অভিনেতা হিরণ চট্টোপাধ্যায় ও দিলীপ ঘোষ।
কলকাতা
দ্বিতীয় দফায় ১ এপ্রিল ভোটগ্রহণ খড়্গপুর সদর আসনে। শুক্রবার মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন। তার আগে একেবারে শেষবেলায় ওই আসনের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করল বিজেপি। প্রার্থী অভিনেতা হিরণ চট্টোপাধ্যায়। গত ফেব্রুয়ারি মাসে দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানায় অমিত শাহের জনসভায় বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন একদা তৃণমূল ঘনিষ্ঠ এই অভিনেতা। প্রথম দু’দফার ৬০ আসনের মধ্যে শুধু ময়নায় রাজনীতির দলের বাইরের লোক হিসেবে প্রাক্তন ক্রিকেটর অশোক ডিন্ডার নাম ঘোষণা করেছিল বিজেপি। এ বার সেই তালিকায় নাম ঢুকল হিরণের। বুধবার বাঁকুড়ার বড়জোড়া কেন্দ্রের প্রার্থীর নামও ঘোষণা করেছে বিজেপি। প্রার্থী হচ্ছেন স্থানীয় রাজনীতিক সুপ্রীতি চট্টোপাধ্যায়।
একে একে ৫৮ আসনের প্রার্থী ঘোষণা হয়ে গেলেও বিজেপি নীরব ছিল খড়্গপুর সদর ও বড়জোড়ার প্রার্থীর নাম নিয়ে। তা নিয়ে দলের অন্দরে-বাইরে তৈরি হয় নানা জল্পনা। তবে বেশি আলোচনায় ছিল খড়্গপুর সদর। প্রশ্ন ছিল— ওই আসনের প্রাক্তন বিধায়ক তথা দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকেই কি টিকিট দেবেন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব! এমনও শোনা যাচ্ছিল যে, ওই কেন্দ্রে প্রার্থী করা হতে পারে খড়্গপুর পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলর দেবাশিস চৌধুরী ওরফে মুনমুনকে। যিনি গত শনিবারই জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক পদ ছেড়েছেন। তবে মুনমুন এখনও তৃণমূল ছাড়েননি এবং বিজেপি-তে যোগ দেননি। তবুও তিনি জল্পনার কেন্দ্রে ছিলেন। ওই আসনের প্রার্থী নিয়ে আর কোনও জল্পনা রইল না। খড়্গপুর সদরের ‘জ্যাকপট’ জিতে নিলেন ‘জ্যাকপট’ ছবির নায়ক হিরণ।
ওই আসন নিয়ে নানা জল্পনার মধ্যে বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দেয় বিজেপি কেন দিলীপকেই পুরনো কেন্দ্রে প্রার্থী করছে না? ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগেই রাজনীতিতে যোগ দেন দিলীপ এবং বিজেপি-র সভাপতি হন। আদতে আরএসএসের প্রচারক দিলীপ খড়্গপুর সদর থেকে দলের টিকিটে লড়াই করে আশাতীত জয়ও পান। ছ’বারের কংগ্রেস বিধায়ক জ্ঞান সিংহ সোহনপালকে হারিয়ে দেওয়া দিলীপ আবার ২০১৯ সালে মেদিনীপুর থেকে সাংসদ হন। সেই বছরই খড়্গপুর সদরে উপনির্বাচনে পরাজিত হন দিলীপ-ঘনিষ্ঠ প্রেমচন্দ্র ঝা। প্রসঙ্গত, তখনও তৃণমূলেই শুভেন্দু। দলের পক্ষে সেই উপনির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন তিনিই।
হিরণকে প্রার্থী করায় শেষ মুহূর্তে দিলীপকেই প্রার্থী করা হবে বলে যাঁরা আশায় ছিলেন সেই দিলীপ-ঘনিষ্ঠরা হতাশ। দিলীপ অবশ্য আগেই বলেছেন, তিনি কোনও দাবিই জানাননি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘গত লোকসভা নির্বাচনেও আমি দাঁড়াতে চাইনি। দল বলেছিল, শীর্ষনেতৃত্বকেও লড়াইয়ে থাকতে হবে। সেই কারণেই রাজ্য কমিটির আরও অনেকের মতো আমিও প্রার্থী হয়েছিলাম। আর এ বার আমিও যেমন প্রার্থী হতে চাইনি, তেমনই কেন্দ্রীয় নেতারাও আমার কাছে এই ব্যাপারে কিছু জানতে চাননি। দল যা ঠিক করবে তাই হবে।’’ তবে তাঁর ঘনিষ্ঠরা মনে করছেন দিলীপ প্রার্থী না হওয়ায় দল ক্ষমতায় এলে মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার থাকতে পারবেন না দিলীপ। তবে পরে কোনও আসন থেকে জিতে আসতেই পারেন তিনি। কিন্তু কঠিন আসন নন্দীগ্রাম থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে শুভেন্দু অধিকারী জিতে গেলে আবার তাঁর পাল্লা ভারী হয়ে যাবে। তা ছাড়া এখন দিলীপকে প্রার্থী করা না হওয়ায় তিনি যে মুখ্যমন্ত্রী হলেও হতে পারেন সেই বার্তাও যাবে না। আসলে নীলবাড়ির দখলের স্বপ্ন-দেখা দিলীপ-ঘনিষ্ঠরা তাঁদের পছন্দের ‘দাদা’-কে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীর প্রতিযোগিতায় দেখতে চেয়েছিলেন।
তবে বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপির এক কেন্দ্রীয় নেতার বক্তব্য, ‘‘এত কিছু এখন থেকে ভাবার কোনও কারণ নেই। দল সময় নিয়েছে ওই আসন থেকে জেতার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি কার, সেটা যাচাই করার জন্য।’’ তিনি এ-ও মানছেন যে, খড়্গপুর সদরের প্রার্থী কে হবে, তা নিয়ে যতগুলি সমীক্ষা হয়েছে তার সবক’টিতেই এগিয়ে আছেন দিলীপ। তবে কে প্রার্থী হবেন, কে জিতবেন, তার উপর মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হওয়া নির্ভর করবে না বলেই দাবি ওই নেতার। তিনি বলেন, ‘‘ত্রিপুরায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে কোনও আলোচনায় ছিলেন বিপ্লব দেব? উত্তরপ্রদেশের সাংসদ যোগী আদিত্যনাথের নাম তো শোনাই যায়নি। হরিয়ানায় মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার আগে কি কেউ মনোহরলাল খট্টরের নাম ভাবতে পেরেছিল! বিজেপি-তে এমন নজির অনেক।’’ পদ্ম-পলিটিক্সের এই ধারা মনে করিয়ে ওই নেতার মোক্ষম প্রশ্ন— ‘‘রাজনীতিতে আসার কয়েক মাসের মধ্যে দিলীপ ঘোষ রাজ্য সভাপতি হবেন, সেটাও কি বাংলার কেউ ভাবতে পেরেছিল?’’ ওই নেতার কথামতো, দল ক্ষমতায় এলে মোদী, নড্ডা, শাহরা কোন ‘ভূমিপুত্র’-কে বাছবেন তা দিলীপের প্রার্থী হওয়া বা না হওয়ার উপরে আদৌ নির্ভর করছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy