Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
West Bengal Assembly Election 2021

Bengal Polls: অভিষেককে পাশে নিয়েই টিম পিকে-র বাজিমাত

তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পিকে-র সংস্থার পেশাদারদের মতবিরোধ হয়েছে। তৈরি হয়েছে তিক্ততা বা ইগোর লড়াইও।

প্রশান্ত কিশোর ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

প্রশান্ত কিশোর ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০২১ ০৬:৫৩
Share: Save:

ভোট-কুশলী প্রশান্ত কিশোরের (পিকে) সংস্থার পক্ষে বাংলার গ্রামে গ্রামে গিয়ে মসৃণ ভাবে কাজ করা সম্ভব হত না, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের সব রকম ভাবে সহযোগিতা না করলে। পশ্চিমবঙ্গের ফলাফলে বিপুল সাফল্য আসার পর ঘরোয়া ভাবে এ কথাই জানাচ্ছেন ওই সংস্থা আইপ্যাক-এর সূত্র।

তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই সংস্থার পেশাদারদের মতবিরোধ হয়েছে। তৈরি হয়েছে তিক্ততা বা ইগোর লড়াইও। অনেকে এটা বলেই দলত্যাগ করেছেন যে, প্রশান্ত কিশোর তৃণমূলের উপর ছড়ি ঘোরাতে চেষ্টা করছেন! তাঁর রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে! কিন্তু আগাগোড়া পিকে-র দলের পাশে থেকেছেন অভিষেক। বিরোধী স্বরকে চুপ করিয়েছেন। তার চেয়েও বড় কথা, এই দলের পাঠানো তথ্য ও পরিসংখ্যানকে গুরুত্ব দিয়ে সেই অনুযায়ী পিকে-র প্রেসক্রিপশন যাতে মান্য করা হয়, তা নিজে পর্যবেক্ষণ করেছেন।

বাংলার ভোটে ঠিক কী করেছেন টিম পিকে-র প্রায় হাজার দু’য়েক পেশাদার ছেলেমেয়ে? আইপ্যাক সূত্র জানাচ্ছে, তাঁরা ভোট শুরু হওয়ার দু’মাস আগে থেকেই প্রতি ৪৮ ঘণ্টা অন্তর প্রতিটি নির্বাচনী কেন্দ্রওয়াড়ি ভোট সমীক্ষা করে অভিষেক এবং পিকে-র কাছে তার ফল পাঠিয়েছেন। ফলে অনেক আগে থেকেই তৃণমূল নেতৃত্ব অনুমান করতে পেরেছেন, কোথায় কতটা প্রচারে জোর দিতে হবে এবং কোন বিষয়গুলিকে সামনে নিয়ে আসতে হবে।

সংস্থার সূত্রের মতে, বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সেখানকার জনপ্রিয় ডাক্তার, উকিল এবং মাস্টারমশাইদের সঙ্গে বৈঠক করেছে টিম পিকে। তার কারণ, এই ব্যক্তিদের সঙ্গে এলাকার বহুসংখ্যক মানুষের সংযোগ। তাঁদের কাছ জানতে চাওয়া হয়েছে এলাকার অভাব ও আবেগ। প্রার্থী কাকে করলে ভাল হয়, সে ব্যাপারেও খোলা মনে তাঁদের মতামত নেওয়া হয়েছে। যে সব কেন্দ্রে গোষ্ঠীদ্বন্দের কারণে তৃণমূল লোকসভায় খারাপ ফল করেছিল, বিশেষ যত্ন নেওয়া হয়েছে সেই সব এলাকায়। বাড়ি বাড়ি গিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে, রাজ্য সরকারের সামাজিক প্রকল্পগুলির সুবিধা তাঁরা পাচ্ছেন কি না। সে সম্পর্কে এলাকার মানুষ সঠিক ভাবে অবহিত না থাকলে স্থানীয় বিধায়ক বা দলীয় নেতাকে সে কথা জানিয়ে বলা হয়েছে, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রয়োজনীয় ফর্ম সংশ্লিষ্টদের বাড়ি পৌঁছে দিলে তাঁরা নিজেরা এসে তা ফিল আপ করে গ্রামবাসীদের সাহায্য করবেন। এমনটা ঘটেওছে বহু জায়গায়। তাতে সরকারের প্রতি আস্থা ফিরেছে বিমুখ গ্রামবাসীর, এমনই দাবি করছে আইপ্যাক।

কোনও সভার জন্য বিভিন্ন বুথভিত্তিক নেতারা কত লোক নিয়ে আসতে পারছেন, সেটাও হিসাব রাখা হয়েছে। যে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া ছিল, তা এই স্থানীয় নেতারা পূরণ করতে পারছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হয়েছে এবং এই সব কিছুরই রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। কলকাতা থেকে গ্রামে বা মফস্‌সলে জনসভা করতে যাওয়া নেতাদের স্থানীয় ক্ষোভ, আশা-আকাঙ্ক্ষার বিষয়টি ‘ব্রিফ’ করে দিয়েছেন এই পেশাদারেরা।

মাঠের লড়াইয়ের পাশে সোশ্যাল মিডিয়ায় লড়াইকেও একই ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে অভিষেক এবং পিকে-র নেতৃত্বে। আইপ্যাকের সোশ্যাল মিডিয়া বিভাগের এক কর্মী জানিয়েছেন, বিজেপির আইটি সেলের মোকাবিলা করার জন্য রাজ্য জুড়ে দলের সংগঠনের পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়া বাহিনী তৈরি করা হয়েছে। বিজেপি ছাড়া অন্য দলের কেন্দ্রীয় আইটি সেল ছাড়া তৃণমূল স্তরে আইটি সেল ছিল না। প্রশান্ত কিশোর দায়িত্ব নেওয়ার পরে বিধানসভা, তথা অঞ্চলভিত্তিক আইটি সেলের বাহিনী তৈরি করা হয়। তিনি জানান, পিকে বলতেন, এই নির্বাচন পঞ্চাশ শতাংশ মাঠেঘাটে এবং পঞ্চাশ শতাংশ নেট-দুনিয়ায় লড়তে হবে। ওই কর্মীর কথায়, ‘‘রাজ্য জুড়ে আইটি সেলের সংগঠন তৈরি করা ছাড়া একটা আঞ্চলিক দলের পক্ষে বিজেপির আইটি সেলকে মোকাবিলা করা প্রায় অসম্ভব ছিল।’’

বাঁকুড়াই হোক বা উত্তর দিনাজপুর— শহর-গ্রামে ছড়িয়ে থাকা তৃণমূলকর্মীদের সোশ্যাল মিডিয়া, বিশেষত টুইটার সম্বন্ধে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বোঝানো হয়, টুইটার একটা ‘খবর তৈরির মঞ্চ’ বা ‘নিউজ মেকিং প্ল্যাটফর্ম’। তৃণমূলের তরফে দলের নেতানেত্রীদের বক্তব্যকে, বিজেপি-বিরোধিতাকে রাজ্যব্যাপী সোশ্যাল মিডিয়া বাহিনীর মাধ্যমে টুইটারে জাতীয় স্তরে ট্রেন্ডিং করানো শুরু হয়। ওই কর্মীর দাবি, ‘‘বিজেপি বুঝতে পারছিল, তারা এই ই-যুদ্ধে পিছিয়ে পড়ছে। তাই তারা অমিত মালব্যকে দায়িত্ব দেয়। যাতে তৃণমূলের মোকাবিলায় কেবল এ রাজ্যের নয়, গোটা দেশের বিজেপির আইটি সেলের সাহায্য পাওয়া যায়। অমিত শাহ নিজেও কলকাতায় এসে আইটি সেলের কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন।’’

(তথ্য সহায়তা সুজিষ্ণু মাহাতো)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy