মহুয়া মৈত্র এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
নন্দীগ্রাম ছাড়াও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিধানসভা ভোটে অন্য কোনও আসন থেকে লড়বেন কি না, তা নিয়ে বিজেপি-র জল্পনা চলতে চলতেই তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র টুইটে ঘোষণা করে দিলেন, আগামী লোকসভা ভোটে মমতা লড়বেন বারাণসী কেন্দ্র থেকে। ঘটনাচক্রে, যে কেন্দ্রের সাংসদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নীলবাড়ির লড়াইয়ে মমতা দ্বিতীয় আসন বাছতে পারেন বলে বিজেপি-র আক্রমণের জবাব দিতে গিয়েই টুইটে শনিবার মহুয়া মোদীকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, বারাণসীকে দ্বিতীয় আসন হিসেবে বাছবেন মমতা। ঘটনাচক্রে, বারাণসী বিধানসভা কেন্দ্র নয়। সেটি লোকসভা কেন্দ্র। ফলে মহুয়ার টুইট নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। জল্পনা এই যে, তা হলে কি মমতা পরের লোকসভা ভোটে বারাণসী থেকে লড়বেন! অর্থাৎ, তিনি কি আর বাংলার বিধানসভা আসন নিয়ে ভাবছেন না? তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা তথা দলের জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েনকে ওই টুইট নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি সরাসরি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। ডেরেক শুধু বলেন, ‘‘দ্বিতীয় আসন নিয়ে বিজেপি-র আক্রমণের জবাবে দলের কী অবস্থান, তা দলের তরফে টুইট করেই বলা হয়েছে। ওটাই শেষ কথা।’’
জল্পনা শুরু হয়েছে সেখানেই। দলের তরফে ‘শেষ কথা’ বলে দেওয়ার পরেও মহুয়া কেন আগ বাড়িয়ে বারাণসী আসনের কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করে বসলেন? দলের একাংশ বলছে, কৃষ্ণনগরের সাংসদ মোদী তথা বিজেপি-কে একহাত নিতে গিয়ে ‘অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক’ হয়ে বারাণসীর কথা আগেভাগে ঘোষণা করে দিয়েছেন। গোটা তৃণমূল যখন একসুরে বলছে, মমতাই তৃতীয়বারের জন্য নীলবাড়ির দখল নিতে চলেছেন, তখন তাঁর দলের এক সাংসদ ২০২৪ সালের জন্য তাঁর কেন্দ্র কী ভাবে ঠিক করে দিচ্ছেন? তা-ও লোকসভায়। তবে মুখ্যমন্ত্রী হয়েও বারাণসীতে গিয়ে মোদীর বিরুদ্ধে ভোটে লড়রা নজির রয়েছে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল ২০১৯ সালে মোদীর বিরুদ্ধে বারাণসীতে লড়েছিলেন। জিততে পারেননি। তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, তা হলে কি দলনেত্রী মমতা কেজরীবালের পদাঙ্ক অনুসরণ করেই মোদীকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানাতে বারাণসীতে ভোট লড়তে চলেছেন।
প্রসঙ্গত, দ্বিতীয় দফায় নন্দীগ্রামে ভোটগ্রহণের দিন রাজ্যে প্রচারে এসে মোদী বলেছিলেন, ‘‘নন্দীগ্রামের অবস্থা দেখেই স্পষ্ট, দিদি হারছেন।’’ পাশাপাশিই মোদী প্রশ্ন তুলে দিয়ে গিয়েছিলেন, ‘‘দিদি কি এবার অন্য কোনও আসনে লড়বেন?’’ বিজেপি-র অন্য নেতারাও ওই জল্পনায় ঘৃতাহুতি দিতে থাকেন। তার পরে পরেই তৃণমূলের তরফে বিজেপি-র ওই দাবি নাকচ করে দেওয়া হয়। জানানো হয়, নন্দীগ্রামে মমতার জয় নিশ্চিত। তিনি আর কোথাও দাঁড়াবেন না। একই সঙ্গে মোদীকে কটাক্ষ করে তৃণমূল টুইট করে জানায়, তিনি আগে নিজের বারাণসী আসন সামলান। মমতা নিজেও উত্তরবঙ্গের সভা থেকে জানিয়ে দেন, তিনি একমাত্র নন্দীগ্রামেই লড়েছেন। সেখান থেকেই জিতবেন। অর্থাৎ, প্রকারান্তরে তিনি নিজেও জানিয়ে দেন, দ্বিতীয় কোনও আসন থেকে তাঁর লড়ার সম্ভাবনা নেই। দলের এবং দলনেত্রীর ওই ঘোষিত অবস্থানের পরেও এক ধাপ এগিয়ে কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া তাঁর টুইটে লেখেন, ‘দ্বিতীয় আসন থেকে লড়াই? প্রধানমন্ত্রীর আক্রমণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। হ্যাঁ, মিস্টার প্রাইম মিনিস্টার, উনি লড়বেন। আর সেটা হবে বারাণসী। তাই আপনার বর্ম তৈরি রাখুন’।
এই টুইট নিয়েই তৃণমূলের অন্দরে জল্পনা তৈরি হয়েছে। রাজ্য স্তরের এক তৃণমূল নেতার বক্তব্য, ‘‘মমতা’দি কী করবেন, কোন আসন থেকে লড়বেন, তা ঘোষণা করার দায়িত্ব ওঁর উপরে দেওয়া হয়েছে বলে জানা নেই। মমতা’দি নন্দীগ্রামে প্রার্থী হওয়ার জন্য প্রকাশ্যেই সভামঞ্চ থেকে রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সির কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন। দলনেত্রী হিসেবে তিনি ওই সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারতেন। কিন্তু সেটা না করে সংগঠনের গুরুত্ব বুঝিয়েছেন। সহবত দেখিয়েছেন।’’ ওই নেতার আরও বক্তব্য, ‘‘বিজেপি যখন নন্দীগ্রাম নিয়ে আক্রমণ চালানোর কৌশল নিয়েছে, তখন আমরা কী জবাব দেওয়া হবে, তা দলগত ভাবে ঠিক করেছি। সেখানে আগ বাড়িয়ে বারাণসীর কথা বলায় জল্পনা তো একটা তৈরি হয়েইছে। আর যদিও বা উনি বারাণসী লোকসভায় কখনও লড়েন, তা উনি নিজেই বলবেন। তেমন হলে সেটা যথাসময়েই বলবেন। সেটা বলার সময় এখনও আসেনি বলেই মনে হয়। বিশেষত, মমতা’দি যখন চোট-লাগা পা নিয়ে সারা রাজ্যে ঘুরে বিধানসভা ভোটের প্রচার করছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy