সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র
যদি অভিনেতা না হতেন, তা হলে কী হতেন? এই প্রশ্নের উত্তরে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, তা হলে নাকি ছুতোর মিস্ত্রি হওয়ার একান্ত ইচ্ছে ছিল তাঁর। এই উত্তর কিন্তু রসিকতা করে দেওয়া নয়, এ ব্যাপারে রীতিমতো সিরিয়াস ছিলেন কিংবদন্তি নট। এই তথ্য জানাচ্ছেন অর্জুন সেনগুপ্ত ও পার্থ মুখোপাধ্যায় তাঁদের ‘সৌমিত্র চ্যাটার্জি: আ লাইফ ইন সিনেমা, থিয়েটার, পোয়েট্রি অ্যান্ড পেন্টিং’ গ্রন্থে।
সদ্যপ্রয়াত সৌমিত্র কি নিছক এক জন অভিনেতা? মঞ্চ আর ক্যামেরার বাইরে তাঁর পরিচিতি লম্বা ছায়া ফেলে কবিতার পাতায়, ছবি আঁকার ক্যানভাসে, পত্রিকার সম্পাদনায়। পেশায় ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক অর্জুন এবং লেখক ও তথ্যচিত্র নির্মাতা পার্থ তাঁদের এই সৌমিত্র-জীবনীতে তুলে আনছেন এক দিকে শিশির ভাদুড়ি আর অন্য দিকে সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গ করা এক বিরল মানুষকে, যিনি একই সঙ্গে বহু গুণের অধিকারী।
ইংরেজি ভাষায় যাঁদের ‘পলিম্যাথ’ বলা হয়, সেই বহু বিষয়ে আগ্রহী এবং ব্যুৎপত্তি সম্পন্ন মানুষদের প্রত্যক্ষ করেছিল বাংলার রেনেসাঁ। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সে হিসেবে দেখলে সেই নবজাগরণের শেষ পথিকদের এক জন। এই বইতে সেই বৈচিত্রময় সৌমিত্রকেই দেখতে চেয়েছেন লেখকেরা। পর্দায় এবং মঞ্চে তাঁর অভিনীত স্মরণীয় চরিত্রগুলিকে পর্যালোচনা করে অভিনয় জগতে তাঁর দীর্ঘ পথ চলাকে দেখতে চেয়েছে এই বই।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে অর্জুন সেনগুপ্ত ও পার্থ মুখোপাধ্যায়ের বই।
আরও পড়ুন: ইন্ডাস্ট্রিতে কোনও নায়িকার পাশে বসলেও রটে যায় তাকে কোলে বসিয়েছি: বনি
আরও পড়ুন: বড়পর্দায় ইরফান পাঠান, মুক্তি পেল ট্রেলার
কবি সৌমিত্রের জগৎটা ছিল একেবারেই আলাদা। বাংলা কবিতার পরম্পরায় তাঁর কবিতাগুলি নীরব অথচ গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন বলেই মনে করেন কাব্যরসিকরা। কবিতার পাশাপাশি ক্যানভাসেও তিনি দক্ষতার পরিচয় রেখে গিয়েছেন। তাঁর আঁকা ছবির জগৎকে তাঁরই এক বন্ধু কবির শব্দবন্ধ ধার করে নিয়ে বলতে হয়, ‘সুন্দর, রহস্যময়’।
বলিউডের হাতছানি সৌমিত্রকে একটুও প্রলুব্ধ করেনি। সারা জীবন বাংলায় কাজ করা মানুষটি কিন্তু হয়ে গিয়েছেন বিশ্ব চলচ্চিত্রের নক্ষত্র। সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে করা ১৪টি ছবি অতিক্রম করে তপন সিংহ বা তরুণ মজুমদারের মতো পরিচালকের ক্যামেরাতেও তিনি অন্য ঝলক দেখিয়ে গিয়েছেন। সেই সব ঝলককেও ধরতে চেয়েছে এই বই। বাংলা সিনেমা, নাটক, সংস্কৃতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্ধশতকেরও বেশি সময় ধরে তাঁর অবদান রেখে গিয়েছেন সৌমিত্র। সেই দীর্ঘ যাত্রাপথের অভিজ্ঞান হিসেবে ৭০টি বিশিষ্ট ফোটোগ্রাফও এই বইয়ে থাকছে।
এই বইয়ের কাজ শুরু হয়েছিল সৌমিত্রের জীবদ্দশাতেই। তিনি স্বয়ং উৎসাহী হয়ে পড়েছিলেন এই বইয়ের পরিকল্পনা শুনে। তাঁর কর্মব্যস্ততার মধ্যেও সময় বার করে তিনি লেখকদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছিলেন তাঁর অনুভবের জগৎ, তাঁর ভাল লাগা, না-লাগা, তাঁর জীবনের উদ্দীপনা আর ঔজ্জ্বল্যের পাশাপাশি অপ্রাপ্তি ও হতাশাবোধকেও। সে দিক থেকে দেখলে এই বই এক ‘সম্পূর্ণ’ সৌমিত্রের সন্ধান।
আগামী ১৯ জানুয়ারি প্রকাশিত হতে চলেছে সৌমিত্রের এই জীবনীগ্রন্থ। ১৮৮ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থ প্রকাশ করছে নিয়োগী বুকস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy