Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Mamata Banerjee

Bengal Polls 2021: হেঁশেল অস্ত্র ‘ঘরের মেয়ের’

এ বারের ভোটে মমতাকে তুলে ধরা হচ্ছে ‘বাংলার ঘরের মেয়ে’ হিসেবে। তাই ঘরোয়া সমস্যার মোড়কে নির্বাচনী কর্মসূচির সূচনা করে তিনি শুরুতেই চমক সৃষ্টি করতে চাইছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

বাগডোগরা বিমানবন্দরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশে  চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। পিছনে মিমি-নুসরত। শনিবার।

বাগডোগরা বিমানবন্দরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। পিছনে মিমি-নুসরত। শনিবার। ছবি: স্বরূপ সরকার

সোমা মুখোপাধ্যায়
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২১ ০৬:০২
Share: Save:

ধর্ম নয়, ভাষা নয়, জাতপাত নয়। আম সংসারের কাহিনি নিয়েই বিধানসভা ভোটের প্রচারের কাজ শুরু করতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ, রবিবার শিলিগুড়ির দার্জিলিং মোড় থেকে ভেনাস মোড় পর্যন্ত পদযাত্রা এবং সেখানে সফদর হাসমি চকের জনসভায় তাই হেঁশেলের মূল্যবৃদ্ধির সমস্যাই উঠে আসবে বারবার।

এ বারের ভোটে মমতাকে তুলে ধরা হচ্ছে ‘বাংলার ঘরের মেয়ে’ হিসেবে। তাই ঘরোয়া সমস্যার মোড়কে নির্বাচনী কর্মসূচির সূচনা করে তিনি শুরুতেই চমক সৃষ্টি করতে চাইছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। তা-ও আবার এমন একটা দিনে, যখন কলকাতায় প্রায় ওই একই সময়ে ব্রিগেডে বিজেপির নির্বাচনী প্রচার শুরু করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কলকাতা থেকে কয়েক শো কিলোমিটার দূরে শিলিগুড়িতে দাঁড়িয়ে এমন একটা সমস্যা নিয়ে মোদীর দিকে আঙুল তুলতে চলেছেন মমতা, যে সমস্যার আঁচ লেগেছে দল-মত নির্বিশেষে প্রায় সমস্ত পরিবারেই। সেটিকে কাজে লাগিয়ে ‘হেঁশেল’ই এখন তাই মুখ্যমন্ত্রীর মোক্ষম অস্ত্র!

শনিবার বিকেলে বিশেষ বিমানে কলকাতা থেকে বাগডোগরা পৌঁছন মমতা। তাঁর এই সফরে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ির এ বারের প্রার্থী ওমপ্রকাশ মিশ্র ছাড়াও মিছিলের আকর্ষণ বাড়াতে রয়েছেন সাংসদ মিমি চক্রবর্তী, নুসরত জাহান-ও। বিকেলে বিমানবন্দর থেকে বেরোনো মাত্রই তৃণমূলের পতাকা হাতে মহিলাদের হেঁশেল অস্ত্র ‘ঘরের মেয়ের’

একটি ছোট দল ‘খেলা হবে-খেলা হবে’ চিৎকার শুরু করেন। কিন্ত ওই পর্যন্তই! তার পরে রাস্তায় মুখ্যমন্ত্রীর কর্মসূচি নিয়ে আলাদা কোনও উৎসাহ-উত্তেজনা চোখে পড়েনি। শিলিগুড়িতে তৃণমূলের দাপুটে নেতা রঞ্জন সরকার অবশ্য দাবি করলেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মানতে গিয়েই নাকি এই হাল। কোথাও একটা পতাকাও নেই? রঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘ঝুঁকি নেওয়া যায়নি। কী ভাবে প্রস্তুতি নেব? আমরা ২০ হাজার পতাকা ছাপিয়েছি। মিছিলে সকলের হাতে হাতে থাকবে।’’

কানাঘুষো অবশ্য বলছে, ‘ঘরের ছেলে’ রঞ্জন ওরফে রানা টিকিট না পাওয়ায় গোসা হয়েছে অনেকেরই। প্রস্তুতির চেনা ছন্দ তাই উধাও। সফদর হাসমি চকের মঞ্চে মাইক বাঁধতে বাঁধতে এক যুবক যেমন বললেন, ‘‘কী যে সমস্যায় পড়েছি! এমন
একটা দিনে স্থানীয় নেতাদের মোবাইল বন্ধ। আমাদের কাজের অসুবিধা হয়ে যাচ্ছে।’’

দলের ভেতরের এই মন কষাকষি কি শেষ পর্যন্ত প্রভাব ফেলতে পারে মূল কর্মসূচিতেও? দলের শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছেন, কোনও ভাবেই নয়। কারণ, তাঁদের মতে, বিষয়টা এমনই বাছা হয়েছে যে কেউ চাইলেও এর আঁচ থেকে দূরে থাকতে পারবেন না। মমতার ‘মাস্টারস্ট্রোক’ এখানেই!

যদিও আন্দোলন শুরুর কৃতিত্ব নিয়ে দড়ি টানাটানিও চলছে। প্রবীণ সিপিএম নেতা তথা শিলিগুড়ির বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্য যেমন বললেন, ‘‘মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে আন্দোলন তো আমরা প্রথম শুরু করেছি। রবিবার ওঁর মিছিলের আগে শনিবার হিলকার্ট রোডে আমরা মিছিলও করলাম। উনি সব কিছু নিয়েই গিমিক তৈরির চেষ্টা করলে তো হবে না! মানুষ সব দেখছেন।’’

শিলিগুড়ির বাসিন্দা, বিজেপির রাজ্য কমিটির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক রথীন্দ্রনাথ বসু মোদীর সভায় যোগ দিতে কলকাতায়। তাঁর নিজের শহরে মুখ্যমন্ত্রীর এই কর্মসূচি নিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘এই বস্তাপচা নাটক বেশি দিন চলবে না। উনি মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কেন্দ্রের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছেন। আনাজের দাম কমানোর জন্য ওঁর নিজের যা যা করার কথা উনি করেছেন? মানুষকে বেশি দিন
বোকা বানিয়ে রাখা যায় না, এটা উনি ভুলে যাচ্ছেন।’’

কিন্তু কী বলছেন শিলিগুড়ির মহিলারা, মূলত যাঁদের ভরসায় মুখ্যমন্ত্রীর এই কর্মসূচি? বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী শ্রেয়াসা ভট্টাচার্য বললেন, ‘‘আমি তো হাঁটবই। আমার কাছে এটা কোনও রাজনৈতিক বিষয় নয়। এটা দৈনন্দিন বেঁচে থাকার বিষয়।’’ গৃহবধূ মধুমিতা ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘হাঁটতে যদি না-ও পারি, রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে দু’হাত তুলে সমর্থন তো করবই।’’ স্কুল শিক্ষিকা মুক্তি মজুমদারের প্রশ্ন, ‘‘গত ছ'মাসে জ্বালানির দাম যে ভাবে বেড়েছে, যে ভাবে বেড়েছে অত্যাবশ্যক জিনিসের দাম, তার দায় কেন্দ্রীয় সরকার অস্বীকার করতে পারবে? মুখ্যমন্ত্রী
ঠিক বিষয়ই বেছেছেন। আমরা ওঁর পাশে আছি।’’

এই সব প্রতিক্রিয়া যদি মমতাকে স্বস্তি দেয়, তা হলে এর বিপরীতে কিছু অন্য প্রতিক্রিয়াও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সফদর হাসমি চকে মঞ্চের প্রায় গা ঘেঁষে মহম্মদ আরমানের চায়ের দোকান। এক ঝাঁক তরুণ-তরুণীর আড্ডা চলছিল চায়ের ভাঁড় হাতে। তাঁদেরই এক জন বললেন, ‘‘গ্যাসের দাম কমুক সেটা চাই। পেট্রল-ডিজেলের দাম কমুক, অবশ্যই চাই। পাশাপাশি চাকরি চাই, রাজ্যে নতুন শিল্প চাই। ভিড়ের মধ্যে থেকে আমরা চেঁচিয়ে কথাগুলো বলার চেষ্টা করব।’’

‘ঘরের মেয়ের’ কাছে দাবি ঘরেরই ছেলেমেয়েদের!

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee West Bengal Assembly Election 2021
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy