ব্রিগেডে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে মিঠুন। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
তিন বার জাতীয় পুরস্কার জয়ী অভিনেতার মুখোমুখি ‘দেশের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ অভিনেতা’। চুম্বকে, এটাই না কি রবিবারের ব্রিগেড সমাবেশ!
বিজেপি-র মঞ্চে মিঠুন চক্রবর্তীকে দেখা যাবে খবরটা চাউর হওয়া ইস্তক এই কথাগুলোই হাওয়ায় ভাসছিল। এ দিন সাতসকালে নেটরাজ্যে ছয়লাপ একটি মিম বলেছে ‘আজি মোর আরও একখানি কবিতা মাঠে মারা পড়িবে!’ না, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম নিয়মমাফিক উঠলেও বাস্তবে ব্রিগেডের মাঠে তাঁর নামে এ হেন আশঙ্কা সত্যি হয়নি। তবে মোদীর এখনকার বক্তৃতার বিশেষ আকর্ষণ, গলা উঠিয়ে নামিয়ে রকমারি বাংলা সংলাপে ব্রিগেড বঞ্চিত হয়নি।
‘মারব এখানে, লাশ পড়বে নাগপুরে’ বলে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের সদর দফতরের নামে কিছু খোঁচা সকাল থেকে ধেয়ে আসছিল নেট-রসিকতায়। এমএলএ ফাটাকেষ্ট-র সেই হিট সংলাপ ছাড়াও মিঠুন ঝুলি থেকে অন্য অস্ত্র বার করেছেন। তাঁর ব্রিগেড-সংলাপ, ‘আমি জলঢোঁড়া নই বেলেবোড়াও নই! জাত গোখরো! এক ছোবলেই ছবি।’ ২০০৬ সালের ছবি ‘অভিমন্যু’র সংলাপ। পরিস্থিতি বাঙালির ‘মহাগুরু’কে নতুন কোনও চক্রব্যূহের ফাঁদে ফেলল কি না, তা সময় বলবে! কিন্তু বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মিঠুনের ঘনিষ্ঠ সংস্রবের অতীত টেনে এনে সমালোচনায় মুখর বাঙালি।
‘‘কারা এ সব বলছেন! তাঁরা কি দক্ষিণ ভারতের তারকাতন্ত্রের কথা জানেন না’’, অত্যন্ত বিরক্ত নব্য বিজেপি অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ। ‘‘আমরা অভিনেতা বলে এত ঠাট্টার কী আছে? কোথায় লেখা, অভিনেতারা রাজনীতিতে আসতে পারবেন না।’’ অনেকেরই কিন্তু সুচিত্রা সেনের ‘দীপ জ্বেলে যাই’ ছবির সেই বিখ্যাত দৃশ্য মনে পড়ে যাচ্ছে। তাতে প্রেমের অভিনয়টাই শেষমেশ জীবনের নিষ্ঠুর সত্যি হয়ে উঠেছিল। সেই বিখ্যাত দৃশ্যে ধ্বস্ত বেসামাল সুচিত্রা হাসতে হাসতে কাঁদছেন। এবং পাহাড়ী সান্যালকে বলছেন, ‘বিশ্বাস করুন, অভিনয় আমি পারি না, পারি না, পারি না!’
তবে নেটরাজ্যের চলতি রসিকতা, তৃণমূল করতে গেলে অভিনয়টা জানতে হবে। আর বাংলায় বিজেপি করতে গেলে একটু তৃণমূল করার অভিজ্ঞতা চাই। রাজনৈতিক দলে অভিনেতাদের দরকার নিয়ে কিন্তু ধন্দ নেই। মেদিনীপুরের তৃণমূল প্রার্থী জুন মালিয়া বলছেন, ‘‘দিদির সঙ্গে বাম আমল থেকে রয়েছি। রাজ্য-রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তাঁর পাশে থাকাটা দায়বদ্ধতা।’’
বাম-শিবিরেও আগে অভিনেতারা ভোটের টিকিট পেয়েছেন। কিন্তু তাঁদের বেশির ভাগের ক্ষেত্রেই দীর্ঘ দিনের রাজনীতি বা মতাদর্শগত চর্চার উদাহরণ ছিল। গত সপ্তাহে বামজোটের ব্রিগেডেই সঞ্চালনায় ছিলেন বাদশা মৈত্র। তাঁর কথায়, ‘‘আমি কিন্তু সমর্থক। পার্টি সদস্যও নই। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য ব্রিগেডে যেতে হঠাৎ বিমানদা-সেলিমদারা সঞ্চালনায় ঠেলে দিলেন। কোনও প্রত্যাশা নেই।’’
তবে বিজেপিভুক্ত রুদ্রনীলের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলে অভিনেতারা অনেকেই ভোটে জেতার পরে কাজ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছেন। বিজেপি-র স্মৃতি ইরানি, লকেট চট্টোপাধ্যায়রা আবার অভিনেতা থেকে সত্যিকারের সফল নেতা।’’
অনেকেই বলছেন, রাজনীতির মঞ্চও তো ‘পারফর্ম্যান্স’। শুধু তারকাতন্ত্রই নয়, রাজনীতির মঞ্চে যে হারে ফোঁপানি, কান্নাকাটি, কান ধরে ওঠাবসা, গলা কাঁপানো সংলাপ শোনা যাচ্ছে, সিরিয়াল-সিনেমা ছাপিয়ে রোড শো-রাজনৈতিক বিতর্কের টিআরপি বাড়বে কি না, সেটাও এখন জল্পনার বিষয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy