প্রতীকী ছবি ফাইল চিত্র
বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রুক্ষ, খটখটে চাষ জমি। খাঁড়িও শুকিয়ে কাঠ। ভর দুপুরে খাবারের খোঁজে শুকনো জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসছে শেয়াল। মাটির নীচে জলের স্তর আরও গভীরে নেমে এলাকা জুড়ে হস্তচালিত নলকূপগুলি অকেজো। একফোঁটাও জল ওঠেনা। জলের তীব্র সঙ্কট নিয়েই বছরের পর আদিবাসী প্রধান তপন জনপদের মানুষকে কাটাতে হয়।
বৈশাখের চড়া রোদ উপেক্ষা করে ফের ভোটের দামামা বেজে উঠেছে তপন আদিবাসী সংরক্ষিত কেন্দ্রে। রাস্তার পাশে গাছে, বাড়ির বেড়ায় টাঙানো সবুজ, গেরুয়া, লাল পতাকা হাওয়ায় যত উড়ছে, রাজনৈতিক দলগুলিও জলকষ্ট, জমিতে সেচের জলের অভাব মেটানো, তপন দিঘি ও রাস্তাঘাট সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রচারেও জোর দিয়েছে।
রোদ উপেক্ষা করে সাঁওতালি ছবির অভিনেত্রীকে হেঁটে আসতে দেখে ঘরের কাজ ফেলে রাস্তায় নেমে এল বউ ছেলেরা। আবদার মেনে নায়িকা মাস্ক নামিয়ে হাত জোড় করলেন। বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করে বল্লেন, ‘‘আদিবাসী, রাজবংশীদের পাশে মুখ্যমন্ত্রী সবসময় আছেন।’’ উন্নয়নের তথ্যও তুলে ধরলেন।
করোনা আক্রান্ত তপন কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী কল্পনা কিস্কুর কাটআউট নিয়ে ওই কেন্দ্রে মাটি কামড়ে প্রচারে ঝাঁপিয়েছেন আদিবাসী নেত্রী বীরবাহার সঙ্গে ঝাড়গ্রামের আদিবাসী নেতা দেবনাথ হাঁসদাও। তপনে আসল লড়াইটা পেছনে থেকে লড়তে হচ্ছে রাজ্য সভার সাংসদ অর্পিতা ঘোষকে। টিকিট না পেয়ে বৈরাগ্যে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যাওয়া ১০ বছরের বিধায়ক তথা মন্ত্রী বাচ্চু হাঁসদার সঙ্গে।
তপনের চকভৃগু অঞ্চলের গোবিন্দপুরের বাসিন্দা মনোজ বর্মন বলেন, ‘‘এখানে বিজেপি হাওয়া।’’ মামনার কৃষক স্বপন দেবনাথের আশঙ্কা, ‘‘বিজেপি এলে থাকতে পারব না।’’ তপন কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী বুধরাই টুডু আদিবাসী পোশাকে প্রচারে ঝাঁপিয়েছেন। গত লোকসভা। এখানে ২৩ হাজার ভোটে এগিয়ে বিজেপি। প্রার্থী বুধরাই বলেন, ‘‘তৃণমূল প্রার্থীর দেখাই নেই। তপনে আমরাই এগিয়ে।’’
রাম থেকে বাম ভোট ফেরানোর লড়াইয়ে তপনের সংযুক্ত মোর্চার আরএসপি প্রার্থী রঘু ওঁরাওয়ের মতো কুশমণ্ডি কেন্দ্রে আরএসপির টানা ৪৪ বছরের বিদায়ী বিধায়ক নর্মদা রায়েরও লড়াইও কঠিন। আরএসপির এক নেতার কথায়, ‘‘ওই দুটি কেন্দ্রে এবারে আমাদের ভোট ধরে রাখার লড়াই। তৃণমূলকে ঠেকাতে আগে রাম, পরে বাম, লোকসভা ভোটের সেই তত্ত্ব বিধানসভার প্রচারে গিয়েও শুনতে হচ্ছে।’’ আরএসপির রাজ্য সম্পাদক বিশ্বনাথ চৌধুরীর দাবি, ‘‘তপন ও কুশমণ্ডির পুরনো গড় উদ্ধারে কর্মীরা ঝাঁপিয়েছেন। এবারে বাম ভোট ঘরেই ফিরবে।’’
কুশমণ্ডিতেও গেরুয়া হাওয়া। সেটা ধরে রাখতে মরিয়া চেষ্টা করছেন বিজেপি প্রার্থী রঞ্জিত রায়। আমিনপুরের বাসিন্দা রবি হাঁসদা বলেন, ‘‘এবার আমরা ভোট নষ্ট করব না।’’ তৃণমূল প্রার্থী রেখা রায়কে এগিয়ে রাখছেন দলের চেয়ারম্যান বিপ্লব মিত্র।
সংখ্যালঘু প্রধান কুমারগঞ্জে ভোট কাটাকাটির খেলা। এক তৃণমূল কর্মীর কথায়, ‘‘সংযুক্ত মোর্চার কংগ্রেস প্রার্থী নার্গিসবানু চৌধুরী চিন্তা বাড়িয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী তোরাফ হোসেন মণ্ডলের।’’ ভূমি সংস্কার আন্দোলনে জোতদারের হামলায় নিহত নার্গিসের বাবা। সমজিয়া পঞ্চায়েতের নির্দল প্রধান তাঁর মা ও পঞ্চায়েত সদস্য দাদার পাশাপাশি কুমারগঞ্জে নার্গিস শহিদ পরিবারের মেয়ে বলে ভাবাবেগ তুলে বাম-কংগ্রেসের প্রচারে আশা দেখছেন বিজেপি প্রার্থী মানস সরকার। তোরাফের দাবি, ‘‘ওসব সেন্টিমেন্ট কাজে দেবে না। সংখ্যালঘুরা তৃণমূলের সঙ্গেই।’’
কালবৈশাখী ঝড়ে কুমারগঞ্জে ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। ঝড়বৃষ্টি হয়নি তপন ও কুশমণ্ডিতে। তবে রুক্ষ, তেঁতে থাকা জমি থেকে উঠছে বাষ্প। সেই বাষ্প বাতাসে এখন গরম হাওয়ায় তাঁতছে তিন কেন্দ্রে। সেই হাওয়া কোনদিকে ঘোরে, তার অপেক্ষায় সবাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy