ছেড়ে দেব না: গান না শিখিয়ে উপায় ছিল না। বাগুইআটির দক্ষিণপাড়ায় যৌথ পরিবারের সদস্য। মা রেওয়াজ শুরু করলে হারমোনিয়ামের উপর প্রায়ই চেপে বসত মেয়ে। কার গলার জোর বেশি, তা দেখতে দৌড়ে আসতে হত বাড়ির সকলকে। মা বুঝেছিলেন, এ মেয়েকে গান না শিখিয়ে উপায় নেই। সেই থেকেই সঙ্গীতচর্চা শুরু।
জর্জীয় পথে: বাবার পছন্দ দেবব্রত (জর্জ) বিশ্বাসের গান। শিক্ষা শুরু হয়েছিল রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে। ছোট বয়সেই বড় বড় গান মনে রেখে গাইতে পারতেন। ছোটবেলায় লোডশেডিং হলে বাড়ির সকলে মিলে ছাদে গিয়ে গান গাওয়া হত। একসঙ্গে আনন্দে গান গাওয়ার সেই স্মৃতি এখনও চাখেন মনে মনে।
গানকীর্তন: বাড়িতে সকলে ভক্তিগীতি পছন্দ করেন। তবে কীর্তনে অদিতির মন মজেছে অনেক বড় হয়ে। তত দিনে সঙ্গীত নিয়ে স্নাতক স্তরের লেখাপড়া শেষ। স্নাতকোত্তরে কীর্তন নিয়েই পড়তে ইচ্ছে হল। কারণ, বাড়িতে নামকীর্তন গাওয়া হলেও সেই ধারার গান আগে ভাল ভাবে শেখা হয়নি। সব সময়েই ইচ্ছে ছিল এমন ধরনের গান গাওয়ার, যা অনেকের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়। কীর্তন তেমনই একটি ধারা। কারণ, এতে সাধারণের ভাবনার কথা বলা হয়। বাংলার মাটির আবেগ ধরা থাকে কীর্তনাঙ্গের গানের কথা-সুরে। অবসর কাটাতেও কীর্তনই প্রথম পছন্দ।
সুরের আকাশে শুকতারা: কীর্তন নিয়েই পৌঁছনো জি বাংলার ‘সা রে গা মা পা’-র মঞ্চে। অদিতি মনে করেন, সেই অনুষ্ঠান নবজন্ম দিয়েছে তাঁকে। কীর্তনই তাঁকে প্রতিষ্ঠা করেছে সেই মঞ্চে। তার পর জীবনের মোড় ঘুরে গিয়েছে। ওই গানের প্রতিযোগিতায় না গেলে তা কখনও হত না। শিক্ষা মিলেছে। পেয়েছেন প্রচুর ভালবাসা।
হৃদমাঝারে রাখব: সা রে গা মা পা-র আসরে বন্ধু হয়েছে অনেক। সেই বন্ধুরা এখনও পাশে আছেন। তীর্থ থেকে দুর্নিবার— সকলের সঙ্গেই যোগাযোগ অক্ষুন্ন। ভোটে দাঁড়াচ্ছেন জানতে পেরে বন্ধুদের তরফে অভিনন্দের বন্যা। জানতে পেরেছেন, ‘সা রে গা মা পা’-র দুই বন্ধু আবার তাঁর কেন্দ্রের ভোটার। খুবই আহ্লাদ হয়েছে।
ত্র্যহস্পর্শ: বছর তিনেক হল বিয়ে করেছেন। বাগুইআটির যৌথ পরিবার ছেড়ে এখন লোকনাথ মন্দিরের কাছে শ্বশুরবাড়িতে বসবাস। জায়গা বদলালেও আদর কমেনি। মায়ের আদরের সঙ্গে যোগ হয়েছে শাশুড়ি ‘মামণি’র যত্ন। এখন শুধু সঙ্গীতপ্রেমীদের ঘরের মেয়ে নন, রাজনৈতিক পরিবারেরও বধূ। স্বামী তৃণমূলের যুবনেতা দেবরাজ চক্রবর্তীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শুরু হয়েছে জনসেবা। সেই সূত্রেই এখন অদিতির জীবনে তিন ‘মায়ের’ স্নেহ। মা, মামণি আর দিদিমণি। শেষোক্তজন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও অভিভাবকের মতোই। দেখা হলেই খোঁজ নেন, গান ভাল ভাবে হচ্ছে কি না। শরীর সুস্থ রাখতে বলেন।
রোজের রেওয়াজ: দিনে ১২ ঘণ্টা প্রচারের ব্যস্ততা। তবু ছাড়েননি দৈনিক রেওয়াজের অভ্যাস। অদিতি বলছেন, ‘‘২৪ ঘণ্টা অনেক সময়। চাইলে কী না করা যায়!’’ সকালে এক দফা প্রচার সেরে বাড়ি ফিরে স্নান, পুজো আর খাওয়াদাওয়া। তাঁর কাছে পরিবারের মঙ্গল সবকিছুর আগে। তাই কাজের ব্যস্ততার মাঝেও অবহেলা করেন না আত্মজনেদের। তবে রাজনীতিতে আসার পরে পরিবারের ধারণা খানিক বড় হয়ে গিয়েছে। রাজারহাট-গোপালপুরের তৃণমূল প্রার্থীর কাছে গোটা নির্বাচনী কেন্দ্রের সব মানুষই এখন পরিবারের সদস্যের মতো।
ইন্দ্র-উত্থান: স্বামীর নাম দেবরাজ। ইন্দ্র। তবে তাঁর কথা আলাদা করে বলতে চান না। সব কাজেই তিনি পাশে রয়েছেন। আগেও সমাজসেবা করেছেন। তবে দেবরাজের সঙ্গে বিয়ে আরও ভাল ভাবে শিখিয়েছে মানুষের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে।
গীতা-লতা: ভোটের জন্য সময় কমলেও দুপুরে গান শোনা আর বই পড়া চালু আছে। হিন্দি গান শুনতেও দিব্যি ভালবাসেন। মূলত পুরনো দিনের গান। গীতা দত্ত, লতা মঙ্গেশকর খুব প্রিয়। আর ভালবাসেন মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের গান। সুযোগ হলেই নতুন বই কেনেন। ভাল লাগে পৌরাণিক কাহিনি পড়তে।
জল-বাতাসা: গরম আর রোদ্দুরে রোজ প্রচারে বেরোতে হলেও কষ্ট হচ্ছে না। মামণির ‘টোটকা’ জল-বাতাসা বাঁচিয়ে দিচ্ছে। বাড়ি ফিরলেই নিজে হাতে বউমাকে জল-বাতাসা দেন শাশুড়ি। তাই গ্লুকোজে বিশ্বাস নেই।
জয় বাংলা: মনে-প্রাণে বাঙালি। সাজে তাই পছন্দ শা়ড়ি। খাবারে পছন্দ ঘি-ভাত। খিচুড়ি-পাঁপড়ভাজাও খুব প্রিয়। আর ভালবাসেন রাস্তার ভাজাভুজি, ফুচকা। তারকা হয়ে ওঠার পরেও খাদ্যাভ্যাসে বদল আসেনি। যেমন অভ্যাস হয়নি রূপচর্চা করার।
হারি-জিতি নাহি লাজ: প্রতিযোগিতায় বিশ্বাস নেই। রাজনীতিতে পদার্পণ জেতার জন্য নয়। আসল হল মানুষের কাছে যাওয়া। ঠিক যে কারণে কীর্তন গাওয়া। রাজনীতিতে থাকলে সুবিধা হয় জনগণের কাছে পৌঁছতে। তাঁদের কী প্রয়োজন, তা জানা যায়। সেইমতো সাহায্যও করা যায়।
গাড়িবতী: নিজের জন্য কেনাকাটার তেমন শখ নেই। শাড়ি-গয়না কিনতে একেবারে ভালবাসেন না, এমন নয়। তবে যা পরিবারের পাঁচজনের কাজে লাগে না, তা কখনও তাঁর গুরুত্বের অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকে না। এক প্যাকেট বাদাম কিনলেও কাউকে না দিয়ে খেতে ভাল পারেন না। তবে নিজের টাকায় একটাই নিজের পছন্দের জিনিস কিনেছেন এত দিনে— গাড়ি। তারও একটা কারণ আছে। এত মানুষের ভালবাসা পাচ্ছেন, তাঁদের কাছে কম সময়ে পৌঁছে যেতে হবে তো!
রাধে-গোবিন্দ: বাড়িতে গোপাল আর রাধা-কৃষ্ণের মূর্তি আছে। বড় করে জন্মাষ্টমীর পুজোও করেন। পুজোর জায়গা সাজানো থেকে ভোগ রান্না— শাশুড়ির সঙ্গে সমান তালে দায়িত্ব সামলান অদিতি। কৃষ্ণপ্রেমের সঙ্গে ‘তারামায়ের’ প্রতি ভক্তিও আছে। আর ভরসা রাখেন নিজের গুরুজির উপর।
তথ্য: সুচন্দ্রা ঘটক, রেখাচিত্র: সুমন চৌধুরী
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy