বাঁকুড়ায় সভায় মুখ্যমন্ত্রী ও সায়ন্তিকা। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।
পাঁচ বছর অন্তর এক জন জেতে। বাঁকুড়া বিধানসভার এই প্রবণতা মাথায় রেখেই এ বার প্রার্থী বদল করেছে তৃণমূল। বুধবার তামলিবাঁধ স্টেডিয়ামের সভা থেকে এমনটা জানালেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঞ্চ থেকে তিনি বলেন, ‘‘বাঁকুড়ার একটা ট্রেন্ড হচ্ছে, পাঁচ বছর বাদে এক এক জন জেতে। তাই সায়ন্তিকাকে দিয়েছি। যাতে আপনারা জোড়া ফুলে ভোট দেন। শম্পাকে এ বছর অন্য কাজে লাগাব।’’
২০১১ সালে বাঁকুড়ায় তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন প্রবীণ রাজনীতিবিদ কাশীনাথ মিশ্র। বছর খানেকের মধ্যেই অসুস্থতাজনিত কারনে প্রয়াত হন তিনি। উপনির্বাচনে বাঁকুড়ায় তৃণমূলের টিকিটে জেতেন কাশীনাথবাবুর স্ত্রী মিনতি মিশ্র।
২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনের মুখে দল বিরোধী কাজের জন্য শম্পা দরিপাকে বহিষ্কার করে তৃণমূল। তিনি কংগ্রেসে যোগ দিয়ে বাঁকুড়া আসনে বাম-কংগ্রেস জোটের টিকিট পান। সে বারও তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন মিনতীদেবী। ভোটে জেতেন শম্পাদেবী। পরে যোগ দেন তৃণমূলে। এ দিন তিনি বলেন, “দিদি আমাদের অভিভাবক। উনি যা ভাল মনে করেছেন, করেছেন।”
মমতার বক্তব্য নিয়ে কটাক্ষ করেছে বিরোধী শিবির। ২০১৪ সালে বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রে দীর্ঘ দিনের বাম-সাংসদ বাসুদেব আচারিয়াকে পরাজিত করেন তৃণমূলের তারকা প্রার্থী মুনমুন সেন। ২০১৯ সালের ভোটে তাঁকে আসানসোল থেকে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। সে বার ভোটে হেরে যান মুনমুন। সেই প্রসঙ্গ টেনেও টিপ্পনী করছেন অনেকে।
বাঁকুড়ার বিজেপির সাংসদ সুভাষ সরকার বলেন, “বাঁকুড়ার মানুষ কাজ দেখে ভোট দেন। মুখ্যমন্ত্রী বুঝেছেন, এখানের উন্নয়নে খামতি থেকে গিয়েছে। তাই আত্মবিশ্বাসের অভাবে পুরনো প্রার্থীকে সরিয়ে তারকা প্রার্থী দিয়েছেন।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অমিয় পাত্র বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী ভালভাবে পড়াশোনা না করেই বাঁকুড়া নিয়ে কথা বলছেন। বাঁকুড়ার প্রার্থীদের জেতানোই হচ্ছে এখানকার মানুষের পরম্পরা। বহিরাগতদের কখনওই বাঁকুড়ার মানুষ মেনে নেয়নি।’’
তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে চলচ্চিত্র অভিনেত্রী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম ঘোষণার পর থেকেই বিরোধীরা তাঁকে ‘তারকা প্রার্থী’ বলে কটাক্ষ করছেন। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আপনাদের তারকা সম্পর্কে তো কই আমরা বাজে কথা বলছি না? তারা কী? আর সায়ন্তিকা অনেকের থেকে ভাল। সায়ন্তিকা ভাল পরিবারের মেয়ে, পুলিশ পরিবারের মেয়ে।”
তৃণমূলের সাংসদ দেব, মিমি চক্রবর্তী ও নুসরত জাহানের উদাহরণ দিয়ে মমতা সভায় দাবি করেন, চলচ্চিত্র তারকারা ইচ্ছা থাকলে ভাল কাজ করতে পারেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি যেমন নন্দীগ্রামে বাড়ি নিয়েছি, সায়ন্তিকাও এখানে নিয়েছে। মাসে অন্তত তিন বার করে আসবে। সুতরাং নিশ্চিন্তে থাকুন। ওর চোখ দিয়ে আমি বাঁকুড়াকে দেখব।”
এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চে ওঠার পরে, তাঁর ঠিক আগেই বক্তব্য রাখেন সায়ন্তিকা। বিরোধীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘আমরা লিপস্টিক-পাউডার মেখেও তাদের চেয়ে বেশি কাজ করি। আসলে ওরা মেয়েদের এগোতে দিতে চায় না।” নিজের একটি ছবির সংলাপের অনুকরণে নিশানা করেন বিজেপিকে। মুখ্যমন্ত্রী পরে বলেন, ‘‘আমি ওর বক্তৃতায় খুব ইমপ্রেসড। নিজে তৈরি করেছে নিজেকে।”
এ বার ভোটে আশি বছরের বেশি বয়সীদের টিকিট দেওয়া হবে না বলে প্রার্থী ঘোষণার আগেই জানিয়ে দিয়েছিল তৃণমূল। গত বার কংগ্রেসের টিকিটে জিতে পরে তৃণমূলে যাওয়া বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তুষারকান্তি ভট্টাচার্যের বয়স আশি পার হয়েছে। টিকিট পাননি তিনি। এ দিন বিষ্ণুপুরের সভা থেকে মমতা বলেন, “তুষারদার একটু বয়স হয়ে গিয়েছে, তাই তাঁকে প্রার্থিপদ না দিয়ে অর্চিতা বিদকে দিয়েছি। ও এখানে পড়ে থেকে আমার কাজগুলো করবে।’’
এ দিন চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি তুষারবাবুর সঙ্গে। জবাব মেলেনি মোবাইলে পাঠানো মেসেজেরও। বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুজিত অগস্তি বলেন, “বিষ্ণুপুরের মানুষ তৃণমূলের থেকে অনেক আগেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy