শৈশব কেটেছে হাওড়ায়। বলিউডে কাজ করেও বাংলার সঙ্গে যোগসূত্র এখনও বজায় রেখেছেন পরিচালক নীরজ পাণ্ডে। কম কথা বলেন। বাছাই করে কাজ করেন। সম্প্রতি দিন দুয়েক শহরে কাটিয়ে গেলেন। শহরেই প্রকাশ্যে এসেছে তাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত ‘খাকি: দ্য বেঙ্গল চ্যাপ্টার’ ওয়েব সিরিজ়ের প্রথম ঝলক। বাংলার প্রেক্ষাপটে তৈরি এই সিরিজ়ের পাশাপাশি নানা বিষয়ে কথা বললেন নীরজ।
আরও পড়ুন:
প্রশ্ন: প্রায় ২৪ ঘণ্টা হতে চলল, সিরিজ়ের ঝলক প্রকাশ্যে এসেছে। কী রকম প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন?
নীরজ: খুব ভাল। আমি নিজে সমাজমাধ্যমে সক্রিয় নই। তাই যে কোনও প্রতিক্রিয়ার জন্য আমাকে সরাসরি মানুষের উপরেই নির্ভর করতে হয়। ঝলক প্রকাশের প্রথম ১২ ঘণ্টায় নাকি প্রচুর মানুষ সেটা দেখেছেন বলেই ওটিটি প্ল্যাটফর্মের কর্তাদের তরফে খবর পেয়েছি। এ বার দেখা যাক দর্শক কী বলেন।
প্রশ্ন: আপনি নাকি সুযোগ পেলেই কলকাতায় চলে আসেন?
নীরজ: ঠিক বলেছেন। ‘স্পেশ্যাল ২৬’ বা ‘এমএস ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’র মাধ্যমেও এই শহরের সঙ্গে যোগসূত্র বজায় রাখার চেষ্টা করেছি। এই সিরিজ়টার রেকির সময় এসেছিলাম। তার পর শুটিংয়ের সময়েও দু’বার ঘুরে গিয়েছি।
প্রশ্ন: একটা সময় ছিল যখন বলিউডের পরিচালকেরা ঘন ঘন কলকাতায় শুটিং করতেন। সেখানে মুখ্য চরিত্রে থাকতেন বলি অভিনেতারা, আর গুটি কয়েক স্থানীয় অভিনেতা। সেখানে আপনি মূলত বাঙালি অভিনেতাদের উপর ভরসা রাখলেন কেন?
নীরজ: প্রথমত, গল্পটা এই শহরের। দ্বিতীয়ত, ‘খাকি’র প্রথম পর্বেও আমরা কাস্টিংয়ের ক্ষেত্রে কোনও সুরক্ষিত পদক্ষেপ নিইনি। তা সত্ত্বেও সিরিজ়টা সফল হওয়ায় আমাদের মনোবল বেড়ে গিয়েছে। বাংলার গল্পে বাংলার অভিনেতারা থাকলে তার গ্রহণযোগ্যতাও অনেকাংশে বেড়ে যায়। সেখান থেকে জাতীয় স্তরেও সাফল্যের সুযোগ বেড়ে যাবে বলেই মনে হয়।
প্রশ্ন: জিতের সঙ্গে আপনি অতীতেও কাজ করেছেন। এই সিরিজ়ে জিতের কথা নিশ্চয়ই সকলের আগে ভেবেছিলেন?
নীরজ: না না! বরং পুরো উল্টো। বুম্বাদা (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়) প্রথমে রাজি হন। তিনি রাজি হওয়ার এক মাস পর চিত্রনাট্য শুনেছিলেন। সেখানে বলতে পারি, জিৎ অনেকটাই শেষের দিকে এই সিরিজ়ে যোগ দিয়েছিল। প্রথম রেকির সময় এক দিন শুধু জানতে চেয়েছিলাম, ওর কাজের খবর। যেই শুনেছি যে ও ফাঁকা আছে, সঙ্গে সঙ্গে ও উৎসাহ দেখায়।
প্রশ্ন: সুজয় ঘোষ বা অনুরাগ বসুর মতো বাঙালি পরিচালকেরাও একাধিক বার কলকাতায় শুটিং করেছেন। তবে সেখানে বাঙালি অভিনেতাদের আধিক্য ছিল না। বিষয়টা কি খুব কঠিন?
নীরজ: দেখুন গল্পের চাহিদাই তো অভিনেতা ঠিক করে দেয়। এই সিরিজ়ের ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে। তাই কে ঠিক করছে বা ভুল করছে, সেটা প্রশ্ন হতে পারে না। মোদ্দা কথা, প্রথম সিজ়নের পরে আমাদের কাছে বিষয়টা জলের মতো স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
প্রশ্ন: টোটা রায়চৌধুরীর সঙ্গে ‘স্পেশ্যাল অপ্স’-এর নতুন সিজ়ন...
নীরজ: (থামিয়ে দিয়ে) এখন এই বিষয়ে কোনও কথা নয় (হাসি)। টোটা অসাধারণ অভিনেতা। সত্যি বলতে অন্য সিরিজ়টার জন্যই ওকে এই সিরিজ়ে অভিনয়ের কথা বলতে পারিনি।
প্রশ্ন: আপনার পরিচালিত শেষ দুটো ছবি ‘অরো মে কহাঁ দম থা’ এবং ‘সিকন্দর কা মুকদ্দর’ নিয়ে আপনি কতটা খুশি?
নীরজ: দেখুন, বড় পর্দা এবং ওটিটি সম্পূর্ণ আলাদা বৃত্ত। প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির পর সেই ছবি ওটিটিতে অনেক সময় আরও ভাল ফল করতে পারে। বড় পর্দার জন্য আমার পরবর্তী ছবির চিত্রনাট্যের কাজও তো শুরু করে দিয়েছি। পরের বছরের শুরুতে শুটিং শুরু করব (হাসি)।

ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ।
প্রশ্ন: ২০২৪ সালটা নাকি বলিউডের জন্য খুব ভাল ছিল না। ইন্ডাস্ট্রির এক জন প্রযোজক-পরিচালক হিসাবে আপনার কী মত?
নীরজ: সেটা ঠিক। ছবির টিকিটের মূল্য থেকে শুরু করে অভিনেতাদের ক্রমবর্ধমান পারিশ্রমিক বা ছবির বিষয়বস্তু নির্বাচন— ইন্ডাস্ট্রিতে অনেকগুলো সমস্যা রয়েছে। মানুষ বছরের বিশেষ সময় ছাড়া প্রেক্ষাগৃহে যাচ্ছেন না। অন্য দিকে, ওটিটির বাড়বাড়ন্ত। অনেকগুলো জটিল সমস্যাকে অনেক সময়ই সরলীকরণ করে ফেলা হয়। তাতে কোনও লাভ নেই। মুশকিল হচ্ছে, বিষয়টা নিয়ে সকলে কথা বললেও কেউ সমাধান করছেন না।
প্রশ্ন: কী ভাবে এই সমস্যাগুলোর সমাধান হতে পারে বলে মনে হয়?
নীরজ: সমস্যা আরও বাড়বে। এমন গল্প বাছাই করতে হবে, যা দর্শককে প্রেক্ষাগৃহে টানতে বাধ্য করবে। দর্শক যদি বুঝতে পারেন, তা হলে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি আবার ভাল হবে। একটা নির্দিষ্ট দিনে টিকিটের মূল্য কমিয়ে প্রেক্ষাগৃহ হাউসফুল করে কোনও লাভ নেই! সব দিন যেন হাউসফুল হয়, সেই চেষ্টাই করতে হবে। তার জন্য নির্মাতা থেকে শুরু করে হলমালিক, পরিবেশক— সকলকে একসঙ্গে এগিয়ে এসে আলোচনায় বসতে হবে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে হবে। তার আগে কিছু বলাই মুশকিল।
প্রশ্ন: বলিউডের নতুন প্রজন্মের তারকাদের পারিশ্রমিক নিয়ে অনুরাগ কাশ্যপ একাধিক বার মুখ খুলেছেন। ‘এজেন্সি’ কি তারকাদের সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ নষ্ট করছে বলে মনে হয়?
নীরজ: কিছু জিনিস অতীতেও হয়েছে। এখনও হতে থাকবে। পুরো বিষয়টাই প্রযোজনা সংস্থার উপর নির্ভরশীল। তারা কী ভাবে তাদের অভিনেতাকে ব্যবহার করবেন, সেটা একান্ত তাঁদের সিদ্ধান্ত। শুক্রবার বক্স অফিসে কী ভাবে কাজ হয়, আমি সেটা নিয়ে কথা বলতে পারি। ভাল গল্প, নির্মাতাদের পাশে থাকার চেষ্টা করি। সেই ভাবেই আমার সফর এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রশ্ন: গত কয়েক বছরে দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রি সর্বভারতীয় স্তরে দর্শকের জন্য ছবি তৈরি করতে শুরু করেছে। বাংলা ইন্ডাস্ট্রির ক্ষেত্রে কোথায় সমস্যা হচ্ছে বলে মনে হয়?
নীরজ: আমি কলকাতায় অল্প অল্প কাজ করেছি। কিন্তু এখানকার ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে আমার খুব বেশি ধারণা নেই। তাই আমার পক্ষে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কঠিন। আমার মনে হয়, দেশের প্রতিটি আঞ্চলিক ইন্ডাস্ট্রিই এখন সর্বভারতীয় দর্শকের কাছে পৌঁছতে চাইছে। এটুকু বলতে পারি, কাউকে অনুকরণ করে কোনও লাভ হবে না।
প্রশ্ন: বাঙালি অভিনেতাদের নিয়ে হিন্দি সিরিজ় তৈরি হল। ভবিষ্যতে আপনার বাংলা ছবি তৈরির ইচ্ছে নেই?
নীরজ: সেটা জানি না। তবে খুব তাড়াতাড়ি যে এ রকম কিছু করব না, সেটুকু বলতে পারি। তার পর দেখা যাক না কী হয় (হাসি)।