জয়া আহসান। ছবি: সংগৃহীত।
শহরে এসেছেন এক দিনের জন্য। সকাল থেকে একের পর এক সাক্ষাৎকার দিয়ে চলেছেন। এ দিকে বাংলাদেশেও নতুন ছবির প্রচার সারার তাড়া। চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ নেই, বরং কাজ শেষ করে তবেই বিশ্রাম নেওয়ার পক্ষপাতী জয়া আহসান। দুই বাংলায় কাজের ব্যস্ততা, শিল্পীর আকাঙ্ক্ষা থেকে শুরু করে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা— সবই উঠে এল আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে আড্ডায়।
প্রশ্ন: বছরের শুরু থেকেই তো আপনি ব্যস্ত। কেমন আছেন?
জয়া: (হেসে) এই বছরে একটু বিশ্রাম নেব ভেবেছিলাম। কিন্তু কাজ থাকলে তো করতেই হবে। ভালই আছি।
প্রশ্ন: সম্প্রতি তেহরান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে আপনার ছবি ‘ফেরেশতে’ দেখানো হল। আপনি তো গিয়েছিলেন।
জয়া: ইরানের ছবি দেখে বড় হয়েছি। তাই আরও জোর করেই গেলাম। হাতে খুব কম সময় ছিল। কষ্ট করেও গিয়েছিলাম। কিন্তু ভাল সময় কেটেছে।
প্রশ্ন: কেমন অভিজ্ঞতা?
জয়া: অসাধারণ। আমাদের ছবিটা (বাংলাদেশ ও ইরানের যৌথ প্রযোজনায় তৈরি ছবি ‘ফেরেশতে’) খুবই প্রশংসিত হয়েছে। পরিচালক যে হেতু ইরানের, তাই ছবিতে সেই পরিচিত সারল্যটা ছিল। সুন্দর একটা দেশ, তেমনই সুন্দর সেখানকার মানুষ। শিল্পীদের ওঁরা এতটাই সম্মান করেন, সেটা না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন।
প্রশ্ন: চলতি সপ্তাহে আপনার দুটো ছবি মুক্তি পাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে ‘ভূতপরী’ আর বাংলাদেশে ‘পেয়ারার সুবাস’। আপনি কোন ছবিকে ভোট দেবেন?
জয়া: (হেসে) শুক্রবার আমি কলকাতায় থাকব। কিন্তু চাই দুটো ছবিই যাতে দুই দেশের দর্শক দেখেন।
প্রশ্ন: গত বছর আপনি বলিউডে পা রেখেছেন। কিন্তু ‘কড়ক সিংহ’ নিয়ে আপনি কেমন প্রতিক্রিয়া পেলেন?
জয়া: এটা তো বলিউডের মূল ধারার ছবি ছিল না। অন্য ধারার ছবি। সেটা মাথায় রেখেই বলছি, আমি খুব ভাল প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। মুম্বইয়ের অনেকেই আমার চরিত্রটা নিয়ে তাঁদের মতামত জানিয়েছেন। আমার ভাল লেগেছে। অভিনেতা তো সব সময়েই তাঁর পরিধি বিস্তার করতে চান। কিন্তু মানুষ হয়তো তাঁর শ্রেষ্ঠ কাজটা নিজের ভাষাতেই করেন।
প্রশ্ন: আপনার কেরিয়ারে আপনি এখনও সেরা চরিত্রটা পেয়েছেন?
জয়া: আমি অপেক্ষায় রয়েছি। শিল্পী হিসেবে আমি স্বার্থপর হতেই পারি। তাই মনে হয়, এখনও সেই চরিত্রটা পাইনি।
প্রশ্ন: সম্প্রতি পরিচালক মোস্তফা সরোয়ার ফারুকীর অসুস্থতার খবর পাওয়া যায়। আপনি তো ওঁর ‘টেলিভিশন’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। ওঁর সঙ্গে কোনও কথা হয়েছে?
জয়া: না, কোনও কথা হয়নি।
প্রশ্ন: টলিউডেও তো ১১ বছর কাটিয়ে ফেললেন। টলিউডের পরিস্থিতিটা কী ভাবে দেখছেন?
জয়া: অতিমারির পর তো এখন পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে। স্বাধীন ছবিও তৈরি হচ্ছে। কিন্তু একসঙ্গে আরও ভাল ছবি প্রয়োজন। সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আরও একটা জিনিস, দর্শককে আমরা ইন্ডাস্ট্রির লোকেরা একটু ‘বোকা’ ভাবি। সেটা ঠিক নয়।
প্রশ্ন: আর বাংলাদেশ?
জয়া: বাংলাদেশে আমরা অনেক বেশি ইন্টারেস্টিং চরিত্র পাই। সেখানে খারাপ ছবিও রয়েছে। কিন্তু আমার দেশের ছবিতে প্রেমটা প্রচণ্ড বেশি থাকে। টলিউডে সেটা একটু কম মনে হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও অনেক ভাল কাজ এখানে হচ্ছে। টলিউডে নতুনদের সঙ্গেও কাজ করতে চাই। সিনিয়ররা যেন আরও ডায়নামিক চরিত্রে আমাকে ভাবেন, সেটাই চাই। আসলে ভাল চরিত্র নয়, আমি ভাল ছবির অংশ হতে চাই।
প্রশ্ন: টলিউডে কোথাও কোনও পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয়?
জয়া: আমি সেটা ঠিক বলতে পারব না। তবে পর পর সব ছবিই যেন ইনডোর হয়ে গিয়েছে। ছবি দেখার মতো তার শুটিংও তো একটা অভিজ্ঞতা। সিনেম্যাটিক এক্সপেরিয়েন্সটা যেন আরও প্রখর হয়। শুধুই বাণিজ্যের কথা না ভেবে আরও পরীক্ষামূলক ছবি তৈরি হলে ভাল। ব্যবসা প্রয়োজন। কিন্তু শিল্পের সঙ্গে বাণিজ্যের সমতা যাতে বজায় থাকে, সেটাও দেখা প্রয়োজন।
প্রশ্ন: কিন্তু গত বছর ভারতে আপনার যে ছবিগুলো মুক্তি পেয়েছে, সেগুলো তো যথেষ্ট চর্চিত।
জয়া: দেখুন, শুধু আমার ছবি চললে তো ইন্ডাস্ট্রির উন্নতি হবে না। সার্বিক ভাবে সকলের ছবিই চলতে হবে। সেখানে আমি কতটা নিজেকে নিংড়ে দিতে পারছি, সেটা দেখতে হবে।
প্রশ্ন: আপনি ভূতে বিশ্বাস করেন?
জয়া: ভূতেরা আছেন, সেটা ভাবতে আমার ভালই লাগে (হাসি)।
প্রশ্ন: ‘ভূতপরী’র আগেও তো আপনি ভূতের ছবিতে অভিনয় করেছেন।
জয়া: আমার প্রযোজিত ‘দেবী’ ছবিটা ছিল। তবে এই ছবিটার গল্প একদম অন্য রকম।
প্রশ্ন: ‘ভূতপরী’ অনেকটাই দেরিতে মুক্তি পাচ্ছে। কোনও সমস্যা হতে পারে কি?
জয়া: আমার সেটা মনে হয় না। কারণ ছবির বিষয়বস্তু সমকালীন।
প্রশ্ন: সমাজমাধ্যমে বাংলাদেশের দর্শকের একটা অংশ আপনাকে দেশের শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী মনে করেন। কারণ, দুই বাংলায় সমান তালে বড় পরিচালকদের ছবিতে কাজ করছেন। নিশ্চয়ই গর্ব বোধ করেন?
জয়া: সেটা তো দর্শকের সিদ্ধান্ত। শিল্পী হিসেবে আমি সেটা নিয়ে চর্চা করতে চাই না। করলে আমার শৈল্পিক সফর ব্যাহত হবে। দর্শক এখনও টিকিট কেটে আমার ছবি দেখছেন, এটাই তো অনেক বড় প্রাপ্তি। কেউ যদি আমাকে ভাল অভিনেত্রী বলেন, তা হলে সেটা আমার কাছে উপরি পাওনা।
প্রশ্ন: ‘বন্ধু’র থেকে নাকি টলিউডে ‘শত্রু’ বেশি। এখানে কাজ করতে গিয়ে আপনার কখনও সে রকম কোনও উপলব্ধি হয়েছে?
জয়া: আমার কিন্তু কখনও সেটা মনে হয়নি। অভিনেতা, পরিচালক থেকে শুরু করে কলাকুশলী— প্রত্যেকেই আমাকে পরম যত্নে আপন করে নিয়েছেন। এর মূল কারণ অবশ্য দর্শক। কারণ, দর্শকের ভালবাসা পেয়েছি বলেই হয়তো পরিচালকেরা আরও বেশি আমার উপরে ভরসা করেন।
প্রশ্ন: ২০ বছরেরও বেশি সময় ইন্ডাস্ট্রিতে কাটানোর পর এখন চিত্রনাট্য নির্বাচন করতে গেলে কী কী বিষয় মাথায় রাখেন?
জয়া: আমি কিন্তু দর্শকের কথা চিন্তা করে কোনও চরিত্রে রাজি হই না। প্রথমত, শিল্পী হিসেবে আমার যে দায়বদ্ধতা, সেটা বিচার করে চিত্রনাট্যে রাজি হই। দ্বিতীয়ত, শিল্পী হিসেবে সেই চরিত্রটা আমাকে কতটা নাড়া দিচ্ছে বা ভাবাচ্ছে সেটাও আমি দেখে তার পর সম্মতি দিই।
প্রশ্ন: ‘দশম অবতার’-এর পর আর কোনও বাংলা ছবি দেখার সুযোগ হয়েছে?
জয়া: (একটু ভেবে) না। কাজের ব্যস্ততার মধ্যেই তো গত বছরটা শেষ হল। তাই আর সুযোগ হয়নি।
প্রশ্ন: নতুন কাজের কোনও খবর?
জয়া: টনিদার (পরিচালক অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী) নতুন ছবির (‘ডিয়ার মা’) শুটিং করব। এ ছাড়াও বাংলাদেশে ওটিটির জন্য একটা কাজের কথা চলছে। আপাতত এই (হাসি)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy