Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

দুষ্টুগুলো আবার আসবে না তো!

বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে পুলিশের জিপ, তিন জন বন্দুকধারী পুলিশকর্মী। কিন্তু এঁরা যে বেশি দিন থাকবেন না, তা বিলক্ষণ জানেন দেবশ্রী ঘোষ। হালিশহরের বারেন্দ্রগলির বাড়িতে বসে মঙ্গলবার বললেন, ‘‘পুলিশের ভরসায় আর কদ্দিন থাকা যাবে। আমাদের নিজেদের মনের জোর বাড়াতেই হবে।’’

এখানেও মেরেছে! মায়ের কোলে চেপে দেখিয়ে দিচ্ছে ছোট্ট সায়ন্তিকা। মঙ্গলবার হালিশহরের বাড়িতে।ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

এখানেও মেরেছে! মায়ের কোলে চেপে দেখিয়ে দিচ্ছে ছোট্ট সায়ন্তিকা। মঙ্গলবার হালিশহরের বাড়িতে।ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হালিশহর শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:২৭
Share: Save:

বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে পুলিশের জিপ, তিন জন বন্দুকধারী পুলিশকর্মী। কিন্তু এঁরা যে বেশি দিন থাকবেন না, তা বিলক্ষণ জানেন দেবশ্রী ঘোষ। হালিশহরের বারেন্দ্রগলির বাড়িতে বসে মঙ্গলবার বললেন, ‘‘পুলিশের ভরসায় আর কদ্দিন থাকা যাবে। আমাদের নিজেদের মনের জোর বাড়াতেই হবে।’’

সোমবার রাজ্যের পঞ্চম দফা ভোটের দিন প্রতিবাদের মুখ হয়ে উঠেছেন দেবশ্রী ও তাঁর তিন বছরের মেয়ে সায়ন্তিকা। বাড়িতে ঢুকে দেবশ্রীকে বাঁশ পেটা করেছিল দুষ্কৃতীরা। মারধর করে তাঁর বাবাকেও। এমনকী, সায়ন্তিকার হাতেও বাঁশের বাড়ি মারে দুষ্কৃতীরা। হাত মুচড়ে দেয়। তার পরেও মেয়েকে কোলে নিয়ে ভোট দিতে গিয়েছিলেন দেবশ্রী আর তাঁর বাবা টিটু সমাজপতি। প্রথমটায় আতঙ্কিত হয়ে পড়লেও দেবশ্রীদের দেখাদেখি পাড়ার আরও মানুষ বেরিয়ে পড়েন ভোট দিতে। নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধি, পুলিশ, আধা সামরিক বাহিনী ছিল বটে, কিন্তু কোলের শিশুকে নিয়ে দেবশ্রীর ভোট দিতে যাওয়াই চোখ খুলে দেয় বাকিদের। পাড়ার লোক এককাট্টা হয়ে বলেন, ‘‘যা-ই ঘটুক না কেন, ভোট আমরা দেবই।’’

দেবশ্রীর পরিবার কট্টর বামপন্থী। টিটুবাবু হালিশহর পুরসভার কর্মী। মেয়ের মনোবল তাঁকেও সাহস জুগিয়েছে। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘আমার বাবাও ছিলেন বামপন্থী। ওঁকে ১৯৭৪ সালে চোখের সামনে খুন হতে দেখেছি। বামপন্থীদের সঙ্গে এমন ঘটনা বার বার ঘটে। আমরা আর ভয় পাচ্ছি না। ফের হামলা হলে আমরাই রুখে দাঁড়াব।’’ বাবার পাশে দাঁড়িয়ে মাথা নাড়ছিলেন ছেলে প্রদীপও।

দেবশ্রীর স্বামী শ্যামল ঘোষও হালিশহর পুরসভার কর্মী। বাড়ি হালিশহরেরই খাসবাটিতে। সেখান থেকেই দেবশ্রী ভোট দিতে এসেছিলেন বাপের বাড়িতে। স্ত্রী-মেয়ে-শ্বশুরমশাইয়ের উপরে হামলার পরেও অবিচল শ্যামল। তিনিও এ
দিন বলেন, ‘‘ভয় পেয়ে সত্যি কোনও লাভ নেই। আমার এলাকায় যদি কোনও হামলা হয়, তা হলে আমার পরিবার ও পাড়ার লোকজনই প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন।’’

কিন্তু স্ত্রী বাড়ি ফিরলে সেখানে কি পুলিশ প্রহরা চাইবেন? শ্যামলবাবু বলেন, ‘‘পুলিশ তো সত্যি বেশি দিন পাহারা দিতে পারবে না। তবে অভিযুক্তেরা সকলে গ্রেফতার হলে নিশ্চিন্ত হতে পারি।’’

রবিবারের ঘটনার পরে সোমবারই চার জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। এফআইআর-এ দেবশ্রীরা কারও নাম উল্লেখ করেননি। শুধু জানিয়েছেন, ৭-৮ জন দুষ্কৃতী মুখে কাপড় বেঁধে হামলা চালিয়েছে। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের এক পুলিশ কর্তা এদিন জানিয়েছেন, ‘‘৪ জনকে চিহ্নিত করে গ্রেফতার করার পরে বাকি অভিযুক্তদেরও ধরার চেষ্টা চলছে।’’

তিন বছরের শিশুর উপরে হামলার এই ঘটনায় রাজ্য জুড়ে তোলপাড় হয়েছে। অভিযোগের আঙুল শাসক দলের দিকেই। বীজপুরের তৃণমূল প্রার্থী শুভ্রাংশু রায় ঘটনার পরেই জানিয়েছিলেন, যে-ই ঘটিয়ে থাকুক না কেন, ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক। পরিবারটির পাশে থাকার আশ্বাসও দিয়েছিলেন তিনি। তবে এই ঘটনায় তাঁর দলের কেউ জড়িত, তা মানতে চাননি। মঙ্গলবার শুভ্রাংশুবাবু বলেন, ‘‘আমরাও চাই পুলিশ তদন্ত করে অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতার করুক।’’

এ দিন ‘আমরা আক্রান্ত’র তিন প্রতিনিধি দেখা করতে গিয়েছিলেন পরিবারটির সঙ্গে। দেবশ্রী ও মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিলেন স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে। তিনি জানিয়েছেন, দু’জনেরই পায়ের পিছনে পেরেক ফোটার মতো ক্ষত আছে। শিশুটির ডান হাতের কনুইয়েও রয়েছে আঘাতের চিহ্ন। আর রয়েছে একরাশ আতঙ্ক। দুধের শিশুটি এ দিনও বলেছে, ‘‘দুষ্টু লোকগুলো আবার মারতে আসবে না তো?’’

সায়ন্তিকার এই প্রশ্নের জবাব আপাতত জানা নেই কারও।

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy