বাংলাদেশের ওয়েব সিরিজ নিয়ে রাত জাগছে এ বাংলা। ছবি: সংগৃহীত
মনোরঞ্জনের পাল্লা কি পুব দিকে হেলিতেছে?
প্রশ্নটি লালমোহনবাবু-সুলভ শোনালেও এই জিজ্ঞাসা আপাতত জল্পনার রূপ নিয়েছে। ট্রাম-বাসের গুঞ্জন থেকে সমাজমাধ্যমে ওটিটি-রসিকরা আউড়ে চলেছেন ‘তকদীর’, ‘ঢাকা মেট্রো’, ‘লেডিজ অ্যান্ড জেন্টলমেন’, ‘কাইজার’ অথবা ‘কারাগার’ ইত্যাদি। এ সবই ও পার বাংলার ওটিটি সিরিজ। গত এক বছরেও যেখানে ‘একেনবাবু’ বা ‘ব্যোমকেশ’ চর্চায় ছিল। সমাজমাধ্যমে চর্চিত হচ্ছেন অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী, পরিচালক অমিতাভ রেজা চৌধুরী, সৈয়দ আহমেদ শাওকীর মতো ব্যক্তিত্ব।
কোন রসায়ন পশ্চিমবঙ্গের ওটিটি দর্শকদের বাংলাদেশমুখী করে তুলল? কলকাতা-কেন্দ্রিক সিরিজ কি টিভি সিরিয়ালের থেকে বেশি কিছু দিতে ব্যর্থ?
এ পার বাংলার পরিচালক অতনু ঘোষ নিজে এখনও সিরিজ করেননি। কিন্তু তিনি নিয়মিত দেখেন বাংলাদেশের সিরিজ। জাতীয় পুরস্কারজয়ী পরিচালক জানালেন, তিনি ও পার বাংলার সিরিজের ভক্ত। অতনুর মতে, ‘‘ওপারের সিরিজ পরিচালকরা এক ভিন্ন দৃষ্টিকোণ তৈরি করতে সমর্থ হয়েছেন। বিষয়গত অভিনবত্ব না-থাকলেও দেখা ও দেখানোর প্রচেষ্টায় এমন কিছু রয়েছে, যা এই বাংলার সিরিজে পাওয়া যায় না। দ্বিতীয়ত, ওপারের সিরিজে নির্মাণগত জায়গাটি নাটক বা সিরিয়ালের মতো নয়। তা একান্ত ভাবেই সিনেম্যাটিক। বড় পর্দার ভাষাকেই মুঠোপর্দায় নিয়ে আসছে ‘তকদীর’ বা ‘কারাগার’।’’ তৃতীয়ত, চিত্রনাট্য লেখার মুনশিয়ানা। এক পর্ব থেকে অন্য পর্বের দিকে যাওয়ার সময়ে এমন এক বা একাধিক কৌশল ব্যবহৃত হতে থাকে, যা ভাবনার ফসল। পর্ব থেকে পর্বান্তরে যাওয়ার সময় ‘মোচড়’ যে কোনও ধারাবাহিকেরই অন্যতম প্রধান উপাদান। অতনুর মতে, ‘‘বাংলাদেশের সিরিজ এই উপকরণটি নিয়ে প্রচুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। কিন্তু কখনওই সেগুলিকে ‘আরোপিত’ বলে মনে হচ্ছে না। তুলনায় এ বাংলার সিরিজ অনেক সময় এমন কিছু করে বসছে, যাকে ‘অবাস্তব’ বলে মনে হতে পারে।’’ তা ছাড়াও অভিনয়। সিনেমার অভিনয়রীতি অনুসরণ করছেন ও পারের অভিনেতারা।
‘হইচই’ প্ল্যাটফর্মের প্রাক্তন কন্টেন্ট প্রধান অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায় মেনে নিচ্ছেন বাংলাদেশি সিরিজের এ পার বাংলায় ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার কথা। তাঁর কথায়, পশ্চিমবঙ্গে সিরিজ নির্মাতাদের কাছে কাজটা রুটি-রুজির প্রশ্নের সঙ্গে জড়িত। সিরিজ নির্মাতাদের বেশির ভাগই অন্য কোনও পেশার সঙ্গে যুক্ত নন। ফলে প্রযোজকের দেওয়া নির্দিষ্ট সময়ে একটি নির্দিষ্ট ধাঁচা মেনে তৈরি হতে লাগল সিরিজ। এই চাপ বাংলাদেশের নির্মাতাদের কাছে ছিল না। তাঁদের একটি বড় অংশ এসেছেন বিজ্ঞাপনের জগৎ থেকে। সেই ক্ষেত্র থেকে যদি রোজকার ভাত-রুটির সংস্থান হয়ে যায় এবং কোনও বিশেষ সময়ের মধ্যে তা বানানোর চাপ না থাকে, তা হলে অনেক বেশি স্বাধীনতা পাওয়া যায়। বাংলাদেশের পরিচালকরা সেই স্বাধীনতা পেয়েছেন।’’
‘ব্যোমকেশ’ সিরিজের কয়েকটি সিজনের পরিচালক সৌমিক হালদার নিজেই এ বাংলার সিরিজ সম্পর্কে ‘হতাশ’। সৌমিকের সংশয়, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস কি নষ্ট করছে এ বাংলার সিরিজ-সৃজনকে? না কি নিরীক্ষা করতে ভয় পাচ্ছেন এ বাংলার পরিচালক-প্রযোজকবর্গ?
এ বাংলার সিরিজ নির্মাতা দেবালয় ভট্টাচার্যও বাংলাদেশের সিরিজের ‘মুগ্ধ দর্শক’। ‘দুপুর ঠাকুরপো’ বা ‘চরিত্রহীন’-এর মতো সিরিজ পরিচালকের গলায় খানিক হতাশার সুর। তাঁর সংশয়, বেশি মাত্রায় ‘সংগঠন’ই কি বাধা দিচ্ছে এ বাংলার সিরিজ নির্মাণকে? ওপার বাংলার ‘ঢাকা মেট্রো’র পরিচালক অমিতাভ রেজা চৌধুরীর মতে, বাংলাদেশের সিরিজ নির্মাতারা প্রথমেই গুরুত্ব দেন আখ্যানকে। তাকে ভাঙা ও গড়ার মধ্যেই তাঁরা রয়েছেন। অমিতাভর কথায়, ‘‘হয়তো নিরীক্ষা করতে গিয়ে ভুলও হচ্ছে। কিন্তু সেই ভুল থেকেই আবার নতুন আঙ্গিক, নতুন সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy