জিনিস আমার ঠিক পছন্দ নয়। ধরুন, সিরিয়ালের সিনিয়র অভিনেতা। বহু বছর হয়তো অভিনয় করছেন, কিন্তু রোজ নিজের কাজটাকে গালাগালি দিচ্ছেন। আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতাম, যেন নিজের কাজকে কোনও দিনও অশ্রদ্ধা না করতে হয়। এখনও পর্যন্ত আমার করা সব ছবিই আমার গর্ব। এই ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে বড় হিট ‘বাবা কেন চাকর’ বা ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ বা ‘দাদার কীর্তি’। অথচ আমরা কেউ এই ছবিগুলোর উদ্‌যাপন করি না। বাণিজ্যিক নায়কেরা অনেক সময়ে তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বলেন, ‘‘ওই কাজটা একদম পছন্দ ছিল না। তখন করতে হয়েছে।’’ পরে কোনও ছবি করলে আবার বলবে, ‘‘এটা চলছে, তাই করছি!’’ এ সব শুনে মনে হয়, তা হলে বোধহয় কোনও কাজের উপরই বিশ্বাস নেই। এত অবিশ্বাস নিয়ে অভিনয় করার কী প্রয়োজন? কোনও স্বপ্ন নেই, কনভিকশন নেই। আমার দুটোই ছিল। কিন্তু সিনেমা করতে গিয়ে দেখলাম, তখন শুধুই রিমেক চলছে। আমি যে ধরনের সিনেমায় বিশ্বাস করি, সেগুলো কেউ আমায় করতে দেবেন না। কারণ যেটা চলছে, সেটাই করবেন। কেউ ভাঙতে চাইলে তাঁকে নিজেকেই ভাঙতে হবে। ‘ইচ্ছে’র গল্প শুনে অনেক প্রযোজক চোখের জল ফেলেছিলেন। কিন্তু তার পর একটা রিমেকের ডিভিডি ধরিয়ে বলেছিলেন, ‘‘এটা বানিয়ে দে।’’ তখন মনে হয়েছিল, নিজেদের জায়গা তৈরি না করতে পারলে আমাদের সিনেমা আমরা কোনও দিন বানাতে পারব না।

প্রশ্ন: আপনি প্রায় একটি মনোপলি মার্কেটে নিজের সংস্থা খুলেছিলেন। কী ভাবে সাহস হয়েছিল?

শিবপ্রসাদ: ঠিক জানি না। আমি কৃতজ্ঞ যে, আমাদের ভাবনার সঙ্গে দর্শকের চাহিদা মিলে গিয়েছে। তবে এটুকু বলতে পারি, আমরাই প্রথম, আমরাই শেষ। আর কোনও পরিচালক এই ঝামেলা ঘাড়ে নেবে না। কোনও প্রযোজকের সঙ্গে ছবি করে পারিশ্রমিক নিয়ে চলে যাওয়া অনেক বেশি সোজা। তবে এখানে একটাই কথা বলার। রাজ্যে কোনও বিরোধী না থাকলে শাসকদল সব কাজ ভাল ভাবে যেমন করতে পারে, তেমনই কোনও কিছু না করে চুপ করে বসেও থাকতে পারে। এতে রাজ্যেরই ক্ষতি হবে। তেমনই একটা মনোপলি মার্কেট এমনিতে ভাল। দারুণ সব কাজ করা যায়। আবার সেই মার্কেটের ক্ষতি হলেও কিন্তু দায়টা মনোপলিরই। ২৫ বছর ধরে শুধু রিমেক কেন হল, সেই দায় নিতে হবে। রিমেক হয়েছে বলেই তো কোনও নায়িকা, গল্পকার বা কোরিয়োগ্রাফার তৈরি হয়নি। যে সময় রিমেক হচ্ছে সে সময়ে কেউ ‘অলীক সুখ’, ‘মুখার্জিদার বউ’ বা ‘ফাটাফাটি’ করতেন না। কারণ দক্ষিণী ছবিতে নায়কদেরই ভূমিকা প্রধান। কোনও নায়িকাও যে বক্স অফিস টানতে পারে, সেই ধারণাই তৈরি হয়নি।

প্রশ্ন: হল পাওয়া নিয়ে সমস্যা থেকে কুৎসা রটানো— উল্টো দিকের বাধাও তো প্রচুর পেয়েছেন। কখনও হাঁপিয়ে ওঠেননি?

শিবপ্রসাদ: চ্যাপলিনের একটা কথা আমি মনে রাখি। যত বেশি লোক আপনাকে হিংসা করবে, তত বেশি সাফল্য পাবেন। আঘাত না থাকলে সাফল্য আসে না। রেজ়িস্ট্যান্স থাকলে জেদ তৈরি হয়। সেটার একটা আলাদা আনন্দ। তবে সমালোচনা এবং কুকথা মাথা পেতে নেওয়া উচিত। যদি আপনি নিজে সৎ থাকেন, তা হলে সেই কাজের তারিফ হবেই। বাংলায় অনেক বক্স অফিসের নম্বর কিন্তু খুব বাড়িয়ে বলা হয়। তেমন যদি সত্যিই হত, তা হলে কাউকে ডেকে আনতে হত না। ‘সোনি পিকচার্স’ হয়তো নিজেই এসে ছবি করত। বনি কপূর দক্ষিণে না গিয়ে এখানে সিনেমা বানাতেন। ভাল ব্যবসা হলে সকলে টের পেয়ে যান। যে দিন আমার ছবি সফল হয়েছে, আমায় কোথাও বলতে হয়নি। মহেশ ভট্ট নিজে ফোন করেছেন, ‘ইরোস ইন্টারন্যাশনাল’ নিজে যোগাযোগ করেছে। দক্ষিণ থেকে এসে সকলে আমার ছবির স্বত্ব কিনে নিয়ে গিয়েছেন।

ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: ইন্ডাস্ট্রিতে এখন সকলেই মানেন যে, আপনি ব্যবসা বোঝেন। শিল্পীসত্তার সঙ্গে সেটার কি কোনও বিরোধ আছে?

শিবপ্রসাদ: শুধু ব্যবসা হলেই হয় না। ইন্ডাস্ট্রিতে আমার চেয়ে আরও বড় ব্যবসায়ীরা রয়েছেন। যাঁরা খুব বড় প্রযোজক, তাঁরা শুধু ব্যবসাটাই দেখেন। ছবি বানান না। আমার কাছে একটা ‘হামি’ বা ‘কণ্ঠ’ না থাকলে আমি ব্যবসা কী নিয়ে করব? বিমানসেবিকারা ‘টাপাটিনি’র সঙ্গে নাচতে পারেন। লোকে শুধু সেটা দেখে ভাবে, ‘শিবু ওখানেও প্রচার করল’। কিন্তু এটা তো আমি করিনি। আমার ছবিতে গানটা ছিল। যেটা ভাইরাল হয়েছে।

প্রশ্ন: এত দিনের সফরে কোনও অনুতাপ?

শিবপ্রসাদ: (বেশ কিছুটা থেমে) নাহ্‌! আমি খুব ভাগ্যবান, অনেক বেশি পেয়েছি। যতটা ভালবাসা পেয়েছি, তা এ বার ফিরিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব আমার। একটা গোটা ইন্ডাস্ট্রি যখন আমায় বিশ্বাস করেনি, তখন দর্শক আমায় বিশ্বাস করেছেন! আর কী চাই?

প্রশ্ন: প্রযোজক শিবপ্রসাদকে নিয়ে এই ইন্ডাস্ট্রির নানা অনুযোগ থাকলেও অভিনেতা শিবপ্রসাদের সকলেই প্রশংসা করেন। অন্য পরিচালকদের কাছ থেকে ছবির প্রস্তাব পান?

শিবপ্রসাদ: প্রত্যেক বছর প্রায় দশটা করে ছবি ‘না’ করি। ‘জ্যেষ্ঠপুত্র’তে ঋত্বিকের (চক্রবর্তী) রোলটা আমায় অফার করেছিল কৌশিকদা (গঙ্গোপাধ্যায়)। টোনিদা (অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী) আমায় বলে, ‘‘তুই একমাত্র অভিনেতা যে আমায় ‘না’ বলেছিস!’’ মুম্বইয়ের অনেক ওয়েব সিরিজ়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছি। এর দুটো কারণ। এক, আমি অতটা সময় দিতে পারব না। পরিবারকে, মা’কে বিশেষ করে, অনেকটা সময় দিতে হয়। বাকি সময়টা আমার মনে হয়, নিজের কাজের পিছনে দেওয়াই ভাল। দুই, কেউ আমায় ‘কণ্ঠ’ ছবির মতো কোনও ছবির প্রস্তাবও দেননি। নন্দিতা’দি এমন একটা চরিত্র দিয়েছিল, যেটা শুনে মনে হয়েছিল, সব ছেড়ে এটা করি। এখনও অন্য কোনও ছবির জন্য সেটা মনে হয়নি।

ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: পরিচালকেরা সাধারণত নায়িকাদের সঙ্গে প্রেম করেন। আপনি সাংবাদিকের প্রেমে কী করে পড়লেন?

শিবপ্রসাদ: (জোর হাসি) আমার এক বন্ধু এক বার আমায় বলেছিল, ‘‘সাংবাদিক দেখলে আমরা দূরে পালাই, আর আপনি ঘরে ডেকে আনলেন! জীবনে সন্ন্যাস নিয়ে নিলেন যে। আর তো কোনও নায়িকা আপনার ধারেকাছে আসবে না!’’ জিনিয়া (সেন) কিন্তু আমার সবচেয়ে বড় সমালোচক ছিল। পদে পদে নেতিবাচক সমালোচনা পেয়েছি ওর লেখায়। তা-ও কোনও ভাবে প্রেমটা হয়ে গেল।

প্রশ্ন: প্রেমে পড়তে ভালবাসেন?

শিবপ্রসাদ: আগে তো খুবই ভালবাসতাম। বেশ কিছু মানুষের সঙ্গে প্রেম হয়েছিল। মনের মানুষের জন্য হাতে লেখা চিঠি, কার্ড, স্পেশ্যাল কিছু করা— এগুলো আমার খুব মিষ্টি লাগে। প্রেম খুব পবিত্র আমার কাছে। আর প্রেমের সবচেয়ে সুন্দর বিষয় হল অপেক্ষা। জিনিয়া এক বার আমায় বলেছিল, ‘‘কখনও মোবাইল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে মেসেজ আসার অপেক্ষা করেছ? যদি করো, তা হলে বুঝতে পারবে।’’ এই কথাটাই ঋতুপর্ণার (সেনগুপ্ত) সংলাপে ছিল ‘প্রাক্তন’-এ। যেটা দেখে জিনিয়া একটু রেগে বলেছিল, ‘‘আমার কথাটা তুমি সিনেমার সংলাপ করে দিলে?’’ (হাসি)

প্রশ্ন: মান-অভিমান হয়?

শিবপ্রসাদ: সেটা তো যে কোনও সম্পর্কে স্বাভাবিক। জিনিয়া এই মুহূর্তে আমার খুব ভাল বন্ধু। আমার অনেক কিছু বোঝে। এখন জিনিয়া অনেক ছবির চিত্রনাট্য লেখে। সে সময়ে আমার রোলটা একটু শিফ্‌ট করতে হয় (হাসি)। এক বার একটা লেখা দেখে বলেছিলাম, ‘‘কিচ্ছু হয়নি। একদম হাফ বেক্‌ড একটা ভাবনা।’’ সেটা শুনে জিনিয়া পুরো শক্‌ড। বলেছিল, ‘‘একটু অন্য ভাবেও বলতে পারতে।’’ (হাসি)। তবে জোক্‌স অ্যাপার্ট, আমার জীবনের খুব বড় সাপোর্ট আমার স্ত্রী। পারিবারিক অনেক দায়িত্ব ভাগ করে নেয়। আমার মা আমাদের সঙ্গেই থাকেন। সেটা আমার কাছে একটা বড় পাওয়া।

প্রশ্ন: ৪৯ তম জন্মদিনে কী পরিকল্পনা?

শিবপ্রসাদ: এখন জন্মদিনে আমার তিন জন থাকলেই হয়ে যায়। আমার মা, আমার স্ত্রী আর নন্দিতা’দি। এই তিন জনের সঙ্গে এই দিনটা কাটাতে পারলে আমার প্রত্যেক মে মাসে আমার ছবি হিট হলে আমার আর কিছু চাই না। অবশ্য আমার অফিসের সব সহকর্মী কিছু না কিছু প্ল্যান করে প্রত্যেক বারই। সেটাও মন্দ লাগে না।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy