কমিশন জানিয়েছে, সংবিধানের ৩২৪ ধারা অনুসারে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফাইল ছবি
পুরসভা ও পুরনিগমের প্রশাসক পদ থেকে রাজনৈতিক দলের নেতাদের সরানো নিয়ে বিজেপি নেতৃত্বের দাবি মেনে নিল নির্বাচন কমিশন। কমিশনের নির্দেশে ফিরহাদ হাকিম, কৃষ্ণা চক্রবর্তীরা ভোট চলাকালীন কলকাতা বা বিধাননগর পুরসভার প্রশাসক হিসেবে কাজ করতে পারবেন না। তাঁদের বদলে রাজ্যের সরকারি অফিসারদের পুরসভার প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করা হবে।
আজ নির্বাচন কমিশন নির্দেশ দিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের যে সব পুরসভায় প্রাক্তন মেয়র ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পরেও পুরসভা এবং পুরনিগমের প্রশাসকের পদে বসানো হয়েছে, তাঁরা আপাতত পুরসভার প্রশাসনের কাজ করতে পারবেন না। নির্বাচন কমিশন আজ তাঁদের পুরসভার প্রশাসনিক কাজকর্ম থেকে সাময়িক ভাবে নিরস্ত করার নির্দেশ দিয়েছে।
কমিশনের নির্দেশ, রাজ্যের মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে নগরোন্নয়ন সচিব ও কর্মিবর্গ সচিবকে নিয়ে তৈরি একটি কমিটি এই পুরসভা ও পুরনিগমগুলির প্রশাসনের কাজ দেখাশোনার জন্য সরকারি অফিসারদের নিয়োগ করবে। যত দিন নির্বাচনের আদর্শ আচরণবিধি জারি থাকবে, তত দিন এই ব্যবস্থা বলবৎ থাকবে। এই নির্দেশ জারি করে আজ কমিশন জানিয়েছে, সোমবার সকাল ১০টার মধ্যে নির্দেশ পালনের রিপোর্ট পাঠাতে হবে। এ প্রসঙ্গে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ এখনও দেখিনি। তবে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে।’’ কমিশনের এই নির্দেশের আগেই অবশ্য শিলিগুড়ি পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান পদ থেকে গত ১৭ মার্চ ইস্তফা দিয়েছেন অশোক ভট্টাচার্য। এ দিন কমিশনের নির্দেশের পরে তিনি বলেন, ‘‘কমিশনের সিদ্ধান্তের কথা শুনলাম। প্রশাসক পদে থেকে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ঠিক নয়। এই যুক্তিতেই আমি আগেই শিলিগুড়ি পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি। পদত্যাগ গৃহীতও হয়েছে।’’
পশ্চিমবঙ্গের ১৩৫টি পুরসভা ও পুরনিগমের মধ্যে ১২৫টি পুরসভার মেয়াদ গত বছরের এপ্রিল-মে মাসেই শেষ হয়ে যায়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির জন্য নির্বাচন করা যায়নি। সেই কারণে সেখানে প্রশাসক বসানো হয়। যাঁরা পুরসভার নির্বাচিত মেয়র, চেয়ারম্যান, মেয়র পারিষদ ছিলেন, তাঁদেরই ফের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করা হয়। কলকাতার ক্ষেত্রে যেমন মেয়র ফিরহাদ হাকিমকেই চেয়ারপার্সন করে পুরসভার প্রশাসক বোর্ড তৈরি হয়। মেয়র পারিষদরা হন তার সদস্য। এর বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে মামলা হলেও আদালত প্রশাসকদের সরানোর নির্দেশ দেয়নি। তবে সুপ্রিম কোর্ট যত শীঘ্র সম্ভব পুরসভাগুলিতে নির্বাচনের কথা বলেছিল।
গত ৪ মার্চ বিজেপি দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের কাছে রাজ্যের পুরসভা ও পুরনিগমের প্রশাসক পদ থেকে তৃণমূলের নেতাদের সরানোর দাবি তোলে। বিজেপির যুক্তি ছিল, মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পরে প্রাক্তন মেয়র ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের পুরসভা ও পুরনিগমের প্রশাসক পদে বসিয়ে রাখা হয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনের সময়ও তাঁদের এই সব পদে রেখে দেওয়া হলে তাঁরা প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করতে পারেন।
আজ কমিশন বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, পুরসভাগুলির জরুরি কাজকর্ম যাতে ঠিক মতো চলে, আবার ভোটের নিরপেক্ষতা নিয়ে ভোটারদের মনে কোনও সংশয় তৈরি না-হয়, আদর্শ আচরণবিধি জারি থাকাকালীন সব রাজনৈতিক দলই সমান সুযোগ পায়, তার জন্যই পুরসভার প্রশাসক পদে থাকা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রশাসনের কাজকর্ম থেকে সাময়িক ভাবে নিরস্ত করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy