বিবেক দুবে এবং অজয় নায়েক।
দু’দু’জন পুলিশ-পর্যবেক্ষক। গোলমালের খবর পেলেই তাঁরা যাতে দ্রুত ঘটনাস্থলে যেতে পারেন, তার জন্য থাকবে দু’টি হেলিকপ্টারও। আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক হিংসা যদি ‘বৃদ্ধি পায়’, প্রয়োজনে আরও এক জন পর্যবেক্ষক নিয়োগের কথাও ভেবে রেখেছে নির্বাচন কমিশন। সে ক্ষেত্রে বাড়বে হেলিকপ্টারের সংখ্যাও। কার্যত কিছুটা নজিরবিহীন ভাবেই ভোটের আগেই পশ্চিমবঙ্গে পৌঁছে গিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। ভোট ঘোষণার আগেই তারা শুরু করে দিয়েছিল রুট মার্চ। আজ ভোট ঘোষণার দিনে পশ্চিমবঙ্গে সুষ্ঠু ভাবে ও নিরাপদে ভোট করার প্রশ্নে কার্যত কোমর কষে নামার ইঙ্গিত দিয়ে রাখল কমিশন।
পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ভাবে করতে ইতিমধ্যেই ১২৫ কোম্পানি আধাসেনা মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। বেশ কয়েক কোম্পানি আধাসেনা রাজ্যে পৌঁছেও গিয়েছে। আরও কত কোম্পানি আধাসেনা রাজ্যে মোতায়েন করার প্রয়োজন রয়েছে, তা ‘গোপন তথ্য’ বলে এড়িয়ে গিয়েছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা। যদিও তিনি জানান, প্রয়োজনে আরও আধাসেনা পাঠানো হবে রাজ্যে। একই ভাবে সাংবাদিক বৈঠকের শেষে রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈন এ বিষয়ে ব্যাখ্যায় জানান, এলাকায় টহলদারির জন্য আধাসেনা পাঠানো হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও আধাসেনা পাঠানো হবে। তবে কত আধাসেনা পাঠানো হবে সে বিষয়ে অবশ্য মুখ খুলতে চাননি তিনিও। এ বারের নির্বাচনে প্রায় ২৩ হাজার বুথ বেড়েছে পশ্চিমবঙ্গে। তবে তার মধ্যে কত সংখ্যক বুথ স্পর্শকাতর, তা এ দিন জানাতে চাননি কমিশন কর্তারা। কমিশনের পক্ষ থেকে শুধু জানানো হয়েছে, অধিকাংশ সংবেদনশীল বুথে ভিডিয়ো ক্যামেরা চালু থাকবে। রাজ্যে এমন বুথের সংখ্যা প্রায় মোট বুথের ৫০ শতাংশ।
ভোটের সময়ে কড়া হাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার প্রশ্নে দু’জন পুলিশ পর্যবেক্ষককে নিযোগ করেছে কমিশন। বিরোধীদের দাবি, গত কয়েক মাসে কত সংখ্যক অভিযোগ দায়ের হয়েছে, রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের গোয়েন্দা রিপোর্ট—এ সবের ভিত্তিতেই ‘স্পর্শকাতর রাজ্য’ হিসেবে এক জনের পরিবর্তে দু’জন পুলিশ পর্যবেক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। এঁদের অন্যতম বিবেক দুবে। যিনি ২০১৯ সালেও পশ্চিমবঙ্গে পুলিশ পর্যবেক্ষক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। অন্য জন মৃণালকান্তি দাস। অতীতে পশ্চিমবঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে ওই দু’জন আমলাকে নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভোটের সময় কালো টাকার ব্যবহার রুখতে প্রাক্তন রাজস্ব অফিসার বি মুরলীকুমারকে নিয়োগ করেছে কমিশন। আর রাজ্যের সার্বিক পরিস্থিতি নজরদারিতে সার্বিক পর্যবেক্ষক হিসেবে বিহার নির্বাচন কমিশনের প্রাক্তন সিইও অজয় নায়েককে নিয়োগ করেছে কমিশন।
কিছুটা নজিরবিহীন ভাবেই রাজ্যের দুই পুলিশ পর্যবেক্ষকের যাতায়াতের জন্য হেলিকপ্টার চেয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে আবেদন করেছে কমিশন। অরোরা আজ বলেন, ‘‘কোনও স্থানে আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যা হলেই যাতে দ্রুত সেখানে পৌঁছনো যায়, তার জন্য ওই হেলিকপ্টার চাওয়া হয়েছে। বিএসএফের কাছ থেকে ওই হেলিকপ্টার চেয়ে আবেদন জানিয়েছে কমিশন।’’ তাঁর দাবি, প্রয়োজনে রাজ্যে যেমন পুলিশ পর্যবেক্ষকের সংখ্যা বাড়ানো হবে, তেমনই বাড়ানো হবে হেলিকপ্টারের সংখ্যা। কমিশন জানিয়েছে, গন্ডগোল বা ঝামেলার খবর এলেই দ্রুত যাতে পুলিশ পর্যবেক্ষকেরা যেতে পারেন, তাই হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
আধাসেনা কোন স্পর্শকাতর এলাকায়, কোন সংবেদনশীল বুথে নিয়োগ হবে তা ঠিক করতে এ বার রাজ্য ও নির্বাচনী আধিকারিকদের নিয়ে যৌথ কমিটি গঠন করেছে কমিশন। কারণ, অতীতে দেখা গিয়েছে, রাজ্যে প্রশাসনের নির্দেশে আধাসেনাকে হয় থানায়, না হলে শান্তিপূর্ণ এলাকায় মোতায়েন করা হয়। ফলে যে কারণে আধাসেনা মোতায়েন করা হয়, সেই উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। আজ অরোরা বলেন, ‘‘সমস্ত রাজনৈতিক দলই কম-বেশি অভিযোগ করে যে আধাসেনাকে ঠিক ভাবে মোতায়েন করা হয়নি।’’ কমিশন কর্তার কথায়, তাই ওই বাহিনী কোথায় মোতায়েন করা হবে, তা ঠিক করতেই সব পক্ষের প্রতিনিধিদের নিয়ে ওই কমিটি গড়া হয়েছে। অতীতে ভোটের আগে বা ভোট চলাকালীন একাধিক আমলাকে বদলি করার সিদ্ধান্ত নিতে দেখা গিয়েছে কমিশনকে। এ যাত্রাতেও রাজ্য প্রশাসনের বেশ কিছু আমলার বিরুদ্ধে শাসক শিবিরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে বিজেপি শিবির। অভিযুক্ত আমলাদের বিরুদ্ধে কমিশন কি কোনও ব্যবস্থা নিতে চলেছে? সরাসরি কোনও জবাব দেননি অরোরা। তিনি বলেন, ‘‘আজ তো ভোট ঘোষণা হল। কমিশন কাজ শুরু করুক। তার পরে দেখা যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy