বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ
আবার দার্জিলিঙে দিলীপ ঘোষ। নীলবাড়ি দখলের লড়াইয়ে সাম্প্রতিক কালে অনেক বার উত্তরবঙ্গে গেলেও পাহাড়ে যাননি বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি। দার্জিলিংয়ে তো নয়ই। ২০১৭ সালের ৫ অক্টোবরের পর আবার ২০২১-এর ২৩ ফেব্রুয়ারি। আবার মঙ্গলবার দার্জিলিংয়ে পা রাখলেন দিলীপ। তবে সেই সফরও শুরু হল কালো পতাকা দেখে!
এর মধ্যে ২০১৯ সালের এপ্রিলে লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে অমিত শাহের সঙ্গে কালিম্পঙে গেলেও দার্জিলিং শৈলনগরীতে পা রাখেননি দিলীপ। সেই অর্থে প্রায় সাড়ে ৩ বছর পরে মঙ্গলবার দার্জিলিংয়ে সভা করবেন তিনি। কিন্তু সেই সভার আগে গেরুয়া শিবির মনে রাখছে ২০১৭ সালের সেই দিনের কথা। সে বার যে ভাবে লাঞ্ছনার শিকার হয়েছিলেন দিলীপ, সেটা মনে রেখেই পাল্টা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে বিজেপি। তবে সকাল যদি বলে সারা দিনটা কেমন যাবে, তা হলে দিলীপের শুরুটা তেমন ভাল হয়নি। পাহাড়ে যাওয়ার রাস্তার মোড়ে মোড়ে কালো পতাকার মুখোমুখি হতে হয়েছে দিলীপকে।
কী হয়েছিল ২০১৭ সালের ৫ অক্টোবর? সে বার দুদিনের দার্জিলিং সফর ছিল দিলীপের। প্রথম দিন ৪ অক্টোবর থেকেই তাঁর সফর নিয়ে উত্তাপ ছড়ায় পাহাড়ে। বিভিন্ন জায়গায় কালো পতাকা দেখানো হয়। কিন্তু ৫ অক্টোবর হয় সটান হামলা। দার্জিলিং জেলা সদরে ‘গোর্খা দুখ নিবারণী সমিতি’র হলের সামনের সভাস্থলে প্রথমে হামলা চবে। দিলীপের মাইক কেড়ে নেওয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি দার্জিলিং সদর থানায় অভিযোগ জানাতে রওনা হন। তখনই তাঁকে ধাক্কাধাক্কি করা হয় রাস্তার উপর। দিলীপের আপ্ত সহায়ক দেব সাহা এবং দার্জিলিঙের বিজেপি নেতা রাকেশ পোখরেলকে রাস্তায় ফেলে মারধরও করা হয়। রাকেশকে লাথি মারতে থাকে জনতা। দিলীপ জখম না হলেও বাকিদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। সে দিন দিলীপ অভিযোগ করেছিলেন, ‘‘বিনয় তামাংয়ের লোকজনই হামলা করেছে বলে সন্দেহ। কলকাতা থেকে মদত দেওয়া হয়ে থাকতে পারে।’’
সে দিনের কথা এখনও ভোলেননি দিলীপ। সাড়ে ৩ বছর আগের সেই দিন আর মঙ্গলবার— দু’টি সফরেই দিলীপের সঙ্গী এক অনুগামী জানান, সে দিন সকালে কালিম্পং থেকে দার্জিলিং পৌঁছনোর পথেই বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছিল। বাতাসিয়া লুপের কাছে কালো পতাকা দেখায় বিক্ষোভকারীরা। দার্জিলিং স্টেশন থেকে চকবাজার পর্যন্ত মিছিল করেন দিলীপ। চকবাজারে একটি ছোট সভাও হয়। তখনও দার্জিলিং শহরের বিভিন্ন জায়গায় কালো পতাকা দেখা যায়। বিকেল তিনটে নাগাদ সভাস্থলে পৌঁছেছিলেন দিলীপ। তার আগেই বিক্ষোভকারীরা হল-এ উপস্থিত হয়। দিলীপ সভাঘরে ঢুকতেই ‘গোর্খাল্যান্ড জিন্দাবাদ’, ‘বিনয় তামাঙ্গ জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভকারীরা মারমুখী হয়ে ওঠে।
সেই দার্জিলিংয়েই মঙ্গলবার দিলীপের সমাবেশ এবং রোড-শো। বিপদের আশঙ্কা রয়েছে কি? প্রশ্নের উত্তরে দিলীপ বলেন, ‘‘পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। সেবার যাঁদের হাতে বিজেপি-র পতাকা ছিল, এখন তাঁদের হাতেই কালো পতাকা দেখলাম। কিন্তু সাধারণ মানুষ যে বিজেপি-র সঙ্গে, সেটা টের পাওয়া যাচ্ছে। এখানে ‘পরিবর্তন যাত্রা’-ও বেরোবে। গোলমাল হবে কিনা জানি না। হলে হবে। গোটা বাংলাতেই আমার উপরে আক্রমণ হচ্ছে। বিজেপি নেতা কর্মীদের উপরে আক্রমণ হচ্ছে। তাতে ভয় পাওয়ার পাত্র নই আমি।"
পাহাড়ের রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে গিয়েছে। সেই সময় বিজেপি-র সঙ্গে থাকা বিমল গুরুং এখন তৃণমূলের সঙ্গে। আগে নরেন্দ্র মোদীর হয়ে গলা ফাটালেও এখন গুরুং চাইছেন ফের মুখ্যমন্ত্রী হোন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে দিলীপের কথায়, ‘‘ওঁর কাছে সাধারণ মানুষ বারবার ধোঁকা খেয়েছে। এখন সকলের আস্থা বিজেপি-র উপরেই।’’ অন্য দিকে, গুরুংদের সমর্থন নিয়ে গত লোকসভা ভোটে জয়ী দার্জিলিংয়ের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তের বক্তব্য, ‘‘পরিস্থিতি বদলালেও ফের বিজেপি-র উপরে হামলা হবে না, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। তবে আমাদের আশঙ্কা নেই। প্রস্তুতি আছে। কোথাও হামলা হলে আমরা পাল্টা দেওয়ার জন্য তৈরি আছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy