বিয়ের দিন অনুপম রায়ের সঙ্গে প্রস্মিতা পাল। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
তাঁর বিয়ে নিয়ে টলিপাড়ায় হইচই শুরু হয়েছিল। কারণ, সঙ্গীতশিল্পী প্রস্মিতা পালের স্বামী অনুপম রায়। তাঁকে নিয়ে তৈরি হয় বাড়তি আগ্রহ। সম্প্রতি দক্ষিণ কলকাতার এক ক্যাফেতে সান্ধ্য আড্ডায় আনন্দবাজার অনলাইনের সামনে প্রস্মিতা। উঠে এল সঙ্গীত জীবন, ইন্ডাস্ট্রির পরিস্থিতি আর অনুপমের কথা। তবে শিল্পীর অনুরোধ ছিল তিনি কোনও ‘বিতর্কিত’ প্রশ্নের উত্তর দেবেন না। সাবধানি পদক্ষেপে এগোলেও নানা প্রসঙ্গে মনের কথা জানালেন প্রস্মিতা।
প্রশ্ন: বিয়ের পর কেমন লাগছে?
প্রস্মিতা: (হেসে) নতুন অধ্যায়! দু-তিন সপ্তাহ হল আমরা একসঙ্গে রয়েছি। সহকর্মী হিসেবে আমরা একে অপরকে অনেক বছর ধরেই চিনি। সে দিক থেকে দেখলে, ভালই আছি।
প্রশ্ন: আপনি সঙ্গীতশিল্পী। বাড়িতে কি গানবাজনার চল আছে?
প্রস্মিতা: আমার বাবা একদম গান গাইতে পারেন না। মূলত আমার ঠাকুমার ইচ্ছা ছিল, আমরা গানবাজনা করি। কোথায় বা কার কাছে গেলে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ভাল তালিম পাওয়া যেতে পারে, তা নিয়ে ঠাকুমা সব সময়েই খোঁজখবর রাখতেন। ছোট থেকেই আমি আর আমার বোন মঞ্চে অনুষ্ঠান করতাম। আমার দিদা খুব ভাল গান গাইতেন। মামার বাড়িতে গানবাজনার আসরও বসত।
প্রশ্ন: কোনও ঘটনা মনে পড়ে?
প্রস্মিতা: আমার মামার বাড়ি গুয়াহাটিতে। দাদুর ছিল কাঠ চেরাইয়ের মিল। দাদু আমার দিদাকে হাতির দাঁতের কাজ করা একটা তানপুরা তৈরি করিয়ে দিয়েছিলেন। ওই তানপুরায় আমার মা-মাসিরা গান শিখেছেন। তার পর আমি আর আমার বোন শিখেছি। দিদাকে কীর্তনের আসরেও গান গাইতে দেখেছি। আমার ধারণা, গানের সূত্রটা আমি দিদার থেকে পেয়েছি। কিন্তু আমাদের পিছনে পরিশ্রমটা করেছিলেন ঠাকুমা।
প্রশ্ন: অনেকে ইচ্ছে থাকলেও পেশা এবং নেশাকে মেলাতে পারেন না। আপনার ক্ষেত্রে পরিবারের সমর্থন ছিল নিশ্চয়ই।
প্রস্মিতা: আমার বাবা আইআইটির ইঞ্জিনিয়ার। মা এমএসসি। কিন্তু ছোট থেকে ওঁরা আমাকে সঙ্গীতে মনোনিবেশ করতে বলেছিলেন।কারণ ওঁদের মতে, চাকরি অনেকেই করেন। কিন্তু গান সবাই পারেন না। মা-বাবা বিশ্বাস করেন, সঙ্গীতের কণ্ঠ ঈশ্বরপ্রদত্ত এবং সেটা সকলের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়াটাই উচিত। এ রকমও হয়েছে যে, বাড়িতে গানের দিদিমণি আসবেন ভুলে গিয়ে আমি সিনেমা দেখতে গিয়েছি। মা ফোন করে হল থেকে আমাকে বাড়িতে ডেকে পাঠিয়েছেন।সত্যিই ওঁদের সমর্থন না থাকলে এতটা পথ পেরিয়ে আসতে পারতাম না।
প্রশ্ন: আপনি আবার গানের পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় চাকরিও করছেন। সামলাচ্ছেন কী ভাবে?
প্রস্মিতা: সোমলতাদিও (সোমলতা আচার্য) তো করছে। আসলে ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়। কারণ, গান এবং চাকরিকে আমি গুলিয়ে ফেলিনি।
প্রশ্ন: ভবিষ্যতে পুরোপুরি সঙ্গীতকেই পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার কোনও পরিকল্পনা রয়েছে?
প্রস্মিতা: না। কারণ গান এবং কোডিং— দুটো জিনিসই আমার সমান পছন্দের।
প্রশ্ন: নিয়মিত রেওয়াজের সময় পান?
প্রস্মিতা: চেষ্টা করি। রেওয়াজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন: পেশাগত জীবনে প্রথম সুযোগ মনে পড়ে?
প্রস্মিতা: স্নাতকোত্তরের প্রথম বছরে একটা সঙ্গীতের অনুষ্ঠানে প্রথম পর্বে আমি ছিলাম। সেখান থেকে তিমিরদার (গায়ক তিমির বিশ্বাস) সঙ্গে আলাপ।সেই সূত্রে প্রসেনদার (গীতিকার প্রসেন) সঙ্গে আলাপ। তার পর ‘বোঝে না সে বোঝে না’ ছবিতে অরিন্দমের সঙ্গে (সুরকার অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়) প্রথম কাজ। ওই ছবিতে ‘কঠিন’ গানটার স্ক্র্যাচ গাইতে অনুরোধ করেন অরিন্দমদা।ওই গানটা ছাড়াও ‘সজনা’ গাইলাম।রাজদা (ছবির পরিচালক রাজ চক্রবর্তী) আর অরিন্দমদার সিদ্ধান্তে শেষ পর্যন্ত ‘সজনা’ গানটাই চূড়ান্ত হয়।
প্রশ্ন: অনুপমের সঙ্গে আপনার প্রথম গান?
প্রস্মিতা: ‘হাইওয়ে’ ছবিতে ‘তোমায় নিয়ে গল্প হোক’।
প্রশ্ন: এক বছর সম্পর্কে থাকার পর আপনি আর অনুপম বিয়ে করলেন। এই সময়ে তারকা হিসেবে সম্পর্ক আড়ালে রাখা কতটা কঠিন?
প্রস্মিতা: এই প্রশ্নের উত্তর অনুপমই ভাল দিতে পারবে। কারণ, আমি এখনও এ রকম কোনও পরস্থিতির সম্মুখীন হইনি। অনুপম কিন্তু এখনও রাস্তায় বেরিয়ে ফুচকা খায়।
প্রশ্ন: কিন্তু বিয়ের পর তো আপনার পরিচিতি বেড়েছে। নিশ্চয়ই সমাজমাধ্যমে অনুসরণকারীর সংখ্যা বেড়েছে। কেমন লাগছে?
প্রস্মিতা: ভাল লাগছে। আমি এক জন দায়িত্বপূর্ণ মানুষ হতে চাই। তাই আশা করব, মানুষ যেন আমাকে আমার কাজের জন্য ভালবাসেন।
প্রশ্ন: অনুপমের এমন কোনও গান রয়েছে, যেটা শুনে মনে হয়েছে, আপনি গানটা গাইতে পারতেন?
প্রস্মিতা: না।তবে আমি ওর তৈরি যে সব গান শুনেছি, সেখানে গায়ক নির্বাচন খুবই ভাল।
প্রশ্ন: অনুপমের সঙ্গে বিয়ের পর বাংলা সঙ্গীত জগতে কি আপনার সামনে আরও অনেক দরজা খুলে গেল বলে মনে হচ্ছে?
প্রস্মিতা: (একটু ভেবে) আমার সেটা মনে হয় না। কারণ, ইন্ডাস্ট্রিতে এই ভাবে কাজ হয় না। আর সেটা হওয়াও উচিত নয়। আমি কার স্ত্রী বা কার সঙ্গে রয়েছি, সেটা কিন্তু সঙ্গীত পরিচালকদের কাছে বিচার্য বিষয় নয়। শিল্পই শেষ কথা বলে।
প্রশ্ন: অনুপম কি কখনও আপনার জন্য কারও কাছে সুপারিশ করেছেন?
প্রস্মিতা: আমার বেশির ভাগ কাজই কিন্তু অনিন্দ্যদা (অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়) আর অরিন্দমদার সঙ্গে। যদি করেও থাকে, সেটা আমি জানি না।
প্রশ্ন: অনুপমের সঙ্গে কি আপনাকে এ বার আরও বেশি গান গাইতে দেখা যাবে?
প্রস্মিতা: এখনও কোনও রকম পরিকল্পনা নেই। দেখা যাক, কী হয়।
প্রশ্ন: সঙ্গীত, চাকরি— সব মিলিয়ে অনুপম আপনাকে কতটা মোটিভেট করেন?
প্রস্মিতা: প্রচণ্ড। সম্পর্কের শুরু থেকেই। আমার শিল্পসত্তা বা চাকরি জীবন, দুটোই ও পছন্দ করে।
প্রশ্ন: বিয়ের পর ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা?
প্রস্মিতা: ইচ্ছে আছে। কিন্তু আমার অফিস আর ওর শোয়ের দিনক্ষণ দেখে তার পর সিদ্ধান্ত নেব।
প্রশ্ন: গত বছর পর্যন্ত যে ভাবে চেয়েছিলেন, সঙ্গীতের কেরিয়ার কি সেই ভাবে এগিয়েছে?
প্রস্মিতা: সঙ্গীত আমার জীবনে খুবই ব্যক্তিগত। আমি কোনও ইঁদুরদৌড়ে থাকতে চাই না। আমি একটু প্রচারের আলো থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করি। আমারও কিছু গাফিলতি রয়েছে। পড়াশোনার সঙ্গে গানকে ব্যালান্স করেছি। তার পর চাকরি। আমার নিজের একটা ব্যান্ড (প্রস্মিতা পাল লাইভ) রয়েছে। আমি সমাজমাধ্যমে কখনও নিজের ঢাক পেটাতে চাইনি। কারণ আমি বিশ্বাস করি, ঢাক পিটিয়েও কোনও লাভ হয় না। দিনের শেষে যাঁরা আমাদের গান শোনেন, সেই শ্রোতাদের পছন্দ হলে আমাদের তাঁরা তাঁদের মনে স্থান দেবেন, অন্যথায় দেবেন না।
প্রশ্ন: বাংলা মৌলিক গানের অবস্থা নাকি ‘শোচনীয়’। সঙ্গীতকে পেশা করে জীবনধারণ করা কি এখন সহজ, না কঠিন?
প্রস্মিতা: একটু হলেও কঠিন। রেডিয়োর পরিসর কমে গেলেও অন্য দিকে ডিজিটাল মাধ্যম শিল্পীদের সামনে অনেক দরজা খুলে দিয়েছে। আর বাংলা গান হিট করছে না মানে কিন্তু বাজারটা এখনও উন্মুক্ত। তাই ভাল কাজ করে যেতে হবে।
প্রশ্ন: বিয়ের পর এখন তারকাদের নিয়ে প্রায়শই ট্রোলিং শুরু হয়। আপনার ক্ষেত্রেও অল্পবিস্তর হয়েছে। কিছু বলতে চান?
প্রস্মিতা: সমাজমাধ্যম বা এই ট্রোলিং নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করতে চাই না। আমরা ভাল থাকলেই ভাল। তার বেশি কিছু নিয়ে মাথা ঘামাতে চাই না।
প্রশ্ন: নতুন কাজের পরিকল্পনা?
প্রস্মিতা: কয়েকটা ছবিতে প্লেব্যাক করেছি। নতুন কাজের কথাও চলছে। কিন্তু সেগুলো নিয়ে এখনই মুখ খোলা নিষেধ।
প্রশ্ন: ২৯ মার্চ অনুপমের জন্মদিন। বিশেষ দিনটা কী ভাবে কাটাবেন কোনও পরিকল্পনা করেছেন?
প্রস্মিতা: আমাদের দু’জনেরই তো ব্যস্ত জীবন। ওরও কাজ রয়েছে।আমার অফিস। তবে এখনও পর্যন্ত যা ঠিক আছে, দুই পরিবারের সকলে মিলে ডিনারে যাব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy