অমিত শাহ। ফাইল চিত্র।
নীলবাড়ির লড়াইয়ের মধ্যেই আরও এক লড়াইয়ের নাম— ‘নন্দীগ্রাম’। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই আসনে প্রার্থী হওয়ার পর রাজনৈতিক মহলে এমন ধারণাও তৈরি হচ্ছে যে, ‘নন্দীগ্রাম যার, নীলবাড়ি তার’। বুধবারই ওই আসনে তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন মমতা। শুক্রবার মনোনয়ন জমা দেবেন বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর সঙ্গে বাবুল সুপ্রিয় এবং স্মৃতি ইরানির থাকার কথা বলে শুভেন্দু জানিয়েছেন। তবে বিজেপি-র যা পরিকল্পনা, তাতে নন্দীগ্রামের লড়াই শুধু মমতা বনাম শুভেন্দু নয়। এই লড়াই মমতা বনাম বিজেপি-র।
‘ভিআইপি’ আসন নন্দীগ্রামকে গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় দ্বিতীয়বার সভা করতে পারেন বলে ইতিমধ্যেই জানা গিয়েছে। তবে সেই সমাবেশ হতে পারে নন্দীগ্রাম থেকে মোটামুটি ৫০ কিলোমিটার দূরে কাঁথি শহরে। তবে বিজেপি চাইছে একেবারে নন্দীগ্রামের মাটিতেই হোক ‘ওজনদার’ সমাবেশ। শুভেন্দু বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পর দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়, কৈলাস বিজয়বর্গীয়রা নন্দীগ্রামে সভা করে এসেছেন। এ বার নির্বাচনী প্রচারে সেখানে আসতে পারেন অমিত শাহ। বিজেপি সূত্রে খবর, ১৫ এবং ১৯ মার্চ পর পর দু’টি বাংলা সফর হতে পারে অমিতের। তার মধ্যেই একদিন নন্দীগ্রামে তাঁর সমাবেশ করার পরিকল্পনা করেছে বিজেপি। আর সেটা হবে একেবারে নন্দীগ্রামের ভিতরে কোনও মাঠে।
পাশাপাশিই নন্দীগ্রামের জন্য প্রচারে আসতে পারেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। এখনও পর্যন্ত যা ঠিক আছে, তাতে যোগীর সমাবেশ হবে তেখালির সেই মাঠেই, যেখান থেকে নন্দীগ্রামে প্রার্থী হতে পারেন বলে প্রথম ঘোষণা করেছিলেন মমতা। তবে মোদী-শাহর থেকেও যোগীর সমাবেশ নিয়ে বেশি উৎসাহ বিজেপি-র। বুধবার সেটা বুঝিয়ে দিয়েছেন শুভেন্দুও। বুধবার নন্দীগ্রামে দলীয় অফিস উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে গিয়ে তিনি নিজেই জানিয়েছেন, যোগীকে সেখানে গিয়ে বক্তৃতা করতে বলেছেন। যে সূত্রে ইতিমধ্যেই এমন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে যে, হিন্দু ভোট এককাট্টা করতেই কি যোগীকে নন্দীগ্রামে আনতে চাইছে বিজেপি? নন্দীগ্রামের ভোটারদের হিন্দু-মুসলিম বিভাজন নিয়ে ইতিমধ্যেই চর্চা শুরু হয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, ওই বিধানসভা এলাকায় দু’লক্ষের মতো হিন্দু ভোট রয়েছে। অন্য দিকে, মুসলিম ভোট ৬০ হাজারের মত। অতীতে এই আসনে বিজেপি-র প্রাপ্য ভোটের হার খুবই কম হলেও ওই ‘বিভাজন’ থেকেই আশা দেখছে বিজেপি।
তৃণমূলের নিযুক্ত নির্বাচন-কুশলী প্রশান্ত কিশোরের একটি বক্তব্যকে টেনে আগেই ওই ‘বিভাজন’ নিয়ে আক্রমণ শানিয়েছেন শুভেন্দু। তিনি বলেছিলেন, ‘‘মাননীয়া ৫০০ কোটি টাকা দিয়ে বুদ্ধি ভাড়া করেছেন। তিনি এমনটা বলেছেন যে, বিজেপি মানে আমরা ৭০ শতাংশ। তা হলে নন্দীগ্রামে হয়ে যাক। ৭০ শতাংশ বনাম ৩০ শতাংশ।’’ শুভেন্দুর সেই বক্তব্যের জবাব এসেছে মমতার তরফেও। মঙ্গলবারই তিনি নন্দীগ্রামে বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে হিন্দু কার্ড খেলতে আসবেন না।’’ এমন চ্যালেঞ্জও করেন যে, ‘‘আমার সঙ্গে হিন্দুত্ব নিয়ে প্রতিযোগিতা করবেন নাকি!’’ কর্মিসভার মঞ্চ থেকে চণ্ডীপাঠ করেন মমতা। মঙ্গলবারই নন্দীগ্রামে জানকীনাথ মন্দিরে পুজো দিয়েছেন মমতা। বুধবার মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগেও যান স্থানীয় শিবমন্দিরে। বৃহস্পতিবার শিবরাত্রির ব্রত পালন করতে ওই মন্দিরে শিবলিঙ্গে জল ঢালতেও যাওয়ার কথা মমতার। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, নিজের আন্দোলন ভূমিতে মমতা এখন ‘হিন্দু আবেগ’ ছুঁতে চাইছেন।
সেই চেষ্টা অবশ্য অনেক আগেই শুরু করেছে বিজেপি। হনুমান মন্দিরে পুজো থেকে বৈষ্ণবদের কীর্তনে অংশ নিতে দেখা গিয়েছে শুভেন্দুকে। ‘জয় শ্রীরাম’ তো আছেই। সেই সঙ্গে ‘কৃষ্ণ কৃষ্ণ-হরে হরে’ তাঁর প্রধান স্লোগান হয়ে উঠেছে। বৃহস্পতিবার যে মন্দিরে মমতা যেতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে, সেখানে পুজোর উদ্বোধনে শুভেন্দুরও যাওয়ার কথা। সব মিলিয়ে ‘হিন্দু আবেগ’ নিয়ে টানাপোড়েনের পরিবেশ তৈরি নন্দীগ্রামে। যাকে চূড়ান্ত রূপ দিতেই যোগীর সভা চাইছে বিজেপি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy