ফাইল চিত্র।
“পুরসভা ভোট পঞ্চায়েতে/ জল আসবে কি বোরো ধানের ক্ষেতে/ জলসেচে টান মানে ভাতে পড়ে টান/ পেটে খিদে নিয়ে বলো এ দেশ মহান/আগে ভোট দিন”
কবীর সুমনের লেখা লাইনগুলো বার বার ফিরে আসে যে কোনও নির্বাচনের আগে। ২০০৬ হোক বা ২০১১ বা পেটে খিদে নিয়ে থালা বাজিয়ে ভাইরাস তাড়ানো! আমার ভোটাধিকার হয়েছে মাত্র ৫ বছর হল। তবে ভোট ব্যাপারটা ঠিক কী, সেটা বুঝতে শিখেছি ১২ বছরে। তবুও আমার এই সীমিত সময় আর অভিজ্ঞতার মধ্যে একটা ব্যাপার স্পষ্ট বুঝতে পেরেছি, এ বারের নির্বাচনের প্রস্তুতিপর্ব আসলে একটা সার্কাস। যত দিন যাচ্ছে ভারতীয় রাজনীতিতে একটা অদ্ভুত স্বভাব দেখা দিচ্ছে, এক রকম অভ্যাস, উত্তর না দেওয়ার অভ্যাস। এতদিন জানতাম যে, প্রশ্ন করা খুব জরুরি, তবে এখন দেখি প্রশ্নের উত্তর শুধুই প্রশ্ন। কী রকম? মানে এক রাজনৈতিক দল অন্য রাজনৈতিক দলকে যাই জিজ্ঞেস করুক না কেন, উত্তর আসবে শুধুই প্রশ্নতে। আর সেটা তাদের অনুগত ভক্তদের সুন্দর করে শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেটা জনসভা হোক বা টিভি বা সমাজমাধ্যম, প্রশ্নের উত্তর শুধুই প্রশ্ন। এখন কিছু বলতে গেলে সব থেকে বেশি করে ওঠে নিরপেক্ষতার কথা। 'বুদ্ধিজীবী' শব্দটা পরিণত হয়েছে একটি কুবচনে। মানছি, বহু কারণেই শব্দটা তার যোগ্যতা আর জোর দুই-ই হারিয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও মজার ব্যাপার হল যে, যাঁরা এই কথা বলছেন তাঁরা নিজেরা এর থেকে বড় সমস্যার শিকার, এই উত্তর না দেওয়ার শিকার। কারণ, সত্যি স্বীকার করার ক্ষমতা তাঁদের নেই। তাই ব্রিগেডের মঞ্চে সারি সারি মাথাদের সামনে গলা ফাটিয়ে প্রতিশ্রুতি দেওয়া বা বদলের কথা শুনলে হাসি পায়। এই জানুয়ারি মাস থেকে ভোটের সমস্ত প্রচারে প্রায় সব ক'টি রাজনৈতিক দলের মুখোশ খুব ভাল করে খুলে গেছে। বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দুর্নীতির কথা অজানা নয় ,সেটা নিজেদের ভিতরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব হোক, চাল চুরি, সিন্ডিকেট রাজ, নারদা বা সারদা। ব্রিগেডে বাম-কংগ্রেস জোটের বিভিন্ন ভিন্নমত আর নিজেদের মতের অমিল ধরা পড়ে যায় বারংবার। সেটা জোটে কে ক'টি আসনে লড়বে সেই নিয়ে অসঙ্গতি হোক বা আদর্শগত অসঙ্গতি।
২০১৬-য় মাননীয় বিমান বসু এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে বাম-কংগ্রেস জোটের প্রচার আলাদা আলাদা সোশ্যাল মিডিয়া পেজ থেকে হবে। কারণ, হাত আর কাস্তে-হাতুড়ি কখনও এক হয় না। ভারতীয় জনতা পার্টির মতো এক সাংঘাতিক সাম্প্রদায়িক ক্ষমতার সঙ্গে লড়তে গিয়ে বাকি রাজনৈতিক দলগুলোর লক্ষ্য কোথাও অলক্ষে সাম্প্রদায়িক হয়ে ওঠা। আর যদি বাংলায় বিজেপি প্রসঙ্গে আসি, তা হলে সব থেকে অবাক করার মতো বিষয় হ্ দলটির নিজস্বতা বলে কিছু নেই।
বিগত কয়েক মাসে অত্যন্ত নির্লজ্জ এবং কুৎসিতভাবে যে দলবদল চলছে সেটা প্রমাণ করে দেয়, আসলে আদর্শ বা দর্শন বলে কিছু নেই, ‘মানুষের জন্য কাজ করতে চাই’— এর থেকে বড় মিথ্যাচার আর কিছু নেই। যে তৃণমূল সদস্যদের দুর্নীতি নিয়ে মানুষের এত ঘৃণা, তারাই এখন দল বদলে নিয়েছেন নিজেদের পিঠ বাঁচানোর জন্য, সবুজ থেকে গেরুয়া হওয়া মানুষটা ও তার মানসিকতা তো একই থেকে যায়। এ যেন এক বাজে থ্রিলারের প্লট, বাজে একটা যুক্তি দিয়ে সিনেমার শেষে হঠাৎ একটা প্লট টুইস্ট। যে নেতার দুর্নীতি নিয়ে মানুষ বীতশ্রদ্ধ সে-ই আবার নতুন মুখোশে গলা ফাটিয়ে বলছে, ‘আমায় ভোট দিন’। মজার কথা হল, এই সব কিছুই ঘটছে প্রকাশ্যে। এখন তো সমাজমাধ্যম থাকার জন্য আরও বেশি করে সব কিছুই জানা যায়। ভোটের আগে যে দিকে নিরাপত্তা আর অর্থ বেশি, সে দিকে পটাপট দল ভারী হচ্ছে। কেউ দল পাল্টাচ্ছে সিবিআই থেকে বাঁচাবে বলে আর কেউ অতিমারির পরে অভিনয় জগৎ বিপন্ন হওয়ার জন্য। রং বদলাচ্ছে রোজগারের পথ বিস্তার করার জন্য। ফেসবুকে ভাইরাল হয় এ রকম অনেক ভিডিয়ো, একজন অভিনেতা যিনি লাল থেকে সবুজ থেকে গেরুয়া মানে প্রায় ওয়ার্ল্ড ট্যুর করে ফেলেছেন, তিনি কিছু বছর আগে প্রধানমন্ত্রীকে এক সংবাদমাধ্যামেই ‘মেগালোম্যানিয়াক’,’চোর’ আর ‘ছকবাজের’ মতো আরও অনেক শব্দের সাহায্যে চরম ধিক্কার জানিয়েছিলেন।
কাট ২। ২০২১। তাঁর চোখে আবেগের জল, প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে বিগলিত হাসি আর আনন্দে আত্মহারা আঙুলগুলো মুষ্টিবদ্ধ হয়ে লাল সেলাম থেকে মা মাটি মানুষের জয় থেকে পরিণত হল ‘জয় শ্রী রাম’-এ। রাজনীতিতে তাড়াতাড়ি যোগ দিচ্ছেন এমন সব অভিনেতা-অভিনেত্রীরা যাঁদের রাজনৈতিক দর্শন তো দূরের কথা, কোনও সামাজিক সচেতনতাও নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্রিগেডে এসে ৭ মার্চ, ২০২১-এ বললেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দেওয়া মিথ্যে প্রতিশ্রুতিগুলির কথা। তিনি জিজ্ঞেস করলেন জনসাধারণকে, তৃণমূল বাংলার কোনও সাধারণ পরিবারের জীবনে কোনও পার্থক্য আনতে পেরেছে কি? বাংলার কৃষক ও শ্রমিকদের অবস্থান বদলেছে কি? বাংলায় চাকরির ব্যবস্থা হয়েছে কি? প্রশ্নগুলো বৈধ, তবে একটা আঙুল অন্যের দিকে তাক করলে আমরা ভুলে যাই যে বাকি চারটি আঙুল আমাদের নিজেদের দিকেই থাকে। এই প্রত্যেকটা প্রশ্ন পাল্টা প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সংগঠনকেও করা যায়, যার উত্তর তাঁরা দেন না। তাঁর জমানায় সাধারণ ভারতীয় নাগরিকদের পরিবারের দম বন্ধ হয়ে আসছে পেট্রল বা গ্যাসের আকাশচুম্বী দামের জন্য। তাঁর জমানায় ১০০ দিনের উপর কৃষক আন্দোলন চলছে, যা গোটা পৃথিবীর নজরে এসেছে। যা ঢাকতে তাদেরকে টুইটারে তারকাদের দিয়ে লেখাতে হচ্ছে তাদের তৈরি করা রচনা। পরের দেশের সমস্যায় নাক গলানোর জন্য এফআইআর করা হচ্ছে বিশ্ববিখ্যাত পরিবেশবিদ গ্রেটা থুনবার্গের নামে আর পরের দেশে গিয়ে তাদের ভোটের আগে নাক গলিয়ে গলা ছেড়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলে আসেন, ‘অবকি বার ট্রাম্প সরকার’। সত্যি কথা শুনে ভয় পেয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে ২১ ,২২ বছরের অ্যাক্টিভিস্টদের, লকডাউনে বাড়িতে বসে মোমবাতির আলোয় ধরা পড়েনি পরিযায়ী শ্রমিকদের মৃত্যুর সংখ্যা, ‘আচ্ছে দিন'-এর চাকরির প্রতিশ্রুতি মেটেনি, দেশ ছাড়ছে বহু মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী। ডিমানিটাইজেশন নামক রিয়্যালিটি শো-টি ভারতীয় অর্থনীতিকে পিছিয়ে নিয়ে গেছে বেশ কয়েক ধাপ, দেড় পার্সেন্ট জিডিপি ক্ষয় অর্থাৎ প্রায় আড়াই লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতি থেকে ১০০ জনের মৃত্যু এবং প্রায় ১৫ কোটি দৈনিক মজুরি উপার্জনকারীদের বেশ কিছুদিনের জন্য চাকরি হারানো।
ঘটনা লিখতে গেলে শেষ হবে না, কাশ্মীরের ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে রাখা থেকে শুরু করে এনআরসি-সিএএ-এর আসল উদ্দেশ্য প্রকাশ পাওয়া, কাফিল খান, উমর খালিদ বা বা ভারাভারা রাওয়ের যুক্তিহীন গ্রেফতার, হিন্দু যুব বাহিনীর মতো এক ভয়াবহ সন্ত্রাস ছড়ানোর জন্য দায়ী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতাকে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী করা, লভ জিহাদের নামে বিজ্ঞাপন বন্ধ করে কোনও সংস্থার দোকানে হামলা করে হুমকি দেওয়া, পুলওয়ামায় নিহত সৈনিকদেরক মৃত্যুসংবাদকে টিআরপির জন্য ব্যবহার করে একজন সাংবাদিকের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট-এ এরকম একটা ভয়াবহ ঘটনাকে ‘ন্যাশনাল এন্টারটেনমেন্ট’ বলা, নেটফ্লিক্স, অ্যামাজনের মতো ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলির শৈল্পিক স্বাধীনতার কণ্ঠ রুদ্ধ করার মধ্যে দিয়ে বার বার প্রকাশ কেন্দ্রীয় সরকারের ভীতু, স্বার্থপর এবং চরম অসহিষ্ণু চেহারাটা, আর ‘ফ্রিডম হাউস’ নামক একটি বহু পুরনো এবং বিশ্বস্ত সংস্থা যারা সারা পৃথিবীতে কোথায় কোথায় গণতন্ত্র বজায় আছে বা নেই-এর হিসেব দেয়, তারা ভারতবর্ষকে কিছুদিন আগে ‘নট এ ফ্রি কান্ট্রি' ঘোষণা করেছে, সুতরাং আর যাই হোক, কোনও রাজ্য সরকারের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের দোষের তালিকাকে কিছুতেই এক আসনে রাখা যায় না বা সমান বলা যায় না। ঠিক সেই জন্যই ৭ তারিখে ব্রিগেডে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বিশ্বাস করার কোন কারণ আছে কি মানুষের কাছে?
ফিরে যাই যেটা দিয়ে শুরু করেছিলাম। সেই প্রশ্নের উত্তরে প্রশ্নের খেলায় সত্যিটা থেকে যে কোনও সরকার খুব সুন্দর ভাবে আমাদের চোখ সরিয়ে রাখতে পারেন। সবটাই অনুমান, আজকে সত্যিই বালাকোট অপারেশনে ক'জন জঙ্গি নিহত সেই নিয়ে যথেষ্ট জল্পনা রয়েছে। আমরা শুধু খবরটা শুনি, বিশেষ করে যখন ভারতের বেশির ভাগ সংবাদমাধ্যমে ছাপা বা দেখানো হয় সেই খবরগুলিই, যেগুলো সরকার দেখাতে চায়। তাই মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি জিইয়ে রাখা হচ্ছে এদের কাজ, সে ব্রিগেড হোক বা টিভির খুপরি পর্দায় বসে দেশ উদ্ধারের জন্য যারা চেঁচিয়ে যান বা সোশ্যাল মিডিয়ায় আইটি সেল বাহিনী, যারা উপার্জন করে হুমকি দেওয়ার বিনিময়ে। ‘অমুক সময়’ কোথায় ছিলেন বলে গর্জে ওঠেন যাঁরা, তাঁরা বুঝতেও পারেন না যে তাঁরা অচিরেই মৃত্যুকে মৃত্যু দিয়ে বা ধর্ষণকে ধর্ষণ দিয়ে ব্যাখ্যা করে যাচ্ছেন অবিরাম। এটা শুধু লাল সবুজ গেরুয়া নয়, সারা পৃথিবীতে এক ছক। হিটলার হোক বা সোভিয়েত ইউনিয়ন বা জর্জ বুশ বা বরিস জনসন বা ইমরান খান বা ডোনাল্ড ট্রাম্প, ক্ষমতার চেহারা একই থাকে।
তা হলে তো মানুষের ভোট বয়কট করা উচিত! রাজনীতি থাকবে, মানে মিথ্যে প্রতিশ্রুতি থাকবেই। তা হলে মানুষ বিচার করেন কী করে যে কোন দলের বিশ্বাসযোগ্যতা বা নিরাপত্তা দানের ক্ষমতা বেশি? ভোটের ফলাফল কেউ বলতে পারে না। ঠিক যে রকম ডোনাল্ড ট্রাম্প আসার উন্মাদনা তৈরি হয়েছিল কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা নামের এক কোম্পানির সাহায্যে, যারা ফেসবুককে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে ভোটারদের মানসিকতা বদলানোর চেষ্টা করেছিল, ঠিক তেমনই কিছু দিন আগে একটি সংবাদপত্রে এক লেখকের একটি চমৎকার লেখার উদাহরণ দিয়ে বলছি, যে সাধারণ মানুষের কাছে কোনও তথ্য নেই যা বলতে পারে কোন দল জিতবে। তিনি উদাহরণ দেন ব্যান্ড ওয়াগন এফেক্টের— ধরুন পাঁচটা লোক যদি হঠাৎ এখন আকাশের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে তা হলে পথচলতি মানুষরা তাদের দেখে আকাশের দিকে তাকাবেই। ধরুন ফুটবল বিশ্বকাপ। প্রতি বার ওয়ার্ল্ড কাপের আগে একটা প্রেডিকশন দেওয়া থাকে, ২০১৮-তে অনেকেই বলেছিল ফাইনাল ম্যাচ হবে ফ্রান্স-আর্জেন্টিনা বা স্পেন-ব্রাজিলের মধ্যেl যাঁরা আগে থেকেই কট্টর ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা বা ফ্রান্স সাপোর্টার তাঁদের নিয়ে কোনও চিন্তা নেই, তাঁরা ধারাবাহিক ভাবে ফুটবল দেখেন। কিন্তু একটা বড় সংখ্যক মানুষ, যাঁরা ফুটবল নিয়মিত দেখেন না কিন্তু বিশ্বকাপ হলেই টিভির সামনে বসেন, তাঁরা কিন্তু এই 'প্রেডিকশন'-এর উপর ভিত্তি করেই আর বেশির ভাগ লোক কাদের সমর্থন করছে দেখে দল নির্বাচন করেন। তার ফলাফল কী হল? ২০১৮-তে ওয়ার্ল্ড কাপ হল ফ্রান্স আর ক্রোয়েশিয়ার মতো সব থেকে একটা অপ্রত্যাশিত দলের সঙ্গে। ঠিক সে ভাবেই রাজ্যের একটা বড় অংশের মানুষের মনে যদি এই ধারণা তৈরি করে দেওয়া যায, কোনও বাস্তব ভিত্তি ছাড়াই যদি গোড়ায় ধারণাটা তৈরি করা যায় যে, ‘অমুক দলই আসবে'। তখন মানুষ জয়ী দলের পক্ষে থাকার জন্য পা বাড়ায়। যে চেষ্টাটা বিজেপি সমবেত ভাবে তৈরি করার চেষ্টা করছে সেটা একটা অদ্ভুত ভয়ের বাতাবরণ, তারা ভয়কে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে মানুষের মনে একটা উপলব্ধি তৈরি করার চেষ্টা করছে যে তারাই সব থেকে ক্ষমতাশালী। তাদের বিরুদ্ধে কথা বললেই আইটি সেলের কল্যাণে সমাজমাধ্যমে লিঞ্চিংয়ের শিকার হতে হয়, কেউ প্রশ্ন করলেই তাকে দেশ থেকে বের করে দেওয়া বা রেপের হুমকি দেওয়া হয়। ভগবান মানে শান্তির প্রতীক, সেখানে তারা ‘জয় শ্রী রাম’কে যুদ্ধ আর এক ভয়ানক বিজয়োল্লাসের হুঙ্কার হিসেবে ব্যবহার করে চলেছে। তাদের যুক্তি হল, এক সম্প্রদায় যদি আল্লাহর নামে বোমা মারতে পারে তা হলে তারাও ‘জয় শ্রী রাম’কে হিংসার বাণী করে তুলব। ভাবুন, ভগবানকেও ওরা নিজেদের প্রশ্নের পাল্টা প্রশ্নের খেলায় রেহাই দিচ্ছে না।
একটাই আবেদন, মানুষকে নিজের ইচ্ছেমতো ভোট দিতে দিন, তারা যাকে ইচ্ছে তাকে ভোট দিন। এই লেখাটা কোনো রাজনৈতিক দলের হয়ে নয়। ভোট চলে এলো বলে এটা মানুষকে মনে করিয়ে দেওয়া যে, সব দলের রেজাল্টের খাতা আপনাদের চোখের সামনে, নিজেদের পর্যবেক্ষণশক্তি আর মানবিকতার উপর ভরসা রেখে ভোট দিন, আর পাঁচটা লোকের কথা শুনে নয়। আসলে যে ফ্যাসিস্ট শক্তির কথা আমরা পড়েছি ইতিহাসে, সেটা কখনও চোখে দেখিনি। আমরা সবাই ভাবি, ‘যাক বাবা, আমার দেশে তো ঘটেনি’, ঠিক যেমন আফ্রিকা, স্পেনে অতিমারির গল্প শুনতে শুনতে হঠাৎ সেটা চলে এল আমার দেশে, সেই রকম আশা করি এমন দিন দেখতে হবে না যেখানে মানুষ তাসের দেশে বাস করছে। রোহিত ভেমুলার চিঠির কথা আমরা ভুলে গেছি, এই নির্বাচনের আগে আরও বেশি করে জাগিয়ে রাখে সেই চিঠিটা। তার মৃত্যুর আগে সে লিখে গিয়েছিল যে, মানুষকে বরাবর তার তৎক্ষণাৎ এবং সামরিক এক পরিস্থিতিতে বেঁধে রাখা হয়, রাষ্ট্রের কাছে সে শুধুই একটা ভোট , একটা সংখ্যা, রাষ্ট্র বার বার মানুষের সব থেকে বড় পরিচিতিটা এড়িয়ে যায়। সেটা হল তার চেতনা, যা অবিনশ্বর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy