ভাল আছেন তো...। পায়ে হেঁটে প্রচার জাকির হোসেনের। —অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়
বছরের শেষ রবিবার নিজের চেনা মেজাজে শহর ঘুরে প্রচার সারলেন জঙ্গিপুর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী জাকির হোসেন। কখনও মিছিলে পা মেলালেন, কখনও বা উঠে বসলেন হুডখোলা জিপে। সবশেষে রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুড়ি ছেড়ে শহরের মেজাজ বুঝে রবিবারের বিকেলে উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি শোনালেন তৃণমূল প্রার্থী।
বিড়ি কারখানার মালিক হিসেবে জঙ্গিপুরে জাকির হোসেন পরিচিত নাম। কিন্তু ব্যবসার খাতিরে কখনও মাঠে-ঘাটে ঘুরতে দেখা যায়নি তাঁকে। কিন্তু এ বার তিনি ভোটপ্রার্থী। জনসংযোগ বাড়তে মাঠে নামতে হয়েছে। তবে এ দিন তাঁর জনসংযোগের কায়দা দেখে বোঝা গেল তিনি শুধু বিড়ি ব্যবসায় নন, রাজনীতির ময়দানেও বেশ দড়।
এ দিন রোড-শো শুরু হওয়ার কথা ছিল বিকেল সাড়ে ৪টেয়। শুরু হল আধ ঘণ্টা পরে। শ’দেড়েক লোক নিয়ে শুরু। ঘণ্টা দেড়েক বাদে যখন তা শেষ হল তখন কর্মী-সমর্থকদের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে।
তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছে ট্যাবলো, জিপে টুকটুকে বাঁধা হয়েছে মাইক। পিছনে সার দিয়ে মিছিল। আইনজীবী, শিক্ষক, গৃহবধূ—সকলেই ভিড় জমিয়েছেন সেই মিছিলে। মিছিলে ছিলেন আব্দুস সাত্তার। কথায় কথায় জানান, ছেলের যেবার অসুখ করে পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন জাকির। ছেলে সেবার সেরে ওঠে। তাই ঋণ শুধতে এ বার তিনি জাকিরের পাশে।
সম্মতিনগর থেকে বাড়ি ফিরছিলেন আহিরণের বাসিন্দা বালক দাস। দূর থেকে জাকিরের মিছিল দেখে নেমে পড়লেন অটো থেকে। বাড়ি যেবার বন্যায় ভাসে পাশে পেয়েছিলেন জাকিরকে। তাই তিনিও মিছিলে পা মিলিয়েছিলেন। “কে জাকির, দেখি তো” বলে জুতো সেলাই ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন শ্যাম রবিদাস। হাত বাড়িয়ে তারঁ সঙ্গে করমর্দন করলেন জাকির। আবার মিছিলটা ছায়াবাণী সিনেমা হাউসের কাছে আসতেই জাকিরকে জড়িয়ে ধরলেন যিনি তাঁর নামও জাকির হোসেন। বাড়ি সুজাপুরে। বললেন, “অনেক দিন পর দেখা হল।” প্রার্থী জাকিরের হাসি মাখা উত্তর “ভাল থাকুন।”
হঠাৎই পাশ দিয়ে যাওয়া টুকটুকের পিছনের সিট থেকে এক যুবক উঁকি মারতেই হাত বাড়িয়ে দিলেন জাকির। যুবকটি ইতস্তত ভাবে বললেন, “আমি কিন্তু নবগ্রামের মানুষ।” জাকিরের ঝটিতি উত্তর “তা হোক। জোড়াফুল নবগ্রামেও আছে। সেখানেও জোড়াফুলে ছাপ দিতে ভুলবেন না।”
ঘণ্টা দেড়েকের পর রোড-শো ষখন শেষ হল তখন শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড় ডোমপাড়া, ষষ্ঠীতলা, তুলসিবাড়ি, থানাপাড়া, সদরঘাট, জঙ্গিপুর পুরভবন, পাকুড়তলা, ফাঁসিতলা ঘোরা হয়ে গিয়েছে। ম্যাকেঞ্জি রোড ধরে মিছিল যত এগিয়েছে মিছিলের পিছন তত লম্বা হয়েছে। যুব তৃণমূলের সভাপতি মেহেবুব আলমের মুখে তখন চওড়া হাসি। তিনি বলেন, “শহর নিয়ে একটা আশঙ্কা ছিল। এখন সে আশঙ্কা অনেকটাই কেটে গেল।”
কেন আশঙ্কা?
উত্তর দিতে এগিয়ে এলেন অন্য এক নেতা। তিনি বলেন, ‘‘গ্রামে গেলে স্বতঃস্ফূর্ততা বোঝা যায়। শহরের মানুষ তুলনায় নির্লিপ্ত। ভোট নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য নেই।” কিন্তু ব্যবসায়ী জাকির তা ভালই বোঝেন। তাই গ্রামে যেখানেই গিয়েছেন সেখানে ভোট চেয়ে বেড়িয়েছেন। গরমাগরম রাজনৈতিক বক্তৃতা দিয়েছেন। কিন্তু শহরে কোথাও রাজনীতির কথা তোলেননি। সর্বত্রই শুনিয়েছেন উন্নয়নের কথা। দীর্ঘ জনসংযোগ সেরেছেন জোড় হাতে, হাসিমুখে। কখনও মায়ের কোল থেকে শিশুকে কোলে নিয়ে আদর করেছেন, কখনও মাসিমা বলে সামনে দাঁড়িয়ে নমস্কার করেছেন বয়োবৃদ্ধাকে।
কী কথা শোনালেন তিনি?
তাঁর কথায়, “মুর্শিদাবাদ জেলা অত্যন্ত গরিব। পিছিয়ে পড়া জেলা। শিক্ষাতেও তাই। আমি চাই জেলায় বিভিন্ন ধরনের শিল্প গড়ে তুলতে। আরও বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে। রং দেখে কাজ করতে চাই না। এই ভরসাটাই আমি দিতে চাই মানুষের কাছে।”
দেখা যাক মানুষ তাঁর ডাকে সাড়া দেয় কিনা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy