একত্রে: বাম-কংগ্রেসের পতাকা।
একুশের নির্বাচন ঘোষণা ইস্তক বহরমপুর বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে জোড় জল্পনা শুরু হয়েছে জেলা জুড়ে। হেভিওয়েট এই বিধানসভা কেন্দ্রের দিকে নজর রয়েছে রাজ্যেরও। পরপর তিন বারের বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তীর চার বার বিধায়ক হওয়া প্রায় নিশ্চিত হলেও শহরবাসী বলছেন এই কেন্দ্রে জোড় টক্কর দেবে তিন প্রধান রাজনৈতিক দলই। সেই টক্করে কিঞ্চিত পিছিয়ে তৃণমূল। বর্ষীয়ান মনোজের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে বিজেপি’র স্বেচ্ছাসেবী সুব্রত মৈত্র ওরফে কাঞ্চন, অন্তত রাজনৈতিক মহল এমনটাই দাবি করছে। মুখে না বললেও সে হিসাব একেবারে ফেলে দিতে পারছেন না পোড় খাওয়া মনোজ এমনি কংগ্রেসের জেলা নেতারা, অন্দরে কান পাতলে ইতিউতি ভেসে আসছে সে সন্দেহ।
সোমবার মনোজ ও কাঞ্চনের মনোনয়ন পত্র জমা দিতে যাওয়ার শোভাযাত্রা সেই সন্দেহ আরও উসকে দিল বলেই মনে করছেন রাজনীতির কারবারীরা।
এদিকে মনোজের বহরমপুর শহর প্রথমবার দেখল বাম কংগ্রেসের যৌথ মিছিল সংযুক্ত মোর্চার সৌজন্যে সোমবার বেলা বারোটায়। ওইদিন খাগড়া ভৈরব তলার মাঠ থেকে বাম ও কংগ্রেসের এক বিরাট শোভাযাত্রা পৌঁছয় জেলা প্রশাসনিক ভবনে। সেখানেই নিয়ম মেনে মনোনয়ন জমা দিলেন বহরমপুরের তিন বারের বিধায়ক কংগ্রেসের মনোজ চক্রবর্তী।
তিন বারের প্রথম বার মনোজ কংগ্রেস সমর্থিত নির্দল হয়ে দাঁড়িয়ে জিতেছিলেন। পরের দু’বার জিতেছিলেন ২০১১ তে তৃণমূলের সঙ্গে জোট বেঁধে আর ২০১৬ তে বামেদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে। জয়ের লক্ষে চারবারের জন্য মনোজ এবার ব্যাট ধরেছেন সংযুক্ত মোর্চার হয়ে। এবারেও তাঁদের সঙ্গী বামেরা।
তবে বিশেষজ্ঞ মহলের দাবি, এ বার জোট সংঘবদ্ধ হয়েছে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী দাবি করেছেন, “সংযুক্ত মোর্চা সরকার গঠন করবে।” তবে ওই মিছিলে দুই দলের বর্ষীয়ান নেতাদের তুলনায় ছাত্র যুব নেতাদের অংশগ্রহণ নজর কেড়েছে শহরবাসীর। লাল নিশান আর কংগ্রেসের হাত চিহ্ন দেওয়া তেরঙা বয়েছেন দুই দলের যুব নেতারা।
তবে কংগ্রেসের এক যুব নেতার দাবি, “মনোজকাকু আমাদের কাছে নেতার থেকেও একজন অভিভাবক তুল্য। উনি মুখে আর কাজে কোনও ফারাক রাখেন না বলেই মানুষের কাছে এত গ্রহণীয়।” রাজ্যের পালাবদলের ইতিহাসে ২০১১ সালে তৃণমূলের জোট সঙ্গী হয়ে প্রথমবার মন্ত্রী হয়েছিলেন মনোজ। কিন্তু মনোমালিন্যের জেরে রীতিমত সাংবাদিক সম্মেলন করে মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করতেও পিছপা হননি কাঠখোট্টা মনোজ। বয়স হলেও তেজ এখনও সমান বলছেন তাঁর এদিনের সঙ্গী যুব নেতারা। ব্যক্তি মনোজকে শ্রদ্ধার চোখে দেখেন বামেরাও। এমনকি ‘ভদ্রলোক’ মনোজ চক্রবর্তীকে অপছন্দ করেন না তাঁর প্রাক্তন দুই সঙ্গী বর্তমানে বহরমপুর বিধানসভার তৃণমূলের প্রার্থী নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায় ও বিজেপি কাঞ্চন মৈত্রও। তবে মনোজের ভদ্রলোক ইমেজ যদি টিআরপি বাড়িয়ে থাকে কাঞ্চনের টিআরপি অবশ্যই তাঁর সাদামাটা বসবাস। তাঁকে জেলা জুড়ে পরিচয় দিয়েছে তাঁর হাতে গড়া স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ক্ষুদিরাম পাঠাগার। তাঁকে নিয়ে আপত্তি ছিল দলেরই একাংশের। সোমবার নিজের হাতে গড়া সেই পাঠাগারের কার্যালয় থেকে দলে তাঁর পক্ষ বিপক্ষ সবাইকে নিয়ে হেঁটে এসে মনোনয়ন জমা দিলেন বিজেপি’র বহরমপুর বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী সুব্রত মৈত্র ওরফে কাঞ্চন। সেখানেও ছিল যুবদের ছয়লাপ। বাড়তি বলতে মহিলাদের উচ্ছ্বসিত অংশগ্রহণ। এদিন সকালে তৃণমূলের নওদা বিধানসভার প্রার্থী সাহিনা মমতাজও এসেছিলেন মনোনয়ন জমা দিতে। তাঁর সঙ্গে ছিল চার চাকার ছয়লাপ।
তবে বহরমপুর শহরের মানুষ বাড়ির বারান্দা থেকে কেউ রাস্তার দু’ধারে দাঁড়িয়ে উপভোগ করলেন মনোজ ও কাঞ্চনের মনোনয়ন জমা দেওয়ার শোভাযাত্রা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy