Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
West Bengal Assembly Election 2021

Bengal Polls: প্রতিশ্রুতি ঢালাও, ভোটারের সংশয় তবু দূর হচ্ছে কি

কাশীপুর-বেলগাছিয়া কেন্দ্রের রাজনৈতিক হাল-হকিকত নিয়ে কেউই মুখ খুলতে চাইছেন না।

অতীন ঘোষ, প্রতীপ দাশগুপ্ত ও শিবাজী সিংহ রায়

অতীন ঘোষ, প্রতীপ দাশগুপ্ত ও শিবাজী সিংহ রায়

চন্দন বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২১ ০৭:২২
Share: Save:

‘‘বয়স তো কম হল না! অনেক ভোট তো দেখলাম। কিন্তু এ বারের মতো ভোট আমি অন্তত কোনও দিন দেখিনি।’’ চায়ের দোকানে বসে এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে গেলেন বছর সত্তরের বৃদ্ধ। কিন্তু কেন? প্রশ্ন করতেই তিনি বলে ওঠেন, ‘‘সবই তো আপনি দেখছেন, বুঝছেন! তার পরেও আমার কাছে জানতে চাইছেন!’’ বৃদ্ধের কথা শেষ হতে না হতেই চায়ের দোকানি উত্তর দিলেন, ‘‘আসলে দেখছেন না, ভোটের আগে লোকজন কেমন চুপ হয়ে গিয়েছে। কেউই কিছু আলোচনা করছে না।’’

চুপই বটে! কাশীপুর-বেলগাছিয়া কেন্দ্রের রাজনৈতিক হাল-হকিকত নিয়ে কেউই মুখ খুলতে চাইছেন না। কিছু জানতে চাইলেই উত্তর মিলছে, ‘‘ভোট তো দেরি আছে এখনও।’’ কেউ আবার বলছেন, ‘‘আমি রাজনীতি নিয়ে কিছু বলব না।’’ তবে সাধারণ মানুষ মুখ খুলতে না চাইলেও মুখ খুলছেন তৃণমূল, বাম ও বিজেপি-র প্রার্থীরা।

উত্তর কলকাতার কাশীপুর-বেলগাছিয়া কেন্দ্রে তিন বারের বিধায়ক মালা সাহাকে এ বার প্রার্থী করেনি তৃণমূল। তাঁর বদলে কলকাতা পুরসভার ‘পরিচিত মুখ’ অতীন ঘোষের উপরেই আস্থা রেখেছে শাসকদল। এটা কি একটা বাড়তি চাপ? প্রশ্ন শুনে অতীন বললেন, ‘‘কোনও বাড়তি চাপ নয়। মানুষের জন্য আমি কাজ করেছি। মানুষ আমাকে সারা বছর পুরসভার নানা কাজে কাছে পেয়েছেন। মানুষের প্রতি আমার বিশ্বাস আছে। আর সেই বিশ্বাস থেকেই আমি বলছি, কোনও কিছুই চাপের নয়।’’

অন্য দিকে, বঙ্গে ‘বিজেপি হাওয়া’ এবং ‘অনুন্নয়ন’ই প্রচারে হাতিয়ার কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে গিয়ে টিকিট পাওয়া শিবাজী সিংহ রায়ের। কাশীপুর-বেলগাছিয়া কেন্দ্রে গেরুয়া শিবির শেষ মুহূর্তে শিবাজীকে প্রার্থী করলেও ‘তরুণ-কাঁটা’ তাঁর পিছু ছাড়ছে না। এই কেন্দ্রে মালা সাহাকে তৃণমূল প্রার্থী না করতেই আসরে নেমেছিল বিজেপি। মালার স্বামী তরুণ সাহাকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয় বিজেপির তরফে। কিন্তু তরুণ তৎক্ষণাৎ জানিয়ে দেন, আর যা-ই হোক, তিনি বিজেপির প্রার্থী হবেন না। মুখ পোড়ে বিজেপির। তবে এ সব নিয়ে ভাবতে রাজি নন শিবাজী। তাঁর কথায়, ‘‘উন্নয়ন কোথায়? বহু জায়গায় পানীয় জলের ও নিকাশির সমস্যা রয়েছে। টালা থেকে মাত্র দু’কিলোমিটার দূরের বস্তি এলাকায় এখনও পানীয় জল পৌঁছয়নি। কেন এটা হবে? কেনই বা গঙ্গার ঘাটকে বারাণসীর মতো করা হবে না?’’ ইন্দিরা ঘাটে বসেই কথাগুলো বলে গেলেন বিজেপি প্রার্থী। প্রতিশ্রুতি দিলেন, ‘‘জিতে এলে কাশীপুরের গঙ্গার ঘাটকে বারাণসীর মতো সাজিয়ে তুলব।’’

কিন্তু কর্মসংস্থান? এ বারে তাঁর উত্তর, ‘‘বন্ধ কল-কারখানাগুলিকে আবার পুনরুজ্জীবিত করা হবে।’’ এই এলাকায় হিন্দিভাষী বাসিন্দাদের ভোট একটা বড় ভরসা বিজেপি প্রার্থীর। তবে তা হয়তো জেতার পক্ষে যথেষ্ট না-ও হতে পারে। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে বিজেপির থেকে ১৩ হাজারেরও বেশি ভোটে এগিয়ে ছিল তৃণমূল।

প্রার্থীরা সকলেই ঢালাও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন বটে, কিন্তু সে সবে বিশ্বাস নেই বেলগাছিয়া ডিপো সংলগ্ন একটি মোবাইলের দোকানে বসা যুবকের। বছর পঁচিশের ওই যুবক বললেন, ‘‘নেতারা তো ভোটের আগে কত প্রতিশ্রুতিই দেবেন! এই দেখুন, পড়াশোনা শিখে মোবাইলের দোকান চালাতে হচ্ছে। ভোট মানেই রাজা হওয়ার লড়াই।’’

আর এই কর্মসংস্থানের সমস্যাকে সামনে রেখেই ভোটের ময়দানে নেমেছেন সিপিএম প্রার্থী প্রতীপ দাশগুপ্ত। এলাকায় তিনি ‘ভাল ছেলে’ বলেই পরিচিত। অন্তত চায়ের দোকানের আলোচনায় তেমনটাই বললেন দেবু বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তি। কিন্তু লড়াই যে প্রধানত দুই ফুলের মধ্যে, সেটাও তিনি আকারে-ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিলেন।

লড়াই যে কঠিন, তা নিজেও জানেন প্রতীপ। তাই তো তিনি রোড শো বা মিছিলের পরিবর্তে দোরে দোরে প্রচারেই বেশি জোর দিয়েছেন। প্রতীপ বললেন, ‘‘ভোটের এখনও কয়েক দিন দেরি। তবে আমার প্রতিটি বাড়ি ঘোরা হয়ে গিয়েছে। আসলে কী জানেন, এটা গণতন্ত্র ফেরানোর লড়াই। বিগত কয়েকটি নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেননি। গণতন্ত্রের প্রতি তাঁদের আস্থা ফিরিয়ে দিতেই লড়ছি। এ ছাড়া, কর্মসংস্থানের মতো সমস্যা তো আছেই। এই লড়াই আমরা জিতব।’’ কিন্তু ভগ্ন সংগঠন নিয়ে সেটা কি সম্ভব! প্রশ্ন কিন্তু থাকছেই। বরং নিচুতলায় কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, দলের হারানো ভোট ফেরানোর কথা।

শাসকদলের এক বিদায়ী কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে চাপা ক্ষোভ রয়েছে এলাকায়। আছে কাটমানি, বেহাল নিকাশির মতো বিষয়ও। তার পাশাপাশি উদ্বোধন হওয়া ‘মডেল বস্তি’ নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। যদিও নিকাশি প্রসঙ্গে অতীনবাবু বলছেন, ‘‘ক্ষমতায় এলে আমার প্রথম কাজই হবে, নিকাশি ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ।’’ তবে বিরোধীরা পাল্টা প্রশ্ন তুলছেন, ‘‘এত দিন কেন হল না?’’ এই প্রশ্নের যদিও জবাব নেই কারও কাছে।
আরও কিছু প্রশ্নের জবাব খুঁজছেন এলাকার মানুষ। ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েও হয়তো তাঁরা উত্তর খুঁজবেন। আর প্রার্থীরা তাঁদের সব প্রশ্নের উত্তর মেলাবেন ২ মে ভোটের ফলের পরে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy