ফাইল চিত্র।
দাসপুরের কুলটিকরি হাইস্কুল। দু’টি বুথে ভোটার প্রায় ১৬০০। তার মধ্যে ২০০ জনই স্বর্ণশিল্পী। তবে ভোট দিয়েছেন জনা কুড়ি। বাকিরা ভিন্ রাজ্যের কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফেরেননি।
বাসুদেবপুরের ১৪৪ ও ১৪৫ নম্বর দু’টি বুথে মোট ১৭০০ ভোটারের মধ্যে ৪৫০ জন স্বর্ণশিল্পী। এখানেও ভোট দিয়েছেন মাত্র ৫০-৬০ জন।
গোছাতি, সাহাচক, কামালপুর থেকে চাঁইপাট—দাসপুর বিধানসভা জুড়েই এক ছবি। পশ্চিম মেদিনীপুরের এই সোনা তালুকে ভোট মিটেছে ১ এপ্রিল। তবে বেশির ভাগ পরিযায়ী স্বর্ণশিল্পীই ঘরমুখো হননি। ফলে, ভোটের হারও কমেছে। পাশের দুই বিধানসভা ঘাটালে যেখানে প্রায় ৮০ শতাংশ এবং চন্দ্রকোনায় ৮৮ শতাংশ ভোট পড়েছে, সেখানে দাসপুরে ভোটদানের হার ৭৪ শতাংশ। ২০১৬ সালে এই দাসপুরেই ভোট পড়েছিল ৭৮ শতাংশ। দাসপুরে মোট ভোটার ২ লক্ষ ৯৮ হাজার। এর প্রায় ৩০ শতাংশই স্বর্ণশিল্পী ও তাদের পরিজন। এ বার সেই স্বর্ণশিল্পীদের অন্তত ৭০ ভাগ ফেরেননি। ফলে, বহু বুথেই ৬০ শতাংশের কম ভোট পড়েছে।
অথচ এই পরিযায়ীদের মন জয়ে চেষ্টার কসুর করেনি শাসক-বিরোধী দু’পক্ষই। দিল্লি, মহারাষ্ট্র, গুজরাত ও দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে কর্মরত এই সোনার কারিগরদের বেশির ভাগই গত বছর করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের জেরে কাজ হারিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন। বিপর্যস্ত পরিবারগুলির পাশে দাঁড়িয়েছিল রাজ্য সরকার। একশো দিনের কাজ দিয়ে সাময়িক সুরাহার বন্দোবস্ত হয়েছিল। তবে তাতে সাড়া মিলেছিল সামান্যই। ভোট-আবহে আবার সব দলই পরিযায়ী স্বর্ণশিল্পীদের মন জয়ে ঝাঁপিয়েছিল। প্রচারে উঠে এসেছিল নানা প্রতিশ্রুতি।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন দাসপুরে সোনার হাব, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বড় বাজার তৈরির কথা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বিজেপির প্রচারে এসে আশ্বাস দিয়েছিলেন, “বিজেপি ক্ষমতায় এলে এখানকার শিল্পীদের ভিন্ রাজ্যে পড়ে থাকতে হবে না। নিজের এলাকাতেই সবাই কাজ পাবেন।’’ বামেরা আবার পরিযায়ী শ্রমিকদের সংগঠন গড়ে স্বর্ণশিল্পীদের দাবিদাওয়া নিয়ে সরব হয়েছিল। এমনকি স্বর্ণশিল্পীদের ভোটের সময় বাড়ি ফেরার বন্দোবস্ত করে দেওয়ার আশ্বাসও শুনিয়েছিলেন বিভিন্ন দলের নেতা-নেত্রীরা।
তবে কি কোনও পক্ষের আশ্বাসেই ভরসা রাখা গেল না? দাসপুরের গোছাতির যুবক অসিত মাইতি ও বাদশামোড়ের অনুপ সামন্ত দিল্লির করোলবাগে থাকেন। ফোনে জানালেন, “পুজোর পরে টানা তিন মাস কাজ ছিল না। কিছু দিন আগে কাজের চাপ ফিরেছে। পেট আগে, না ভোট?” সাহাচকের সঞ্জয় মাঝি মুম্বই থেকে বললেন, “সব পক্ষই যোগাযোগ করেছিল। পঞ্চায়েত ভোটেও তো আমাদের বাড়ি ফেরাতে উদ্যোগী হয় সব দল। তবে করোনার জেরে আগের মতো রোজগার নেই। বাড়ি ফেরা মানেই তো ১০-১২ হাজার টাকার ধাক্কা।” এই ধাক্কা সামলে ভোটের টানে গুটি কয় ফিরেছিলেন। যেমন বাসুদেবপুরের মোহন মাইতি। চেন্নাই থেকে এসে ভোটটা দিয়ে গিয়েছেন। তবে এমন ভোটারের সংখ্যা নেহাতই হাতে গোনা। মুম্বইয়ের বেঙ্গলি স্বর্ণশিল্পী সেবা সঙ্ঘের সম্পাদক কালিদাস সিংহ রায় এবং দিল্লি স্বর্ণশিল্পী সংগঠনের পক্ষে কার্তিক ভৌমিকরা মানছেন, “আসলে ভোট দিতে বাড়ি ফেরার পরিস্থিতিতে শিল্পীরা নেই। বছর খানেক হল স্থায়ী রোজগার বন্ধ। অনিয়মিত কাজ। এখন ফের করোনা সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। ফলে, ভোট নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই।”
স্বর্ণশিল্পীদের ভোট না পড়ার প্রভাব যে ফলে পড়বে তা মানছে রাজনৈতিক মহল। দাসপুরে তৃণমূলের দুই ব্লক সভাপতি সুকুমার পাত্র ও আশিস হুতাইত বলছেন, “স্বর্ণশিল্পীদের ভোট যোগ হলে আমাদের জয়ের ব্যবধান বাড়ত।” পদ্ম-প্রার্থী প্রশান্ত বেরার আবার দাবি, “স্বর্ণশিল্পীদের পরিবারের সদস্যরা দু’হাত ভরে আমাদের ভোট দিয়েছেন। শিল্পীরা সবাই ফিরলে দলের আরও ভাল হত।” আর সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য রঞ্জিত পাল বলেন, “স্বর্ণশিল্পীদের একটা বড় অংশ আমাদের সমর্থক। ওঁরা না ফেরায় সেই ভোট হারালাম।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy