প্রতিবাদ: স্টেশনে বিক্ষোভ তৃণমূলের। বুধবার। নিজস্ব চিত্র।
ভোটের বাজারে বোলপুর-হাওড়া শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেসের নাম বদল বিতর্ক ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগে ঘিরে রাজনীতির পারদ চড়ল। বুধবার দুপুরে বোলপুর স্টেশনের সামনে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূলের কয়েকশো কর্মী। যাদবপুরে এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, ‘‘পৌষমেলা বন্ধ করে দিয়েছে। শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেসের নামও পাল্টে দিয়েছে ওরা।’’
তৃণমূলের অভিযোগ, কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের রেলমন্ত্রক বিজেপি নেতাদের মতোই শান্তিনিকেতন ও রবীন্দ্রনাথের ঐতিহ্যকে শেষ করে দিয়ে নতুন ইতিহাস লিখতে চায়। তাই শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেস নামের পরিবর্তে সঙ্ঘের নেতা দীনদয়াল উপাধ্যায়ের নামে করা হয়েছে। তাই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবিগুলিকেও। যদিও রেল সূত্রে জানানো হয়েছে, নাম পরিবর্তনের কোনও ঘটনা ঘটেনি। ‘দীনদয়ালু’ একটি বিশেষ ধরনের কোচের নাম, কোনও ট্রেনের নয়।
রাজীব গাঁধী যখন প্রধানমন্ত্রী তথা বিশ্বভারতীর আচার্য ছিলেন ও নিমাইসাধন বসু ছিলেন উপাচার্য, তখন বোলপুর থেকে কলকাতা যাওয়ার দ্রুতগামী ট্রেনের অভাব দূর করতে চালু হয় শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেস। স্বাভাবিকভাবেই ট্রেনটির সঙ্গে শান্তিনিকেতনের আবেগ জড়িত। তাই নাম পরিবর্তনের বিষয়টি ছড়িয়ে যেতেই প্রতিবাদে মুখর হন বোলপুরের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ। এ দিন তৃণমূল নেতা তথা দুবরাজপুরের বিদায়ী বিধায়ক নরেশচন্দ্র বাউড়ি এবং বোলপুর পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের সদস্যদের নেতৃত্বে তৃণমূলের পতাকা হাতে প্রায় ৫০০ জন জড়ো হন বোলপুর-শান্তিনিকেতন স্টেশনের সামনে। শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেস স্টেশনে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই লাগাতার স্লোগানের মধ্য দিয়ে গোটা ঘটনার প্রতিবাদ করা হয়। স্টেশন ম্যানেজারকে ডেপুটেশন দেওয়া হয়।
এ দিন ট্রেনের সামনে গিয়ে দেখা গেল, একাধিক কামরার বাইরে ‘দীনদয়ালু কোচ’ বা শুধুমাত্র ‘দীনদয়ালু’ দেখা রয়েছে। তবে, কামরার ভিতর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি ও বাণী লাগানো আছে নতুন কামরাগুলিতে। বোলপুর স্টেশনে কর্মরত রেলের এক কর্মী বলেন, “ট্রেনের গায়ে কখনও ট্রেনের নাম লেখা থাকে না। তা থাকে ইঞ্জিনের সামনের ইলেক্ট্রনিক বোর্ডে। তাই, এটি যে ট্রেনের নাম নয় তা সহজেই বোধগম্য।” রেল সূত্রের খবর, করোনা পরিস্থিতিতে দেশের সমস্ত মেল ও এক্সপ্রেস ট্রেনকে বিশেষ ট্রেন হিসেবে চালানো হচ্ছে। পুরনো ট্রেনের পুরনো নম্বরের আগে শূন্য বসিয়ে ওই ট্রেনগুকে চিহ্নিত করা হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে ট্রেন চলাচল যখন স্বাভাবিক হবে, তখন ফিরে আসবে তাদের পুরনো নামও। শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেসের নাম বদলও সেই অর্থে ‘তাৎক্ষণিক’। অন্য দিকে, দূরপাল্লার অসংরক্ষিত এক্সপ্রেস ট্রেনের জন্য নির্মিত কম দুর্ঘটনাপ্রবণ দীনদয়ালু শ্রেণির এলএইচবি কোচ শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেসেও ব্যবহার শুরু হয়েছে। তার ভিতরে কবিগুরুর ছবি থাকার কথা নয় বলে খবর। ফলে এই ঘটনাও তাই নিতান্তই পরিস্থিতির কারণে। তবে এই নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ায় তড়িঘড়ি নতুন কোচগুলিতেও রবীন্দ্রনাথের ছবি লাগানো হয়েছে। তবে তা মানতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব।
তৃণমূল নেতা নরেশচন্দ্র বাউড়ি বলেন, “আমরা গোপন সূত্রে জেনেছি এই ট্রেনের নাম পরিবর্তন হচ্ছে। এর সঙ্গে শান্তিনিকেতন ও বোলপুরের আবেগ জড়িয়ে আছে। আমরা রবীন্দ্রনাথকে আঁকড়েই থাকব।’’বোলপুরের স্টেশন ম্যানেজার গৌরেন্দু মিত্র বলেন, “শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেসের নাম পরিবর্তনের করা হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। জমা পড়া স্মারকলিপি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। যদি আমাদেরও কিছু করার থাকে করব।”
এ দিকে, ভোটের আগে বারংবার বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী এবং বোলপুরের বিজেপি প্রার্থী অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়কে একই বন্ধনীতে রেখে বিজেপির বিরুদ্ধে রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতনের আবেগকে ধ্বংস করে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। আবার নিজেকে উপাচার্য বিরোধী প্রমাণ করতে মরিয়া বিজেপি প্রার্থী অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়ও। বুধবার বোলপুরে তিনি দাবি করেন, তৃণমূলের জেলা সভাপতি ও বোলপুরের তৃণমূল প্রার্থী দুজনেই বিশ্বভারতীর উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ। ছবি দেখিয়ে তা প্রমাণের চেষ্টাও করেন। এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। এই বিষয়ে বোলপুরের তৃণমূল প্রার্থী চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, ‘‘উপাচার্যের সঙ্গে আমাদের কোনও ঘনিষ্ঠতা নেই। আর ছবিগুলি সৌজন্য সাক্ষাতের।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy