‘শ্রীময়ী’র হিন্দি রিমেক ‘অনুপমা’ এই মুহূর্তে দেশ জুড়েই কাঁপিয়ে দিচ্ছে রেটিং তালিকা।
এগিয়ে বাংলা। রাজনীতির চেনা লব্জে নয়, ছোট পর্দার দুনিয়ায়। একসঙ্গে এক গুচ্ছ বাংলা ধারাবাহিক এ বার রিমেক হচ্ছে হিন্দি ও অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষায়। বাংলা ধারাবাহিকের ভাষান্তর নতুন কিছু নয়। তবে একলপ্তে এতগুলো ধারাবাহিকের রিমেক বড় একটা দেখা যায় না।
বাংলায় তুমুল জনপ্রিয়তার পরে ‘শ্রীময়ী’র হিন্দি রিমেক ‘অনুপমা’ এই মুহূর্তে দেশ জুড়েই কাঁপিয়ে দিচ্ছে রেটিং তালিকা। একই পথে তালিকায় উপর দিকেই রয়েছে ‘ইষ্টিকুটুম’ এবং ‘কুসুমদোলা’-র হিন্দি রিমেক ‘ইমলি’ ও ‘গুম হ্যায় কিসি কে প্যায়ার মেঁ’। ‘কৃষ্ণকলি’-র তেলুগু রিমেক ‘কৃষ্ণা তুলাসি’-ও ঘরে ঘরে পছন্দের তালিকায়।
এই সাফল্যের জোয়ারেই রিমেকের জন্য বাছাই হয়ে গিয়েছে আরও বেশ কয়েকটি বাংলা ধারাবাহিক। ইতিমধ্যেই কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে ‘দীপ জ্বেলে যাই’-এর হিন্দি, ‘খড়কুটো’র হিন্দি, তামিল, ‘কৃষ্ণকলি’র ভোজপুরি, ‘মিঠাই’-এর তামিল ভাষান্তরের। শোনা যাচ্ছে ‘তিতলি’ও হাঁটতে চলেছে একই পথে।
বাংলা ধারাবাহিক হিন্দি বা অন্য ভাষায় রিমেক হওয়ার এই ধারা অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছিল এক দশকেরও বেশি আগে। ‘রাশি’, ‘ওগো বধূ সুন্দরী’, ‘বৌ কথা কও’, ‘মা’, ‘সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে’, ‘ভুতু’, ‘খোকাবাবু’, ‘পটলকুমার গানওয়ালা’, ‘বকুলকথা’, ‘সাঁঝের বাতি’— গত কয়েক বছরে রিমেকের তালিকাটা নেহাত ছোট নয়।
এ বার একসঙ্গে এতগুলো ধারাবাহিক রিমেকের তালিকায়। তবে কি চাহিদা বাড়ছে বাংলা গল্পের?
এই মুহূর্তে জনপ্রিয়তার নিরিখে শীর্ষে থাকা তিন রিমেক ধারাবাহিকই প্রযোজনা সংস্থা ‘ম্যাজিক মোমেন্টস’-এর। কর্ণধার প্রযোজক শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “ছোট পর্দা বা ওটিটি দু’জায়গাতেই এখন দর্শক ঝুঁকছেন আঞ্চলিক স্বাদে। স্বাভাবিক ভাবেই হিন্দি চ্যানেলগুলোতে বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষার ধারাবাহিকের চাহিদা বাড়ছে। একসঙ্গে এতগুলো বাংলা ধারাবাহিক রিমেকের নেপথ্যেও সেটাই কারণ। ভাল গল্পের টান তো আছেই। একই কারণে বিভিন্ন দক্ষিণী ভাষা, মরাঠি বা ওড়িয়া ধারাবাহিকেরও রিমেক হচ্ছে হিন্দি বা অন্য ভাষায়।”
প্রযোজনা সংস্থা ‘ব্লুজ’-এর কর্ণধার স্নেহাশিস চক্রবর্তী জোর দিচ্ছেন বাংলা বা বাঙালি গল্পের বৈচিত্রে। তাঁর মতে, “বাংলা ধারাবাহিকের গল্পে বুনোট, ঘটনাপ্রবাহ, চরিত্রের এত বৈচিত্র এবং প্লটের এত ওঠাপড়া আসলে অন্য অনেক ভাষার ধারাবাহিকেই নেই। ফলে বাংলার গল্প দর্শককে অনেক বেশি টেনে রাখে। সে কারণেই তা এখানকার বিভিন্ন হরেক ভাষায় রিমেক হয়। গত পাঁচ বছরে আমাদের বেশ কিছু ধারাবাহিক রিমেক হয়েছে। হিন্দি তো বটেই, দক্ষিণী ভাষাতেও।”
তবে আর এক প্রযোজনা সংস্থা ‘অ্যাক্রোপলিস’-এর কর্ণধার স্নিগ্ধা বসু মনে করিয়ে দিচ্ছেন— “ছোট পর্দার ধারাবাহিকের ক্ষেত্রে এই আদানপ্রদানটা পারস্পরিক। শুধু যে বাংলা গল্পই রিমেক হচ্ছে এমন নয়। এর আগে একাধিক হিন্দি বা দক্ষিণী ভাষার ধারাবাহিক রিমেক হয়েছে বাংলায়। ইদানীং রিমেক-ক্ষেত্রে বাংলা ধারাবাহিকের পাল্লা ভারী। হয়তো দর্শক এখানকার গল্প বেশি পছন্দ করছেন। সেটা নিঃসন্দেহে গর্বের জায়গা।”
বাংলা গল্প অন্য ভাষায় রিমেক হলে সাধারণত সেই আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য বা সংস্কৃতির নিজস্ব স্বাদ ঢুকিয়ে দেওয়া হয় গল্পে। স্নেহাশিসের দাবি, একমাত্র তাঁর ‘ভজ গোবিন্দ’ হিন্দিতে রিমেক হয়েছিল বাংলা গল্পের নিজস্ব ধাঁচ পুরোপুরি বজায় রেখে। তার রেটিংও ছিল যথেষ্টই। তবু মাঝপথে কেন সেই ধারাবাহিক বন্ধ হল, তা এখনও তাঁর কাছে রহস্য।
কিন্ত শুধুই কি গল্পের চাহিদা, নাকি বাড়তি পারিশ্রমিকের অঙ্কও রয়েছে রিমেকে বাংলার বাড়বাড়ন্তেরে নেপথ্যে? “রিমেক ধারাবাহিকের বাজেট বা আয় দুটোই নির্ভর করে সেই নির্দিষ্ট অঞ্চলের ইন্ডাস্ট্রির পরিস্থিতির উপরে। ওড়িয়া বা দক্ষিণী রিমেকে বাজেট খানিকটা কমই। তবে হিন্দি রিমেকে জাঁকজমক অনেক বেশি। ফলে বাজেট যেমন বেশি, আয়ও তো তার মানানসই,” হাসতে হাসতেই বললেন শৈবাল।
তবে কারণ যা-ই হোক, আপাতত ছোট পর্দায় বাংলারই জয়জয়কার!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy