নজরে: তৃণমূলের প্রার্থী ঘোষণার সময়ে পুরুলিয়া শহরের ইলেকট্রনিক জিনিসপত্রের দোকানে কর্মী ও ক্রেতারা। শুক্রবার। ছবি: সুজিত মাহাতো।
বাঁকুড়া জেলায় বারোর মধ্যে আট, পুরুলিয়ায় ন’য়ের মধ্যে চার। একুশের ভোটে দু’জেলার ২১টি আসনের মধ্যে ১২টিতেই নতুন মুখ আনল তৃণমূল।
কেন এমন পরিবর্তন— তাই হয়ে উঠেছে জেলা রাজনীতির ওঠাপড়ার নিয়মিত পর্যবেক্ষকদের আলোচনার বিষয়। বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলা পরিষদের দুই সভাধিপতি-সহ চার পদাধিকারীকেও কেন বিধানসভার ভোটে প্রার্থী করতে হল, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
বাঁকুড়া জেলা এ বারও তারকা প্রার্থী পাচ্ছে। বাঁকুড়া কেন্দ্রের জন্য তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেছে নিয়েছেন বাংলা চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বাঁকুড়া কেন্দ্রে লড়াই করে জয়ী তৃণমূল প্রার্থী মুনমুন সেন। তবে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বড়জোড়ায় তৃণমূলের তারকাপ্রার্থী সোহম চক্রবর্তী পরাজিত হন। দলের একাংশের খবর, বাঁকুড়া কেন্দ্রে দলীয় কোন্দল ঠেকাতেই সায়ন্তিকাকে বেছেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
রাজনীতির আঙিনায় একপ্রকার আন কোড়া ইন্দাসের প্রয়াত প্রাক্তন বিধায়ক গুরুপদ মেটের স্ত্রী রুনু মেটেও। গত নভেম্বরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন গুরুপদবাবু। এ বার ওই কেন্দ্রে রুনুদেবীকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। দলের একাংশের মতে, বিধায়ক হিসেবে এলাকায় গুরুপদবাবুর জনপ্রিয়তা ছিল। রুনুদেবী বলেন, “স্বামী রাজনীতি করলেও আমি কখনও সে সব নিয়ে মাথা ঘামাতাম না। তবে ‘দিদি’ আমাকে প্রার্থী করায় আমি খুশি। দল যেমন বলবে, সে ভাবেই কাজ করব।”
বাঁকুড়ার বাকি ছ’জন অবশ্য রাজনীতির পরিচিত মুখ। এ বার প্রার্থী হতে চান না বলে আগেই জানিয়েছিলেন তালড্যাংরার বিধায়ক কলকাতার সল্টলেকের বাসিন্দা সমীর চক্রবর্তী। দলের একটি অংশের দাবি, সমীরবাবুকে সব সময় এলাকায় পাওয়া যেত না বলে কিছু মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। তা ছাড়া, সমীরবাবু নিজেও যে এই কেন্দ্রে প্রার্থী হতে চাইছিলেন না, তা তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছিলেন। ওই কেন্দ্রের প্রার্থী হয়েছেন জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি তথা ‘মেন্টর’ অরূপ চক্রবর্তী।
জেলা পরিষদের বর্তমান সভাধিপতি মৃত্যুঞ্জয় মুর্মুকে রাইপুরের প্রার্থী করা হয়েছে। তিনি তিন বছর সভাধিপতি পদে থাকলেও তাঁর ভাবমূর্তি নিয়ে এখনও কোনও অভিযোগ সামনে আসেনি। জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি তথা তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান শুভাশিস বটব্যাল অবশ্য ২০১১ থেকে ছাতনায় প্রার্থী হচ্ছেন। সে বার জিতলেও পরের বার হেরে যান। ওই কেন্দ্রের জয়ী আরএসপি প্রার্থী ধীরেন্দ্রনাথ লায়েক তৃণমূল শিবিরে এলেও তিনি নন, শুভাশিসবাবুই দলের টিকিট পাচ্ছেন।
পুরুলিয়া কেন্দ্রে তেমনই সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়কেই প্রার্থী করা হয়েছে। ঘটনা হল, লোকসভা ভোটে পুরুলিয়ায় ‘বিপর্যয়ের’ পরে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ঘুরে দলের কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করে ফের দলের কাজে নামানোর চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন সুজয়বাবু। সম্প্রতি পুরুলিয়া শহরে দলের কিছু কর্মসূচিতে তাঁর সক্রিয়তা দেখেই তাঁর নাম এই কেন্দ্রের জন্য ভেসে ওঠে কর্মী-মহলে। যদিও পুরুলিয়া বিধানসভা কেন্দ্রের নেতৃত্বের একাংশ সুজয়বাবুকে প্রার্থী করা যাবে না বলে প্রকাশ্যে দাবিও জানান। এ দিন সুজয়বাবু বলেন, ‘‘এই কেন্দ্র উদ্ধারের জন্য দলের প্রতিটি কর্মীকে নিয়ে নির্বাচনে ঝাঁপাব।’’
ব্লক নেতৃত্ব থেকেও প্রার্থী তুলে আনা হয়েছে। বাঁকুড়া জেলায় শালতোড়া কেন্দ্রে এ বার নতুন প্রার্থী করা হয়েছে দলের শালতোড়া ব্লক তৃণমূল সভাপতি সন্তোষ মণ্ডলকে। বড়জোড়ারও প্রার্থী হয়েছেন সেখানকার ব্লক তৃণমূল সভাপতি অলক মুখোপাধ্যায়। তৃণমূলনেত্রী অলকবাবুর নাম ঘোষণা করতে গিয়ে তাঁকে ‘মাটির ছেলে’ বলে উল্লেখ করেছেন। অনেকের ব্যাখ্যা, শালতোড়া কেন্দ্রে দু’বারের দলীয় বিধায়ক স্বপন বাউরিকে নিয়ে ক্ষোভ ছিল বাসিন্দাদের একাংশের মধ্যে। তাই সেখানে প্রার্থী বদল আনা হয়েছে। তরুণ মুখ হিসেবে সাম্প্রতিক কালে দলীয় নানা কর্মসূচিতে উঠে আসা যুব তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভানেত্রী অর্চিতা বিদকে বিষ্ণুপুর কেন্দ্রের প্রার্থী করেছে তৃণমূল।
পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডিতেও প্রার্থী হয়েছেন দলের জেলা যুব সভাপতি সুশান্ত মাহাতো। জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতোর গড় বলে পরিচিত এই কেন্দ্র এ বার ছিনিয়ে আনবেন বলে দাবি করেন সুশান্ত।
জয়পুরে প্রার্থী করা হয়েছে আড়শা পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি উজ্জ্বল কুমারকে। বিদায়ী বিধায়কের হয়ে এলাকায় সাংগঠনিক কাজ করেছেন। তিনিও নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি। রঘুনাথপুরের প্রার্থী হয়েছেন ছাত্রাবস্থায় টিএমসিপির সক্রিয় নেতা হাজারি বাউরি। এখন দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক, প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক। দলের একটি সূত্রের দাবি, ওই কেন্দ্রে নতুন মুখ দরকার হয়ে পড়েছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy