অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী রুজিরার সঙ্গে প্রায় সওয়া ১ ঘণ্টা কথা বলার পর ‘শান্তিনিকেতন’ থেকে বেরোল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিবিআই)-র দল। কয়লা-কাণ্ডে ব্যাঙ্ককের একটি ব্যাঙ্কে রুজিরার অ্যাকাউন্ট থেকে ‘সন্দেহজনক’ লেনদেন নিয়ে রুজিরার বক্তব্য শোনেন তাঁরা। জানা গিয়েছে, কথাবার্তা চলাকালীন নিজাম প্যালেসে সিবিআইয়ের সদর দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গেও লাগাতার যোগাযোগ রাখছিলেন গোয়েন্দারা। রুজিরা বেশ কিছু প্রশ্ন এড়িয়ে গেলে ফোনে নিজাম প্যালেসের আধিকারিকদের তা জানান গোয়েন্দারা। তাতেই বেরিয়ে যেতে বলা হয় তাঁদের। সেই মতো ‘শান্তিনিকেতন’ থেকে বেরিয়ে যান সকলে।
রুজিরার বয়ানের সারমর্ম নিয়ে দুপুরে নিজাম প্যালেসে সিবিআই আধিকারিকদের একটি বৈঠক রয়েছে। তার পরই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে রুজিরার জবাবে তাঁরা সন্তুষ্ট কি না, সিবিআইয়ের তরফে এখনও পর্যন্ত তা জানানো হয়নি। ‘শান্তিনিকেতন’ থেকে বেরনোর পর সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলেননি গোয়েন্দাদের কেউ। তবে ব্যাঙ্কের লেনদেন এবং নামধাম সংক্রান্ত সাধারণ প্রশ্নই রুজিরাকে জিজ্ঞেস করা হয় বলে সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে। জানতে চাওয়া হয় তিনি কোনও সংস্থার সঙ্গে যুক্ত কি না। রুজিরার নাগরিকত্ব এবং পাসপোর্ট সংক্রান্ত খুঁটিনাটিও সিবিআইয়ের প্রশ্ন তালিকায় উঠে আসে বলে জানা গিয়েছে। তবে এ নিয়ে নিশ্চিত ভাবে কিছু জানা যায়নি।
কয়লা-কাণ্ডে গত রবিবার রুজিরাকে নোটিস ধরায় সিবিআই। পর দিন ইমেল পাঠিয়ে মঙ্গলবার সিবিআই-কে কথা বলার জন্য সময় দেন রুজিরা। সেই মতো মঙ্গলবার সকাল ১০টা নাগাদ অভিষেকের বাড়িতে পৌঁছন রুজিরার আইনজীবী। তার ঘন্টা দেড়েক পর আচমকা সেখানে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। মিনিট দশেক সেখানে ছিলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্রে বলা হয়, নবান্নে যাওয়ার পথে মমতা সেখানে গিয়েছিলেন পরিবারের ‘অভিভাবক’ হিসাবে। ‘মুখ্যমন্ত্রী’ বা ‘তৃণমূলনেত্রী’ হিসাবে নয়। বেরনোর সময় মমতাকে এগিয়ে দিতে তাঁর সঙ্গে এসেছিল অভিষেকের কন্যাও। অভিষেকের বাড়িতে ঢোকার সময় বা বেরিয়ে যাওয়ার সময় মমতা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কোনও কথা বলেননি। ঘটনাচক্রে, মমতা অভিষেকের বাড়ি থেকে বেরনোর মিনিটপাঁচেকের মধ্যেই সেখানে পৌঁছন সিবিআই আধিকারিকরা।
প্রসঙ্গত, রুজিরাকে জেরার জন্য সিবিআই ৮ সদস্যের একটি বিশেষ দল তৈরি করেছে। তাঁকে কোন কোন বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে, তা ঠিক করতে সোমবারেই নিজাম প্যালেসের সিবিআই দফতরে আধিকারিকরা বৈঠক করেছিলেন বলে খবর। রুজিরার ক’টি পাসপোর্ট, তিনি কোনও নথিবদ্ধ (রেজিস্টার্ড) সংস্থার সঙ্গে তিনি যুক্ত কি না, সে সব বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হতে পারে বলেও সিবিআই সূত্রে খবর। রুজিরার জেরার সময় তাঁর বয়ান ভিডিয়ো রোকর্ডিং করা হবে বলেও জানা গিয়েছিল। সিবিআইয়ের তদন্তকারী দলেও আইনজীবীরা ছিলেন। রুজিরার নাগরিকত্ব নিয়েও প্রশ্ন তুলছে সিবিআই। কেন তাঁর বাবার নাম দু’জায়গায় দু’রকম রয়েছে, তা স্পষ্ট করতে চায় সিবিআই। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে ইমেল পাঠিয়ে জানতে চেয়েছে সিবিআই। দিল্লিতে সিবিআইয়ের সদর দফতর থেকে মঙ্গলবারই ওই মেল পাঠানো হয়েছে। তাদের প্রশ্ন, নাগরিকত্বের প্রশ্নে কোথাও কোনও ত্রুটি আছে কি না।
তবে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা ‘শান্তিনিকেতন’-এ পৌঁছনোর আগে, সোমবার রুজিরার নাগরিকত্বের বিষয়টি উস্কে দিয়েছিলেন বিজেপি নেতা অর্জুন সিংহ। এর আগে, লোকসভা নির্বাচনের আগেও অভিষেক ঘরণীর নাগরিকত্ব নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছিল রাজ্য রাজনীতিতে। সেই সময় বিরোধী শিবির থেকে অভিযোগ ওঠে, ব্যাঙ্ককে জন্মগ্রহণ করায় রুজিরার কাছে তাইল্যান্ডের পাসপোর্ট রয়েছে। কিন্তু একাধিক জায়গায় নিজেকে ভারতের নাগরিক বলে দাবি করেছেন তিনি। এমনকি প্যান কার্ডের আবেদনপত্র এবং বিদেশে বসবাসকারীদের ভারতীয় নাগরিকত্বের শংসাপত্র (ওসিআই কার্ড) পাওয়ার জন্য নিজের বিয়ের যে শংসাপত্র জমা দিয়েছিলেন রুজিরা, তাতে এক জায়গায় তাঁর বাবার নাম নিফন নারুলা এবং অন্য জায়গায় গুরশরণ সিংহ আহুজা লেখা ছিল বলেও অভিযোগ ওঠে। রুজিরার দ্বৈত নাগরিকত্বের এই বিষয়টি আদালত পর্যন্তও গড়িয়েছিল, আজও যার নিষ্পত্তি হয়নি। ভুল তথ্য দেওয়ার অভিযোগে সেই সময় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের বিদেশি নাগরিক দফতর থেকে রুজিরাকে শোকজও করা হয়। ’২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে ফের সেই বিতর্কই নতুন করে মাথাচাড়া দিচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy