Advertisement
E-Paper

ইন্দ্রনীল সেন । চন্দননগর

২০১৪ সালে বহরমপুর লোকসভায় শোচনীয় পরাজয়ের পর নেত্রীর বেশি আস্থাভাজন হয়ে উঠেছিলেন ইন্দ্রনীল । হেরেও যিনি জেতেন, তাঁকেই তো ‘বাজিগর’ বলে!

ইন্দ্রনীল সেন।

ইন্দ্রনীল সেন।

আনন্দবাজার ডিজিটাল

শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২১ ১২:০০
Share
Save

বাজিগর: তৃণমূল জমানায় প্রত্যেক নির্বাচনেই নিত্যনতুন জয়ের রেকর্ড গ়ড়েন মমতার দলের নেতারা। কিন্তু ইন্দ্রনীল সেই ব্যতিক্রম, যিনি তৃণমূল জমানায় রেকর্ড ভোটে হেরেই নিজের ‘মার্কস’ বাড়িয়েছিলেন দিদির কাছে। ২০১৪ সালে বহরমপুর লোকসভায় তৃণমূলের হয়ে লড়ে অধীর চৌধুরীর কাছে রেকর্ড সাড়ে তিন লক্ষ ভোটে হারেন ইন্দ্রনীল। কিন্তু সেই শোচনীয় পরাজয়ের পর নেত্রীর বেশি আস্থাভাজন হয়ে উঠেছিলেন তিনি। হেরেও যিনি জেতেন, তাঁকেই তো ‘বাজিগর’ বলে! শাহরুখ খান শিখিয়ে গিয়েছেন।

মধু ছন্দে ভরা: রাজনীতিতে এসেছেন বছর সাতেক। কিন্তু তিন দশক ধরে তাঁর পরিচিতি গায়ক হিসাবেই। তাই নিজেকে বিধায়ক-মন্ত্রী বা রাজনীতিকের চেয়ে ‘গায়ক’ বলতেই বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। এ-ও জানা যে, স্ত্রী মধুছন্দা নন। তাঁর প্রথম প্রেম গানবাজনাই। শুনে গৃহিণী কুপিত হলেও নিরুপায় গানপ্রেমিক গায়ক।

দূরের বলাকা: গত পাঁচ বছরে এমএলএ সাহেবকে নাকি সেভাবে এলাকায় দেখা যায়নি। তাঁর হিট সিরিজের মতো ‘দূরের বলাকা’ হয়ে ছিলেন। কিন্তু দেখা যাবেই বা কী করে! তিনি তো নিছক নির্বাচিত বিধায়ক নন। তিনি তথ্যসংস্কৃতি দফতরের প্রতিমন্ত্রীও। তাঁর বস্ স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। ভোটের আগে বিধায়ক বদলের দাবিতে পোস্টার ঘিরে তোলপাড় হয়েছিল ফরাসডাঙা। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর আস্থা ইন্দ্রনীলেই। তাই চন্দনগরে ফের প্রার্থী। তবে সকলেই যে তাঁর বিরুদ্ধে, মোটেও তা নয়। এলাকা প্রদক্ষিণ করলে জনতা বলে, “জিটি রোডে বিধায়কের অফিস খোলাই থাকে। ওঁর সই-টই পেতেও অসুবিধে হয় না।”

মোবাইলবাবা: ভোটের প্রচারে জন্য ছুটে বেড়াতে হচ্ছে চন্দননগরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত। এক প্রান্তে গিয়ে অন্য প্রান্তে কোনও প্রয়োজন হলে বা গোলমাল ঘটলে সামাল দিচ্ছেন মোবাইলেই। নেতা-কর্মীদের নিয়ে বিধানসভা ভোটের জন্য হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ বানিয়েছেন। সেখানেও নেতা-কর্মীদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কথা সারছেন। ভোটে মোবাইলই ‘মুশকিল আসান’!

মাল নয়, চন্দননগরের বন্ধু: চন্দননগরের ছেলে ছিলেন প্রয়াত অভিনেতা-রাজনীতিক তাপস পাল। আলাভোলা তাপস নিজেকে ‘চন্দননগরের মাল’ বলে পরিচয় দিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। মহা অনুতপ্ত হলেও যে বিতর্ক আমৃত্যু তাঁর পিছু ছাড়েনি। ইন্দ্রনীল তাই গত পাঁচবছরে যতবার চন্দননগরে গিয়েছেন, ততবারই বলেছেন, তিনি ‘চন্দননগরের বন্ধু’। বলেছেন, ‘‘আমি আপনাদের বন্ধু। হাত বাড়ালেই একমাত্র যে বন্ধুকে পাওয়া যায়, তার নাম তৃণমূল। ইন্দ্রনীলও।’’

আলোক-পাত: চন্দননগরে ভোটের প্রচারে শাসকদলের মিছিলে স্লোগান উঠছে, ‘‘আলোর হাব করল কে? ইন্দ্রনীল, আবার কে! জলের লাইন আনল কে? ইন্দ্রনীল, আবার কে!’’ আলোর শিল্পে জগৎজোড়া নাম চন্দননগরের। কিন্তু তিনি বিধায়ক থাকালীনই আলোর ‘হাব’ তৈরি হয়েছে সেখানে। স্লোগান শুনে নিরুত্তর বিধায়ক। প্রশ্ন করলে জবাব আসছে, “আমার একটাই কাজ— চন্দননগরবাসীকে খুশি করা।”

উৎসব সংকল্প: চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো জগদ্বিখ্যাত। কিন্তু গায়ক-বিধায়ক আরও একটি উৎসবের সংযোজন করেছেন ফরাসডাঙায়। ২০১৯ সাল থেকে তাঁর উদ্যোগেই চন্দননগর উৎসবের সূচনা হয়েছে। ২০২০ সালে হলেও কোভিড সংক্রমণের জেরে এবার আর উৎসব করা সম্ভব হয়নি। আবার বিধায়ক হয়ে ফের শুরু করতে চান উৎসব। আপাতত এটাই তাঁর সংকল্প।

সকল গানের সেরা: গত আট বছরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা যে সমস্ত গান রচনা করে সুর দিয়েছেন, তাঁর সবেতেই কমবেশি ছোঁয়া রয়েছে ইন্দ্রনীলের। সেই গায়ক প্রার্থী হলে প্রচারে গান থাকবে না, হতেই পারে না। প্রচারে ইন্দ্রনীলের মুখে শোনা যাচ্ছে, “এটা চন্দননগর। এটা বাংলার ঐতিহ্য রক্ষার লড়াই।” আর শোনা যাচ্ছে দ্বিজেন্দ্রগীতি। দিদির গানের বাঁধনে অবদান থাকলেও প্রচারে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের গানই গাইছেন। নেতা-কর্মীরাও তাঁর দ্বিজেন্দ্রগীতির সঙ্গে ঠোঁট মেলাচ্ছেন। চন্দননগর জুড়ে ধ্বনিত হচ্ছে ‘সকল দেশের সেরা’।

আমার জন্মভূমি: নয়ের দশকের শেষদিকে প্রতি সন্ধ্যায় বাঙালি বাড়িতে শোনা যেত ইন্দ্রনীলের গান। ‘জন্মভুমি’ ধারাবাহিকে তাঁর গাওয়া গান বাঙালির রান্নাঘর থেকে অন্দরমহল— সর্বত্র ঢুকে পড়েছিল। গানের জলসাতেও দর্শক-অনুরোধে তাঁকে গাইতে হত সেই গান। এবারের ভোটযুদ্ধকেও ইন্দ্রনীল বলছেন, জন্মভূমি রক্ষার যুদ্ধ।

প্রত্যাবর্তন থেকে পরিবর্তন: ২০১১ সালে পরিবর্তনের ভোটে ইন্দ্রনীল ছিলেন প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে আবার মুখ্যমন্ত্রী করার পক্ষে যুক্তি দিয়ে দু’পাতার খোলা চিঠি লিখেছিলেন। কিন্তু দু’বছরের ব্যবধানে তাঁর অবস্থান ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যায়। ২০১৩ সালে ইন্দ্রনীলের ‘আদর্শ’ হয়ে ওঠেন মমতা। ২০১৪ সালে তিনি হয়ে যান বহরমপুর লোকসভায় তৃণমূল প্রার্থী। হারেন। ২০১৬ সালে সম্মানজনক পুনর্বাসনে পান চন্দননগর। জয়ী হন। মন্ত্রীও।

প্রতি প্লাস প্রতি ইজ ইকুয়াল টু পূর্ণ: ইন্দ্রনীলকে তথ্যসংস্কৃতি দফতরের প্রতিমন্ত্রী করার সময় মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন ‘সংস্কৃতি জগতের লোক’ হিসাবে উনি ওই দফতরের কাজ ভালো বুঝবেন। কিন্তু চার মাসের মধ্যেই তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় পর্যটন দফতরের প্রতিমন্ত্রী পদে। ইন্দ্রনীল বলেছিলেন ‘‘দিদির মনে হয়েছে, পর্যটন আমার পক্ষে বেশি মানানসই। এতে আমি খুশি।’’ বাধ্য ছাত্রের মতো দিদিমণির কথা মেনে চলায় বছর কাটতে না কাটতেই পর্যটনের সঙ্গে তথ্যসংস্কৃতি দফতরের দায়িত্বও ফিরে পেয়েছিলেন। তারপর থেকেই নবান্নের আমলা মহলে আলোচনা, ইন্দ্রনীল আসলে পূর্ণমন্ত্রীই। হিসাব কষলে অর্ধেক প্লাস অর্ধেক তো এক-ই হয়। দু’টি প্রতিমন্ত্রীর অর্থ তো আসলে একটি পূর্ণমন্ত্রীই।

ও মামা, কোথায় গেলি রে: ইন্দ্রনীলের হিট গান। বিরোধীরা প্রচারে বলছেন, আসলে ভোটাররাই তাঁর ‘মামা’। এখন প্রার্থী ইন্দ্রনীল তাঁদের আকুল হয়ে ডাকছেন— কোথায় গেলি রে! ইন্দ্রনীল অবশ্য এসব শুনে নীরবই রয়েছেন। দাঁতে দাঁত চেপে ভোটের লড়াই লড়ে যাচ্ছেন।

তথ্য: অমিত রায়, রেখাচিত্র: সুমন চৌধুরী

Chandannagar tmc candidate West Bengal Assembly Election 2021 indranil sen Tarader Katha

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

ক্যানসেল করতে পারবেন আপনার সুবিধামতো

Best Value
প্রতি বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
প্রতি মাসে

৪২৯

১৬৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।