পার্নো মিত্র। ছবি: সংগৃহীত।
তিনি নাকি একটু মেজাজি। কাজ করেন আপন শর্তে। হয়তো ইন্ডাস্ট্রির বাকিদের তুলনায় একটু ব্যতিক্রমী। অভিনেত্রী পার্নো মিত্রকে নিয়ে নানা মন্তব্য শোনা যায়। সত্যিই কি তাই? সম্প্রতি এক দুপুরে মধ্য কলকাতার এক ক্যাফেতে আনন্দবাজার অনলাইনের রেকর্ডারের সামনে খোলা মনে কথা বললেন পার্নো।
প্রশ্ন: আপনাকে তো সব সময় পাওয়া যায় না। কেমন আছেন?
পার্নো: খুব ভাল। নতুন ছবি মুক্তি পাচ্ছে। যাঁরা একটু রহস্য-রোমাঞ্চ পছন্দ করেন, তাঁদের ‘তারকার মৃত্যু’ ছবিটা পছন্দ হবে।
প্রশ্ন: বছর প্রায় শেষ হতে চলল। পার্নোর ছবি মুক্তি পাচ্ছে। অনুরাগীরা নিশ্চয়ই এতটা অপেক্ষা করতে রাজি নয়।
পার্নো: বছর শেষ হতে এখনও অনেক দেরি আছে (হাসি)। অনুরাগীদের প্রতিক্রিয়া পাই। এই অনুরাগীরাই কিন্তু আবার বাংলা ছবি দেখতে হলে আসেন না। তাঁরাই ওটিটির জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। আমার কাজ অভিনয় করা। আমার কাজটা দর্শকের পছন্দ হলে সেটাই আমার কাছে অনেক।
প্রশ্ন: এই ছবিতে আপনার চরিত্রের কি মৃত্যু হবে?
পার্নো: কেন বলব? (হাসি) এখনই সবটা বলতে চাই না। তবে চরিত্রটা এক জন শিক্ষিকার। সে এক জন লেখককে বিয়ে করে। পাহাড়ে গিয়ে তার পর ওরা একটা রহস্যের মধ্যে জড়িয়ে পড়ে।
প্রশ্ন: বছরের শুরুর দিকে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘হোমস্টে মার্ডার্স’ ওয়েব সিরিজ়ে আপনার চরিত্রটি মারা যায়। এখানেও ছবির ট্রেলারে সে রকম ইঙ্গিত। বিষয়টা কি কাকতালীয়?
পার্নো: হতে পারে। এই ছবিটা কিন্তু সিরিজ়ের আগে শুট করা হয়েছে। হয়তো পর পর মুক্তি পাচ্ছে বলে মানুষ এ রকম ধারণা করছেন।
প্রশ্ন: আপনার শেষ ছবি ‘ধর্মযুদ্ধ’ গত বছর মুক্তি পেয়েছিল। ছবির সংখ্যা এত কমে গেল কেন?
পার্নো: সংখ্যা কমেনি। (একটু ভেবে) তা হলে একটু বুঝিয়ে বলি। এই মুহূর্তে ‘অঙ্ক কী কঠিন’ ছবিটার শুটিং চলছে। ২০২০ সালে সিরিয়াল করছিলাম। ছবি করার সুযোগ ছিল না। পরের বছরের একটা বড় সময় লকডাউন ছিল। তাই আমার অনেকগুলো ছবির মুক্তি আটকে ছিল। ‘পাকদণ্ডী’ ছবিটা মুক্তি পাবে। ‘বনবিবি’ ছবিটা তৈরি। চন্দন রায় সান্যালের হিন্দি ছবি আছে। দুটো বাংলাদেশি ছবির মুক্তি আটকে। তাই মনে হচ্ছে কাজের সংখ্যা কমে গিয়েছে।
প্রশ্ন: বছরে কম সংখ্যক ছবি মুক্তি পেলে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে থাকার ভয় কাজ করে না?
পার্নো: বছরে তিনটে ছবি যথেষ্ট। সত্যিই যদি বেছে কাজ করতাম, তা হলে হয়তো ১২ বছরের কেরিয়ারে আমি পাঁচটা ছবিতে অভিনয় করতাম। কিন্তু সেই সুবিধে বা বিলাসিতা আমাদের এখানে নেই। আমার মনে হয় না কোনও অভিনেতার বছরে তিনটের বেশি ছবি মুক্তি পাওয়া উচিত।
প্রশ্ন: কেন বলুন তো?
পার্নো: এক জন শিল্পীর তিনটে ছবিই কি ভাল হবে? আমার তো মনে হয় না। আর তিনটে ছবি মুক্তি পেলেও দর্শক কি তিনটে ছবিই দেখতে যাবেন? আপনি পরিসংখ্যান দেখে নিন। তাই এর থেকে বেশি ছবি করলে আমার মন হয়, ছবির ক্ষতি, দর্শক আগ্রহ হারাবেন এবং শিল্পীর ক্ষতি।
প্রশ্ন: দর্শক কমছে বলেই কি নির্মাতারা ঝুঁকি নিতে চাইছেন না?
পার্নো: দর্শক তো কমছেই। বলিউডেও একই অবস্থা। আলিয়া ভট্ট ইন্ডাস্ট্রির প্রথম সারির নায়িকা। তিনিও তাঁর প্রযোজিত ছবি (ডার্লিংস) ওটিটিতে রিলিজ় করলেন। প্রেক্ষাগৃহে একটা ছবি রিলিজের খরচটাও তো ভাবতে হবে। কনটেন্ট যদি খুব ভাল হয়, একমাত্র তা হলেই দেখবেন যে দর্শক রমরমিয়ে হল ভরিয়ে দিচ্ছেন।
প্রশ্ন: ‘রঞ্জনা আমি আর আসব না’ বা ‘বংস এগেইন’-এর মতো ছবি আর করতে ইচ্ছে করে না?
পার্নো: ইচ্ছে তো করেই। ওটা একটা আলাদা সময় ছিল। এখন হয়তো মানুষ থ্রিলার এবং গোয়েন্দা নির্ভর ছবি বেশি পছন্দ করছেন। যেটা দর্শকের পছন্দ, নির্মাতারা তো সেই ধরনের বিষয়কেই বেছে নেবেন। সে দিনই অঞ্জনদার (পরিচালক অঞ্জন দত্ত) সঙ্গে কথা হচ্ছিল। আমি তো মজা করে ওঁকে বললাম যে, দোষটা ওঁর। তিনি ব্যোমকেশ পরিচালনার করার পর সবাই দেখছি ব্যোমকেশ নিয়ে ছবি তৈরি করছে (হাসি)। কিন্তু তাতে তো দোষ নেই। দর্শক যেমন এক সময় ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’ দেখেছেন, এখন তাঁরাই তো ‘বেলাশেষে’ দেখেছেন।
প্রশ্ন: আপনি তো কমেডির পাশাপাশি ‘অপুর পাঁচালী’ বা ‘ডুব’-এর মতো ছবিও করেছেন। আপনার কি কখনও মনে হয়েছে আপনি ইন্ডাস্ট্রির গোষ্ঠী-রাজনীতির শিকার?
পার্নো: যাঁরা লবি করছেন, তাঁরা ভাল বলতে পারবেন। আমি জানি না। আমি এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাই না।
প্রশ্ন: টলিপাড়ায় ‘স্বজনপোষণ’ তো রয়েছে বলেই অনেকের মত।
পার্নো: আমার কোনও পরিচালককে ভাল লাগলে আমি তো তার সঙ্গেই বেশি কাজ করতে চাইব। রাজের (পরিচালক রাজ চক্রবর্তী) সঙ্গে ‘ধর্মযুদ্ধ’ করার পর আমার মনে হতেই পারে ওর সঙ্গে আরও একটা ছবি করার। মৈনাকের (পরিচালক মৈনাক ভৌমিক) অনেক ছবি করেছি। ও নতুন কিছু নিয়ে এলে আমি অবশ্যই সেই কাজটা করব। এটা তো সাধারণ জিনিস। নতুন কেউ হতে পারেন। চরিত্রটা চ্যালেঞ্জিং হতে হবে। ওই একই ধরনের চরিত্র হলে করব না।
প্রশ্ন: একটা উদাহরণ দেবেন?
পার্নো: যেমন ‘মন্দার’ বা ‘বল্লভপুরের রূপকথা’ খুব নতুন ধরনের কাজ। মিতিন মাসিতে মহিলা গোয়েন্দা কোয়েল অ্যাকশন করছে। ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’-এ শুভশ্রীকে আমার অসাধারণ লেগেছে। মহিলারা যে নতুন ধরনের কাজ করতে পারেন, এগুলোই তো সেটা প্রমাণ করে। আমার মনে হয়, আমাদের এখানে ভাল গল্প এবং চিত্রনাট্যকারেরও অভাব রয়েছে। আমাদের প্রত্যেককেই কমফোর্ট জ়োন থেকে বেরিয়ে এসে ভাবতে হবে। তা না হলে এটা হবে না।
প্রশ্ন: ‘কোড়া পাখি’ তো জনপ্রিয় সিরিয়াল। সিরিয়াল নিয়ে কোনও ভাবনা নেই?
পার্নো: গল্পটা খুবই আধুনিক ছিল বলে তখন করেছিলাম। এই মুহূর্তে সে রকম কোনও পরিকল্পনা নেই। তা ছাড়া আমাদের নিয়ে ভাবলে শুনেছি সিরিয়ালের বাজেটও বেশি রাখতে হয়। নতুন নায়িকা নিলে সেটা হয় না। মাঝে একটা-দুটো প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু চরিত্র পছন্দ হয়নি বলে রাজি হইনি। কেউ যদি আগামী দিনে আমাকে নিয়ে ভাবেন, পছন্দ হলে নিশ্চয়ই করব।
প্রশ্ন: অনেকে বলেন আপনি নাকি ভীষণ মুডি?
পার্নো: (হাসতে হাসতে) কী অর্থে বলুন তো? ভাল না কি খারাপ! আমি বলব আমি ভীষণ চুজ়ি। দেখুন, শিল্পী যদি খুব শান্ত হন, তিনি যদি আবেগপ্রবণ না হন, তাঁর মধ্যে যদি একটু পাগলামো না থাকে তা হলে তিনি কোনও কিছু করতে পারবেন বলে মনে হয় না। এই তো ঋত্বিককে (অভিনেতা ঋত্বিক চক্রবর্তী) নিয়ে অনেকেরই অভিযোগ, ও নাকি ফোন তোলে না! আরে, সব সময় ফোন তুলে চারটে প্রশ্নের উত্তর সে না-ই দিতে পারে। আমার তো সেটা ভাল লাগে না।
প্রশ্ন: বাড়িতে থাকলে সময় কাটে কী ভাবে?
পার্নো: কেটে যায়। আসলে আমি একা থাকতে ভীষণ পছন্দ করি। সারা ক্ষণ পার্টি করা আমার ভাল লাগে না। বই, পোষ্যদের নিয়ে দিব্যি সময় কাটে। সম্প্রতি জিমে যাওয়া শুরু করেছি। সময় পেলে বেড়াতেও যাই। আই লাভ মাই লাইফ।
প্রশ্ন: আপনি কখনও অবসাদে ভুগেছেন?
পার্নো: হ্যাঁ। তবে চিকিৎসকের পরামর্শে আমি এখন ভাল আছি। এটাও একটা কারণ যে আমার সব সময় সব কিছু করতে ভাল লাগে না। আমি আমার নিজের দুনিয়াতেই ভাল থাকি। আমরা যে পেশায় রয়েছি, সেখানে অনেকেই অবসাদের শিকার। কিন্তু সেটা প্রকাশ্যে কেউ স্বীকার করতে চান না। অনেক সময়ে চারপাশে যাঁরা অবসাদে ভুগছেন, তাঁরা তাঁদের সমস্যাটাকেই হয়তো বুঝতে পারেন না। নিজেকে বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে ব্যস্ত রাখি। জীবনটাকে আমার মতো করে উপভোগ করি।
প্রশ্ন: পার্নো মিত্র কি এখন ‘সিঙ্গল’?
পার্নো: কেন বলব? কী মনে হয়?
প্রশ্ন: ইন্ডাস্ট্রিতে তো অনেক রকম কথাই শোনা যায়। তাই আপনার মুখ থেকে শুনতে চাইছি।
পার্নো: দেখুন, আমার ব্যক্তিগত জীবনটা সব সময়েই আড়ালেই রাখতে চাই। এটা নিয়ে কথা বলতে চাই না। আমি খুবই আনন্দে রয়েছি।
প্রশ্ন: বিয়ে নিয়ে আপনার কী পরিকল্পনা?
পার্নো: আগে পাত্র পাই (হাসি)। ঠিক সময়ে জানিয়ে দেব।
প্রশ্ন: পুজোয় কী করবেন?
পার্নো: সব কাজ শেষ করতে পারলে কোথাও ঘুরতে চলে যেতে পারি। না হলে বাড়িতেই থাকব। হয়তো দুটো বন্ধুর বাড়ি যাব। সেটাও হয়তো হাফ প্যান্ট-টি-শার্ট পরে। মাংস-ভাত খেয়ে চুটিয়ে আড্ডা দিয়ে বাড়ি ফিরে আসব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy