Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
ভোট-প্রচার প্রায় শেষ। দু’দফার ভোট সাঙ্গ করে ফল বেরোতে বাকি ঠিক এক সপ্তাহ। মুখোমুখি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়
Abhishek Banerjee

Bengal Election: ‘যে গাছের আম মিষ্টি, তাতেই লোকে ঢিল মারে’

প্রশ্ন: আজ সপ্তম দফার ভোট। আর একটি দফা বাকি। ফল কী বুঝছেন? অভিষেক: যা বুঝেছি, ষষ্ঠ দফার মধ্যেই আমাদের তৃণমূল কংগ্রেস সরকার গড়ার প্রয়োজনীয় ১৪৮ আসন ছাড়িয়ে গিয়েছে। এখন শুধু আসন সংখ্যা বাড়ানো। প্রশ্ন: শেষ পর্যন্ত কত হবে মনে হয়? অভিষেক: দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতা থাকবে। কোনও দ্বিধা নেই আমার। সব জেলায় ঘুরে প্রচার করেছি। প্রচারে বিধিনিষেধের আগে পর্যন্ত ১৫০টির মতো সভা ও রোড শো করেছি। তাই এটা বলতে পারছি। প্রশ্ন: এ বার আপনি একটু বেশিই ঘুরলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাদ দিলে আপনিই এ বার প্রচারে সবচেয়ে অগ্রণী। এটা কি কোনও সচেতন সিদ্ধান্ত? অভিষেক: সচেতন শব্দটা বলতে চাই না। বরং বলতে পারি, এটা দলের সিদ্ধান্ত এবং নির্দেশ। অন্যবারও করি। এ বার কিছুটা বেশি করতে হল।

সাক্ষাৎকারের সময়ে বিভিন্ন মেজাজে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

সাক্ষাৎকারের সময়ে বিভিন্ন মেজাজে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

দেবাশিস ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২১ ০৫:২০
Share: Save:

প্রশ্ন: আজ সপ্তম দফার ভোট। আর একটি দফা বাকি। ফল কী বুঝছেন?

অভিষেক: যা বুঝেছি, ষষ্ঠ দফার মধ্যেই আমাদের তৃণমূল কংগ্রেস সরকার গড়ার প্রয়োজনীয় ১৪৮ আসন ছাড়িয়ে গিয়েছে। এখন শুধু আসন সংখ্যা বাড়ানো।

প্রশ্ন: শেষ পর্যন্ত কত হবে মনে হয়?

অভিষেক: দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতা থাকবে। কোনও দ্বিধা নেই আমার। সব জেলায় ঘুরে প্রচার করেছি। প্রচারে বিধিনিষেধের আগে পর্যন্ত ১৫০টির মতো সভা ও রোড শো করেছি। তাই এটা বলতে পারছি।

প্রশ্ন: এ বার আপনি একটু বেশিই ঘুরলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাদ দিলে আপনিই এ বার প্রচারে সবচেয়ে অগ্রণী। এটা কি কোনও সচেতন সিদ্ধান্ত?

অভিষেক: সচেতন শব্দটা বলতে চাই না। বরং বলতে পারি, এটা দলের সিদ্ধান্ত এবং নির্দেশ। অন্যবারও করি। এ বার কিছুটা বেশি করতে হল।

প্রশ্ন: কেন? এ বার লড়াই বেশি কঠিন? বেশি চ্যালেঞ্জ?

অভিষেক: কোনও ভোট চ্যালেঞ্জহীন হয় না। সব লড়াই টাফ। প্রতিপক্ষকে দুর্বল ভাবব কেন? তবে বিজেপি-র থেকেও বড় চ্যালেঞ্জ তাদের হাতে থাকা বিভিন্ন কেন্দ্রীয় এজেন্সি এবং নির্বাচন কমিশন। ওই একটি রাজনৈতিক দলের সুবিধা করে দিতে মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এই রকম মারাত্মক কোভিড-পরিস্থিতি সত্ত্বেও ভোটের দফা কমানোর জন্য মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব কমিশন কানে তুলল না। কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা তো মানুষ মারার। শীতলখুচিতে সবাই কী দেখলেন! এর দায়ও কমিশন এড়াতে পারে না। তা ছাড়া সিবিআই-ইডি ইত্যাদি তো আছেই। ওদের এই সব বৈমাতৃসুলভ আচরণই এ বার চ্যালেঞ্জ।

প্রশ্ন: মমতার দলে ভোট কুশলী আনতে হল কেন?

অভিষেক: এখন নতুন প্রযুক্তির দিন। আমাদের নিজেদের মেশিনারির সঙ্গে একটি বাড়তি সংযোজনে ক্ষতি নেই। তাই প্রশান্ত কিশোরকে আনা হল।

প্রশ্ন: অভিযোগ, অভিষেক-পিকের কাছে অপমানিত হওয়ার কারণেই তৃণমূলে ভাঙন ধরল।

অভিষেক: বিজেপি-র আশ্রয়ে গেলেন কারা? সিবিআই-ইডির নিশানায় থাকা লোকজন। যদি অসম্মানিত হয়ে থাকেন, এত দিন বসেছিলেন কেন?

প্রশ্ন: প্রচারে আগাগোড়া আপনাকে তোলাবাজ এবং চোর বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আপনাকে আক্রমণের নিশানা করেছেন। কী বলবেন?

অভিষেক: কেউ যদি ভাবে আমাকে ‘চোর’ বলে প্রচার করলে তাদের রাজনৈতিক ফায়দা হবে, তবে করুক!

প্রশ্ন: কিছু লোক তো ওই অভিযোগ বিশ্বাসও করতে পারেন। কী বলেন?

অভিষেক: অনেকেই বিশ্বাস করতে পারেন। কিন্তু শেষ কথা বলবে গণদেবতা। সেটা ভোটের ফলেই বুঝে যাবেন ওঁরা। আমি তো মোদী ও শাহকে বারবার প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ করেছি। কিন্তু আজও সরাসরি আমার নাম নেওয়ার সাহস ওঁরা দেখাননি। ভাইপো বলে পাশ কাটান। আগেও বলেছি, মোদী-শাহের কাছে জানতে চাই—ওঁদের কোনও তদন্তকারী এজেন্সি এখনও আমার তোলাবাজির প্রমাণ দিতে পারল না কেন? প্রমাণ দিক। আমার কোনও কাজ কোথাও কালিমালিপ্ত বলে প্রমাণিত হলে, আমি ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়াতেও প্রস্তুত।

প্রশ্ন: ক্রমাগত নিশানা করে কিন্তু মোদী-শাহেরা আপনাকে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণও করে তুলেছেন। মানেন?

অভিষেক: কথায় বলে, যে গাছের আম মিষ্টি তাতেই লোকে ঢিল মারে। হয়তো আমার মধ্যে সেই রাজনৈতিক দৃঢ়তা, সেই পোটেনশিয়াল (ক্ষমতা) তাঁরা দেখেছেন। ওঁরা গুরুজন। এটা তো আমার কাছে আশীর্বাদস্বরূপ।

প্রশ্ন: আপনি তরুণ রাজনীতিক। এ ভাবে চোর-তোলাবাজ শুনতে শুনতে গুরুত্বপূর্ণ হওয়া! এটা কি খুব সম্মানজনক?

অভিষেক: উল্টে আমি বলব, প্রধানমন্ত্রীকে এটা মানায় না। তিনি দেশের কাজে, দশের কাজে দায়বদ্ধ। আমাকে তোলাবাজ বলার জন্য সময় নষ্ট না-করে তিনি অক্সিজেন, ওষুধ জোগানের দিকে নজর দিতে পারতেন। সাত মাস ধরে তো শুধু এখানে ভোট, ওখানে ভোট আর ঘোড়া কেনাবেচায় ব্যস্ত ছিলেন। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় কোনও প্রস্তুতি নেওয়ার সময় তাঁর হয়নি! দেশের প্রয়োজন না মিটিয়ে বিদেশে অক্সিজেন, টেস্টিং কিট পাঠানো হল। লোক হাহাকার করে মারা যাচ্ছেন। আমাকে আক্রমণে সময় নষ্ট না-করে তিনি ওই দিকটি দেখলে মানুষের এত দুর্গতি হত না।

প্রশ্ন: পাচার কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত বিনয় মিশ্র আপনার নেতৃত্বে যুব তৃণমূলের পদাধিকারী। সেটাও তো সামনে এসেছে।

অভিষেক: যুব সংগঠনে ১৫ জন সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে বিনয় এক জন। যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয়, ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেব। কিন্তু তার আগে কিছু কথা আছে। মুকুল রায় তো বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি। তাঁর বিরুদ্ধে সারদা-মালিক নিজে লিখিত ভাবে অন্তত ছ’কোটি টাকা নেওয়ার অভিযোগ জানিয়েছেন। নারদ ভিডিয়োতে মুকুলবাবু বলছেন, কোথায় কার কাছে টাকা দিতে হবে। শুভেন্দু অধিকারী, শোভন চট্টোপাধ্যায়দের মতো নেতাদের নারদ কাণ্ডে সরাসরি টাকা নিতে দেখা গিয়েছে। কার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা হল? হল না কেন? তাঁরা বিজেপিতে নাম লিখিয়ে ধোয়া তুলসিপাতা হলেন? জানতে চাই, সারদা-মালিকের লিখিত অভিযোগ সত্ত্বেও গত বছর মুকুল রায়কে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি করা হল কত টাকার বিনিময়ে? ওঁদের যুক্তি মানলে তো বলতে হবে, সারদার টাকা জেপি নড্ডাদের কাছেও গিয়েছে। তাই আগে ওঁরা মুকুলবাবুকে তাড়ান। পর দিনই বিনয়কে তাড়িয়ে দেব।

প্রশ্ন: বিনয় মিশ্র তো ফেরার।

অভিষেক: কী জানি! হয়তো বিজেপি-তে গেলে অন্যদের মতোই ধোয়া তুলসিপাতা হয়ে যাবে। তা-ই তার আগে এখন গা-ঢাকা দিয়েছে।

প্রশ্ন: বিনয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগের সূত্রে আপনার স্ত্রীয়ের বিরুদ্ধেও বিদেশের ব্যাঙ্কে পাচারের টাকা রাখার অভিযোগ উঠেছে। তদন্তে সিবিআই আপনার বাড়িতেও গিয়েছে। কী বলবেন?

অভিষেক: বলা হচ্ছে, আমার স্ত্রীয়ের নাকি লন্ডনে অ্যাকাউন্ট আছে। তিনি জীবনে লন্ডনে যাননি। দু’বছর আগে ওঁর বিরুদ্ধে ব্যাঙ্কক থেকে দু’কেজি সোনা লুকিয়ে আনার অভিযোগ তোলা হল। ক্যামেরার ফুটেজ কই? এক হাজার ক্যামেরার চোখ থাকে বিমানবন্দরে। এ সব জনসমক্ষে আনা হোক। আমার স্ত্রীয়ের যদি এত সম্পত্তি থাকে, তাহলে তো আমারই সাংসদ পদ খারিজ করা উচিত। কারণ, আমি তাহলে সঠিক তথ্য নির্বাচন কমিশনে জমা দিইনি! সেটা প্রমাণ-সহ বলতে পারছে না কেন? আর কয়লা পাচার, গরু পাচার রোখার কাজ কার? সিআইএসএফ, বিএসএফ কি রাজ্যের? ওরা তো অমিত শাহের বাহিনী। আটকাতে পারেনি কেন? ব্যর্থতা তাঁর। যদি ওরা আমার কথা শোনে, তাহলে আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহের পদত্যাগ করা উচিত।

প্রশ্ন: আপনি জনমানসে যুবরাজ বলে অভিহিত। পিছন থেকে পুলিশে, প্রশাসনে আপনার গুরুত্বপূর্ণ হস্তক্ষেপ আছে। এটা মানেন?

অভিষেক: আমি যুবরাজ নই। নাম্বার টু-ও নই। হতে চাই না। আমি দলের কর্মী। নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর প্রশাসনে ভূমিকা? আমি দশ বছরে চার দিনও নবান্নে যাইনি। কোনও আগ্রহ নেই। যারা এ সব বলে, তারা প্রমাণ দিয়ে কথা বলুক। কে কী বলল, কোথাকার কোন গণেশ বাগাড়িয়ার ফোনে কার নাম বলা হল, সে সব নিয়ে কথা বলার প্রয়োজন মনে করি না। দু’জনের ফোনের কথা যদি বাইরে আসে, তা হলে বুঝতে হবে দু’জনের কেউ এক জন দিয়েছেন। তার পিছনে উদ্দেশ্য স্পষ্ট।

প্রশ্ন: ২০১৬ সালে তৃণমূলের দ্বিতীয় দফা শপথের দিনে আপনার ছবি দিয়ে ‘ম্যাচ উইনার’ হোর্ডিং পড়েছিল। এ বার দল জিতলে আপনি নিশ্চয় মন্ত্রী হবেন?

অভিষেক: ওটা হয়তো কিছু লোকের আবেগে হয়েছিল। আমি মন্ত্রী হব না। সংগঠনে কাজ করতে চাই।

প্রশ্ন: মন্ত্রী হয়েও তো সেই কাজ করা যায়?

অভিষেক: আমার মানসিকতা অন্য। আমি মনে করি, পুরো সময় না-দিতে পারলে, কোনও কাজ ভাল ভাবে করা যায় না। আমি সাংসদ। নিজের কেন্দ্রে পাঁচ বছরের জন্য দায়বদ্ধ।

প্রশ্ন: তা হলে কি নতুন প্রজন্ম উঠে আসবে না?

অভিষেক: নিশ্চয় আসবে। তবে আপাতত আমি সংগঠনের কাজে থাকতে চাই। অন্তত দশটি রাজ্যে তৃণমূলকে প্রসারিত করে জাতীয় দল করতে চাই।

প্রশ্ন: দল যদি মন্ত্রী হতে বলে?

অভিষেক: আমার দিক থেকে এই কথা দলকেও বলব।

প্রশ্ন: আপনি নিরাপত্তার ঘেরাটোপে থাকেন। বাড়ির সামনে রাস্তার অর্ধেকটা ব্যারিকেড। সাধারণ মানুষ নাগাল পায় না।

অভিষেক: এ সব তো বিজেপি-ও বলে। দেখুন, আমি কোনও নিরাপত্তা চাই না। কিন্তু আমার উপরে আক্রমণ হয়েছে। আশঙ্কাজনক রিপোর্ট আছে বলে নাকি পুলিশ মনে করে। ওরা যা করার করেছে। আর বাড়ি? জেনে রাখুন, ২০১৯ থেকে আমি কালীঘাটে পার্টি অফিসের উপরে থাকি। নিজের বাড়িতে থাকিও না। মেয়ের সঙ্গে কথা হয় ভিডিয়ো-কলে। ছেলে ছোট। সে বোধহয় বাবাকে চিনতেই পারে না! তা ছাড়া, যদি মানুষের সঙ্গে সংযোগ না-ই থাকবে, তাহলে ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রে আমার জয়ের ব্যবধান ৭০ হাজার থেকে বেড়ে ৩ লাখ ২১ হাজার হয় কী করে!

(সহায়তা: সন্দীপন চক্রবর্তী)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Abhishek Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy