Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
West Bengal Assembly Election 2021

Bengal polls: রাজ্য নেতাদের রাতেই দিল্লি তলব অমিতের, দিলীপ আর মুকুলকেও প্রার্থী করার ভাবনা

যেন তেন প্রকারেণ বাংলার নীলবাড়ি দখল করতে চাইছেন অমিত। সে কারণেই সমস্ত ‘ইতিবাচক’ আসনে দলের ওজনদার নেতানেত্রীকে টিকিট দেওয়া হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২১ ১৪:৫৩
Share: Save:

ভোট-পূর্ববর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলার শীর্ষনেতাদের মঙ্গলবার রাতেই দিল্লিতে জরুরি তলব করলেন অমিত শাহ। প্রার্থিতালিকা ঘোষণার পর বিজেপি-র নির্বাচনী কার্যালয়ে যে ‘অস্থিরতা’ তৈরি হয়েছে, তা কী ভাবে মোকাবিলা করা যায়, তার প্রাথমিক আলোচনা সোমবার গোটা রাত ধরে করেছেন বিজেপি-র শীর্ষনেতা অমিত। আলোচনার শেষে কিছু পরামর্শও দিয়ে গিয়েছেন। সেই মতো মঙ্গলবার বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা শুরু করেছেন দলের নেতা প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের নেতাদের আশা, আলোচনার মাধ্যমে ক্ষোভ প্রশমিত হবে।

কিন্তু পাশাপাশিই অমিত যে নীলবাড়ি দখলে মরিয়া, তা স্পষ্ট। নইলে তিনি সফরসূচি বদল করে অসমের গুয়াহাটির সফর সংক্ষিপ্ত করে রাতে দিল্লি না ফিরে কলকাতায় ফিরতেন না। রাতভোর আলোচনাও করতেন না। বিজেপি সূত্রে খবর, যেন তেন প্রকারেণ বাংলার নীলবাড়ি দখল করতে চাইছেন অমিত। সে কারণেই সমস্ত ‘ইতিবাচক’ আসনে দলের ওজনদার নেতানেত্রীকে টিকিট দেওয়া হয়েছে। সাংসদদেরও ভোটের ময়দানে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কেও টালিগঞ্জ বিধানসভা আসনে টিকিট দেওয়া হয়েছে। তিনি মঙ্গলবার সকাল থেকে প্রচার এবং জনসংযোগও শুরু করে দিয়েছেন। টিকিট দেওয়া হয়েছে হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়কেও।

কিন্তু তার চেয়েও একধাপ এগিয়ে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায়কেও ভোটের ময়দানে প্রার্থী হিসেবে হাজির করানোর বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন অমিত। দিলীপ-ঘনিষ্ঠরা জানাচ্ছেন, তাঁকে বীরভূম জেলার কোনও একটি আসন থেকে প্রার্থী করা হতে পারে। সেই আসনটি দুবরাজপুর হলেও হতে পারে। তবে দুবরাজপুর সংরক্ষিত আসন। সেখানে দিলীপের পক্ষে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। তবে বীরভূমের কোনও একটি সাধারণ আসনে দিলীপকে টিকিট দেওয়া হতে পারে। দিলীপ-ঘনিষ্ঠদের মুখে ভবানীপুরের কথাও শোনা যাচ্ছে। আর মুকুলকে দাঁড় করানো হতে পারে নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগর দক্ষিণ আসন থেকে। অন্তত মুকুলের ঘনিষ্ঠরা তেমনই বলছেন।

প্রসঙ্গত, কৃষ্ণনগর দক্ষিণ এবং দুবরাজপুর— দু’টি আসনই ২০১৬ সালে পেয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের ফলাফল অনুযায়ী এগিয়েছিল বিজেপি। ফলে সে অঙ্কে দু’টিই বিজেপি-র কাছে ‘ইতিবাচক’ আসন। কৃষ্ণনগর দক্ষিণে বিজেপি ভোট পেয়েছিল প্রায় ৪৫ শতাংশ। তারা এগিয়েছিল সাড়ে প্রায় ৭,০০০ ভোটে। দ্বিতীয় স্থানে ছিল তৃণমূল। তৃতীয় স্থানে ছিল সিপিএম। আর দুবরাজপুরে বিজেপি-র এগিয়ে থাকার ব্যবধান ছিল সাড়ে ১৪,০০০ ভোটেরও বেশি। প্রাপ্ত ভোটের পরিমাণ ছিল ৪৯ শতাংশের কাছাকাছি। ওই আসনেও তৃণমূল ছিল দ্বিতীয় এবং সিপিএম তৃতীয় স্থানে।

দিলীপ এর আগে দু’বার (একবার বিধানসভা এবং দ্বিতীয়বার লোকসভা) ভোটে দাঁড়িয়ে জিতলেও মুকুলের তেমন ইতিহাস নেই। তিনি বরাবরই পিছনের সারির নেতা। যিনি পরিষদীয় বা সংসদীয় রাজনীতির চেয়ে সংগঠনেই বেশি স্বচ্ছন্দ। ২০০১ সালে বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের টিকিটে লড়েছিলেন মুকুল। তার স্মৃতি তাঁর কাছে খুব একটা ‘সুখকর’ নয়। তার পর থেকে মুকুল বরাবরই রাজ্যসভার সাংসদ থেকেছেন। সে অর্থে দেখতে গেলে দু’দশক পর আবার মুকুলের ভোটের ময়দানে ফেরার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কিন্তু মুকুল-ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, ‘দাদা’ নিজে রাজি হবেন কি না। প্রথমত, ভোটের লড়াইয়ে এমনিতেই মুকুল ‘স্বচ্ছন্দ’ নন। দ্বিতীয়ত, তাঁর শরীরও ইদানীং খুব একটা ভাল যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে তিনি ভোটে লড়তে রাজি হবেন কি না, তা নিয়েও জল্পনা চলছে। তবে অমিত নির্দেশ দিলে তা অমান্য করার সম্ভাবনা কম।

দিলীপের অবশ্য ভোটে লড়া নিয়ে আপত্তি নেই। এই বিধানসভা ভোটে লড়তেও তিনি অনিচ্ছুক বলে খবর নেই। কিন্তু তাঁর পুরনো আসন খড়্গপুর সদর দেওয়া হয়েছে অভিনেতা হিরণ চট্টোপাধ্যায়কে। ফলে অমিত নির্দেশ দিলে দিলীপকে সম্পূর্ণ নতুন আসনে দাঁড়াতে হবে। তবে তা নিয়েও তাঁর কোনও আপত্তি থাকবে বলে দলের অন্দরে দিলীপ-ঘনিষ্ঠরা মনে করছেন না।

তবে দিলীপ-মুকুলকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত নয়। কিন্তু এই ভাবনার মধ্য দিয়ে একটা বিষয় স্পষ্ট— বাংলা দখলে কোনও পথ নিতেই অরাজি নন অমিত। সমস্ত ওজনদার নেতাকেই তাই ভোটের ময়দানে নামিয়ে দিতে চান তিনি। পাশাপাশি সেই সূত্রেই আরও একটি ইঙ্গিত স্পষ্ট। তা হল— রাজ্যনেতাদের সকলকেই ভোটের ময়দানে নামিয়ে দিয়ে বাংলার ভোটের ‘নিয়ন্ত্রণ’ কেন্দ্রের হাতে নিতে চাইছেন অমিত। কারণ, প্রার্থিতালিকা ঘোষণার পর দলের নির্বাচনী কার্যালয়ে যে অবিরত বিক্ষোভ চলছে, তা সামাল দিতে প্রাথমিক ভাবে রাজ্যনেতৃত্ব যে ব্যর্থ, তা হালচাল দেখেই বোঝা যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে সাংগঠনিক দিক দিয়ে তাঁদের উপর নির্ভর না করে বরং তাঁদের ভোটের ময়দানে নামিয়ে কেন্দ্রীয় স্তরের নেতাদের সংগঠনের পূর্ণ দায়িত্বে নিয়ে আসতে পারেন তিনি।

তবে আপাতত রাজ্যের নেতারা ব্যস্ত সন্ধ্যার কলকাতা-দিল্লি উড়ানের টিকিট নিতে। রাতেই তাঁদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসতে চান অমিত। সেখানেই নির্ধারিত হবে পরবর্তী পথ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE