খরাজ মুখোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
ছবির প্রচারের ব্যস্ততার ফাঁকেই পাওয়া গেল তাঁকে। তখনও জানতেন না তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ সাক্ষাৎকারের অনুরোধ আসবে। শুনে বললেন, ‘‘প্রশ্ন করতে থাকুন। আমি আমার মতো উত্তর দিতে থাকব।’’
প্রশ্ন: এই বছর নামের পাশে ‘সিনিয়র সিটিজ়েন’ তকমা জুড়ে যাবে। জীবনের এই পর্যায় আপনার কাছে জন্মদিন শব্দটার অর্থ কী রকম?
খরাজ: গ্লাসের অর্ধেক জলে ভর্তি আবার অর্ধেকটা খালি (হাসি)। ইতিবাচক দিক থেকে ভাবলে এখনও সুস্থ ভাবে কাজ করতে পারছি, দর্শকদের পছন্দের মানুষ হয়ে রয়েছি। আর কী চাই! আসলে জীবন তো একটা সিগারেট! পুড়ছে...একটা সময় তো শেষ হবেই। তার আগে যেটুকু সুখটান উপভোগ করা যায়।
প্রশ্ন: বাড়িতে নিশ্চয়ই সকলে আপনার জন্মদিন উদ্যাপনের চেষ্টা করেন?
খরাজ: বাড়ির লোক তো কেক নিয়ে আসেন। পরিবারের তরফে এই দিনে কাজ না রাখার অনুরোধও আসে। কিন্তু সব সময় সেই অনুরোধ রাখা সম্ভব হয় না। আমাদের পেশা তো ডাক্তারদের মতোই। সব সময় পরিবারের কথা মাথায় রেখে বাঁচা যায় না, সাধারণ মানুষের কথাও ভাবতে হয়।
প্রশ্ন: বাবা চাইতেন, ছেলে সরকারি চাকরি করুক। রেলের চাকরি ছেড়ে হঠাৎ অভিনয়ে চলে এলেন কী ভাবে?
খরাজ: অভিনয় তো অনিশ্চিত পেশা। তাই বাবা একটু ভয় পেতেন। রেলে চাকরি করতে করতেই টুকটাক অভিনয় করতাম। ফলে অফিসেরও ক্ষতি হত। নিজের মধ্যেও একটা অনুশোচনা কাজ করত যে সরকারি একটা আসন দখল করে বসে থাকার কোনও অধিকার আমার নেই। তাই দু’নৌকায় পা রেখে আর এগোতে চাইনি।
প্রশ্ন: কিন্তু আপনার সিদ্ধান্তকে পরিবার কি তখন সমর্থন করেছিল?
খরাজ: ওই যে বলে সফল পুরুষের পিছনে এক জন মহিলার অবদান থাকে। আমার ক্ষেত্রে সেটা ছিল আমার স্ত্রী (প্রতিভা মুখোপাধ্যায়)। আমি এক দিন প্রতিভাকে মনের কথা খুলে বললাম। ও সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টা বুঝতে পেরে সোজাসুজি আমাকে বলল, ‘‘তোমার মন যেটা চাইছে, সেটাই করো।’’ ১৯৯৯ সালে চাকরি ছেড়ে পুরোপুরি অভিনয়ে চলে এলাম।
প্রশ্ন: আপনি তো একাধিক শিল্পীর হয়ে ডাবিং করেছেন। তাঁদের কণ্ঠস্বর নকল করতে আপনার এই মুনশিয়ানা নিয়েও ইন্ডাস্ট্রিতে কথা হয়। এই কৌশল কি শৈশবেই রপ্ত করেছিলেন?
খরাজ: কলেজে অনুরাগ হীরা নামে আমার এক বন্ধু ছিল। আমাকে একটা সাদা কাগজে সই করতে বলত। তার পর নিজে সেই পাতায় আরও ৫০-৬০টা সই করত। তার পর আমি কোনটা করেছি খুঁজে বার করতে বলত। স্বাভাবিক ভাবেই আমি ভুল বলতাম। তার পর ও আমার সইটা দেখিয়ে দিত। আমি অবাক হয়ে ভাবতাম, তা হলে এক জন অন্যের মতোও কাজ করতে পারে। ওকে জিজ্ঞাসা করতেই খুব সুন্দর একটা উত্তর দিয়েছিল। বলেছিল, ‘‘আরে, আমি তো আসলে ছবি আঁকি। তোদের সইগুলো আমার কাছে ছবির মতো।’’ আমার ক্ষেত্রেও নকল করাটা অনেকটা ওই রকম। প্রত্যেকেই ছোটবেলায় স্কুলে শিক্ষকদের নকল করার চেষ্টা করে। সব মানুষের মধ্যেই এই স্বভাব রয়েছে। সেটা কাজে লাগিয়ে পরবর্তী কালে কেউ কেউ হয়তো অভিনেতা হয়ে যান।
প্রশ্ন: কিন্তু কাউকে নকল করা তো সহজ নয়। আপনি সেখানে সাবলীল ভাবে ছবি বিশ্বাস থেকে শুরু করে রবি ঘোষ— একের পর এক শিল্পীকে নকল করেন কী ভাবে?
খরাজ: গান শেখার সময় মানুষকে তো সুর, তাল সব খেয়াল রাখতে হয়। মিমিক্রি জিনিসটাও তাই। এখন তো অভিনয় অনেকটাই বাস্তবের মাটিতে নেমে এসেছে। অতীতের শিল্পীদের কণ্ঠস্বর বা তাঁদের অভিনয়ের ডায়নামিক্স এতটাই বেশি ছিল যে, শনাক্ত করাটা সহজ ছিল। স্টুডিয়োর বাইরে থেকে শুনে বুঝতে পারতাম, কোন সংলাপটা অনিল চট্টোপাধ্যায় বলছেন বা কোনটা রবি ঘোষ।
প্রশ্ন: আচ্ছা, কোনও অভিনেতাকে তাঁর সামনে নকল করে দেখিয়েছেন?
খরাজ: হ্যাঁ। রঞ্জিৎ মল্লিক। একটা অভিজ্ঞতা মনে পড়ে যাচ্ছে। ‘শিকার’ ছবির সেটে পরিচালক কোয়েলকে বলেছিলেন যে আমি রঞ্জিৎদাকে খুব ভাল নকল করতে পারি। কোয়েল দেখে হেসে খুন। পরে ও রঞ্জিৎদাকে সেটা জানিয়েছিল। মমদির (মমতা শঙ্কর) ছেলে রাতুলের বিয়ের অনুষ্ঠান। উপহার দিতে গিয়ে মঞ্চে রঞ্জিৎদার সঙ্গে আমার দেখা। প্রচণ্ড ভিড়। তার মধ্যেই রঞ্জিৎদা বললেন (রঞ্জিৎ মল্লিকের অনুকরণ করে বললেন), ‘‘খরাজ ভাই, আপনার সঙ্গে আমার একটু দরকার আছে। শুনেছি, আপনি নাকি আমার গলা খুব ভাল নকল করেন! একটু করে দেখান না।’’ সামনে তখন বৌদি দাঁড়িয়ে। সে যাত্রায় আমি খুব লজ্জায় পড়েছিলাম।
প্রশ্ন: চার দশক ধরে অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। অভিনয়ের ক্ষেত্রে আপনার অনুপ্রেরণা কারা?
খরাজ: অতীতের অভিনেতাদের দেখেছি হয়তো সাদা-কালোয়। কিন্তু মানুষগুলো ছিল বড্ড রঙিন। রবিদা (রবি ঘোষ), ভানুদা (ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়)— প্রচুর নাম করা যায়। শুধু অভিনয় নয়, এঁদের সংস্পর্শে এসে মানুষ হিসেবেও নিজেকে অনেকটাই গড়েপিটে নিতে পেরেছি। একটা অভিজ্ঞতার কথা বলি। তখন আমি বেশ নতুন। একটা প্রজেক্টে ছ’দিন কাজ করেছি। এ দিকে প্রোডাকশন ম্যানেজার কিছুতেই পারিশ্রমিক দিচ্ছেন না। ৬০ টাকা দৈনিক হিসাব করলে ৩৬০ টাকা পাওনা। তখন আমার কাছে সেটা অনেক টাকা! এক জনের পরামর্শে অনিল চট্টোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হলাম। আমি বলতেই উনি প্রোডাকশন ম্যানেজারকে এক দিনের মধ্যে আমার পারিশ্রমিক মেটানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। আমিও পর দিন টাকা পেয়ে গিয়েছিলাম।
প্রশ্ন: কেরিয়ারে আপনার সমকালীন অভিনেতাদের মধ্যে কখনও কাউকে নিজের প্রতিযোগী হিসেবে মনে হয়েছে?
খরাজ: কোনও দিনও মনে হয়নি। অভিনেতা এবং অভিনেত্রী— প্রত্যেকের থেকেই আমি শেখার চেষ্টা করি। নতুনদের কাজও আমি দেখি। আমার মধ্যে এ নিয়ে কোনও রকম ছুঁতমার্গ নেই। তবে আমি কিন্তু স্পষ্টবক্তা। কারও অভিনয় ভাল লাগলে সেটা যেমন বলি, তেমনই কারও অভিনয় অপছন্দ হলে সেটাও তাঁর মুখের উপরেই বলে দিই। কারণ এ ক্ষেত্রে ঋত্বিক ঘটকের সেই বিখ্যাত উক্তি আমার মনে পড়ে যায়— ‘‘শিল্প নিয়ে তঞ্চকতা করো না!’’
প্রশ্ন: কেরিয়ারের শুরুর দিকে তো আপনি বেশ রোগা ছিলেন। তারকারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্য সচেতন হন। পরের দিকে আপনার ওজন বেড়ে গেল কী ভাবে?
খরাজ: ১৩ বছর আগে রানাঘাট থেকে একটা শো করে ফেরার পথে আমডাঙার কাছে একটা মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হই। (হাসতে হাসতে) ডান পা ঘুরে রীতিমতো ল্যাজ হয়ে গিয়েছিল! অপারেশনের পর দীর্ঘ দিন বিছানায় শয্যাশায়ী থাকতে হয়েছিল। পরে ডাক্তার বলেই দিয়েছিলেন যে, খুব বেশি শরীরচর্চা করতে পারব না। এই হচ্ছে আমার চেহারা ভারী হওয়ার কারণ। তবে এর জন্য কিন্তু পরোক্ষে আমার প্রচুর লাভও হয়েছে।
প্রশ্ন: সে কী! একটু খুলে বলুন না।
খরাজ: (হেসে) যখন রোগা ছিলাম, প্রচুর মানুষের দরজায় দরজায় ঘুরেও কাজ পাইনি। বুঝতে পারি, ‘বেঢপ’ একটা চেহারার মধ্যে থাকতে হবে। তা হলে মানুষ আমাকে হয়তো নজর করবেন। হয় রনির (রজতাভ দত্ত) মতো চওড়া চোয়াল থাকতে হবে বা অম্বরীশের (অম্বরীশ ভট্টাচার্য) মতো গোলগাপ্পা হতে হবে। কিংবা পরান বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো একটা বড় টাক থাকতে হবে। তাই এখন এই চেহারা আমার কাছে শাপে বর!
প্রশ্ন: আপনার রান্নার হাত তো খুব ভাল। কাজের ব্যস্ততায় বাড়িতে রান্নার সময় পান?
খরাজ: বাড়িতে থাকলে প্রতি দিন রান্না করি।
প্রশ্ন: আপনার হাতের কোন পদ এক বার খেলে অতিথিরা আবার খেতে চাইবেন?
খরাজ: ছেলে বলে মাংস, স্ত্রী বলে মাছ। আর বৌমা বলে সব্জি। বন্ধুদের মধ্যে কেউ আবার চচ্চড়ি এবং নুডলসের কথা বলেন।
প্রশ্ন: ভাল রান্না জানলে মেয়েদের মন জেতা সহজ। প্রেমের প্রস্তাব পান?
খরাজ: (একটু ভেবে) প্রেমের নয়, তবে অন্য রকম প্রস্তাব আসে।
প্রশ্ন: কী রকম?
খরাজ: মনের কথা ভাগ করে নেওয়ার প্রস্তাব। আজকের সমাজে মানুষের মনে প্রচুর কথা জমে থাকে। সেগুলো ভাগ করে নেওয়ার মতো মানুষ পাওয়া যায় না। তাঁরা অনেকে কথা বলেন। আমিও তাঁদের সঙ্গে নিজের মনের কথা ভাগ করে নিই।
প্রশ্ন: আপনার স্ত্রী জানেন?
খরাজ: কেন জানবে না? এর মধ্যে তো দোষের কিছু নেই। আমার স্ত্রীরও হয়তো সে রকম কেউ রয়েছেন। আর মনের কথা বলার জন্য সব সময়েই যে বিপরীত লিঙ্গের কাউকে থাকতে হবে, তা কিন্তু নয়।
প্রশ্ন: তারকাদের জন্য অনুরাগীরা অনেক সময় নানা রকম উন্মাদনা করে থাকেন। আপনার এমন কোনও ঘটনার কথা মনে পড়়ে?
খরাজ: দুটো ঘটনা। মনে আছে, এক বার প্রচণ্ড ঠান্ডায় কোচবিহারে শো করে কলকাতা ফিরব। এ দিকে ফ্লাইটের টিকিট পাইনি। অগত্যা ভোরের শতাব্দী এক্সপ্রেস ধরার জন্য গভীর রাতেই আমরা স্টেশনে হাজির হলাম। প্রচণ্ড ঠান্ডা, সব দোকান বন্ধ। প্ল্যাটফর্মে বসে আছি। হঠাৎ দেখি এক জন বৃদ্ধা আমার সামনে এসে উপস্থিত। আমি প্রথমে ভাবলাম ভিক্ষা চাইছেন। তার পর উনি হঠাৎ আঁচল থেকে দুটো টাকা বার করে আমার হাতে দিয়ে বললেন, ‘‘ওই টিভিটায় তোমাকে দেখালে আমি দেখি। তোমার অভিনয় আমার ভাল লাগে। বাবা, আমার তো তোমাকে দেওয়ার মতো কিছু নেই। এই টাকাটা দিয়ে কিছু কিনে খেয়ো।’’ আমি হতবাক! তত ক্ষণে আমি কেঁদে ফেলেছি। এই প্রাপ্তি যে কোনও পুরস্কারের তুলনায় কম। ওই টাকাটা আজও আমি বাড়িতে যত্ন করে রেখে দিয়েছি।
প্রশ্ন: আর দ্বিতীয় ঘটনাটি?
খরাজ: কোলাঘাট থেকে খড়্গপুর যাওয়ার পথে মেছোগ্রামের পর দু’পাশে চাষের জমি। রাতে ক্ষেতে হালকা লাইট জ্বলে, একদম মায়াবী পরিবেশ। ওখানে মূলত ফুলের চাষ হয়। মাঘ মাসের শীত। একটা প্রত্যন্ত গ্রামে শো। রাত ২.৩০ নাগাদ স্টেজ পাওয়ার কথা। মেছোগ্রাম পেরিয়ে আমাদের গাড়ি হঠাৎ থেমে গেল। সামনে দেখি রাস্তা জুড়ে ফুল প্যাকিং হচ্ছে। শয়ে শয়ে লোক কাজ করছেন। গাড়ি এগোচ্ছে না। আমার এক ছাত্র রাস্তা খালি করার অনুরোধ করতে গেল। কেউ পাত্তা দিল না। ড্রাইভারকে পাঠানো হল। কোনও কাজ হল না। শেষে আমার পালা এল। গাড়ি থেকে নেমে অনুরোধ করলাম, ‘‘দাদা, একটু যেতে দিন। শো না করলে পাবলিকের হাতে মার খাব!’’ এটা বলতেই ওদের মধ্যে সর্দার গোছের এক জন লোক এসে বললেন, ‘‘আপনার অনুষ্ঠান?’’ মাথা নাড়তেই উনি একটা হুঙ্কার দিলেন, চোখের নিমেষে দেখি সামনের রাস্তা খালি। আমার দিকে ফিরে বললেন, ‘‘যান, গাড়িতে গিয়ে বসুন। আর কাচ নামিয়ে দিন।’’ গাড়িতে বসতেই দেখলাম জানলা দিয়ে ওরা ভেতরে ফুল ফেলতে শুরু করল। মুহূর্তের মধ্যে আমাদের গাড়ির ভেতরটা ফুলে ভর্তি হয়ে গেল। এখনও ভাবলে অবাক হই। জানেন, বিয়ের পর আমার ফুলশয্যা হয়নি। ঈশ্বর আমাকে সেই অনুভূতি ওই শীতের রাতে ওই ভাবে উপহার দিয়েছিলেন বলে মনে হয়।
প্রশ্ন: অভিনয় বা শো নিয়ে কথা হলে আপনার মুখে মফস্সলের মানুষের কথা বার বার ফিরে আসে...।
খরাজ: আমার গান এবং অনুষ্ঠান কলকাতায় ব্রাত্য। কলকাতার মানুষ এখন বড্ড নাকউঁচু! কোনও কিছুই আর তাঁদের ভাল লাগে না! কিন্তু বাংলার গ্রামের মানুষ আমার অনুষ্ঠান খুবই পছন্দ করেন। ইন্ডাস্ট্রিতে আমার সতীর্থদের মধ্যে অনেকেই এই বিষয়ে আমার সঙ্গে সহমত হবেন বলেই আমার বিশ্বাস। গ্রামবাংলার মানুষই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। এবং তাঁদের পারফরম্যান্স দেখেও মাঝেমধ্যে আমার তাক লেগে যাচ্ছে। সে দিন দূরে নেই, যখন ওঁরাই আমাদের চমকে দেবেন।
প্রশ্ন: এই ভাবনা থেকেই কি মাঝেমাঝে বীরভূমের পাথাইয়ের বাড়িতে চলে যান? লকডাউনের সময়েও তো ওখানেই ছিলেন।
খরাজ: (হেসে) গ্রামে থাকতে আমার ভীষণ ভাল লাগে। কিন্তু গ্রামে থাকলে তো আর অভিনয় চালিয়ে যেতে পারব না। যেমন আমার নাটকে অভিনয় করতে ভাল লাগে। কিন্তু তাতে তো আর পেট চলবে না। তাই ছবির কাজও করতে হয়।
প্রশ্ন: তা হলে কি অবসর নেওয়ার পর গ্রামের বাড়িতেই চলে যাবেন?
খরাজ: আমার এবং গিন্নির তো এটা বহু দিনের প্ল্যান। কারণ কুঁতিয়ে কুঁতিয়ে উপার্জন করে যেতেই হবে, এ রকম বাসনা আমাদের দু’জনের নেই। আমার স্ত্রী ঈশ্বরে বিশ্বাসী। দেশের বাড়িতে একটা রাধাকৃষ্ণের মন্দির করেছেন। নিত্যসেবা হয়। দোলে বড় উৎসব হয়। পাথাইয়ের স্থানীয় মানুষদের নিয়ে আমারও একটা নাটক করার ইচ্ছে রয়েছে। ওদের নিয়ে আগেও কাজ করেছি। কিন্তু ওখানে থাকতে শুরু করলে আরও বেশি সময় দিতে পারব। তাই কত্তা-গিন্নির শেষ জীবনটা ভালই কাটবে মনে হয়।
প্রশ্ন: এখনও কোনও স্বপ্নকে ধাওয়া করেন?
খরাজ: শহরে তো প্রচুর সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আমাদের থিয়েটারের জন্য হলের প্রয়োজন। অর্ধেক সময় শোয়ের জন্য বুকিং পেতে অসুবিধা হয়। এই হলগুলোকে সরকারি হলে পরিণত করা হলে নাট্যজগতের খুব উপকার হবে। পাশাপাশি এই সব প্রেক্ষাগৃহের মালিকরাও উপকৃত হবেন। ব্যক্তিগত স্বপ্ন, ভাল নাটক লিখতে চাই। আর নিজের লেখা গল্প অবলম্বনে একটা ছবি পরিচালনারও ইচ্ছে রয়েছে।
প্রশ্ন: শুনেছি মঞ্চে শো নিয়ে আপনি নাকি এক্সপেরিমেন্ট করছেন।
খরাজ: ঠিকই শুনেছেন। এখন মানুষ বড্ড অধৈর্য। একাগ্রতা হারিয়ে যাচ্ছে। সবটাই এখন মোবাইলের ‘রিল’-এর মতো দ্রুত চাই। এখনকার দর্শক চটজলদি শো দেখতে চান। আমি বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের মোট ১২টা নাটক লিখেছি। কিন্তু সেগুলোয় অভিনয় করবেন দু’জন করে। নাম দিয়েছি ‘ডজন দু’জন’। কম চরিত্র হওয়ায় দর্শক এই ফরম্যাটের শো উপভোগ করছেন।
প্রশ্ন: বড় পর্দায় অভিনয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ কোনও লক্ষ্য রয়েছে?
খরাজ: খুব শীঘ্র দর্শক আমাকে বড় পর্দায় ‘বগলামামা’-র চরিত্রে দেখবেন। অভিনয় করতে গিয়ে চরিত্রটার প্রেমে পড়ে গিয়েছি। এটা একটা ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি হওয়ার কথা আছে। আগামী এক বছর এই চরিত্রটার জন্য আরও ভাল ভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে চাই।
প্রশ্ন: এক জন শিল্পী হিসাবে আপনার কোনও আক্ষেপ রয়েছে?
খরাজ: নেই। আমার জীবন ধন্য। যা পেয়েছি, যা পাচ্ছি— তার পর এই জীবন নিয়ে আক্ষেপ করার কোনও জায়গাই নেই।
প্রশ্ন: খরাজ মুখোপাধ্যায় তো এক জন অভিনেতা। কিন্তু তাঁকে সিংহভাগ মানুষ ‘কমেডিয়ান’ বলে দাগিয়ে দিলে খারাপ লাগে না?
খরাজ: ভাগ্যক্রমে কেরিয়ারে নানা স্বাদের চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছি। আর তকমা জুড়ে গেলে বুঝতে হবে আমার এই ধরনের অভিনয় দর্শক বেশি পছন্দ করেছেন। আমি রবিদাকে (রবি ঘোষ) এক বার এই একই প্রশ্ন করেছিলাম। আমি বলেছিলাম, রবিদা আপনাকে দেখে তো লোকে হাসে। আপনার নিজেকে কখনও জোকার মনে হয় না? রবিদা একটু চুপ করে থাকার পর বলেছিলেন (রবি ঘোষের কণ্ঠস্বর নকল করে), ‘‘তুই বাড়ি থেকে বেরোনোর পর তোকে দেখে একটা লোক হাসল। ভেবে দেখ, তাঁর জীবনে কত চিন্তা, অশান্তি। সেই সব মাথায় নিয়ে তোকে দেখে সে তোর অভিনয়ের কথা চিন্তা করে কিন্তু হাসল। এটা কিন্তু ঈশ্বরের অনেক বড় আশীর্বাদ। সবাই এটা পায় না।’’
প্রশ্ন: কখনও মনখারাপ হলে কী করেন?
খরাজ: রান্না। বৌয়ের সঙ্গে ঝগড়া (হাসি)। ঝগড়া করলে আমরা দু’জনেই রিফ্রেশ্ড হয়ে যাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy