Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Antara Nandy

ইউটিউব থেকে সোজা মণি রত্নমের ছবিতে প্লেব্যাক, আনন্দবাজার অনলাইনের মুখোমুখি অন্তরা নন্দী

বারান্দাশিল্পী থেকে ‘পন্নিয়িন সেলভান’! নেটমাধ্যমে লক্ষ লক্ষ দর্শকের মন মাতানোর পর এ বার ২৩-এর অন্তরা নন্দী সুযোগ পেয়েছেন মণি রত্নমের ছবিতে প্লেব্যাক করার।

আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে আড্ডায় ‘পন্নিয়িন সেলভান’-এর গায়িকা অন্তরা।

আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে আড্ডায় ‘পন্নিয়িন সেলভান’-এর গায়িকা অন্তরা।

তিয়াস বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৩:৩৬
Share: Save:

শুক্রবার, ৩০ সেপ্টেম্বর মুক্তি পেয়েছে মণি রত্নম পরিচালিত ‘পোন্নিয়িন সেলভান’। তার আগের রাতে আনন্দে আত্মহারা ইউটিউব-সঙ্গীততারকা অন্তরা নন্দী। টিকিট কেটে ফেলেছেন তেলুগু, তামিল, কন্নড় আর হিন্দি সংস্করণের। এ বেলা, ও বেলা দেখবেন বাবা-মায়ের সঙ্গে। নেটমাধ্যমে বিখ্যাত ‘নন্দী সিস্টার্স’ জুটির বড় কন্যা তিনিই, এই প্রথম গান গাইলেন সিনেমায়। বহু কাঙ্ক্ষিত মুহূর্তটি ভাগ করে নিলেন আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে।

প্রশ্ন: ব্যালকনি কনসার্ট থেকে ‘পোন্নিয়িন সেলভান’, ২৩ বছরের মধ্যেই এত কিছু করে ফেলা যায়?

অন্তরা: (হাসি...) আসলে বিপুল বড় একটা যাত্রা বলতে পারেন, কিন্তু হয়েছে খুব অল্প সময়ে। ব্যালকনি কনসার্ট থেকে একটা বড় লাভ এটাই হয়েছে, যে মানুষ আমাদের চিনেছে। আমি আর আমার বোন অঙ্কিতা মূলত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকগীতি গাইতাম। বিভিন্ন সংস্কৃতির গান শোনে লোকে। কিন্তু দেশের আনাচেকানাচে যা রয়েছে সেগুলোই শোনে না। আমাদের ভারতীয় লোকগীতির ভিডিয়োগুলো ভাইরাল হচ্ছিল। কিন্তু প্লেব্যাক সিঙ্গার হওয়ার আশা করিনি। ওস্তাদ রশিদ খাঁ সাহেবের কাছে গান শিখেছি। রহমান সাহেবের সঙ্গে গান গেয়েছি, সে তো প্রথম স্বপ্নপূরণ। পরেরটাও যে হয়ে যাবে ভাবিনি। ৬ সেপ্টেম্বর ফোন এল। ‘পোন্নিয়িন সেলভান’-এর জন্য ‘আলাইকাদে’ গানটি মনোনীত হয়েছে। আমি তো বুঝতেই পারছি না কী বলছে! কত সময়ে তো কত ভাষার গান রেকর্ড করে বেরিয়ে এসেছি, তার মধ্যে একটা তামিল গানও ছিল। মাত্র ৪০ মিনিটে রেকর্ড করা, সেটা শুনেই খুশি মণি রত্নমের দল। আর ব্যস্, স্বপ্নপূরণ!

প্রশ্ন: ছবি মুক্তির দিন আলাদা রোমাঞ্চ লাগছে?

অন্তরা: সে আর বলতে! সারা দিন সকাল-বিকেল সব শো-এর টিকিট কেটে রেখেছি আমি, বাবা-মা। হিন্দি দেখব, তামিল, তেলুগু সব দেখব। শুরুতে কাউকে জানাইনি। একেবারে সিনেমায় গানটা বেরোনোর পর আমি বিশ্বাস করলাম। ভাবতেই পারছিলাম না, আমার গান শুনে রজনীকান্ত উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দেবেন! আগে ‘‘মেয়ে কী করে’’, জিজ্ঞেস করলে মা বলত গায়িকা। তার পরই প্রশ্ন আসত, ‘‘কোন ছবিতে গেয়েছে?’’ মা আর বলতে পারত না। এখানকার মানুষ এ ভাবেই সব কিছু বিচার করেন। বুঝলাম, আমি কেউ নই। আবার নিজের কম্পোজ করা মৌলিক গানে মন দিয়েছিলাম। কিন্তু শেষমেশ হল, উত্তর দেওয়ার মতো কিছু পাওয়া গেল।

‘নন্দী সিস্টার্স’ বলতেই সবাই এখন এক ডাকে চেনেন অন্তরা আর অঙ্কিতাকে।

‘নন্দী সিস্টার্স’ বলতেই সবাই এখন এক ডাকে চেনেন অন্তরা আর অঙ্কিতাকে।

প্রশ্ন: বাবা-মা দু’জনেই ইঞ্জিনিয়ার, এ দিকে তাঁরাই আপনাদের ভাইরাল করলেন...।

অন্তরা: একদমই... মা-বাবা পাশে না থাকলে তো এত সুন্দর ভাবে হত না সবটা। পরিবারে আমিই একা, যে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়িনি। পাঁচ বছর বয়স থেকে মঞ্চে গাইছি। সব শো-তে মা সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছে। ‘সা রে গা মা পা লিল চ্যাম্পস’-এর পর আরও ভাল করে প্র্যাকটিস শুরু হয়। পরে যখন ব্যালকনি কনসার্ট শুরু করেছি, তখনও বারান্দা সাজিয়ে, আমাদের সাজিয়ে সৃজনশীল দিকটা দেখেছে মা। আর বাবা দেখেছে টেকনিকাল দিক। ক্যামেরা কোথায় থাকবে, লাইট কেমন হবে, সাউন্ড কীসে নেওয়া হবে থেকে শুরু করে সম্পাদনা— সব বাবা। আমরা সত্যিই সৌভাগ্যবান।

প্রশ্ন: কবে বুঝলেন বিখ্যাত হয়ে গিয়েছেন?

অন্তরা: একটা শো করতে গিয়েছিলাম যেখানে দেখি প্রীতম স্যর! তাঁকে ছুটে গিয়ে বাংলায় বললাম, নমস্কার স্যর কেমন আছেন? আমাদের হাতে ইউকুলেলে দেখে হঠাৎ বললেন, ‘‘তোমরা নন্দী সিস্টার্স না? আমি ভিডিয়ো দেখেছি তোমাদের।’’ শুনে তো আমি হাঁ!

প্রশ্ন: এত বছরে কোনও তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে?

অন্তরা: আমার তখন ১২ বছর বয়স। এক সঙ্গীত পরিচালকের কাছে গিয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন, ‘‘অন্তরা, তুমি পড়াশোনায় এত ভাল সেটাই করো না? গানটা তোমার হবে না বুঝলে... ইঞ্জিনিয়ার হও বরং।’’

প্রশ্ন: আপনার ছোটবেলাটা তো কলকাতাতেই কেটেছে?

অন্তরা: নরেন্দ্রপুরে থাকতাম। রামকৃষ্ণ মিশনের উল্টো দিকে। পড়তাম রুবি পার্ক দিল্লি পাবলিক স্কুলে। পাঁচ বছর হল পুণেতে রয়েছি।

প্রশ্ন: ‘নন্দী সিস্টার্স’ বলতেই সবাই এখন এক ডাকে চেনেন অন্তরা আর অঙ্কিতাকে। দুই বোনের তালমিল দেখার মতো। কিন্তু প্লেব্যাকের সুযোগ পাওয়ায় দু’জনের মধ্যে কি কোনও রেষারেষি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে?

অন্তরা: একেবারেই না। ভিন্ন মেরুর মানুষ আমি আর অঙ্কিতা। আমরা দু’জন দু’জনের পরিপূরক। আমাকে একা কেউ চেনেন না। পাশাপাশি দু’জন দাঁড়ালে লোকে ‘নন্দী সিস্টার্স’ বলে চিনতে পারে। সাড়ে তিন বছরের ছোট হলে কী হবে, আমরা যমজ বোনের মতোই বড় হয়েছি। আগে তো ভাবতেই পারিনি, ও গানের জগতে আসতে চাইবে। ছোটবেলা ধরেবেঁধে বসালেও ১৫ মিনিটের বেশি রেওয়াজ করেনি কোনও দিন। গানকে পেশা হিসাবে নেবে ও, আমরা কেউ ভাবতে পারিনি। এক দিন ও বলল, ‘‘দিদি রেওয়াজে বসছ? আমিও বসব?’’ এখন আমি যেখানে আছি তার জন্য অঙ্কিতার অনেক আত্মত্যাগ রয়েছে। ছোট্ট মেয়েকে ফেলে আমায় নিয়ে শো-তে দৌড়ে বেড়াত মা। ও একা থাকত কলকাতার বাড়িতে। এক বারও কাঁদেনি।

প্রশ্ন: আপনাদের ঠিক ক’টা ইউকুলেলে আছে বলুন তো?

অন্তরা: (একচোট হেসে) ১৬টা! আমার আর বোনের মিলিয়ে সব তো এখন জোড়ায় জোড়ায়। অনেক কোম্পানি তাদের ইউকুলেলে উপহার পাঠায় আমাদের। উপহারেই যন্ত্রের ভিড় বাড়ছে।

প্রশ্ন: ইউকুলেলে বাজিয়ে সব গান গাওয়া যায়?

অন্তরা: গাইছি তো। লোকে বলতেন গাওয়া যায় না। আমরা ইউকুলেলে বাজিয়ে ক্লাসিকাল থেকে শুরু করে লোকগীতি, ওয়েস্টার্ন সব গাই। গিটার অল্প অল্প বাজাতে পারি। তবলা তার চেয়েও ভাল পারি। আর হারমোনিয়াম তো আছেই। শুরুটা অবশ্য করেছিলাম খালি গলাতেই। হাততালি দিয়ে গাইতাম শুধু। সেই ভিডিয়োও ভাইরাল হত।

প্রশ্ন: মুম্বই থেকেই কেরিয়ার শুরু হল। বাংলা গান গাইতে চাইবেন কি?

অন্তরা: এক পায়ে খাড়া! কিন্তু কলকাতা তো গানের শহর। কত গুণী শিল্পী রয়েছেন। সেখানে আমি কি আর পাত্তা পাব? কী ভাবে, কোথায় আবেদন করতে হয় তা-ও ছাই জানি না। শুধু ভাবি, যদি সুযোগ আসে!

প্রশ্ন: এইটুকু বয়সেই এত কিছু পেয়ে গিয়েছেন, যা বহু মানুষের স্বপ্নই থেকে যায়! আর কী কী চাওয়ার আছে বলুন তো?

অন্তরা: গায়িকা হতে চাইনি আসলে, সঙ্গীতশিল্পী হতে চেয়েছি বরাবর। যায় মধ্যে একটা পূর্ণতার ধারণা রয়েছে। সঙ্গীতের সঙ্গে যুক্ত সব কিছুর মধ্যে থাকতে চাই। নিজের কাজ করে যেতে চাই। মৌলিক গান বাঁধব। অনুশীলন যেন বন্ধ না হয় আমার। তার জোরে যত দূর যেতে পারি যাব। সেটা সময়ের হাতে ছেড়ে দিচ্ছি। কিন্তু গা ছাড়ব না।

তারাদের ভিড়েও আলাদা অন্তরা।

তারাদের ভিড়েও আলাদা অন্তরা।

প্রশ্ন: অতিমারি কি নেটমাধ্যমের তারকাদের সংখ্যা বাড়িয়েছে বলে মনে হয়?

অন্তরা: (একটু ভেবে...) কিছুটা তো বটেই। তবে নেটমাধ্যমে এমনিতেই শিল্পীদের আত্মপ্রকাশের জায়গা। আজ না হোক কাল যাঁরা চাইবেন, তাঁরাই আসবেন এখানে। অতিমারির সময় জীবনে বাড়তি কিছু সময় ছিল বটে। আমাদের তো শাপে বর হয়েছিল বলতে পারি। গুছিয়ে ব্যালকনি কনসার্ট শুরুই করি লকডাউনে। তখন বাবা মা-ও যে বাড়িতে! সব কিছুর ঝক্কি তো ওরাই পোহাল।

প্রশ্ন: রাণু মণ্ডল থেকে শুরু করে কাঁচা বাদামের ভুবন বাদ্যকর, নেট দুনিয়ায় উঠতি তারকারা আসেন আর যান, এর মধ্যে টিকে থাকার ফর্মুলা কী?

অন্তরা: সত্যি বলতে কী, কোনও ফর্মুলা নেই। নিজের কাজের প্রতি সৎ থাকাটা জরুরি বলে মনে করি। নিজস্বতা থাকলে ভয় কিসের? যখন যেমন সেই পরিস্থিতিতে নতুন কিছু ভেবে নেওয়া যাবে। সেই ক্ষমতাটা থাকা চাই।

প্রশ্ন: নতুন ইউটিউবারদের কী বলতে চান?

অন্তরা: শুধু সাবস্ক্রাইবার বাড়িয়ে চলাই নেটমাধ্যমের ব্যবহার নয়। সপ্তাহে দু’টো করে ভিডিয়ো আপলোড করে ক্ষান্ত দিলে হবে না। অন্য কারও সঙ্গে প্রতিযোগিতায় না নেমে নিজের কাজের প্রতি যত্ন নিতে হবে। কী ভাবে ভাল কনটেন্ট বানানো যায়, কী ভাবে নিজেকে আরও উন্নত করা যায়— সেই অনুশীলন ক্রমাগত চালিয়ে যেতে হবে। ভাইরাল হতে চাইলেই ভাইরাল হওয়া যায় না। মানুষ মানুষকে ভালবেসে ভাইরাল করে। কেন দেখবে সবাই আমার কাজ? সেটা আগে নিজেকে ঠিক করতে হবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy