মিহির গোস্বামী এবং রবীন্দ্রনাথ ঘোষ । ফাইল চিত্র।
গড় কি আগলে রাখতে পারবেন রবীন্দ্রনাথ? নাটাবাড়ি শুধু নয়, কোচবিহার জুড়ে সেই প্রশ্নই ঘুরছে।
রবীন্দ্রনাথ ঘোষ ধীর-স্থির। যেন মেপে পা ফেলছেন। সকাল হতেই বেরিয়ে পড়ছেন তাঁর ‘স্করপিও’-য়। হাতের তালুর মতো চেনা নাটাবাড়ি। এক-একটি গ্রামের অনেককেই তিনি নাম ধরে চেনেন। জানেন, ঠিক কোথায় কোথায় বিজেপি ‘থাবা’ বসিয়েছে। সে সব জায়গায় হ্যান্ডমাইক হাতে পৌঁছে যাচ্ছেন। বলছেন উন্নয়নের তালিকা। বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ ক্যাম্পাস, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, রাস্তা থেকে নদীবাঁধের কথা। বলছেন, ‘‘দশ বছরে কী করিনি আপনাদের জন্য। উন্নয়ন শুধু নয়, এই বয়সেও করোনার সময়ে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে গিয়েছি।’’ নিজেও করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁর মা করোনায় মারা গিয়েছেন।
এত কথা ও কাহিনির পরেও কোথায় যেন একটা ‘রাশ আলগা’ হওয়ার ইঙ্গিত।
হাল ছাড়ার লোক অবশ্য নন রবীন্দ্রনাথ। নিজেই বলেন, ‘‘অনেক লড়াই করেই এখানে এসেছি। পাঁচ বার বিধানসভায় দাঁড়িয়েছি। পর পর তিন বার হারের পর দু’বার জয়ী হয়েছি।’’ শহর পেরিয়ে গ্রামে ঢুকে যায় তাঁর গাড়ি। মারুগঞ্জের ছোট্ট মাঠে ত্রিপল পেতে জনা কয়েক মানুষ বসে। গাড়ি থেকে নেমেই হাঁক দিলেন, ‘‘কী রে, আর লোক কই?’’ দাঁড়িয়ে থাকা এক-দু’জন কর্মী ছুটলেন বাড়ি বাড়ি। এ বাড়ি ও বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলেন কয়েক জন। জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘অঞ্জলি কোথায়?’’ তখন দূরে গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে অঞ্জলি। এক গাঁয়েরই বাসিন্দা ওঁরা দু’জন। এক ক্লাসেই পড়াশোনা। ফেরার পথে গাড়ি থামিয়ে বললেন, ‘‘অঞ্জলি, আমার হয়ে প্রচার করিস।’’ অঞ্জলি তাঁর কিছু অসুবিধার কথা জানিয়ে বলেন— ‘‘আমারে কিছু কওয়া লাগব না।’’ খানিক দূরেই স্কুলঘরে আরেকটি সভা। ঘরে উপচে পড়েছে ভিড়। গাড়ি দেখেই আওয়াজ উঠছে— ‘‘রবীন্দ্রনাথ জিন্দাবাদ।’’ হাসিমুখে গাড়ি থেকে স্কুলঘরে ঢুকে পড়েন তিনি। শুনতে থাকেন, কার কী অভিযোগ রয়েছে।
এ বার তাঁর লড়াই অনেকটাই কঠিন বলে মনে করছেন তাঁর অনুগামীদের একাংশ। গত লোকসভা ভোটের নিরিখে ওই কেন্দ্রে ১৮ হাজারের বেশি ভোটে পিছিয়ে তৃণমূল। তার উপরে এ বার ওই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী করেছে রবীন্দ্রনাথেরই এক সময়ের ‘সতীর্থ’ সদ্য তৃণমূল-ত্যাগী মিহির গোস্বামীকে। বয়সে ও রাজনীতিতে রবীন্দ্রনাথের থেকে খানিকটা বড় মিহির। কংগ্রেস আমলে নাটাবাড়িতে প্রচারের কাজেও নেমেছিলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘এ আমার পুরনো মাটি। একসময় চষে বেড়িয়েছি।’’ তাঁর অনুগামীদের দাবি, তৃণমূলের বিক্ষুব্দদের ভোট টেনে নেবেন মিহির। তাঁর সঙ্গে যোগ হবে বিজেপির ভোট। তৃণমূলের জেলার সাধারণ সম্পাদক খোকন মিয়াঁ অবশ্য বলেন, ‘‘মিহির গোস্বামী বিশ্বাসঘাতক। তাঁকে কেউ বিশ্বাস করবে না। বিজেপির লোকজনও না।’’
যা শুনে মুচকি হাসেন বাম সমর্থকরা। এ বারে নাটাবাড়ি কেন্দ্রে তরুণ নেতা আকিক হাসানকে প্রার্থী করেছে বামেরা। দিনরাত এক করে ছুটে বেড়াচ্ছেন আকিক। বলছেন, ‘‘এই দুই দলই সাম্প্রদায়িক। মানুষ এ বারে এদের ছুড়ে ফেলে দেবে।’’
২০১৬ সালে রবীন্দ্রনাথ পান ৯৩ হাজার ২৫৭টি ভোট। সিপিএম প্রার্থী পান ২১ হাজার ৫২৪টি ভোট। বিজেপির প্রার্থী পান ২১ হাজার ৫২৪টি ভোট। ২০১১ সালে রবীন্দ্রনাথ বাম প্রার্থীকে ৭ হাজার ৫৬৫ ভোটে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন। এ বারের লোকসভায় অবশ্য সব কিছু ছাপিয়ে ‘লিড’ নেয় বিজেপি।
তাই গড় রক্ষায় এখন লড়াই রবীন্দ্রনাথের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy