বৃহস্পতিবার কলকাতায় পরিচালক কিরণ রাও। ছবি: সংগৃহীত।
সন্ধ্যায় এসআরএফটিআই-এ তাঁর সাম্প্রতিক ছবি ‘লাপতা লেডিজ়’-এর বিশেষ প্রদর্শন। তার আগে বাইপাস সংলগ্ন বিলাসবহুল হোটেলের ঘরে সাক্ষাৎকার দিতে বসলেন পরিচালক কিরণ রাও। এই শহর ঘিরে তাঁর শৈশব স্মৃতি ছাড়াও উঠে এল বক্স অফিস থেকে শুরু করে নারী ক্ষমতায়নের মতো বিভিন্ন প্রসঙ্গ। প্রশ্ন কি বাংলায় করা যেতে পারে? স্পষ্ট বাংলায় উত্তর এল, ‘‘করতেই পারেন। আমার বাংলা ততটা পরিষ্কার নয়। তাই একটা সময়ের পর আমি ইংরিজিতে সুইচ করে যাব।’’
প্রশ্ন: এক সময় ছবির প্রচারে বেহালায় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িতে আপনি আর আমির গিয়েছিলেন। এ বার তো দীর্ঘ দিন পর আবার কলকাতায় এলেন?
কিরণ: (হেসে) এই রে! তাই কি? (একটু ভেবে) সে বার ‘থ্রি ইডিয়টস্’-এর প্রচারে এসেছিলাম। কিন্তু তার পরেও বেশ কয়েক বার এসেছি। কিন্তু সেগুলো হয় কারও বিয়ের নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে বা কোনও ব্যক্তিগত কাজে। মেরেকেটে এক বেলা বা হয়তো এক দিনের জন্য।
প্রশ্ন: ‘লাপতা লেডিজ়’ নিয়ে সারা দেশে চর্চা শুরু হয়েছে। শুরুতে কি এই প্রতিক্রিয়া আশা করেছিলেন?
কিরণ: ১৩ বছর পর আবার ছবি তৈরি করছি। দুনিয়া বদলে গিয়েছে। তাই খুব নার্ভাস ছিলাম। বুঝতে পারছিলাম না ছবিটা দর্শকের পছন্দ হবে কি না। কারণ বাণিজ্যিক আঙ্গিক থেকেও ছবিটার নির্মাণশৈলী একটু অন্য রকমের। এখন নিজেকে সত্যিই অনেকটা চাপমুক্ত মনে হচ্ছে।
প্রশ্ন: শুক্রবার নারী দিবস। তার আগের দিন আপনার সাক্ষাৎকারের একটা বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। ছবিতে নারী ক্ষমতায়নের বার্তা দিতে চেয়েছেন। আনন্দবাজার অনলাইনের মহিলা পাঠকদের জন্য কোনও বিশেষ বার্তা দিতে চাইবেন?
কিরণ: “আপনা টাইম আ গয়া হ্যায়”। এই সময়টা আসতেই হত। এখন মহিলাদের জীবনের নিয়ন্ত্রণ তাঁদের নিজের হাতেই তুলে নেওয়া উচিত। আমাদের জন্য যা রাখা আছে এ বার সেই অধিকারগুলো ফলানোর সময় এসেছে। নিজের স্বপ্নপূরণের জন্য সোচ্চার হওয়াটা প্রয়োজন।
প্রশ্ন: নারী দিবসের কথা মাথায় রেখেই কি ছবির টিকিটের দাম কমিয়ে দিলেন?
কিরণ: একদমই তাই। দেখুন, আমরা চাই ছবিটা সকলেই দেখুন। কিন্তু দেশের অনেকেরই আবার প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে ছবি দেখার মতো ক্ষমতা নেই। এই ছবিটা যে মহিলাদের অনুপ্রাণিত করবে সেটা মনে হয়েছিল। ছবিতে মহিলাদের শক্তির কথা বলা হয়েছে। তাই তাঁদের কথা ভেবেই নারী দিবসে টিকিটের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
প্রশ্ন: ‘ধোবি ঘাট’ ছবির মুক্তির পর দ্বিতীয় ছবি তৈরিতে এতটা সময় নিলেন কেন?
কিরণ: আসলে চিত্রনাট্য লেখার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু কিছুই পছন্দ হচ্ছিল না। ওই বছরেই আমার ছেলে (আজাদ) জন্মায়। জীবন অনেক দিক থেকেই বদলে যেতে শুরু করে। তার পর বিপ্লবের (‘লাপতা লেডিজ়’-এর কাহিনিকার বিপ্লব গোস্বামী) গল্পটা পড়েই পছন্দ হয়ে গেল। তাই আর দেরি করিনি।
প্রশ্ন: ‘ধোবি ঘাট’-এ মুখ্য চরিত্রে আমির ছিলেন। এই ছবিতে কোনও বড় তারকা নেই। প্রায় নতুন অভিনেতাদের উপর ভরসা রাখলেন কী ভাবে?
কিরণ: কাজটা করার সময় কিন্তু আমি নতুন মুখই চেয়েছিলাম। প্রত্যেকেই পরিশ্রমী অভিনেতা। আর তার ফল এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি। আসলে নতুনদের নিয়ে কাজ করতে গেলে ছবির প্রচারে সমস্যা হতে পারে। কারণ নতুনদের কেউই চেনেন না। তাই অনেকের মনে হতেই পারে যে ‘আরে! এই ছবিটা কেন দেখব।’ দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রিতে কিন্তু অনেক অপরিচিত বা নতুন অভিনেতাকে লঞ্চ করা হয়। মুম্বইয়ে সেটা করা একটু কঠিন। কারণ হিন্দি ছবির দর্শক বেশির ভাগ সময়েই একটু তারকাকেন্দ্রিক ছবি দেখতে পছন্দ করেন।
প্রশ্ন: ছবির সাফল্য দেখে আমির কী বলছেন?
কিরণ: ও খুব খুশি। আমাদের ফোন ব্যস্ত। একের পর এক মেসেজ আসতেই থাকছে। প্রচুর শুভেচ্ছাবার্তা পাচ্ছি। কিন্তু ছবিটার গ্রোথ একটু ধীরে হচ্ছে দেখে, আমরা একটু চিন্তিত। আমরা ভেবেছিলাম মানুষের মুখে ছবিটার কথা আরও ছড়াবে। ছবির প্রচার আবার টাকা ও বাজেটের উপরে নির্ভর করে। আমাদের এখন মনে হচ্ছে ‘টুয়েলফথ্ ফেল’ ছবিটার মতোই আমরা ধীর গতিতে লম্বা দৌড়ে অংশ নিয়েছি। সমস্যাটা হল, কখন দৌড় থামাতে হবে সেটাও জানা প্রয়োজন। কারণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রেক্ষাগৃহে অন্য ছবির চাপও বাড়বে। আশা করছি ধীরে ধীরে বক্স অফিস থেকে আমরা মুনাফা অর্জন করতে পারব। কারণ, ওই যে আপনি বলছিলেন, ছবিতে বড় তারকা নেই।
প্রশ্ন: রবি কিশন তো তারকা।
কিরণ: সকলের জন্য নয় কিন্তু। ভোজপুরি ইন্ডাস্ট্রিতে উনি সুপারস্টার। কিন্তু জাতীয় স্তরে ওঁকে অনেকেই চেনেন না। হিন্দি ছবিতেও উনি মুখ্যচরিত্রে যে হাতেগোনা ছবিতে অভিনয় করেছেন তার মধ্যে এই ছবিটাও রয়েছে। বরং তেলুগু ছবিতে খলচরিত্রে ওঁকে অনেক বেশি দর্শক মনে রেখেছেন।
প্রশ্ন: এই ছবিতে বিয়ের পর সমাজে নারীদের অবস্থান নিয়ে এবং পুরুষতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে একাধিক বার্তা রয়েছে। ব্যক্তিগত স্তরে আপনি কি এ ধরনের ছুঁতমার্গে বিশ্বাস করেন?
কিরণ: বিভিন্ন সাংস্কৃতিক রীতিনীতি মানুষ মেনে চলেন। কেউ সেটা মানলে, তাঁর প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। কারণ কে কী ভাবে জীবন কাটাবেন সেটা তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। তবে এ রকম কোনও রীতিতে বিশ্বাস করি না। কারণ আমাকে বাবা-মা খুবই অন্য রকম ভাবে বড় করেছিলেন। মুশকিল হল যে, অনেক সময়ে মহিলাদের কাছে আলাদা করে নিজের পছন্দ বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকে না। আবার সুযোগ থাকলেও ছোট থেকেই হয়তো তাঁদের প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করতে হয়। মাথায় কেউ ঘোমটা টানতেই পারেন। কেউ চাইলে বোরখা বা বিকিনিও পরতে পারেন। কিন্তু তাঁর যেন স্বপ্ন দেখার অধিকার হারিয়ে না যায়। অন্যথায় তার জন্য লড়াই করতে হবে।
প্রশ্ন: আপনার শৈশব কেটেছে কলকাতায়। শহরটাকে কতটা মিস করেন?
কিরণ: প্রচণ্ড। শুধু কলকাতা নয়, এই রাজ্যের অনেকগুলো জায়গাই আমার পছন্দের। উত্তরবঙ্গ এবং গ্রামবাংলার সৌন্দর্য আমাকে মুগ্ধ করে। এক সময় ট্রেনে চেপে প্রচুর ঘুরেছি।
প্রশ্ন: শুনেছি আপনার পরবর্তী ছবির চিত্রনাট্যের প্রেক্ষাপট নাকি কলকাতা?
কিরণ: আরে, কলকাতার প্রেক্ষাপটে আমার দুটো প্রজেক্ট রয়েছে। কিন্তু সেটা কবে হবে, এই মুহূর্তে জানি না। কিন্তু বাংলার সুন্দর লোকেশনে শুটিংয়ের ইচ্ছে রয়েছে।
প্রশ্ন: এত দিন পর শহরে এলেন। কলকাতা থেকে আমিরের জন্য বিশেষ কিছু নিয়ে যাবেন না?
কিরণ: (একটু ভেবে) ভাবছিলাম যে কী নিয়ে যাই। শেক্সপীয়র সরণীতে আমার বাড়ির কাছে একটা মিষ্টির দোকানে খুব ভাল শিঙাড়া পাওয়া যেত। শিঙাড়া আমার অত্যন্ত প্রিয়। ওর জন্য শিঙাড়াই নিয়ে যাব। মিষ্টি নিয়ে যেতে চাই না। কারণ আমির বা আজ়াদ মিষ্টি খেতে খুব একটা পছন্দ না করলেও আমির মিষ্টি দই খেতে খুব পছন্দ করে। কিন্তু শুক্রবার সকালে দিল্লি যাওয়ার কথা। তাই সকালে পাওয়া গেলে ওর জন্য শিঙাড়াটাই নিয়ে যাব (হাসি)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy