ডোমকলের মতই বামেদের গড় হিসেবে পরিচিতি জলঙ্গি, কখনও কখনও ডোমকলের সংগঠন দুর্বল হলেও জলঙ্গিতে তার আঁচ পড়েনি বছর কয়েক আগেও। ফলে সীমান্তের পদ্মাপাড়ের ওই বিধানসভা লাল দুর্গ বলেই পরিচিত গোটা রাজ্যের কাছে। এমনকি রাজ্যের ক্ষমতা হারিয়ে গেলেও ওই বিধানসভায় একাধিক পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতি নিজেদের দখলে লিখেছিল বামেরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গত গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের কাছে হারতে হয়েছিল তাদের। যদিও বামেদের দাবি, সেই হার তৃণমূলের কাছে ছিল না, হার ছিল ডামাট বাহিনীর কাছে। এমনকি বছর দেড়েক আগে সিপিএমের বিধায়ক আব্দুর রাজ্জাক মণ্ডল শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে চলে যায় তৃণমূলে। আর তাতেই কিছুটা হলেও মুসড়ে পড়েন সিপিএম কর্মী-সমর্থকরা। লোকসভা নির্বাচনে একেবারে চার নম্বরে পৌঁছে যায় বামেরা, এমনকি বিজেপিও উঠে আসে তাদের ওপরে।
কিন্তু বছরখানেক থেকে আদাজল খেয়ে আবারও মাঠে নামে বাম নেতৃত্ব। মূলত জলঙ্গির প্রাক্তন বিধায়ক দাপুটে সিপিএম নেতা ইউনুস সরকারের হাত ধরেই জঙ্গী আন্দোলনের পথে হাঁটতে শুরু করে বাম নেতৃত্ব। আর তাতে সাফল্য মিলতে শুরু করে তাদের। মিছিল-মিটিংয়ে বাড়তে থাকে জনসমাগম, ফলে পুরানো মাটি ফিরে পাওয়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে ইউনুস সরকার সহ সিপিএম নেতৃত্ব। কিন্তু নির্বাচনের ঠিক আগে প্রার্থী বাছাইকে কেন্দ্র করে দেখা দেয় আবারও ডামাডোল। ইউনুস সরকার প্রার্থী না হতে পেরে ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে দলের সমস্ত পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ফলে মস্ত বড় একটা ফাটল দেখা দেয় বাম শিবিরে। জেলা নেতৃত্ব উপরেও ক্ষোভ উগরে দেয় বামেদের একাংশের নেতাকর্মীরা। যদিও সিপিএমের জলঙ্গি এরিয়া কমিটির সম্পাদক ইমরান হোসেনের দাবি, "যাবতীয় ক্ষোভ-বিক্ষোভ মিটিয়ে ফেলি আমরা আবার নতুন করে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। বিভিন্ন এলাকায় কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে মোর্চার মিছিল মিটিং শুরু হয়েছে, ফলে এই বিধানসভা আবারও মোর্চায় দখল করবে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।"
অন্যদিকে সিপিএম থেকে যাওয়া বিধায়ক আব্দুর রাজ্জাক মণ্ডল মাঠে নেমেছেন দল বদলের শুরু থেকেই। দল বদলু হিসেবে তার কাছেও এবারের লড়াই সম্মানের লড়াই। লোকসভার নিরিখে তার দল এগিয়ে থাকলেও ইতিমধ্যেই তার দলের বড় একটা অংশ বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে। এমনকি জেলা পরিষদের তৃনমূল সদস্য রাফিকা সুলতানা ইতিমধ্যেই নির্দল হিসাবে প্রার্থী হয়েছেন জলঙ্গি বিধানসভায় আব্দুর রাজ্জাককে জব্দ করতে। ফলে তৃণমূল শিবিরও খুব একটা স্বস্তিতে নেই বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে। জলঙ্গির এক তৃণমূল নেতা বলছেন, ‘‘সব দিক দিয়েই আমরা জলঙ্গিতে এবার ভাল অবস্থার মধ্যে ছিলাম, লোকসভাতেও ভাল ফলাফল করেছি আমরা। কিন্তু দলের অন্দরের কলহ এতটাই চরমে পৌঁছেছে যে প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থীও দাঁড়িয়ে গেল। ফলে এখন কী হবে তা নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছি।"
একেবারে সীমান্ত জুড়ে জলঙ্গি বিধানসভা, এক পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে পদ্মা নদী। ফলে কৃষিজীবীর পাশাপাশি বড় একটা অংশের মৎস্যজীবীদেরও বাস এই বিধানসভা জুড়ে। জলঙ্গি এবং রানিনগরের বড় একটা অংশকে নিয়ে তৈরি হয়েছে এই বিধানসভা। আর এখানকার সবচাইতে বড় সমস্যা ভাঙন। একসময় পদ্মার ভাঙনের কবলে পড়ে জলঙ্গি ও রানিনগরের মানচিত্র থেকে মুছে গিয়েছে একের পর এক গ্রাম। তৈরি হয়েছে চর, পরিকাঠামোহীন সেই চরে বসবাস করেন অসহায় মানুষ। ভোট আসে ভোট যায় ভাঙনের কবলে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে অনেক মানুষই এখন এলাকা ছাড়া।
তবে জলঙ্গির বিধায়ক আব্দুর রাজ্জাক মন্ডল দলীয় কোন্দলকে খুব বেশি পাত্তা দিতে নারাজ। তার কথায়, "দলের একটা অংশের মানুষ বেশ কিছু বিষয় নিয়ে ভুল বুঝে ছিলেন আমাকে, সেই সমস্যা অনেকটাই মিটে গিয়েছে। আর যিনি নির্দল প্রার্থী হয়েছেন তিনি কয়েকশো ভোট পেতে পারেন।" অন্যদিকে মোর্চার আরও এক শরিক কংগ্রেসের আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা বলছেন, "সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ফাটল বাড়ছে তৃণমূলে, অন্যদিকে আমাদের মোর্চার যেটুকু সমস্যা ছিল তা মিটে গিয়েছে।" অন্যদিকে এই ভোট কাটাকাটিতে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছে বিজেপি। তাদের দাবি, বিজেপির ভোট অন্য কোথাও যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। ফলে অন্যদের ভোট কাটাকাটির মাঝ দিয়ে বিজেপি দখল করবে এই বিধানসভা। এক বিজেপি নেতা বলছেন, "ইতিহাস সাক্ষী আছে, জলঙ্গিতে একবার জনসংঘ বিধানসভা দখল করেছিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy