ফাইল চিত্র।
নির্বাচন কমিশনের টনক নড়ার ছাপ ছিল। তবু বাংলায় নির্বাচনের শেষ পর্বেও কোভিড বিধি কার্যত শিকেয়।
রাজ্য সরকার, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন— সকলেই বহু নিয়মনীতির কথা বললেও, সংবাদমাধ্যম নিরন্তর প্রচার চালিয়ে গেলেও এক শ্রেণির মানুষের মনে তার যে গুরুত্ব নেই, বীরভূম থেকে মুর্শিদাবাদ, মালদহ থেকে কলকাতায় বৃহস্পতিবারের ভোটের ছবিতে তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। তবে অনেক ভোটারই যথাসাধ্য করোনা বিধি মেনে চলার চেষ্টা করেছেন, এটাই ভোটের যথাপ্রাপ্তি।
ভোটারদের মধ্যে তুলনামূলক ভাবে মাস্কের ব্যবহার দেখা গেলেও দূরত্ব-বিধির ক্ষেত্রে ছবিটা বিশেষ বদলায়নি। খাস কলকাতার মানিকতলা, বেলেঘাটা-সহ বহু কেন্দ্রে দূরত্ব-বিধি উড়িয়ে ভোটারদের লাইনে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে। পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল অসহায়। মানিকতলার বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবেকে বার বার সংবাদমাধ্যমের সামনে মাস্ক খুলে কথা বলতে দেখা গেল। ভিড়ের মধ্যেই থুতনিতে মাস্ক ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন বেলেঘাটার বিজেপি প্রার্থী কাশীনাথ বিশ্বাস। ভোট দিয়ে বেরিয়ে পলিথিনের গ্লাভস এ-দিকে সে-দিকে ছড়িয়ে ফেলতে দেখা গিয়েছে বেলেঘাটার একটি বুথে। মানিকতলা ও বেলেঘাটায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকেরা মাস্ক না-পরেই ভিড়ের মধ্যে পারস্পরিক তরজায় জড়িয়ে পড়েন।
জেলার ছবিটাও মিশ্র। মুর্শিদাবাদে ভোটের লাইনে দাঁড়ানো মুখে মাস্ক থাকলেও ভোটারেরা দাঁড়িয়েছেন পরস্পরের গা ঘেঁষে। তা দেখে মাঝেমধ্যেই লাঠিয়ে উঁচিয়ে তেড়ে যেতে দেখা যায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের। পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখতে অনুরোধ করেছেন তাঁরা। কোথাও জওয়ানদের ভয়ে কিছু ক্ষণের জন্য দূরত্ব বজায় রাখলেও পুরনো ছবি ফিরতে সময় লাগেনি বেশি। যা দেখে বহরমপুরের বিটি কলেজে দায়িত্বপ্রাপ্ত এক সিআইএসএফ জওয়ান লাইনে দাঁড়ানো ভোটারদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা তো শহরের মানুষ। করোনা সংক্রমণ রোধে দূরত্ব-বিধি বজায় রেখে দাঁড়ানোর জন্য এত বার আপনাদের বলতে হবে কেন?’’
বোলপুরে তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল যখন ভোট দিতে যান, সেই সময় কোভিড বিধির আদৌ মানা হয়নি বলে অভিযোগ। দুবরাজপুর, নলহাটি, ময়ূরেশ্বরেও মোটামুটি চিত্রটা ছিল একই। বাহিনীর জওয়ানেরা পারস্পরিক দূরত্ব-বিধি মানতে অনুরোধ করেছেন। কোথাও আবার চুন দিয়ে গোল করে দেওয়া হয়েছিল দাঁড়ানোর জায়গায়। কিন্তু ভিড়ের চাপে সেই সব ব্যবস্থা মানতে চাননি কেউ। সকলের লক্ষ্য ছিল সকাল-সকাল ভোট দেওয়া। ভোটগ্রহণ কেন্দ্রগুলির কাছে রাজনৈতিক দলগুলির যে-সব ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছিল, সেগুলিতে মাস্কের ব্যবহার কম ছিল, জটলা বেশি।
বীরভূমে ভোটের লাইনে কোথাও মাস্ক আর গ্লাভসের বাড়বাড়ন্ত দেখা গিয়েছে, কোথাও আবার সে-সবের বালাই ছিল না। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান আর আশাকর্মীরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মাস্ক বিলি করেছেন কোথাও। কোথাও আবার ভোটারেরাই গ্লাভস চেয়েছেন বৈদ্যুতিন ভোটযন্ত্রের (ইভিএম) বোতাম টিপতে গিয়ে। সিউড়ির চন্দ্রগতি স্কুলে ভোটারদের যে-লম্বা লাইন ছিল, সেখানে করোনার আতঙ্কে মাস্কহীন মুখ নজরে আসেনি একটিও। ভোট কেন্দ্রে থার্মাল স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা ছিল। সকলকে পরানো হয়েছে পলিথিন গ্লাভস।
একই চিত্র বীরভূম জেলা স্কুল, বেণীমাধব ইনস্টিটিউশন-সহ শহরের অধিকাংশ ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে। কোচবিহার জেলার শীতলখুচির সেই ১২৬ নম্বর বুথের পুনর্নির্বাচনে মাস্ক ছিল সকলেরই। দূরত্ব বজায় রাখার জন্য চিহ্নিত বৃত্তেই দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে ভোটদাতাদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy