এখানে রাজনীতির রঙ গিরগিটির মতো লহমায়-লহমায় বদলায়।
রাজ্যে কংগ্রেস-সিপিএম জোট হয়েছে। কিন্তু মুর্শিদাবাদের আর ন’টা কেন্দ্রের মতো এখানেও ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ লড়াই হচ্ছে।
যা দেখে চিমটি কাটেন জেলা তৃণমূল সভাপতি মান্নান হোসেন— ‘‘পিঠে ছুরি বসাবে এক জন, ছুরিবিদ্ধ অন্যজন! বন্ধু বলে আততায়ীর গলা জড়িয়ে ধরবে? তা হয় নাকি? তা হলে তো সোনার পাথরবাটিও হয়!’’ তাঁরা আপাতত ‘নেপোয় মারে দই’ আপ্তবাক্যটি হাতে-কলমে প্রয়োগ করে দেখাতে উদগ্রীব।
সিপিএম প্রার্থী ইনসার আলি বিশ্বাস আর কংগ্রেস প্রার্থী আলমগির মির প্রচারের ময়দানে অতি সতর্ক পা ফেলেছেন। পরস্পরের বিরুদ্ধে কটূক্তি না করে ছুরি তাক করেছেন ‘কমন এনিমি’ তৃণমূলের। নারদা, সারদা, কলকাতায় ভেঙে পড়া বিবেকান্দ ফ্লাইওভার, টেট, এসএসসি-সহ সব ধরনের মিসাইল তাঁরা তাক করেছেন তৃণমূল প্রার্থী নিয়ামত শেখের দিকে।
দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর এ হেন ‘বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই’ দেখে হাসছেন কয়েক দশকে বিচিত্র বর্ণের রামধনু রাজনীতিতে পোড় খাওয়া সেনাপতি হাজি নিয়ামত শেখ। বলছেন, ‘‘১৯৮৮ সালে রাজনীতিতে আমার হাতেখড়ি। ওই বছর আরএসপি দল থেকে ভাকুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান হয়েছিলাম।’’
একদা নিয়ামত-ঘনিষ্ঠ, বর্তমানে কংগ্রসের জেলাস্তরের এক নেতা বলছেন, ‘‘১৯৮৭ সালে হরিহরপাড়ায় সিপিএমের মোজাম্মেল হককে জেতানোর অন্যতম কারিগর ছিলেন নিয়ামতদা। তার বছর দুয়েক আগে অধীরদার সঙ্গে ওঁর পরিচয়। আজকের প্রদেশ কংগ্রেসে সভাপতি অধীরদা তখন আরএসপি-র সেচমন্ত্রী দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের অতি ঘনিষ্ঠ।’’
সেই সুবাদে অধীর চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন আজকের হাজি নিয়ামত শেখ। সেই সুবাদে তাঁর কপাল খোলে ২০০১-এর বিধানসভা ভোটে। সে বার এখানে কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের প্রার্থী ছিলেন মহাফুজ আলম ডালিম। জোট অস্বীকার করে হরিহরপাড়ায় ‘নলকূপ’ প্রতীকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে নিয়ামতকে দাঁড় করান অধীর। জোটপ্রার্থীকে তৃতীয় স্থানে ঠেলে দিয়ে নিয়ামতকে জিতিয়ে আনেন তিনি।
সেই থেকে হরিহরপাড়ার ভোট-নিয়তি গোঁজকাঁটা।
পাঁচ বছর পরে, ২০০৬ সালের ভোটে আর কংগ্রেস-তৃণমূল জোট নেই। হরিহরপাড়া পঞ্চায়েত সমিতি- সহ কয়েকটি বিষয়ের জেরে অধীর-নিয়ামত বন্ধুত্বও নেই। বরং বৈরিতা তুঙ্গে। কংগ্রেস একাই লড়ছে। তিন বিধায়ক— হরিহরপাড়ায় নিয়ামত, বহরমপুরে মায়ারানি পাল ও কান্দিতে অতীশ সিংহের প্রার্থী হওয়ার বিরোধিতা করেন অধীর। ওই তিন প্রার্থীর বিরুদ্ধে আলমগির মির, মনোজ চক্রবর্তী ও অপূর্ব সরকার ওরফে ডেভিডকে নির্দল হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেন। মায়ারানি ও অতীশ হেরে তৃতীয় স্থানে চলে যান। বিধায়ক হন মনোজ ও ডেভিড। নিয়ামতের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো আলমগিরকে অনেক অনুরোধ-উপরোধের পরে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। তার পরেও অধীর হরিহরপাড়ায় প্রচারে আসেননি। অল্প কিছু ভোটে হেরে যান নিয়ামত। জেতেন সিপিএমের ইনসার।
দলবদল করে নিয়ামত ভেড়েন তৃণমূলে এবং ২০১১-র ভোটে গুলি খাওয়া বাঘের মতো মেজাজে তৃণমূল-কংগ্রেস জোটপ্রার্থী। অধীর ফের জোট অস্বীকার করে নিয়ামতের বিরুদ্ধে নির্দল হিসেবে আলমগিরকে দাঁড় করান। নিয়ামত ফের হেরে যান। জেতেন ইনসার।
এ বারও ত্রিমুখী লড়াই— কংগ্রেসের আলমগির, সিপিএমের ইনসার আর তৃণমূলের নিয়ামত। এ বার কি আছে তাঁদের কপালে?
২০১১-র বিধানসভা ভোটে নির্দল আলমগিরের পাওয়া ভোটের তুলনায় লোকসভা ভোটে ৬ শতাংশ শক্তিবৃদ্ধি করেছে কংগ্রেস। কমেছে সিপিএমের ভোট। তৃণমূলেরও ভোট কিছুটা কমেছে।
যে-ই জিতুক, জিতবে কান ঘেঁষে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy