প্রতীকী ছবি।
এক সময়ে এই এলাকাকে বলা হত ‘বামেদের ঘাঁটি’। গত বিধানসভা ভোটে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পরে, ঘাসফুল ফুটেছিল। এ বার লড়াইয়ে যোগ দিয়েছে পদ্মও— বলছেন রায়নার অনেক বাসিন্দাই।
২০১১ সালে ‘পরিবর্তনের’ হাওয়ার মধ্যেও রায়না বিধানসভা কেন্দ্রে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে জিতেছিলেন সিপিএমের বাসুদেব খাঁ। ২০১৬ সালে মাত্র ৪৪৮ ভোটে জিতে যান তৃণমূলের নেপাল ঘোড়ুই। গত লোকসভা ভোটে অবশ্য তৃণমূল ৫৪,৮৪৯ ভোটে এগিয়ে ছিল। বামেদের সরিয়ে তখন দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিল বিজেপি। ২০১৬-র তুলনায় তাদের ভোট বেড়েছিল প্রায় চার গুণ। সিপিএম এ বারও প্রার্থী করেছে প্রাক্তন বিধায়ক তথা তিন বারের প্রার্থী বাসুদেববাবুকে। তৃণমূল এ বার নেপালবাবুকে গলসিতে প্রার্থী করে রায়নায় লড়াইয়ে নামিয়েছে জেলা পরিষদের সভানেত্রী শম্পা ধাড়াকে। তাঁদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন বিজেপির মানিক রায়।
রায়নার দু’টি ব্লকের ১৬টি ও জামালপুরে একটি পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত এই কেন্দ্র। প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এলাকায় তফসিলি জাতি ও জনজাতি মিলিয়ে ৪২ শতাংশ ভোট রয়েছে। গত লোকসভা নির্বাচনে তাঁদের ভোট বাড়লেও তৃণমূল কর্মীদের একাংশ মনে করছেন, এ বার লড়াইটা তত সহজ হবে না। তাঁদের ব্যাখা, কয়েকবছর ধরে রায়না ২ ব্লকে বিজেপির উত্থান হয়েছে। লোকসভা ভোটের পরে, বড়বৈনানে রায়না ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা তৎকালীন ব্লক তৃণমূল সভাপতি আনসার আলি খানের উপরে হামলায় বিজেপির নাম জড়িয়েছে। আবার ভোটের আগে প্রার্থী শম্পাদেবীর মিছিলেও বিজেপি হামলা করেছে বলে অভিযোগ।
বিজেপির এই ‘বাড়বাড়ন্তের’ পিছনে তৃণমূলের ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’ রয়েছে, দাবি দলেরই কিছু নেতা-কর্মীর। কয়েকসপ্তাহ আগে ওই ব্লকের নেতারা প্রকাশ্যে ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণা করে পদত্যাগ করার হুঁশিয়ারি দেন। ভোটের কাজ থেকেও তাঁরা দূরে ছিলেন। বিদায়ী বিধায়ককে এখান থেকে সরিয়ে লোকসভা ভোটে পিছিয়ে থাকা কেন্দ্র গলসিতে প্রার্থী করায়, তাঁর অনুগামীরা ক্ষুব্ধ বলেও দল সূত্রের দাবি। রায়নায় দলের সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করে জেলা নেতৃত্ব অবশ্য পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
রায়নার মাটিতে সন্ত্রাসের বহু ঘটনা ঘটেছে। এলাকার বড় অংশে বন্যার সমস্যা রয়েছে। সেচ ব্যবস্থা, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবনের হাল নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। পানীয় জল নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। আছে দূষণের সমস্যাও। চালকল নিয়েও নালিশের অন্ত নেই। নানা এলাকায় রাস্তার দু’ধারে কালো তুষ পড়ে থাকতে দেখা যায়। তা বাড়ি ঢেকে দেয়, খালি চোখে যাতায়াত করা বিপজ্জনক করে তোলে। চালকলের বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ফসলের ক্ষতি করছে বলে চাষিদের অভিযোগ। এ ছাড়া, রয়েছে বালি লুটের অভিযোগ। তাতে নদীর দফারফা যেমন হচ্ছে, রাস্তাও খারাপ হচ্ছে বলে অভিযোগ। বাসিন্দাদের বড় অংশের দাবি, এ সব সমস্যা নিয়ে কোনও দলই মুখ খোলে না।
তৃণমূল প্রার্থী শম্পাদেবীর অবশ্য বক্তব্য, ‘‘বালি ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে রাজ্য সরকার সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছে। সে কথা প্রচারে বলা হচ্ছে। মানুষ আমাকে ভাল ভাবেই গ্রহণ করেছেন।’’ বিজেপি প্রার্থী মানিক রায়ের আবার দাবি, ‘‘রাস্তা, হাসপাতালগুলির দিকে তাকালেই বোঝা যাবে, তৃণমূল কিছু করেনি। বাড়ির ছাদে উঠলে দূষণের চিহ্ন স্পষ্ট। তৃণমূলের অত্যাচারে মানুষ হাঁফিয়ে উঠছেন। তাই আমাদের জয় নিশ্চিত।’’ বিধায়ক পদ ফিরে পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী সিপিএমের বাসুদেববাবুও। তাঁর দাবি, ‘‘বিজেপিকে ভোট দিয়ে তাঁরা যে দুঃখিত, তা মানুষজন আমাদের বলছেন। কৃষকের ফসলের দাম
নেই, দুর্নীতির মধ্যে পড়ে মানুষ অসহায়। তাই আমাদের উপরে বিশ্বাস ফিরছে।’’
বিরোধীদের দাবি, আদতে এই কেন্দ্রে তৃণমূলের ভোট রয়েছে ৩০ শতাংশের আশপাশে। বাকিটা ‘ভূতের নৃত্য’। তৃণমূলের পাল্টা দাবি, ২ মে ইভিএম খুললেই এ সব অভিযোগের জবাব পেয়ে যাবে বিরোধীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy