বিশ্রাম: প্রচারের ফাঁকে পার্টি অফিসে কাঞ্চন মল্লিক। নিজস্ব চিত্র।
পিসি কই, পিসি ?
উত্তরপাড়ার মাখলা রাইস মিল লাগোয়া পাড়ায় ভোটপ্রার্থীকে দেখেই ‘পিসির’ খোঁজ। নীল পাঞ্জাবি, জিনসের কাঞ্চন মল্লিক পাল্টা রসিকতা করছেন, কেন পিসেমশাইকে বুঝি পছন্দ হল না! ‘পিসি’ শব্দের অন্য মানে এ তল্লাটে। সরু মফস্সলি গলিতে টোটোয় দাঁড়িয়ে ঘুরতে ঘুরতে কাঞ্চন এক ফাঁকে অস্ফুটে বলেন, “দেখছেন কাণ্ড! জীবনভর কত পার্ট করলাম, আর লোকে ঘুরেফিরে ‘দিদি নাম্বার ওয়ান’ শোয়ের পিসিবেশী কাঞ্চনকেই খোঁজে।”
মানিকতলা, লোহারপাড়া, ঝিলপাড়া, সাহেববাগান থেকে সৃষ্টি অ্যাপার্টমেন্ট— তাঁকে দেখেই খিলখিলিয়ে হাসি! পথে সিপিএমের পার্টি অফিস থেকে জুলজুলে চোখে তাকানো যুবক, বিজেপি-র প্রচারগাড়ির প্রবীণ চালকও চোখাচোখি হতেই হেসে ফেলছেন। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় একদা বলেছিলেন, ‘আমার মরার পরেও কি লোকে খালি হাসবে!’ দুপুরে উত্তরপাড়ার পুর কোঅর্ডিনেটর ইন্দ্রজিৎ ঘোষের বাড়িতে খেতে এসেছেন কাঞ্চন। সেখানেও রোগা ছেলেটার পাতে ফিশফ্রাই দিয়ে গৃহকর্ত্রী ব্যাকুল, কই এখনও তো একটুও হাসালে না! কাঞ্চনের বিশ্বাস, উত্তরপাড়ার বিদায়ী বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল ‘দলবদলু’ হয়ে প্রতিপক্ষ হতে শাসক-শিবিরে থাকার চাপ অনেকটাই হালকা। কিন্তু যে কোনও ‘সিচুয়েশনে’, রোদে, ঝড়ে, খিদেয়, তেষ্টায় হাসি ও হাসানোর ভার বইতে হচ্ছে।
“তবে বিজেপি-র মতো একটা ভয়ঙ্কর দেশবিরোধী শক্তিকে নিভিয়ে দিতে হাসির অস্ত্রই ঢের কাজের! ওরা যা রামগরুড়ের ছানা, হাসি আবার ওদের মোটে সহ্য হয় না।” খেতে খেতেই বলেন কাঞ্চন। তাঁর প্রচারপত্রেও দাঙ্গাবাজি, কান্নাকাটি ভুলে সবাইকে নিয়ে হাসতে হাসতে বাঁচার অঙ্গীকার। কোন্নগরের জোড়াপুকুর, উত্তরপাড়ার কাঁঠালপাড়া, কানাইপুরেও স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে ‘মমতার মুখ’, ‘চিত্র মঞ্চের অভিনেতা’ বিজেপিকে ঠুকছেন। “আমার পুরনো রোগা পটকা চেহারার ছবি দিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলে অসভ্যতা হচ্ছে, শুনুন আমি হচ্ছি সেই দেশলাই কাঠি, যার মাথায় বারুদ থাকে। আমি টুথপিক! কিন্তু বিদ্বেষ ও অরাজকতার নোংরাগুলো খুবলে উপড়ে ফেলতে এসেছি। বাইরে রোগা হলেও আমি ভেতরে দারোগা!”
মোড়কটা হাসির! তবে প্রচারপত্রে সামান্য কারখানা কর্মী বাবার বড় ছেলের সেলসম্যানগিরি, পার্লারের ম্যানেজারি করে জনপ্রিয় অভিনেতা হওয়ার জীবন-সংগ্রাম। হাসির আড়ালের গল্প। একদা সক্রিয় বাম-সমর্থক বলে পরিচিত অভিনেতা আদতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাড়ার লোক। তাঁর ভাই বাবুনের বন্ধু। পরিবর্তনের পরেও দিদির ঘনিষ্ঠ বলয়ে ঘেঁষেননি। এসেছেন এমন একটা সময় যখন দিদিকে ছাড়ার প্রবণতাও জোরালো। কাঞ্চন স্পষ্টভাষী, “আমি বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে এসেছি। এবং দিদিই বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ের মুখ! তাই ভোটে লড়তে না বলিনি।” সময়টা যে হাসিখেলার নয়, তাও টের পাচ্ছেন কাঞ্চন। নাট্য দলে প্রায় এক দশকের সেক্রেটারি থাকার অভিজ্ঞতাও দলের কর্মীদের সামলাতে কাজে আসছে। কাঞ্চন বলেছেন, “ হ্যাঁ একা মমতাদি ছাড়া দলে আমরা সকলেই ল্যাম্পপোস্ট। সেই আসল গাছটা থাকলে আমরাও থাকব!”
রোড শো শেষে কোন্নগরের নতুন পার্টি অফিসে দলের ছেলেদের সঙ্গে ভাঁড়ের চা-যোগে খোশগল্প। সবার চায়ের ভাঁড় তিনিই হাতে নিয়ে ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিয়ে এলেন। আট বছরের পুত্র, স্ত্রীকে কলকাতায় রেখে ব্যানার্জিপাড়ায় বাল্যবন্ধু দীপাঞ্জন মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে থাকছেন। সকালে দই-চিঁড়ে, ডিম-টোস্ট যা পাচ্ছেন খান। দুপুরে দলের কোনও নেতার বাড়ি, যেমন ব্যবস্থা। রাতে পটল, কাঁচকলাযোগে মাছের ঝোল। তবে এই গরমে পান্তাভাতের প্রেমে পড়েছেন। খাদ্য প্রসঙ্গেই ফের বিজেপি-র কথা! “আমি রোগা ছেলে! মানুষ কী খাবে, তা নিয়ে যারা খুনোখুনি করে, তাদের বিরুদ্ধে লড়বই!”
‘কাঞ্চনদার এনার্জি’তে স্থানীয় নেতারা মুগ্ধ। টোটোয় না-উঠে ১০-১২ কিলোমিটার হাঁটাতেই তাঁর উৎসাহ। তবে কোভিড নিয়ে নির্বাচন কমিশনের হুঁশিয়ারিতে একটু রাশ টানতে হচ্ছে। দুপুর পর্যন্ত রোডশো শেষে গল্পের ফাঁকে হঠাৎ ঘড়ি দেখে তড়াক করে লাফিয়ে ওঠেন কাঞ্চন! স্বরচিত সুর ভাঁজেন, “পার্টি অফিসে চান করব, ভাল পার্টিকমী হব!” সবার হাসি! শাসক দল আত্মবিশ্বাসী, উত্তরপাড়ায় এই হাসিই শেষ কথা বলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy