পাশে: চৌরঙ্গি বিধানসভা কেন্দ্রের একটি বুথে এক সন্ন্যাসিনীকে সাহায্য করছেন এক সিআরপিএফ জওয়ান। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুমন বল্লভ।
ভোটের ময়দানে যুযুধান সব শিবিরের অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগের মধ্যে বৃহস্পতিবার এন্টালি কেন্দ্রের ভোট পর্ব ছিল মোটের উপর শান্তিপূর্ণ। শাসক দলের বিরুদ্ধে এজেন্টদের বার করে দেওয়া, বুথ জ্যামিং, প্রক্সি ভোটের অভিযোগ উঠলেও বড়সড় কোনও গন্ডগোল ছাড়াই এ দিন ভোট মিটেছে এন্টালি কেন্দ্রে।
এ দিন সকাল ১১টাতেও ঠা ঠা রোদ মাথায় নিয়ে এন্টালি বিধানসভা কেন্দ্রের বুথে বুথে দেখা গিয়েছে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। তপসিয়ায় কে এম সি বিল্ডিং, বি আর অম্বেডকর স্কুল, ভূতনাথ স্কুল, জনকল্যাণ, জীবসেবা মিশন, লোরেটো কনভেন্ট, হোলি ক্রস-সহ কমবেশি সব বুথ চত্বরেই ঘুরে ফিরে একই ছবি দেখা যায়। ভোটারদের ঘেঁষাঘেঁষি ভিড়ে শিকেয় উঠেছিল দূরত্ব-বিধি। পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী মাঝেমধ্যে ভিড় সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও কিছু ক্ষণের মধ্যেই ফের কাছাকাছি চলে এসেছে ভিড়। বুথ চত্বরে দেদার পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে ভোটারদের ব্যবহার করা প্লাস্টিকের গ্লাভস। তাই প্রার্থীদের জয়-পরাজয় ছাপিয়ে শেষ পর্যন্ত সংক্রমণই সর্বেসর্বা হয়ে উঠবে কি না, সেই আশঙ্কাই বড় হয়েছে উঠেছে।
করোনা আবহে সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে মাস্ক ব্যবহারে জোর দেওয়া ছাড়াও ভোটারদের প্লাস্টিকের গ্লাভস এবং স্যানিটাইজ়ার দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্ত, নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে ফেলার বদলে রাস্তায়-ঘাটে, বুথ চত্বরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে ব্যবহৃত গ্লাভস।
প্রার্থীরা অবশ্য সে সব নিয়ে খুব একটা ভাবিত নন। বরং দুপুরের পরে শতাংশের বিচারে ভোটের হার কিছুটা কম আসায় চিন্তিত দেখিয়েছে তৃণমূল এবং বিজেপি প্রার্থীকে। লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে এন্টালি বিধানসভা কেন্দ্রে প্রায় ৪১ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিলেন তৃণমূলের প্রার্থী। কিন্তু মেরুকরণের হাওয়ায় গা ছাড়া মনোভাব দেখানোর সাহস পাননি তিনিও। সকাল থেকেই নাগাড়ে বুথে বুথে ঘুরেছেন তৃণমূল প্রার্থী স্বর্ণকমল সাহা। অন্য দিকে, পাল্টা লড়াই দিতে প্রায় কনভয় নিয়ে বুথ থেকে বুথে ছুটেছেন প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল। সকাল সাড়ে ৮টাতেই দলীয় এজেন্টকে বসতে না দেওয়ার অভিযোগে ছুটেছেন
জনকল্যাণ এবং জীবসেবা মিশন স্কুলে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে এজেন্ট বসতে না দেওয়ার অভিযোগে বিজেপি প্রার্থীকে সব চেয়ে বেশি সরব হতে দেখা গিয়েছে ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডে। এমনকি, কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে তাঁর গতিবিধি নজরে রাখার অভিযোগেও সরব হতে দেখা গিয়েছে প্রিয়াঙ্কাকে।
এ দিন বিকেল ৫টা নাগাদ যখন প্রিয়াঙ্কাকে ধরা গেল, তখনও জানালেন মধ্যাহ্নভোজনের সময় পাননি। কোনও মতে হাল্কা কিছু খাবার মুখে দিয়ে শেষ ল্যাপের ভোট ‘নিরুপদ্রব’ রাখতে ছুটছেন তিনি। জেতার প্রশ্নে কত টুকু আশাবাদী? জানতে চাইতেই বললেন, ‘‘অন্যবার যা করে, তা এই বারে পারেনি তৃণমূল। মানুষ ভোট দিয়েছেন। আমি জেতার প্রশ্নে একশো ভাগ আশাবাদী।’’
সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত আইএসএফ প্রার্থী মহম্মদ ইকবাল আলমকে তুলনায় কিছুটা নিষ্প্রভ দেখিয়েছে। তিনিও সাধ্যমত বুথে বুথে ঘুরেছেন। বাম এবং কংগ্রেসের কর্মীরা ভাগাভাগি করে তাঁর হয়ে ভোট পরিচালনা করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘মানুষ ভোট দিয়েছেন। তবে রাজ্যের শাসক দল অনেক বুথে আমাদের এজেন্ট বসতে না দিয়ে প্রক্সি ভোট দেওয়ার চেষ্টা করেছে।’’
শাসক দলের প্রার্থী স্বর্ণকমল সাহার আবার অভিযোগ, প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী বুথে বুথে ঘুরে অযথা হাঙ্গামা বাধিয়ে ভোটারদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন। শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করার চেষ্টা করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘বছরভর মানুষের পাশে থাকি। ভোটে জেতার জন্য অন্য কিছু করতে হয় না। মার্জিন বাড়বে বলেই আশা করছি।’’
শেষ পর্যন্ত শেষ হাসি কে হাসবেন, তা জানা যাবে ২ মে। তবে তার পরেওভোটারদের দুশ্চিন্তা কাটবে না। কারণ করোনার চোখরাঙানি ক্রমেই বাড়ছে শহরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy