জামালপুরের সভায় বল হাতে মুখ্যমন্ত্রী। নিজস্ব চিত্র।
সন্ত্রাসের প্রসঙ্গে সিপিএম ও বিজেপিকে এক সুতোয় বাঁধলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার পূর্ব বর্ধমানে তাঁর তৃতীয় সভাটি ছিল শক্তিগড়ের জোতরামে। সাম্প্রতিক সময়ে বর্ধমান শহরে বিজেপির ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে’র জেরে দলীয় কার্যালয়ে হামলা, আগুন লাগানোর ঘটনা হয়। সে প্রসঙ্গে তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বর্ধমানে প্রার্থিপদ নিয়ে আগুন লাগিয়েছিল মনে আছে? সন্ত্রাস করেছিল? এদের (বিজেপি) সন্ত্রাস দেখলে আমার সাঁইবাড়ি মনে পড়ে।’’ পাল্টা তৃণমূলকে বিঁধেছে ওই দু’দলও। বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূলই সন্ত্রাস চালাচ্ছে। সিপিএমের দাবি, তাদের দুই বিধায়ক খুনের জবাবও তৃণমূলকে দিতে হবে।
১৯৭০ সালের ১৭ মার্চ বর্ধমান শহরের প্রতাপেশ্বর শিবতলা লেনে দুই ভাই মলয় ও প্রণব সাঁই খুন হন। নিহত হন সেই সময়ের বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত ছাত্র জিতেন রায়ও। তিনি ওই বাড়িতে গৃহশিক্ষকতা করতেন। ওই পরিবারের দাবি, সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে, তারাপদ মুখোপাধ্যায় কমিশন গঠন করা হয়েছিল। কমিশন রিপোর্ট দিলেও বিচার মেলেনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেও প্রাক্তন বিচারপতি অরুণাভ বসুকে চেয়ারম্যান করে একটি কমিশন গঠন করা হয়। তিনি ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সাঁইবাড়ি ঘুরেও দেখেন। পরিবারের এক সদস্যের আক্ষেপ, “কত কিছুই তো হল! কিন্তু চোখের সামনে খুন হতে দেখা দুই ভাইয়ের খুনের বিচার হল না। একা বসে থাকলেই কান্না পায় এখনও।’’
সাঁইবাড়ির বড় ছেলে নবকুমার সাঁইও ১৯৭১ সালের ১২ জুন রায়নার আহ্লাদিপুরে খুন হয়েছিলেন। নিহতদের আর এক ভাই উদয় সাঁই নবম শ্রেণিতে পড়তেন তখন। তাঁকে পড়াতে এসেই জিতেনবাবু খুন হন বলে অভিযোগ। এ দিন সুকান্তনগরীর বাড়িতে বসে উদয়বাবুর অভিযোগ, “আমার মা মৃগনয়নাদেবী ছিলেন জমিদার বাড়ির মেয়ে। ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে তিনি রক্তাক্ত হন। ওই অবস্থাতে মায়ের মুখে রক্তমাখা ভাত ছুড়ে দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা।’’
সে স্মৃতিই কার্যত এ দিন উস্কে দেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রতিটা নির্বাচনী সভাতেই নন্দীগ্রাম থেকে মাথাভাঙা, আরামবাগ থেকে গোসাবায় বিজেপির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ করছেন মমতা। প্রার্থীদের উপরেও হামলার অভিযোগ করেছেন তিনি। এ দিন বর্ধমান উত্তর ও দক্ষিণ বিধানসভার দুই প্রার্থী নিশীথ মালিক ও খোকন দাসের সমর্থনে জোতরামের সভায় একেবারে স্থানীয় স্তরে বিজেপি কী ভাবে সন্ত্রাস করছে, সেই প্রসঙ্গ তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “ওরা জায়গায় জায়গায় বন্দুক নিয়ে ভয় দেখাচ্ছে। বর্ধমানে প্রার্থিপদ নিয়ে আগুন লাগিয়েছিল। এমন সন্ত্রাস করেছিল, সারা বর্ধমান শহর হেলে গিয়েছিল। এদের ভোট দেবেন?’’
বিজেপির কার্যালয়ে ওই দিন দু’পক্ষের মধ্যে ইটবৃষ্টি হয়। দলীয় দফতরে ভাঙচুরও হয়। দু’টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। রাজ্য কমিটি ন’জনকে শো-কজ়ও করেছিল। পরে এক বিক্ষুব্ধ নেতা-সহ তিন জনকে সাসপেন্ড করা হয়। ওই বিক্ষুব্ধ নেতা বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্রে ভোটে নির্দল প্রার্থী হতেই দল সাসপেনশন তুলে নেয়। বিজেপির দাবি, এখন সবাই ‘এক’। জেলা তৃণমূলের সভাপতি স্বপন দেবনাথের দাবি, ‘‘এখন মিলে গেলে কী হবে! শহরে কী ভাবে সন্ত্রাস হয়েছিল, সবাই দেখেছে।’’
তৃণমূলের দাবি উড়িয়ে বর্ধমান দক্ষিণ বিধানসভার বিজেপির আহ্বায়ক কল্লোল নন্দনের কটাক্ষ, “মুখ্যমন্ত্রী সত্যিই বিজেপি-আতঙ্কে ভুগছেন। তা না হলে সাঁইবাড়ির সঙ্গে বিজেপিকে এক আসনে বসান! আমাদের কর্মীদের খুন হতে হয়েছে, সে সব জবাবও মুখ্যমন্ত্রীকে দিতে হবে।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়েরও দাবি, “আমাদের প্রার্থী পৃথা তায়ের বাবা, বিধায়ক প্রদীপ তা ও দলের প্রবীন নেতা কমল গায়েনকে নৃশংস ভাবে খুন হতে হয়েছিল তৃণমূলের হাতে। তার জবাব মুখ্যমন্ত্রীকে দিতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy