ডিসিআরসি-তে মানা হয়নি সুরক্ষাবিধি। ছবি পিটিআই।
‘তুমি কাপড় নাকি প্রাণ, আজ তোমার পরীক্ষা মাস্কজান!’
ভোটের ডিউটি করতে গিয়ে সোনারপুর মহাবিদ্যালয়ের ডিসিআরসি-র দমবন্ধ করা পরিবেশ এবং থিকথিকে ভিড় দেখে ফেসবুকে নিরুপায় রসিকতা করেছিলেন বাটানগরের একটি স্কুলের প্রধানশিক্ষক সুমন মজুমদার। তাতে শেষ রক্ষা হয়নি। সোনারপুর দক্ষিণ কেন্দ্রের একটি বুথে প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব সেরে ফেরার সপ্তাহখানেকের মধ্যে সস্ত্রীক কোভিড পজ়িটিভ হতে হয়েছে তাঁকে। ১১ বছরের কন্যারও হাল্কা জ্বরজারি ছিল। শারীরিক দুর্বলতার মধ্যে বাড়িতে বৃদ্ধা মা-বাবাকে নিজেদের থেকে বাঁচিয়ে রাখাই এখন তাঁর কাছে চরম দুশ্চিন্তা। তবে সুমনবাবুর কাছে এর থেকেও বড় বিস্ময়, সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ পশ্চিমবঙ্গে পর পর রেকর্ড ভেঙে চললেও নির্বাচন কমিশনের ভোট-ব্যবস্থাপনায় ছিটেফোঁটা সচেতনতা কেন দেখা গেল না। মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় কমিশনের উপরে কার্যত খুনের দায় বর্তায় বলে মন্তব্য করার পরে কিন্তু এখন অনেক ভোটকর্মীই টের পাচ্ছেন, কী তীব্র ঝুঁকির মধ্যে তাঁরা পড়েছিলেন।
ভোটের সদ্য সমাপ্ত সপ্তম দফায় ডিসিআরসি-র ভিতরে তীব্র গরমে, দমবন্ধকর পরিবেশে আসানসোলে জনৈক শিক্ষিকার মৃত্যুও নির্বাচন কমিশনের ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর হাল নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। এবং সেই সঙ্গে অষ্টম তথা শেষ দফায় ভোটের ডিউটির আগে আতঙ্কে ভুগছেন ভোটকর্মীরা। সপ্তম দফায় ডিউটি সেরে যাঁরা ফিরলেন, তাঁদের এখনও দুরু দুরু বক্ষে ত্রাসের দিনযাপন। কেন না, সংক্রমণের উপসর্গ বুঝতে সপ্তাহ দুয়েকও লাগতে পারে। আসানসোলের বাসিন্দা স্কুলশিক্ষিকা তনুশ্রী ঘোষাল ভয় পাচ্ছেন, পুত্র তাতানের এগারো ক্লাসে ভর্তির সময়। ঝুঁকি নিয়ে লাভ নেই। এ যাত্রা, ছেলেকে কয়েক দিনের জন্য কাছেই শ্বশুরশাশুড়ির ফ্ল্যাটে তাঁরা পাঠিয়ে দিয়েছেন। অষ্টম দফায় ভোট এবং আসন্ন গণনা-পর্বের আগে এখন শিক্ষকদের বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে খালি দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগ। কেউ বলছেন, আমার বাবার কোভিড হয়েছে জানালেও বিডিও সাহেব ছুটি দিলেন না। কারও বক্তব্য, আমার বরের কোভিডের খবর জানিয়েও ছুটি পাইনি।
তবে ভোটের শেষ দফায় কলকাতার এন্টালিতে ডিউটি পড়লেও সঙ্কটের জেরেই ছুটি পেয়ে গিয়েছেন হালতুর বাসিন্দা সিদ্ধার্থ দাশগুপ্ত। স্ত্রী মহুয়া দাশগুপ্ত খাস্তগীর বজবজের একটি স্কুলের প্রধানশিক্ষিকা। তিনি যাদবপুর কেন্দ্রে ভোটের ডিউটি করার পর থেকেই পরিবারটি ঘোর দুর্যোগে। পয়লা বৈশাখ মাংস খেতে বসে স্বাদহীনতাতেই সিদ্ধার্থ বুঝে যান, কী হয়েছে! স্বামী, স্ত্রী এবং কিশোরপুত্র তিন জনেই কোভিডগ্রস্ত হয়েছেন। দম্পতির দু’জনেরই মা-বাবা তাঁদের সঙ্গে থাকেন। এখন শাশুড়ি মায়ের উপসর্গ দেখেও কোভিড পরীক্ষা করাতে দিয়েছেন সিদ্ধার্থবাবু।
সুমনবাবুর মতোই গড়িয়ার দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ় কলেজের ডিসিআরসি-তেও ভয়াবহ অভিজ্ঞতা মহুয়ার। “একই সময়ে ঘেঁষাঘেঁষিতে থার্মাল গান, ভোটযন্ত্র নেওয়া বা পুলিশ এবং গাড়ি খোঁজাখুঁজির ঠেলাঠেলিতে মনে হচ্ছিল না করোনা বলে কিছু আছে। গরমে অনেকেই মাস্ক খুলে ফেলেছেন।” সুমনের চেনা এক শিক্ষিকাও তাঁর ছ’মাসের শিশুসমেত পঞ্চম দফায় গ্রাম থেকে ভোটফেরত আয়ার থেকে কোভিডগ্রস্ত হয়েছেন। মা-মেয়ে দু’জনেই এখন হাসপাতালে। হালিশহরের তরুণ স্কুলশিক্ষক শুভদীপ সাহা ২২ এপ্রিল স্বরূপনগরে ভোটের ডিউটি সেরে ফিরেছেন। তিনি এবং তাঁর মা দু’জনেই এখন স্বাদ-গন্ধ পাচ্ছেন না, নানা উপসর্গে কাহিল। কিন্তু হালিশহরে বাড়িতে কোভিড পরীক্ষা করানোরও সুবিধা পাননি। বুথের মধ্যে কোভিড-বিধির কথা মাথায় রাখলেও ডিসিআরসিতে ভোটকর্মীদের জীবন নিয়ে কেন ভাবা হল না, কমিশনের কাছে তাঁর সদুত্তর মেলেনি।
জয়পুরিয়া কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক সিদ্ধার্থবাবু বলছিলেন, ‘‘এই ভোটে কমিশনের ভূমিকা মনে থাকবে। ভারতের শাসনব্যবস্থা এবং রাজনীতি নিয়ে পড়ানোর বিশেষ রসদ পেলাম।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy