দমদমের জনসভায় সোমবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
রানাঘাট ও বসিরহাট: রাজ্যে চার দফায় যা ভোট হয়েছে, তাতেই তৃণমূল সরকার গড়ার লক্ষ্যে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে বলে দাবি করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলায় এসে প্রতি দফার ভোটের পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহেরা যখন আসন-সংখ্যা বলে বলে দাবি করে চলেছেন যে এ রাজ্যে ক্ষমতায় আসতে চলেছে বিজেপি, তখন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী পাল্টা বোঝাতে চাইছেন মানুষের রায় আসছে তাঁদের পক্ষেই। মোদী-শাহদের ‘ডেলি প্যাসেঞ্জারি’ কোনও কাজে আসবে না বলেই মমতার দাবি।
হাসনাবাদে সোমবার নির্বাচনী জনসভায় মমতা বলেছেন, ‘‘ভোট চাইতে এলে ওদের (বিজেপি) মুখে ঝামা ঘষে দিন! লজ্জা করে না, এতই যদি ভোট পাবে, তা হলে রোজ রোজ ডেলি প্যাসেঞ্জারি করছে কেন? বাংলা দেব না! যা ভোট হয়ে গিয়েছে, তাতেই তৃণমূল অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে।’’ শীতলখুচিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে চার জনের মৃত্যুর ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে রানাঘাট, বসিরহাট ও দমদমে সব নির্বাচনী সভাতেই এ দিন মমতা ডাক দিয়েছেন বুলেটের জবাব ব্যালটে দেওয়ার।
বসিরহাট মহকুমার হাসনাবাদে মুরারিশা চৌমাথায় বসিরহাট উত্তর ও দক্ষিণ কেন্দ্রের দুই তৃণমূল প্রার্থী রফিকুল ইসলাম ও সপ্তর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে সভা করতে এসে মোদী এবং কেন্দ্রের শাসক দলকে তীব্র আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বিজেপি চক্রান্ত করে আমাদের জায়গা নিয়ে নিচ্ছে। তাই বারাসতে আমার সভা বাতিল করতে বাধ্য হলাম।’’ প্রসঙ্গত, বারাসতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পিঠোপিঠি সভা পড়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত নিজের কর্মসূচি পিছিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ‘‘‘আমরাও ছেড়ে কথা বলব না! হয় এসপার নয়তো ওসপার! গুলির বদলে একটা করে ভোট দিন, দেখব কী করে ওরা দিল্লিতে থাকে। আগে বাংলায়, পরে দিল্লিতে খেলা হবে!’’ ভয় পান না বলে তাকে খুন করা হতে পারে বলেও অভিযোগ করেন মমতা।
বিজেপির বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের অভিযোগও এ দিন ফের তুলেছেন মমতা। রানাঘাটের জনসভায় তিনি বলেন, ‘‘মানুষ মরে গেলে হিন্দু-মুসলিম হয়, না মানুষের রক্তে হিন্দু-মুসলিম হয়? এরা পারে না, এমন কাজ নেই! দেখলেন না, ওদের এমপি এক জন মহিলা, তিনি কী করছিলেন, নিজের গাড়ি নিজেই ভাঙছিলেন!’’ তবে সাধারণ মানুষের ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই, এই বার্তা দিতে মুখ্যমন্ত্রীর আরও মন্তব্য, ‘‘যারা গুলি চালাচ্ছে, তারা তো মাত্র এক দিন থাকবে। আমরা তিনশো পঁয়ষট্টি দিন থাকব। তখন দেখে নেব!’’
মোদী ও শাহকে এ দিন সর্বত্রই তীব্র আক্রমণে বিঁধেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কোনও স্ট্যান্ডার্ড নেই। সারা দেশকে অধঃপতনে পাঠিয়ে দিচ্ছে। রেল, সেল, কোল— সব বিক্রি করে দিচ্ছে। গুলি করে মানুষ মারছে।’’ তিনি কোনও সম্প্রদায়ের নামে কটু কথা বলেননি দাবি করে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘হয় প্রমাণ দিন, নয়তো প্রধানমন্ত্রীর গদি ছেড়ে দিন। আপনাকে প্রধানমন্ত্রীর আসনে শোভা পায় না!’’
ভোটের সময়ে তিনি যাতে সারা বাংলা ঘুরতে না পারেন, তার জন্য তাঁর ‘একটা পা চোট করে দিয়েছিল’— এই অভিযোগেও বিজেপিকে ফে কাঠগড়ায় তুলেছেন তৃণমূল নেত্রী। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের বিবরণ দিয়েও তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, কাজের জোরেই তৃণমূল ভোট চাইতে পারে। যে অধিকার বিজেপির নেই বলে তাঁর দাবি। বিনা পয়সায় রেশন পেতে গেলে তৃণমূলকে ভোট দিতে হবে বলে মন্তব্য করে মমতা বলেন, ‘‘আমপানে আমি ৮ হাজার কোটি টাকা দিয়েছি আর মোদী এক পয়সা না দিয়ে কেবল বড় বড় কথা বলছেন। বাংলায় ৪০%-এর বেশি বেকারদের চাকরি হয়েছে। আর মোদীর সরকার দু’কোটি মানুষের চাকরি খেয়ে নিয়েছে।’’ মতুয়াদের উদ্দেশেও তাঁর মন্তব্য, ‘‘জেনে রাখুন, আপনাদের নাগরিকত্ব আমরা দিয়েছি। বিজেপি দেয়নি। বাংলাকে গুজরাত হতে দিচ্ছি না। জেতার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছে জঘন্য একটা পার্টি। তাই ওদের সত্য কথা বলার সাহস নেই।’’
মোদী-শাহেরা যখন বাংলা দখল করতে চাইছেন, তখন মমতার পাল্টা দাবি, দিল্লি হাতছাড়া হওয়ার ভয়েই বিজেপি নেতারা মরিয়া হয়ে উঠেছেন। মমতার মন্তব্য, ‘‘তুমি চোর, গুন্ডাদের চৌকিদার। আমরা মানুষের পাহারাদার। ভোটের দিন একটা করে ভোট দিয়ে খেলা হবে। দিল্লি হাতছাড়া হওয়ার ভয়ে বাংলা দখল করতে রোজ ছুটে আসছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy