Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
labourer

bengal polls: লকডাউনে যাঁরা পাশে, শ্রমিকের ভোট তাঁদেরই

বাংলায় নদিয়া অন্যতম পরিযায়ী শ্রমিক অধ্যুষিত জেলা। উত্তরে সাতটি ব্লকেই পরিযায়ী শ্রমিকদের আধিক্য।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

সন্দীপ পাল
শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২১ ০৬:৪২
Share: Save:

কেউ লকডাউনে পাশে পেয়েছেন বামেদের। কেউ আবার পেয়েছেন দিদির সরকারকে। কেউ আর কাজে ফিরতে পারেননি ভিন্ রাজ্যে, কেউ আবার গিয়েও ফিরেছেন ভোট দিতে। কালীগঞ্জের সিরাজুল শেখ হোন বা পলাশির স্বাধীন দাস, সকলেই ঋণী কারও না কারও কাছে। রাজনৈতিক দলগুলিরও প্রত্যাশা রয়েছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের ভোট বিশেষ মাত্রা যোগ করতে চলেছে এ বারের নির্বাচন।

বাংলায় নদিয়া অন্যতম পরিযায়ী শ্রমিক অধ্যুষিত জেলা। উত্তরে সাতটি ব্লকেই পরিযায়ী শ্রমিকদের আধিক্য। এঁদের বেশির ভাগ রাজমিস্ত্রির কাজে যুক্ত। এ ছাড়াও সোনারুপোর কাজ করেন কেউ, কেউ হোটেল বয়, আবার কাশ্মীরে সেলুনের কাজ শিখতেও যান অনেকে। বহু শিক্ষিত যুবক-যুবতী ইঞ্জিনিয়ার বা তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী হিসেবে মূলত বেঙ্গালুরুতে কর্মরত। লকডাউনের পর অনেকেই কাজের জায়গায় ফিরে গিয়েছেন, অনেকেই নিজের জায়গায় থেকেই ছোটখাটো কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। প্রযুক্তি কর্মীরা অনেকেই বাড়ি থেকে কাজ করছেন এখনও।

লকডাউন সবচেয়ে বেশি যাঁদের কাছে অভিশাপ হয়ে এসেছিল, তাঁরা মূলত কায়িক শ্রম-নির্ভর পরিযায়ী শ্রমিকেরা। গত বছর ২৪ মার্চ যখন হঠাৎ করে সারা দেশে লকডাউন ঘোষণা হয়, সেই সময়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটেয়ে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। বাড়ি ফেরার সব পথ বন্ধ। যা খাবার বা নগদ টাকা মজুত ছিল তা ফুরিয়ে যেতে পেটেও টান পড়তে শুরু করে। কাজ দেওয়ার সংস্থাগুলিও ক্রমশ শ্রমিকদের দায়িত্ব নেওয়া ছেড়ে দিতে থাকে। ঘরে ফেরার ট্রেন নিয়েও কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে দড়ি টানাটানি।

শ্রমিকেরা জানাচ্ছেন, ঘরে ফেরার অভিজ্ঞতাও ছিল কষ্টের। কেউ কেউ ট্রেন পেলেও অনেকে কয়েকশো কিলোমিটার পথ হেঁটে এসেছেন, ধার-দেনা করে গাড়ি ভাড়া করে ফিরেছেন অনেকে। গ্রামে ফিরে আবার আর এক সমস্যা— নিভৃতবাস। কোথাও অপরিচ্ছন্ন স্কুলবাড়ি, কোথাও খাবার জলের সমস্যা। হাসপাতালে যেতে অ্যাম্বুল্যান্স পাওয়া নিয়েও সমস্যায় পড়তে হয়েছে।

পরিযায়ী শ্রমিকদের একটি বড় অংশ বলছেন, সেই সময়ে তাঁরা পাশে পেয়েছেন মূলত বামেদের। ওই সময়ে মূলত বামপন্থী শ্রমিক সংগঠনের উদ্যোগেই গড়ে তোলা হয় পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রথম সংগঠন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল মাইগ্র্যান্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’। তারা নানা সময়ে নানা দফতরে নানা দাবিতে স্মারকলিপি দেয়। পলাশিতে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে প্রথম জেলা সম্মেলনও হয়। সংগঠনের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর অন্যতম সিপিএমের পরিচিত নেতা দেবাশিস আচার্য। কমিটিতে রয়েছেন প্রাক্তন সাংসদ ও এ বার হরিণঘাটার সিপিএম প্রার্থী অলকেশ দাস, সিটুর জেলা কমিটির সম্পাদক এবং পলাশিপাড়ার সিপিএম প্রার্থী এস এম সাদি। যে পরিযায়ী শ্রমিকেরা এখনও অন্য রাজ্যে কাজের জায়গায় ফিরে যাননি বা ভোটের আগে গ্রামে ফিরে এসেছেন, অনেক জায়গায় তাঁদের সঙ্গে নিয়েই প্রচারে নামছে বামেরা। সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার আবেদন জানিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি বাড়ি চিঠিও পাঠানো হচ্ছে।

পরিযায়ী শ্রমিকেরাই জানাচ্ছেন, পঞ্চায়েত হোক বা লোকসভা নির্বাচন, সব ভোটেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাঁদের বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করে ভোট পাওয়ার চেষ্টা করে। ভোট মিটলেই তাঁদের কর্মস্থলে ফেরার দায়িত্বও তারাই নেয়। কিন্তু এ বার যাওয়া-আসার পারানির চেয়েও বড় হয়ে দাঁড়াতে লকডাউনের অভিজ্ঞতা।

কালীগঞ্জের রাধাকান্তপুরের শ্রমিক সিরাজুল শেখ বলছেন, “সে সব দিনের কথা ভাবলেই চোখে জল চলে আসে। ওই সময়ে কোনও সরকারকে পাশে পাইনি। গ্রামে ফেরার পরেও কেউ দেখা করতে আসেনি। আমরা স্কুলে কোয়ারেন্টিন থাকার সময়ে গ্রামের কিছু ছেলে রান্না করে খাবার দিয়ে আসত। ওরা শুনছি মোর্চার হয়ে ভোটে খাটছে, তাই আমি আর আমার পরিবার ওদের দলকেই ভোট দেব।”

পলাশিপাড়া কেন্দ্রের অতুলপুরের পরিযায়ী শ্রমিক ভোলা দফাদার বলছেন, “ভোট এসেছে বলেই বাড়ি এসেছি আরব থেকে। লকডাউনের পর বাড়ি এসেছিলাম, পরে কাজের জায়গায় ফিরে যাই। বাম রাজনৈতিক দলই নিয়ে এসেছে। লকডাউনের সময় ওদের পাশে পেয়েছি, তাই ওদের সঙ্গেই আছি আমরা।” পলাশির পরিযায়ী শ্রমিক স্বাধীন দাসের কথায়, “লকডাউনের সময়ে যারা আমাদের পাশে ছিল আমরাও এই ভোটের সময়ে তাদের পাশেই থাকব। সকলেই জানে লকডাউনের সময়ে কারা আমাদের পাশে ছিল।”

তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী, নবদ্বীপের বাসিন্দা শুভঙ্কর অধিকারী বলেন, “আমি যখন বেঙ্গালুরুতে আটকে পড়েছিলাম, সিটুর কর্মীরা আমাদের বাড়ি ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করেছিল। বাড়ি ফিরেও আমি ওদেরই সাহায্য পাই। এখন ভোটের দিনে ওদের সঙ্গে না থেকে কোথায় যাব?” আবার পাগলচণ্ডী গ্রামের কাবিল আলি বলেন, “রাজ্য সরকার আমাদের অনেক সাহায্য করেছে। খাবার দেওয়া থেকে শুরু করে টাকা সব পেয়েছি। তাই আমরা বর্তমান সরকারকে চাই।”

আবার এমন অনেক পরিযায়ী শ্রমিক রয়েছেন যাঁরা ভোটে সমর্থন নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি। তবে লকডাউনের কঠিন দিনগুলোয় বিজেপির সাহায্য পেয়েছেন, এমন এক জন পরি‌যায়ীর সঙ্গেও যোগযোগ করা যায়নি।

মাইগ্র্যান্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন নদিয়া জেলা সম্পাদক, সিপিএম নেতা দেবাশিস আচার্যের দাবি, “লকডাউনের সময়ে তৃণমূল বা বিজেপি, কেউ ওঁদের সাহায্য করেনি অথচ মানুয়ের করের টাকায় প্রতিদিন প্রধানমন্ত্রী আর মুখ্যমন্ত্রীর বিজ্ঞাপন আর বক্তৃতাবাজি চলেছে। এক মাত্র সংযুক্ত মোর্চা ঘোষণা করেছে, তাদের সরকার হলে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য পৃথক দফতর করে সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা করবে।”

নদিয়া জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র বাণীকুমার রায় অবশ্য দাবি করছেন, “লকডাউনের সময় পরিযায়ীরা রাজ্য সরকারের যে সাহায্য পেয়েছেন, তাতে ওঁদের ভোট পাওয়ার ক্ষেত্রে আমরা আশাবাদী। ইতিমধ্যে তাঁরা বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন, আমাদের সঙ্গে যোগাযোগও রাখছেন।”

আর বিজেপির উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অর্জুন বিশ্বাসের দাবি, “পরিযায়ী শ্রমিকদের ভোট আমরাই পাব। এ রাজ্যে আমরা সরকার গড়তে পারলে এমন কর্মসংস্থান হবে যাতে পশ্চিমবঙ্গ থেকে কাউকে আর কাজের খোঁজে বাইরে যেতে হবে না। পরিযায়ী শ্রমিক বলেই কিছু থাকবে না।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy